জাহাজভাঙা ইয়ার্ড তৈরির ধুম
১০ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘সীতাকুণ্ডু উপকূলে হঠাত্ জাহাজভাঙা ইয়ার্ড তৈরির ধুম’ শীর্ষক খবরটি পড়ে রীতিমতো আঁতকে উঠতে হয়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পূর্বে বছরে গড়ে দুটিরও কম জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ড গড়ে উঠেছিল। এখন সেখানে মাসেই গড়ে উঠছে চারটির মতো ইয়ার্ড। এমন লাগামহীনভাবে গড়ে ওঠার নেপথ্যে স্থানীয় সাংসদপুত্রের নামই ঘুরেফিরে আসছে। সাংসদপুত্র ইতিমধ্যেই জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ড তৈরি করাকে কেন্দ্র করে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন, যা সরকার ও আওয়ামী লীগ উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
বলাবাহুল্য, যে জাহাজভাঙা ইয়ার্ড তৈরি করার জন্য এত আয়োজন, সেই ইয়ার্ডগুলো এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। এ মাসেই ছয়জন শ্রমিক মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি দুর্ঘটনার খবর আড়াল করতে লাশ গুম করার মতো ঘটনাও ঘটছে।
জাহাজভাঙা ইয়ার্ডে শ্রমিক মৃত্যুর তালিকা ক্রমশ বাড়ছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত এক যুগে জাহাজভাঙা ইয়ার্ডের বিভিন্ন দুর্ঘটনায় কমপক্ষে এক হাজার ৩০০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন চার থেকে পাঁচ হাজার শ্রমিক। শ্রমিকদের আহত-নিহত হওয়ার তালিকা দীর্ঘ হলেও তাঁদের জীবন রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেই মালিকপক্ষের।
শুধু শ্রমিকের মৃত্যুই নয়, জাহাজভাঙাশিল্প পরিবেশের জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ শিল্প গড়ে উঠছে উপকূলীয় বন উজাড় করে। ফলে অরক্ষিত হয়ে পড়ছে সীতাকুণ্ডু উপকূলীয় অঞ্চল। দূষিত হচ্ছে সমুদ্র ও দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত। সৈকতের পাশাপাশি দূষণের শিকার হয়ে বিপর্যের মুখে পড়েছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যও।
বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙার প্রতিষ্ঠানগুলো অতি মুনাফার লোভে প্রাচীন ‘বিচিং পদ্ধতি’তেই জাহাজ ভাঙার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যা মারাত্মক পরিবেশ ধ্বংসকারী হিসেবে সারা বিশ্বেই পরিত্যক্ত। প্রাচীন বিচিং পদ্ধতিতে জাহাজ ভাঙার ফলে ইন্টারটাইডাল জোনের ভূমিক্ষয় এবং ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদরাজি ধ্বংস হচ্ছে অনায়সে। এ ছাড়া পুরোনো জাহাজ থেকে নির্গত অ্যাসবেস্টস, লেড, ক্যাডমিয়াম, নিকেল, সালফিউরিক এসিড, জিংক, অ্যালুমিনিয়াম, কপার প্রভৃতি রাসায়নিক বস্তুর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ছে মানব স্বাস্থ্যের ওপর।
পরিতাপের বিষয়, জাহাজভাঙাশিল্পের দূষণ নিয়ন্ত্রণে ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আদালতের নির্দেশ থাকলেও তা কোনোভাবেই মানা হচ্ছে না। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে বরাবরই নির্বিকার। যা-ই হোক, আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং উপকূল ধ্বংস করার প্রয়াসে যারা অপরিকল্পিতভাবে জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ড তৈরিতে লিপ্ত তাঁদের এখনই আইনের আওতায় আনা হবে সময়োচিত কাজ।
রানা আব্বাস, শিক্ষার্থী
ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
rana_geographer@yahoo.com
বলাবাহুল্য, যে জাহাজভাঙা ইয়ার্ড তৈরি করার জন্য এত আয়োজন, সেই ইয়ার্ডগুলো এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। এ মাসেই ছয়জন শ্রমিক মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি দুর্ঘটনার খবর আড়াল করতে লাশ গুম করার মতো ঘটনাও ঘটছে।
জাহাজভাঙা ইয়ার্ডে শ্রমিক মৃত্যুর তালিকা ক্রমশ বাড়ছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত এক যুগে জাহাজভাঙা ইয়ার্ডের বিভিন্ন দুর্ঘটনায় কমপক্ষে এক হাজার ৩০০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন চার থেকে পাঁচ হাজার শ্রমিক। শ্রমিকদের আহত-নিহত হওয়ার তালিকা দীর্ঘ হলেও তাঁদের জীবন রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেই মালিকপক্ষের।
শুধু শ্রমিকের মৃত্যুই নয়, জাহাজভাঙাশিল্প পরিবেশের জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ শিল্প গড়ে উঠছে উপকূলীয় বন উজাড় করে। ফলে অরক্ষিত হয়ে পড়ছে সীতাকুণ্ডু উপকূলীয় অঞ্চল। দূষিত হচ্ছে সমুদ্র ও দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত। সৈকতের পাশাপাশি দূষণের শিকার হয়ে বিপর্যের মুখে পড়েছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যও।
বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙার প্রতিষ্ঠানগুলো অতি মুনাফার লোভে প্রাচীন ‘বিচিং পদ্ধতি’তেই জাহাজ ভাঙার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যা মারাত্মক পরিবেশ ধ্বংসকারী হিসেবে সারা বিশ্বেই পরিত্যক্ত। প্রাচীন বিচিং পদ্ধতিতে জাহাজ ভাঙার ফলে ইন্টারটাইডাল জোনের ভূমিক্ষয় এবং ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদরাজি ধ্বংস হচ্ছে অনায়সে। এ ছাড়া পুরোনো জাহাজ থেকে নির্গত অ্যাসবেস্টস, লেড, ক্যাডমিয়াম, নিকেল, সালফিউরিক এসিড, জিংক, অ্যালুমিনিয়াম, কপার প্রভৃতি রাসায়নিক বস্তুর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ছে মানব স্বাস্থ্যের ওপর।
পরিতাপের বিষয়, জাহাজভাঙাশিল্পের দূষণ নিয়ন্ত্রণে ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আদালতের নির্দেশ থাকলেও তা কোনোভাবেই মানা হচ্ছে না। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে বরাবরই নির্বিকার। যা-ই হোক, আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং উপকূল ধ্বংস করার প্রয়াসে যারা অপরিকল্পিতভাবে জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ড তৈরিতে লিপ্ত তাঁদের এখনই আইনের আওতায় আনা হবে সময়োচিত কাজ।
রানা আব্বাস, শিক্ষার্থী
ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
rana_geographer@yahoo.com
No comments