বাজেটে নতুন কিছু নেই
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সদ্য ২০১৭-১৮ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন, তা আসলে স্থিতাবস্থা টিকিয়ে রাখতে উৎসাহিত করবে। এই বাজেটে নেই কোনো নতুন প্রস্তাব বা কীভাবে রাজস্ব সংগ্রহ করা হবে—সে ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। পরোক্ষ কর আরোপ এবং ভর্তুকি কাটছাঁটই এখন ভরসা। এ ধরনের প্রস্তাব করাটা ভুল না হলেও এটা যে সামগ্রিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা সুস্পষ্ট।
আজকের ভারত চাকরির জন্য কাঁদছে। হাজার হাজার স্নাতক ডিগ্রিধারীর চাকরি নেই। বেসরকারি খাতের যথেষ্ট প্রসার না ঘটায় তাঁদের কর্মসংস্থান হচ্ছে না। কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১ শতাংশ হলেও স্নাতকধারীরা প্রশাসনিক চাকরি চান; এমনকি বেতন কম হলেও। অরুণ জেটলি স্বীকার করেছেন, বাজেট নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে না। তবে তিনি বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কলেজ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন—এমন শিক্ষার্থীদের জন্য এটা সান্ত্বনা নয় যে খুব শিগগির কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কিছু প্রণোদনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যদিও তা এই খাতকে চাঙা করার জন্য যথেষ্ট নয়। শিল্পোদ্যোক্তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন, কারণ অর্থের অভাবে তাঁরা নিজেরাই রুগ্ণ হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, এই বাজেটে পরিকল্পনা নেই। যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করলেন, তখন তিনি কোনো পরিকল্পনায় বিশ্বাস করতেন না এবং মনে করতেন, যেখানে যা প্রয়োজন সেই অনুযায়ী টাকা খরচ করলেই কাজ হয়ে যাবে। সরকার প্রয়োজন মনে করেছে আর খরচ করার দায়িত্ব দিয়েছে মন্ত্রণালয়কে। ফলে ব্যয় হয়েছে যেনতেনভাবে। এখনো আমাদের একটি ধারণা আছে যে, অর্থনৈতিক ঘাটতি দূর করা উচিত। যখন মুদ্রাস্ফীতি ৩ দশমিক ৫ শতাংশের আশপাশে ঘোরাঘুরি করে,
তখন বেশি খরচে ক্ষতি নেই। তখন এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে। শুধু খরচ করে দেশটি সরকারি ও বেসরকারিভাবে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে। অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশের সময় শুধু দেশের আর্থিক স্বাস্থ্য ও ব্যবস্থাপনার কথাই ভেবেছেন, রাজনৈতিক বিষয়গুলো ভাবেননি। ফলে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) মতো দল বাজেটের সমালোচনা করেছে। দলটি বলেছে, এতে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এই বাজেট পেশ করে অরুণ জেটলি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) যাঁরা নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁদেরও বিরক্ত করার ঝুঁকি নিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ২০ হাজার থেকে দুই হাজার রুপিতে নামিয়ে এনে তিনি বাম দলগুলোসহ সব রাজনৈতিক দলকে বিরক্ত করার ঝুঁকি নিয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রের সামনে তিনি একটি ভারসাম্যপূর্ণ চিত্র উপস্থাপন করেছেন। তবে এই বাজেট মধ্যবিত্তদের সামান্য হলেও স্বস্তি দিয়েছে। যাঁদের বার্ষিক আয় আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখ রুপি, তাঁদের আয়কর অর্ধেক করে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে করদাতার সংখ্যা বাড়বে। সাধারণ ও রেলওয়ের বাজেটকে যৌথভাবে উপস্থাপনের সরকারি সিদ্ধান্তটি বহু বছরের চর্চা থেকে দূরে সরে যাওয়া। আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে,
স্বাধীনতার পর এই প্রথম কোনো যৌথ বাজেট সংসদে উত্থাপিত হলো। আর কিছু না ঘটলেও এটা রেলওয়েকে রাজনীতির বাইরে রাখবে। কোনো কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার ৫০ কোটি রুপির বেশি হলে সেই কোম্পানির করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে বাজেটে। এতে করে ৯৬ শতাংশ কোম্পানি লাভবান হবে। নির্বাচনী বন্ড চালু করার ভাবনাটা অবশ্য একটি ভালো ভাবনা এবং সম্ভবত বিশ্বে এটা প্রথম। এটা নির্বাচনী তহবিল গঠনে গতি ও স্বচ্ছতা আনবে। মোদির সরকার নির্বাচন থেকে অর্ধেক দূরত্বে রয়েছে। সন্দেহ নেই, নরেন্দ্র মোদি আরেক মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হতে চাইবেন। তাঁর কাজ আরও সহজ হবে, কারণ কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী এখন আর তাঁর দুর্ধর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী নন। কিন্তু এখন দৃশ্যমান না হলেও এই বাজেট আগামী নির্বাচনের ফলাফলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, মোদি পুনর্নির্বাচিত হলে হিন্দুত্ববাদীরা আরও শক্তিশালী হবে। যাঁরা নাগপুর থেকে (আরএসএসের সদর দপ্তর) আদেশ পাবেন, তাঁরা দেশের সেবা করতে পারবেন না, যেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে মূল বৈশিষ্ট্য। ভারতের সংবিধান হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিষ্টান সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। বিজেপি সংবিধানের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারবে না। কারণ, সম্প্রতি দেশটির সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার কাজে ধর্ম বা গোত্রকে ব্যবহার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
অনুবাদ: রোকেয়া রহমান।
কুলদীপ নায়ার: ভারতীয় সাংবাদিক।
অনুবাদ: রোকেয়া রহমান।
কুলদীপ নায়ার: ভারতীয় সাংবাদিক।
No comments