জনগণ ভোট দিতে ভুল করে না by পলাশ কুমার রায়
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। নিরপেক্ষ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যু নিয়ে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার এবং বিএনপির
নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব ক্রমশই বাড়ছে। আওয়ামী লীগ আবারও
ক্ষমতার মসনদে থাকতে মরিয়া। ক্ষমতা থেকে নামার কোনো অভিপ্রায় নেই আওয়ামী
লীগের। জনগণ কী চায় বা না চায়, তার চেয়েও বড় কথা আওয়ামী লীগ যেনতেন লোক
দেখানো নির্বাচন করে আবারও দেশ শাসনের দায়িত্ব নিতে চায়। আওয়ামী লীগের
সভানেত্রীর চাওয়া-পাওয়ার হিসাবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের
নেতাকর্মীরাও চায় আবারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকতে। আওয়ামী লীগের
সভানেত্রী এবং দলীয় নেতাকর্মীদের চিন্তাভাবনা, কাজকর্ম, মতাদর্শ এবং
ধ্যানধারণার অনেক অমিল থাকা সত্ত্বেও একটা ক্ষেত্রে তাদের ঠিকই মিল খুঁজে
পাওয়া যায়- আর তা হল, আবারও ক্ষমতায় থাকার বাসনা। নেতাদের শুধু একটা জিনিস
চাই, আর তা হল- ক্ষমতা, শুধুই ক্ষমতা। কী আছে এই ক্ষমতার ঝুড়িতে? দেশপ্রেম,
আদর্শিক রাজনীতি, জনসেবা, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, বিপরীত মতাদর্শে
বিশ্বাসী রাজনীতিকদের প্রতি সহনশীলতা, শ্রদ্ধা প্রদর্শন এসবের চর্চা হচ্ছে
কি দেশে?
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিকট অতীতে দেশের একাধিক জেলায় সরকারের গৃহীত প্রকল্পগুলোর ফিতা কাটা কর্মসূচির পর দলীয় জনসভায় ভোটারদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় গাড়িবহর এবং খরচে আয়োজিত জনসভাগুলোতে ভোটারদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে পারেন কিনা কিংবা এই প্রক্রিয়া কতটা যৌক্তিক সেই বিতর্কে না গিয়ে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সোজাসাপটা প্রশ্ন করতে চাই- এদেশের ভোটাররা আওয়ামী লীগকে ভোট দিবে কেন?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি হাজারও ব্যস্ততার কারণে জানেন কিনা জানি না, কিন্তু এদেশের হাজার হাজার নিরীহ নিরপরাধ ভুক্তভোগী মানুষ আপনার দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা নিপীড়ন-নির্যাতনের কথা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করার দিন থেকে অদ্যাবধি আপনার দলের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে কত শত মানুষের উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ অংকুরেই ধ্বংস করেছে, তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করা উচিত বলেই আমার মনে হয়। অসহায়, গরিব, অসচ্ছল, ক্ষমতাহীন, দুর্বলের ওপর ক্ষমতাশালীদের নির্যাতন করতে পারার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহাসিক আদর্শিক রাজনৈতিক দলের জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি যখন একটি সুখী পরিবারের অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ান, তখন তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। আওয়ামী লীগের ওই জেলা শাখার সভাপতি একজন নিরীহ যুবকের স্ত্রীকে দিয়ে স্বামী ও তার শ্বশুরবাড়ির ছয়জনের বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুকের মিথ্যা মামলা দায়ের করে ওই পরিবারের সুখ-শান্তি কেড়ে নেন। যুবকটি স্বেচ্ছায় থানায় আত্মসমর্পণ করে জেলে একপক্ষকাল থাকে। ওই সভাপতি থানা পুলিশকে দিয়ে কোনো ধরনের তদন্ত না করেই থানায় বসে অভিযুক্তদের নামে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে। পুলিশ ওই ক্ষমতাশালী নেতার কথামতো আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য ও জবানবন্দি দেন। ওই জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনও (তিনিও ওই নেতার করুণায় ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন হয়েছেন) নেতার কথামতো আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন। অন্য সাক্ষীরাও একই প্রক্রিয়ায় আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন। কাল্পনিকভাবে উদ্ভূত এই মিথ্যা মামলা শুরু থেকে শেষ অবধি আপনার দলের ওই নেতা যথাযথভাবে মনিটরিং করেছেন। যেন বাদিনীর চেয়ে তার মাথাব্যথা বেশি! ওই নেতা কেন এমনটি করলেন? শুধুই ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য?
আপনার দলের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এলাকার সাধারণ মানুষকে এভাবেই হয়রানি করেছে। আপনি হয়তো এসবের কিছুই জানেন না। আপনার আশপাশে থাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা আপনাকে এ ব্যাপারে হয়তো কিছুই জানাননি। কেবল ভুক্তভোগীরাই জানে, তারা মনের মধ্যে কতটা ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছে?
একাত্তরে এদেশের মানুষজন আপনার পিতার নির্দেশে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক একটি দেশের জন্য লড়াই করেছে। আজ বিয়াল্লিশ বছর পরে আমাদের দেশের নানা সমস্যার সঙ্গে এটাও একটা বড় সমস্যা যে, আমাদের ভোটাররা কাকে ভোট দেবে? আপনার দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যখন সাধারণ নিরপরাধ মানুষজনকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ করে হয়রানি করে, মিথ্যা মামলায় জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়ে, তখন এসব ভুক্তভোগী পরিবারের ভোটাররা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আপনার দলের প্রার্থীকে কিভাবে ভোট দিবে, আপনিই বলুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? ওই জেলা শাখা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সম্ভবত আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন, আর যদি তিনি আপনার দলের মনোনয়ন এবং আপনার সমর্থন পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে আপনিই বলুন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তাকে কি ভোট দেয়া যায়? আওয়ামী লীগের এমন শত শত নেতাকর্মী দেশের হাজার হাজার নিরীহ মানুষের পরিবারে ইচ্ছাকৃতভাবে অশান্তির বীজ বপন করেছে। আপনার দলের নেতাকর্মীরা সাধারণ নিরপরাধ মানুষজনকে সুরক্ষা করার পরিবর্তে কৌশলে এবং ফন্দিফিকির করে অপরাধী বানাতে পেরে আনন্দের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। একজন আইনজীবী হিসেবে আপনার দলের ওইসব অসাধু নেতাকর্মীর মধ্য থেকে কয়েকজনের বেহায়াপনার চিত্র স্বচক্ষে দেখেছি বলে নিজের চোখকে অস্বীকার করতে পারি না। তাদের দোর্দণ্ড প্রতাপ ও প্রতিপত্তির কাছে আপনিও অসহায় হয়ে পড়তেন! আপনার দলের ওইসব লাজ-লজ্জাহীন নেতাকর্মীরা মানুষজনকে কথায় কথায় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, অপমান করে, পুলিশ দিয়ে পেটানোর হুমকি দেয়। নিজেরা কিংবা তাদের পাইক পেয়াদাদের দ্বারা চড়থাপ্পড় এবং বেত্রাঘাত করতে পেরে বীর পৌরুষোচিত মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। কী দোর্দণ্ড ক্ষমতার প্রতাপ তাদের! তারা ক্ষমতাশালী দলের নেতা বলে তাদের অযৌক্তিক দাবি ও নির্দেশ মানতে বাধ্য করে আমজনতাকে। অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, ক্ষমতাহীন আমজনতার কী-ই বা করার আছে। টাকা-পয়সা, থানা-পুলিশ, নেতা-মন্ত্রী কিছুই তাদের নেই। কিন্তু আপনার দলের নেতাদের সব আছে। আপনার সুরক্ষিত কার্যালয়ের সদর দরজা পর্যন্ত তাদের জন্য খোলা, আপনার দোয়া তাদের পকেটে, আপনার মৌন সমর্থন তাদের সঙ্গে। কাজেই সাধারণ মানুষজনকে তারা ভয় পায় না। আর ভয় পাওয়ারই বা কী আছে? আপনার দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা তাদের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট আর অসহায়ত্বের কথা আপনাকে বলতে চায়; কিন্তু আপনাকে সরাসরি কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে জানানোর কোনো মাধ্যম নেই বলে ভুক্তভোগীদের ডুকরে ডুকরে কাঁদা ছাড়া কি-ই বা করার আছে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি এমন কেউই নই যে, আমার অনুরোধ আপনাকে রাখতে হবে। তবুও একজন সাধারণ ভোটার হিসেবে আপনার কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করতে চাই, দয়া করে তদ্বিরবাজ, দুর্নীতিবাজ, মামলাবাজ, মিথ্যা মামলায় উৎসাহদানকারী, চরিত্রহীন, লম্পট, ইচ্ছাকৃতভাবে নিরীহ মানুষজনকে উত্ত্যক্তকারীদের আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন দিবেন না। একজন মানবীয় মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে দয়া করে কিছুটা সময় নীরবে থেকে চিন্তা করুন আপনার দলের যেসব নেতাকর্মী সাধারণ মানুষকে অযথা হয়রানি করেছে, তারা আর্থিক, পারিবারিক, সামাজিকভাবে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? তারা মানসিকভাবে যে ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তা কি পৃথিবীর কোনো কিছু দিয়ে পূর্ণ করা যাবে? দেশের মানুষজন আপনার দলের এসব কুলাঙ্গার ও কলংকিত ব্যক্তিদের ভোট কেন দেবে, আপনিই বলুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনিই বলুন, আপনার দলের এসব কলংকিত নেতাকর্মীদের চিহ্নিত না করে, তাদের তিরস্কারপূর্বক দল থেকে বহিষ্কার না করে, ভুক্তভোগীদের উপযুক্ত সান্ত্বনা না দিয়ে শুধু দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি ঘটিয়ে এবং আরও উন্নতির প্রতিশ্র“তি দিয়ে আবারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতার মসনদে থাকার জন্য ভোটারদের ভোট পাওয়ার অধিকার কিংবা ক্ষমতায় থাকার অধিকার কি আওয়ামী লীগের আছে?
পলাশ কুমার রায় : আইনজীবী ও আহ্বায়ক, সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন (সুপ্রা)
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিকট অতীতে দেশের একাধিক জেলায় সরকারের গৃহীত প্রকল্পগুলোর ফিতা কাটা কর্মসূচির পর দলীয় জনসভায় ভোটারদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় গাড়িবহর এবং খরচে আয়োজিত জনসভাগুলোতে ভোটারদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে পারেন কিনা কিংবা এই প্রক্রিয়া কতটা যৌক্তিক সেই বিতর্কে না গিয়ে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সোজাসাপটা প্রশ্ন করতে চাই- এদেশের ভোটাররা আওয়ামী লীগকে ভোট দিবে কেন?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি হাজারও ব্যস্ততার কারণে জানেন কিনা জানি না, কিন্তু এদেশের হাজার হাজার নিরীহ নিরপরাধ ভুক্তভোগী মানুষ আপনার দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা নিপীড়ন-নির্যাতনের কথা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করার দিন থেকে অদ্যাবধি আপনার দলের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে কত শত মানুষের উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ অংকুরেই ধ্বংস করেছে, তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করা উচিত বলেই আমার মনে হয়। অসহায়, গরিব, অসচ্ছল, ক্ষমতাহীন, দুর্বলের ওপর ক্ষমতাশালীদের নির্যাতন করতে পারার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহাসিক আদর্শিক রাজনৈতিক দলের জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি যখন একটি সুখী পরিবারের অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ান, তখন তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। আওয়ামী লীগের ওই জেলা শাখার সভাপতি একজন নিরীহ যুবকের স্ত্রীকে দিয়ে স্বামী ও তার শ্বশুরবাড়ির ছয়জনের বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুকের মিথ্যা মামলা দায়ের করে ওই পরিবারের সুখ-শান্তি কেড়ে নেন। যুবকটি স্বেচ্ছায় থানায় আত্মসমর্পণ করে জেলে একপক্ষকাল থাকে। ওই সভাপতি থানা পুলিশকে দিয়ে কোনো ধরনের তদন্ত না করেই থানায় বসে অভিযুক্তদের নামে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে। পুলিশ ওই ক্ষমতাশালী নেতার কথামতো আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য ও জবানবন্দি দেন। ওই জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনও (তিনিও ওই নেতার করুণায় ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন হয়েছেন) নেতার কথামতো আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন। অন্য সাক্ষীরাও একই প্রক্রিয়ায় আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন। কাল্পনিকভাবে উদ্ভূত এই মিথ্যা মামলা শুরু থেকে শেষ অবধি আপনার দলের ওই নেতা যথাযথভাবে মনিটরিং করেছেন। যেন বাদিনীর চেয়ে তার মাথাব্যথা বেশি! ওই নেতা কেন এমনটি করলেন? শুধুই ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য?
আপনার দলের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এলাকার সাধারণ মানুষকে এভাবেই হয়রানি করেছে। আপনি হয়তো এসবের কিছুই জানেন না। আপনার আশপাশে থাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা আপনাকে এ ব্যাপারে হয়তো কিছুই জানাননি। কেবল ভুক্তভোগীরাই জানে, তারা মনের মধ্যে কতটা ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছে?
একাত্তরে এদেশের মানুষজন আপনার পিতার নির্দেশে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক একটি দেশের জন্য লড়াই করেছে। আজ বিয়াল্লিশ বছর পরে আমাদের দেশের নানা সমস্যার সঙ্গে এটাও একটা বড় সমস্যা যে, আমাদের ভোটাররা কাকে ভোট দেবে? আপনার দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যখন সাধারণ নিরপরাধ মানুষজনকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ করে হয়রানি করে, মিথ্যা মামলায় জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়ে, তখন এসব ভুক্তভোগী পরিবারের ভোটাররা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আপনার দলের প্রার্থীকে কিভাবে ভোট দিবে, আপনিই বলুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? ওই জেলা শাখা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সম্ভবত আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন, আর যদি তিনি আপনার দলের মনোনয়ন এবং আপনার সমর্থন পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে আপনিই বলুন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তাকে কি ভোট দেয়া যায়? আওয়ামী লীগের এমন শত শত নেতাকর্মী দেশের হাজার হাজার নিরীহ মানুষের পরিবারে ইচ্ছাকৃতভাবে অশান্তির বীজ বপন করেছে। আপনার দলের নেতাকর্মীরা সাধারণ নিরপরাধ মানুষজনকে সুরক্ষা করার পরিবর্তে কৌশলে এবং ফন্দিফিকির করে অপরাধী বানাতে পেরে আনন্দের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। একজন আইনজীবী হিসেবে আপনার দলের ওইসব অসাধু নেতাকর্মীর মধ্য থেকে কয়েকজনের বেহায়াপনার চিত্র স্বচক্ষে দেখেছি বলে নিজের চোখকে অস্বীকার করতে পারি না। তাদের দোর্দণ্ড প্রতাপ ও প্রতিপত্তির কাছে আপনিও অসহায় হয়ে পড়তেন! আপনার দলের ওইসব লাজ-লজ্জাহীন নেতাকর্মীরা মানুষজনকে কথায় কথায় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, অপমান করে, পুলিশ দিয়ে পেটানোর হুমকি দেয়। নিজেরা কিংবা তাদের পাইক পেয়াদাদের দ্বারা চড়থাপ্পড় এবং বেত্রাঘাত করতে পেরে বীর পৌরুষোচিত মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। কী দোর্দণ্ড ক্ষমতার প্রতাপ তাদের! তারা ক্ষমতাশালী দলের নেতা বলে তাদের অযৌক্তিক দাবি ও নির্দেশ মানতে বাধ্য করে আমজনতাকে। অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, ক্ষমতাহীন আমজনতার কী-ই বা করার আছে। টাকা-পয়সা, থানা-পুলিশ, নেতা-মন্ত্রী কিছুই তাদের নেই। কিন্তু আপনার দলের নেতাদের সব আছে। আপনার সুরক্ষিত কার্যালয়ের সদর দরজা পর্যন্ত তাদের জন্য খোলা, আপনার দোয়া তাদের পকেটে, আপনার মৌন সমর্থন তাদের সঙ্গে। কাজেই সাধারণ মানুষজনকে তারা ভয় পায় না। আর ভয় পাওয়ারই বা কী আছে? আপনার দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা তাদের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট আর অসহায়ত্বের কথা আপনাকে বলতে চায়; কিন্তু আপনাকে সরাসরি কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে জানানোর কোনো মাধ্যম নেই বলে ভুক্তভোগীদের ডুকরে ডুকরে কাঁদা ছাড়া কি-ই বা করার আছে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি এমন কেউই নই যে, আমার অনুরোধ আপনাকে রাখতে হবে। তবুও একজন সাধারণ ভোটার হিসেবে আপনার কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করতে চাই, দয়া করে তদ্বিরবাজ, দুর্নীতিবাজ, মামলাবাজ, মিথ্যা মামলায় উৎসাহদানকারী, চরিত্রহীন, লম্পট, ইচ্ছাকৃতভাবে নিরীহ মানুষজনকে উত্ত্যক্তকারীদের আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন দিবেন না। একজন মানবীয় মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে দয়া করে কিছুটা সময় নীরবে থেকে চিন্তা করুন আপনার দলের যেসব নেতাকর্মী সাধারণ মানুষকে অযথা হয়রানি করেছে, তারা আর্থিক, পারিবারিক, সামাজিকভাবে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? তারা মানসিকভাবে যে ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তা কি পৃথিবীর কোনো কিছু দিয়ে পূর্ণ করা যাবে? দেশের মানুষজন আপনার দলের এসব কুলাঙ্গার ও কলংকিত ব্যক্তিদের ভোট কেন দেবে, আপনিই বলুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনিই বলুন, আপনার দলের এসব কলংকিত নেতাকর্মীদের চিহ্নিত না করে, তাদের তিরস্কারপূর্বক দল থেকে বহিষ্কার না করে, ভুক্তভোগীদের উপযুক্ত সান্ত্বনা না দিয়ে শুধু দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি ঘটিয়ে এবং আরও উন্নতির প্রতিশ্র“তি দিয়ে আবারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতার মসনদে থাকার জন্য ভোটারদের ভোট পাওয়ার অধিকার কিংবা ক্ষমতায় থাকার অধিকার কি আওয়ামী লীগের আছে?
পলাশ কুমার রায় : আইনজীবী ও আহ্বায়ক, সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন (সুপ্রা)
No comments