আড়াই শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী যশোরের মুড়লি ইমামবাড়া by শাহাদত হোসেন কাবিল
যশোরের
মুড়লি ইমামবাড়া প্রায় আড়াই শ’ বছরের এক ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। দানবীর
হাজী মুহম্মদ মহসীনের বৈপিত্রেয়ী বোন মন্নুজান খানম তার জমিদারির আমলে
(১৭৬৪-১৮০৩ সালে) এই ইমামবাড়া নির্মাণ করেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৭ সালের
১৯ মার্চ প্রতিষ্ঠানটিকে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ বলে ঘোষণা করেছে।
এর ইতিহাস খুঁজতে গেলে পাওয়া যায় তৎকালীন বাংলার মুসলমানদের এক অতিমানবের উচ্চশ্রেণীর সাত্ত্বিক সর্বস্ব দানের কথা, যে দানের কল্যাণকর কর্ম চিরপ্রবহমান। মুড়লির ইমামবাড়া স্মৃতির স্মারক হিসেবে আজো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের হুগলির মন্নুজান খানমের বাবা আগা মুতাহার পারস্যের ইস্পাহান থেকে দিল্লি আসেন। পরে তিনি রাজকার্যে প্রবেশ করে নিজের যোগ্যতাবলে বাদশাহ আওরঙ্গজেবের প্রিয়পাত্রে পরিণত হন। এই সূত্রে তিনি কলকাতার কাছে জায়গির লাভ করেন। প্রথম জীবনে তার কোনো সন্তান ছিল না। মন্নুজান খানম তার বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সন্তান। ১৭১৯ সালে মৃত্যুর সময় আগা মুতাহার তার জায়গিরসহ স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি মেয়েকে দিয়ে যান।
এদিকে আগা মুতাহারের মৃত্যু পর তার বিধবা স্ত্রী পারস্য থেকে আগত ও হুগলিতে বসবাসকারী হাজী ফৈজউল্লাহর সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র সন্তান হলেন দানবীর হাজী মুহম্মদ মহসীন। তিনি ১৭৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কিছু দিন পর মহসীনের মা-বাবা উভয়ই মারা যান। ১৭৫২ সালে মন্নুজান খানমের বিয়ে হয় হুগলির নায়েব ফৌজদার মির্জা মহম্মদ সালাহ উদ্দিনের সাথে। তিনি ছিলেন মন্নুজান খানমের বাবা আগা মুতাহারের ভাতিজা।
তিনিও চাচা (পরে শ্বশুর) আগা মুতাহারের জীবদ্দশায় ইস্পাহান থেকে হুগলিতে আসেন এবং আলিবর্দী খাঁর সময়ে নবাব সরকারের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন। কর্মক্ষেত্রে প্রজ্ঞার কারণে তিনি নবাবের প্রিয়পাত্রে পরিণত হন। তাকে হুগলির নায়েবে ফৌজদার নিযুক্ত করা হয় ও একটি জায়গির দেয়া হয়। মির্জা সালাহ উদ্দিনের এই জায়গির ও বাবার কাছ থেকে পাওয়া মন্নুজান খানমের জায়গির কলকাতার কাছেই ছিল।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে স্বাধীন বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলার করুণ মৃত্যুর পর ক্ষমতার অধিশ্বর হন বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর। শর্তানুযায়ী তিনি ২৪ পরগনার কর্তৃত্ব ইংরেজদের হাতে তুলে দেন, যার মধ্যে সালাহ উদ্দিন-মন্নুজান দম্পতির জায়গিরও ছিল। এর পরিবর্তে মীরজাফরের আদেশে যশোরের চাঁচড়া জমিদারির বেওয়ারিশ তৎকালীন হিসাব অনুযায়ী চার আনা সম্পত্তি সালাহ উদ্দিন ও মন্নুজানকে দেয়া হয়। এই সম্পত্তি সৈয়দপুর জমিদারি নামে পরিচিত।
মির্জা সালাহ উদ্দিন নতুন জমিদারি পাওয়ার ছয়-সাত বছর পর ১৭৬৪ সালে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর মন্নুজান খানম নির্মল জীবনযাপন ও সব সম্পত্তি সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করেন। তার আমলে তিনি মুড়লিতে একটি কাছারি ও সুন্দর একটি ইমামবাড়া নির্মাণ করেন।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইমামবাড়া নির্মিত হয় ১৮০২ সালে। কাছারিটি পরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়; কিন্তু ইমামবাড়াটি আজও আছে। মন্নুজান খানম কর্তৃক এই ইমামবাড়া নির্মিত হলেও এটি হাজী মুহম্মদ মহসীনের ইমামবাড়া বলে পরিচিত।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তথ্যানুযায়ী আয়তাকার এই ইমামবাড়া একটি সভাকক্ষ। এর আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ১৮ দশমিক ২৯ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৫ দশমিক ২৪ মিটার। ইমামবাড়ার অভ্যন্তর ভাগ ১০টি স্তম্ভের দ্বারা তিন সারিতে বিভক্ত।
মন্নুজানের কোনো সন্তান ছিল না। এ কারণে মৃত্যুর আগে ১৮০৩ সালে তিনি বিপুল সম্পত্তির পুরোটাই হাজী মুহম্মদ মহসীনের নামে লিখে দেন।
হাজী মুহম্মদ মহসীন ছিলেন অকৃতদার ত্যাগী ও ধর্মনিষ্ঠ মানুষ। সম্পত্তির মোহ তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। মাত্র তিন বছরের মধ্যে ১৮০৬ সালে তার মালিকানাধীন যশোরের সৈয়দপুর জমিদারির সব সম্পত্তি, হুগলি ইমামবাড়া, ইমামবাজার ও হাটসহ স্থাবর-অস্থাবর সব কিছু কল্যাণকর কাজে উৎসর্গ করেন তিনি।
তিনি আরবিতে লেখা দাসপত্রে এই সম্পত্তি থেকে আয়লব্ধ অর্থ কোথায় কিভাবে খরচ করা হবে তাও উল্লেখ করে যান। সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করে যে টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে তা ৯ ভাগ করে তিন ভাগ মহররম উৎসব, ইমামবাড়া ও মসজিদ সংস্কারকাজে, দুই ভাগ মুতাওয়াল্লিদের পারিশ্রমিক এবং চার ভাগ কর্মচারী বেতন ও শিক্ষাবৃত্তির জন্য নির্ধারিত হয়। দানপত্রটি লিখে যান ‘সৈয়দপুর ট্রাস্ট স্টেটেট’-এর নামে, যা আজ মৌখিকভাবে মহসীন কল্যাণ ট্রাস্ট নামে পরিচিত।
১৮১২ সালের ২৯ নভেম্বর হাজী মুহম্মদ মহসীন ইন্তেকাল করেন। এর পরপরই সৈয়দপুর ট্রাস্ট এস্টেটে অনিয়ম দেখা দেয়। তৎকালীন ভারত সরকারের হস্তক্ষেপে সেসব অনিয়ম দূর হয় এবং পরিচালনার ভার পড়ে যশোরের কালেক্টরের ওপর। ভারত বিভাগের পর ট্রাস্টের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৫৪ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রাদেশিক সরকার এলআর ১৭৪৬০ নম্বর গেজেট বিজ্ঞপ্তি মারফত সৈয়দপুর ট্রাস্ট হুকুম দখল করে নেয়। এতে এর আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়।
পরে সরকার ১৯৫৬ সালের ২২ আগস্ট এলআর ১০২৯১ নম্বর গেজেট বিজ্ঞপ্তি মারফত যশোরের কালেক্টরকে ট্রাস্টের যশোর অংশের ট্রাস্টি নিয়োগ করে। রাজস্ব বোর্ড এই ট্রাস্টি অনুমোদন করে ১৯৬০ সালের ২২ জুন (স্মারক নম্বর ৩৭০/কমপ/এফ)। জেলা কালেক্টরেট সরকারি অনুমোদন সাপেক্ষে ট্রাস্টের জমাকৃত তহবিল অক্ষুন্ন রেখে তার লভ্যাংশ দিয়ে হাজী মুহম্মদ মহসীনের দানপত্র অনুযায়ী জনহিতকর কাজ আবার শুরু হয়। এ জন্য জেলা প্রশাসককে প্রধান করে সরকারি-বেসরকারি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বিভিন্ন সময় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে।
যশোরে এই ট্রাস্টের কাজ শুরু করতে গিয়ে স্থায়ী তহবিল হিসেবে ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৫২৩ টাকা ৭৫ পয়সা পাওয়া যায়। এই টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে জমা আছে। এ ছাড়া মুড়লিতে আছে এক একর ৬৩ শতক জমি। এই জমির ওপর হাজী মুহম্মদ উচ্চবিদ্যালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইমামবাড়া প্রতিষ্ঠিত। একটি ছোট পুকুরও আছে। স্থায়ী আমানতের লভ্যাংশের টাকায় এখন জনহিতকর কাজ করা হয়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৫ সাল থেকে ট্রাস্টের যশোর অংশের ট্রাস্টি ‘ সৈয়দপুর ট্রাস্ট স্টেটেট’ খুলনায় জমা হত। ফলে যশোরের কালেক্টরকে ট্রাস্টেও আয় বন্ধ হয়ে যায়। স্থগিত করা হয় জনহিতকর কাজ। ট্রাস্টে আগের স্থায়ী আমানত বেড়ে বর্তমানে ১৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০০০ সালে থেকে ট্রাস্টের নামে শিক্ষাবৃত্তির দেয়া শুরু হয়। এ বছর ১২৫ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়েছে।
আর মুড়লির ইমামবাড়া স্মৃতির স্মারক হিসেবে আজো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৮৭ সালের ১৯ মার্চ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠানটিকে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ বলে ঘোষণা করেছে।
এর ইতিহাস খুঁজতে গেলে পাওয়া যায় তৎকালীন বাংলার মুসলমানদের এক অতিমানবের উচ্চশ্রেণীর সাত্ত্বিক সর্বস্ব দানের কথা, যে দানের কল্যাণকর কর্ম চিরপ্রবহমান। মুড়লির ইমামবাড়া স্মৃতির স্মারক হিসেবে আজো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের হুগলির মন্নুজান খানমের বাবা আগা মুতাহার পারস্যের ইস্পাহান থেকে দিল্লি আসেন। পরে তিনি রাজকার্যে প্রবেশ করে নিজের যোগ্যতাবলে বাদশাহ আওরঙ্গজেবের প্রিয়পাত্রে পরিণত হন। এই সূত্রে তিনি কলকাতার কাছে জায়গির লাভ করেন। প্রথম জীবনে তার কোনো সন্তান ছিল না। মন্নুজান খানম তার বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সন্তান। ১৭১৯ সালে মৃত্যুর সময় আগা মুতাহার তার জায়গিরসহ স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি মেয়েকে দিয়ে যান।
এদিকে আগা মুতাহারের মৃত্যু পর তার বিধবা স্ত্রী পারস্য থেকে আগত ও হুগলিতে বসবাসকারী হাজী ফৈজউল্লাহর সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র সন্তান হলেন দানবীর হাজী মুহম্মদ মহসীন। তিনি ১৭৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কিছু দিন পর মহসীনের মা-বাবা উভয়ই মারা যান। ১৭৫২ সালে মন্নুজান খানমের বিয়ে হয় হুগলির নায়েব ফৌজদার মির্জা মহম্মদ সালাহ উদ্দিনের সাথে। তিনি ছিলেন মন্নুজান খানমের বাবা আগা মুতাহারের ভাতিজা।
তিনিও চাচা (পরে শ্বশুর) আগা মুতাহারের জীবদ্দশায় ইস্পাহান থেকে হুগলিতে আসেন এবং আলিবর্দী খাঁর সময়ে নবাব সরকারের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন। কর্মক্ষেত্রে প্রজ্ঞার কারণে তিনি নবাবের প্রিয়পাত্রে পরিণত হন। তাকে হুগলির নায়েবে ফৌজদার নিযুক্ত করা হয় ও একটি জায়গির দেয়া হয়। মির্জা সালাহ উদ্দিনের এই জায়গির ও বাবার কাছ থেকে পাওয়া মন্নুজান খানমের জায়গির কলকাতার কাছেই ছিল।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে স্বাধীন বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলার করুণ মৃত্যুর পর ক্ষমতার অধিশ্বর হন বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর। শর্তানুযায়ী তিনি ২৪ পরগনার কর্তৃত্ব ইংরেজদের হাতে তুলে দেন, যার মধ্যে সালাহ উদ্দিন-মন্নুজান দম্পতির জায়গিরও ছিল। এর পরিবর্তে মীরজাফরের আদেশে যশোরের চাঁচড়া জমিদারির বেওয়ারিশ তৎকালীন হিসাব অনুযায়ী চার আনা সম্পত্তি সালাহ উদ্দিন ও মন্নুজানকে দেয়া হয়। এই সম্পত্তি সৈয়দপুর জমিদারি নামে পরিচিত।
মির্জা সালাহ উদ্দিন নতুন জমিদারি পাওয়ার ছয়-সাত বছর পর ১৭৬৪ সালে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর মন্নুজান খানম নির্মল জীবনযাপন ও সব সম্পত্তি সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করেন। তার আমলে তিনি মুড়লিতে একটি কাছারি ও সুন্দর একটি ইমামবাড়া নির্মাণ করেন।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইমামবাড়া নির্মিত হয় ১৮০২ সালে। কাছারিটি পরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়; কিন্তু ইমামবাড়াটি আজও আছে। মন্নুজান খানম কর্তৃক এই ইমামবাড়া নির্মিত হলেও এটি হাজী মুহম্মদ মহসীনের ইমামবাড়া বলে পরিচিত।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তথ্যানুযায়ী আয়তাকার এই ইমামবাড়া একটি সভাকক্ষ। এর আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ১৮ দশমিক ২৯ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৫ দশমিক ২৪ মিটার। ইমামবাড়ার অভ্যন্তর ভাগ ১০টি স্তম্ভের দ্বারা তিন সারিতে বিভক্ত।
মন্নুজানের কোনো সন্তান ছিল না। এ কারণে মৃত্যুর আগে ১৮০৩ সালে তিনি বিপুল সম্পত্তির পুরোটাই হাজী মুহম্মদ মহসীনের নামে লিখে দেন।
হাজী মুহম্মদ মহসীন ছিলেন অকৃতদার ত্যাগী ও ধর্মনিষ্ঠ মানুষ। সম্পত্তির মোহ তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। মাত্র তিন বছরের মধ্যে ১৮০৬ সালে তার মালিকানাধীন যশোরের সৈয়দপুর জমিদারির সব সম্পত্তি, হুগলি ইমামবাড়া, ইমামবাজার ও হাটসহ স্থাবর-অস্থাবর সব কিছু কল্যাণকর কাজে উৎসর্গ করেন তিনি।
তিনি আরবিতে লেখা দাসপত্রে এই সম্পত্তি থেকে আয়লব্ধ অর্থ কোথায় কিভাবে খরচ করা হবে তাও উল্লেখ করে যান। সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করে যে টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে তা ৯ ভাগ করে তিন ভাগ মহররম উৎসব, ইমামবাড়া ও মসজিদ সংস্কারকাজে, দুই ভাগ মুতাওয়াল্লিদের পারিশ্রমিক এবং চার ভাগ কর্মচারী বেতন ও শিক্ষাবৃত্তির জন্য নির্ধারিত হয়। দানপত্রটি লিখে যান ‘সৈয়দপুর ট্রাস্ট স্টেটেট’-এর নামে, যা আজ মৌখিকভাবে মহসীন কল্যাণ ট্রাস্ট নামে পরিচিত।
১৮১২ সালের ২৯ নভেম্বর হাজী মুহম্মদ মহসীন ইন্তেকাল করেন। এর পরপরই সৈয়দপুর ট্রাস্ট এস্টেটে অনিয়ম দেখা দেয়। তৎকালীন ভারত সরকারের হস্তক্ষেপে সেসব অনিয়ম দূর হয় এবং পরিচালনার ভার পড়ে যশোরের কালেক্টরের ওপর। ভারত বিভাগের পর ট্রাস্টের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৫৪ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রাদেশিক সরকার এলআর ১৭৪৬০ নম্বর গেজেট বিজ্ঞপ্তি মারফত সৈয়দপুর ট্রাস্ট হুকুম দখল করে নেয়। এতে এর আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়।
পরে সরকার ১৯৫৬ সালের ২২ আগস্ট এলআর ১০২৯১ নম্বর গেজেট বিজ্ঞপ্তি মারফত যশোরের কালেক্টরকে ট্রাস্টের যশোর অংশের ট্রাস্টি নিয়োগ করে। রাজস্ব বোর্ড এই ট্রাস্টি অনুমোদন করে ১৯৬০ সালের ২২ জুন (স্মারক নম্বর ৩৭০/কমপ/এফ)। জেলা কালেক্টরেট সরকারি অনুমোদন সাপেক্ষে ট্রাস্টের জমাকৃত তহবিল অক্ষুন্ন রেখে তার লভ্যাংশ দিয়ে হাজী মুহম্মদ মহসীনের দানপত্র অনুযায়ী জনহিতকর কাজ আবার শুরু হয়। এ জন্য জেলা প্রশাসককে প্রধান করে সরকারি-বেসরকারি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বিভিন্ন সময় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে।
যশোরে এই ট্রাস্টের কাজ শুরু করতে গিয়ে স্থায়ী তহবিল হিসেবে ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৫২৩ টাকা ৭৫ পয়সা পাওয়া যায়। এই টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে জমা আছে। এ ছাড়া মুড়লিতে আছে এক একর ৬৩ শতক জমি। এই জমির ওপর হাজী মুহম্মদ উচ্চবিদ্যালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইমামবাড়া প্রতিষ্ঠিত। একটি ছোট পুকুরও আছে। স্থায়ী আমানতের লভ্যাংশের টাকায় এখন জনহিতকর কাজ করা হয়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৫ সাল থেকে ট্রাস্টের যশোর অংশের ট্রাস্টি ‘ সৈয়দপুর ট্রাস্ট স্টেটেট’ খুলনায় জমা হত। ফলে যশোরের কালেক্টরকে ট্রাস্টেও আয় বন্ধ হয়ে যায়। স্থগিত করা হয় জনহিতকর কাজ। ট্রাস্টে আগের স্থায়ী আমানত বেড়ে বর্তমানে ১৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০০০ সালে থেকে ট্রাস্টের নামে শিক্ষাবৃত্তির দেয়া শুরু হয়। এ বছর ১২৫ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়েছে।
আর মুড়লির ইমামবাড়া স্মৃতির স্মারক হিসেবে আজো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৮৭ সালের ১৯ মার্চ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠানটিকে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ বলে ঘোষণা করেছে।
No comments