বাংলাদেশ নিয়ে চীন ও ভারতের লড়াই by শাকিল বিন মুশতাক
বাংলাদেশে
প্রভাব বিস্তার নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে লড়াই শুরু হয় ১৯৭৫ সালের ৩১শে
আগস্ট। যখন চীন বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আর বাংলাদেশের
স্বাধীনতার পক্ষে নিজেদের সেনা মোতায়েন করে ভারত পরিষ্কারভাবে বাংলাদেশের
অংশীদারে পরিণত হয়। সম্প্রতি ভারতের নৌবাহিনী প্রধান বাংলাদেশের
বন্দর-নগরী চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো সমন্বিত টহল কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
এতে বাংলাদেশ নিয়ে চীন ও ভারতের লড়াই আবারো খবরের শিরোনাম হয়েছে। স্থানীয়
সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামুদ্দিন
আহমেদের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফর করেন ভারতের নৌ-প্রধান অ্যাডমিরাল সুনিল
লানবা। এ সময় দুই দেশের নৌ-প্রধান ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ টহল কার্যক্রম
‘করপ্যাট’ উদ্বোধন করেন।
গত বছর চট্টগ্রাম বন্দরে চীনের তৈরি দুইটি সাবমেরিন মোতায়েন করে বাংলাদেশ। বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি ভারত। চীনের কাছ থেকে সাবমেরিন কেনা ও বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করে ভারতীয়রা। এর পরপরই গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরে আসেন লানবা। নৌ প্রধানের সফরের কয়েকদিনের মধ্যে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকরও বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় লানবা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সফর বাংলাদেশে ভারত ও চীনের প্রভাব সম্পর্কে আমাদের কি বার্তা দেয়? ইতিহাসে ফিরে তাকালে এর কিছুটা উত্তর পাওয়া যায়। ভারতের সরাসরি সামরিক সহায়তায় বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নিয়েছে। আর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলে। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান একদল সেনা কর্মকর্তার হাতে নিহত হওয়ার পর তারা ক্ষমতা হারায়। ওই বছরের আগস্টের পর নতুন সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসে। তারা ভারতের একচেটিয়া প্রভাব দূর করতে চীনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। ১৯৭৫ সালের সেনাপ্রধান ও পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বগ্রহণকারী জিয়াউর রহমান এই কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বিএনপি ক্ষমতার লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ।
৭৫-পরবর্তী সময় ছিল চীন-বাংলাদেশের সামরিক ও বেসামরিক সহযোগিতার স্বর্ণযুগ। বৈদেশিক নীতিতেও তা বজায় ছিল। তখন উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহীরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। আর এতে সমর্থন দিয়েছিল চীন। চীন ও ভারত নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মেরুকরণ ঘটায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসা পর্যন্ত এই পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল। এরপর আবারো ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তবে বাংলাদেশে দীর্ঘদিনব্যাপী চীনের সামরিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ ভারতের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন আবারো ক্ষমতায় ফিরে আসে, ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে দলটি আরো উদারতা দেখায়। ২০১০ সালে ভারত থেকে সহজ শর্তে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করে বাংলাদেশ। এটি ছিল কোনো দেশকে দেয়া ভারতের সবচেয়ে বড় অংকের ঋণ। ২০১৭ সালে ভারত আরো ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ভারত থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার জন্য রাখা হয়।
এর পরেও চীন বাংলাদেশের সোনাদিয়া দ্বীপে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে। ধারণা করা হচ্ছিল, ২০১৪ সালের চীন সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। কিন্তু তা কখনোই ঘটেনি। ওই প্রকল্প নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। বলা হচ্ছে, ওই প্রকল্পে বাধা দিয়েছে ভারত।
পরে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে দুইটি সাবমেরিন গ্রহণ করে। খুবই সস্তা দামে এগুলো কিনেছে বাংলাদেশ। তারপরেও এতে খুশি হতে পারেনি ভারত। পরে বাংলাদেশের নৌবাহিনীকে সাবমেরিন প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রস্তাব দেয় ভারত। ওই প্রস্তাবের প্রক্রিয়া কতদুর এগিয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু লানবার সফর ও করপ্যাট নিয়ে ঘোষণা বাংলাদেশ ও এর নৌ-সীমানায় সরাসরি উপস্থিতির বিষয়ে ভারতের আগ্রহ প্রকাশ পায়।
বাংলাদেশে এ বছরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দৃশ্যপটের অন্তরালে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। নিশ্চিতভাবেই ঢাকার ওপর প্রভাব বিস্তার নিয়ে দিল্লি ও বেইজিংয়ের লড়াই নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। যদিও বাহ্যিকভাবে মনে হচ্ছে ভারত এগিয়ে রয়েছে।
গত বছর চট্টগ্রাম বন্দরে চীনের তৈরি দুইটি সাবমেরিন মোতায়েন করে বাংলাদেশ। বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি ভারত। চীনের কাছ থেকে সাবমেরিন কেনা ও বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করে ভারতীয়রা। এর পরপরই গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরে আসেন লানবা। নৌ প্রধানের সফরের কয়েকদিনের মধ্যে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকরও বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় লানবা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সফর বাংলাদেশে ভারত ও চীনের প্রভাব সম্পর্কে আমাদের কি বার্তা দেয়? ইতিহাসে ফিরে তাকালে এর কিছুটা উত্তর পাওয়া যায়। ভারতের সরাসরি সামরিক সহায়তায় বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নিয়েছে। আর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলে। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান একদল সেনা কর্মকর্তার হাতে নিহত হওয়ার পর তারা ক্ষমতা হারায়। ওই বছরের আগস্টের পর নতুন সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসে। তারা ভারতের একচেটিয়া প্রভাব দূর করতে চীনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। ১৯৭৫ সালের সেনাপ্রধান ও পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বগ্রহণকারী জিয়াউর রহমান এই কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বিএনপি ক্ষমতার লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ।
৭৫-পরবর্তী সময় ছিল চীন-বাংলাদেশের সামরিক ও বেসামরিক সহযোগিতার স্বর্ণযুগ। বৈদেশিক নীতিতেও তা বজায় ছিল। তখন উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহীরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। আর এতে সমর্থন দিয়েছিল চীন। চীন ও ভারত নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মেরুকরণ ঘটায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসা পর্যন্ত এই পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল। এরপর আবারো ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তবে বাংলাদেশে দীর্ঘদিনব্যাপী চীনের সামরিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ ভারতের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন আবারো ক্ষমতায় ফিরে আসে, ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে দলটি আরো উদারতা দেখায়। ২০১০ সালে ভারত থেকে সহজ শর্তে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করে বাংলাদেশ। এটি ছিল কোনো দেশকে দেয়া ভারতের সবচেয়ে বড় অংকের ঋণ। ২০১৭ সালে ভারত আরো ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ভারত থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার জন্য রাখা হয়।
এর পরেও চীন বাংলাদেশের সোনাদিয়া দ্বীপে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে। ধারণা করা হচ্ছিল, ২০১৪ সালের চীন সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। কিন্তু তা কখনোই ঘটেনি। ওই প্রকল্প নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। বলা হচ্ছে, ওই প্রকল্পে বাধা দিয়েছে ভারত।
পরে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে দুইটি সাবমেরিন গ্রহণ করে। খুবই সস্তা দামে এগুলো কিনেছে বাংলাদেশ। তারপরেও এতে খুশি হতে পারেনি ভারত। পরে বাংলাদেশের নৌবাহিনীকে সাবমেরিন প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রস্তাব দেয় ভারত। ওই প্রস্তাবের প্রক্রিয়া কতদুর এগিয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু লানবার সফর ও করপ্যাট নিয়ে ঘোষণা বাংলাদেশ ও এর নৌ-সীমানায় সরাসরি উপস্থিতির বিষয়ে ভারতের আগ্রহ প্রকাশ পায়।
বাংলাদেশে এ বছরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দৃশ্যপটের অন্তরালে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। নিশ্চিতভাবেই ঢাকার ওপর প্রভাব বিস্তার নিয়ে দিল্লি ও বেইজিংয়ের লড়াই নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। যদিও বাহ্যিকভাবে মনে হচ্ছে ভারত এগিয়ে রয়েছে।
No comments