তুরস্কে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এরদোগানের প্রতিদ্বন্দ্বী -বিবিসির রিপোর্ট
তিনি বিবিসিকে বলেন, তরুণরা গণতন্ত্র চায়। তারা চায় না যে, সামান্য টুইটের কারণে পুলিশ ভোরবেলা তাদের বাড়িতে অভিযান চালাক। তিনি ১৪ই মে’র নির্বাচনে এরদোগানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। জনমত জরিপে তিনি এরদোগান থেকে সামান্য এগিয়ে আছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে কে জয়ী হবেন তা নির্ধারণে দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচন আয়োজন হবে।
কামাল বলেন, বর্তমানে তুর্কিরা প্রেসিডেন্টকে অপমান করার জন্য জেলে যাচ্ছেন। আমি ক্ষমতায় গেলে তরুণরা নির্দ্বিধায় আমার সমালোচনা করতে পারবে। আমি নিশ্চিত করব যে, তারা যেন সেই অধিকার পায়।
৭৪ বছর বয়সী কামাল তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল ‘রিপাবলিকান পিপলস পার্টি’র (সিএইচপি) নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যদিও তার সমর্থকরা তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এ নিয়ে কামাল বলেন, তুরস্কের রাজনীতিতে থাকা মানেই ঝুঁকির জীবন বেছে নেয়া। এরদোগান ও তার মিত্ররা যাই করুক না কেন আমি আমার পথে হাঁটব। তারা আমাকে থামাতে পারবে না। তারা আমাকে ভয় দেখাতে পারবে না। আমি এই জাতির কাছে সেই প্রতিশ্রুতিই দিয়েছি। ৬৯ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট এরদোগান অতীতে তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে উপহাস করে বলেছিলেন যে তিনি একটি ভেড়াও পালতে পারেননি। কিন্তু এখন কামালই তার সবথেকে বড় আতঙ্ক।
সম্প্রতি বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি ইজমিরের বন্দর নগরীতে সমাবেশ করেন কামাল। সেখানে লাখো মানুষ পতাকা উড়িয়ে তাকে স্বাগত জানান। স্লোগানে স্লোগানে মানুষ বলেন, কামাল কিলিচদারোগলুর মধ্যেই আমাদের সকল আশা! ভিড়ের মধ্যে বেশিরভাগই বয়সে তরুণ। এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন পাঁচ লাখ তুর্কি। ১৫ বছর বয়সের ওগুজ নামের এক তরুণকে দেখা গেলো সমাবেশে। তার ভোট দেয়ার বয়স হয়নি। কিন্তু তারপরেও তিনি কামালের পক্ষে কথা বলতে সমাবেশে যোগ দিয়েছে। ওগুজ মনে করে যে, কামাল একজন ভালো মানুষ এবং তিনি তার ভবিষ্যৎকে ইতিবাচকভাবে দেখেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে আমাদের অর্থনীতির উত্থান ঘটবে, এবং আমরা উপরে উঠব।
কামাল জানিয়েছেন যে, তিনি ক্ষমতায় এলে পশ্চিমাদের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের বিষয়ে আরও নজর দেবেন। ক্রেমলিনকে ছেড়ে পশ্চিমদের দিকে ঝুঁকবেন তিনি। যেখানে এরদোগান অনেকটাই রুশপন্থী বলে মনে করা হয়। কামাল বলেন, আমরা সভ্য বিশ্বের অংশ হতে চাই। আমরা মুক্ত গণমাধ্যম এবং সম্পূর্ণ বিচারিক স্বাধীনতা চাই। এরদোগান সেভাবে ভাবেন না। তিনি আরও স্বৈরাচারী হতে চান। আমাদের এবং এরদোগানের মধ্যে পার্থক্য হল কালো এবং সাদার মধ্যে পার্থক্য।
গত ২০ বছর ধরে তুরস্ক শাসন করছেন এরদোগান। কামাল ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি নির্বাচিত হলে এরদোগানকে অবসরে পাঠিয়ে দেবেন তিনি। তাছাড়া এরদোগান নিজেই চুপচাপ পিছিয়ে যাবেন। এটা নিয়ে কারো কোনো উদ্বেগ থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন কামাল। যদিও অন্যরা এতটা নিশ্চিত নয়। এরদোগান হেরে গেলে তিনি ফলাফল নিয়ে বিতর্ক করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সোয়লু সতর্ক করেছেন যে ভোটের মধ্য দিয়ে পশ্চিমারা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা চালাবে।
কামাল বলেছেন, সম্মিলিত বিরোধী দল সজাগ থাকবে। সমস্ত ভোটকেন্দ্রে একাধিক পর্যবেক্ষক থাকার মাধ্যমে, আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে ভোট সঠিকভাবে ও নিরাপদে পরিচালিত হচ্ছে। এ নিয়ে আমরা দেড় বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। কামাল বলেন, এখন এক কেজি পেঁয়াজের দাম ৩০ লিরা। এরদোগান যদি ক্ষমতায় থাকেন তাহলে এর দাম হবে ১০০ লিরা।
তুরস্কে ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতির জন্য প্রেসিডেন্ট এরদোগানের অর্থনৈতিক নীতিকে দায়ী করা হয়। নির্বাচনে যেই জিতুক না কেনো, তাকে একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি ও একটি বিভক্ত জাতির নেতৃত্ব দিতে হবে। দেশব্যাপী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কামাল। মঞ্চে তিনি হার্ট ইমোজির মতো করে সমর্থকদের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে চলেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে, সবাই যেনো এই বিশ্বাস রাখে। যদিও ধর্মীয় রক্ষণশীলরা তাকে পছন্দ করছেন না। তারা কামালের বিরোধিতা করছেন এবং এরদোগানকে সমর্থন দিচ্ছেন।
ভোটের দিন ঘনিয়ে আসায় তুরস্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। জনমত জরিপ বলছে, এরদোগানের থেকে এগিয়ে আছেন কামাল। যদিও এরদোগানের জোট পার্লামেন্টের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না যে, সামনের দিনগুলো শান্তিপূর্ণভাবে পাড় করতে পারবে তুরস্ক।
No comments