সাম্প্রদায়িক সহিংসতার উৎসের সন্ধানে by হায়দার আকবর খান রনো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ঘটে যাওয়া জঘন্য ঘটনার জন্য নতুন করে নিন্দা জানাতে আমি কলম ধরিনি। দেশব্যাপী তো নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের যেতে হবে সমস্যার অনেক গভীরে। প্রথম আলোর ৫ নভেম্বরের সংখ্যায় কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান এক নিবন্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ওপর বিস্তারিত আলোচনার পর শেষ বাক্যে একটি বিরাট প্রশ্ন রেখেছেন। ‘এর (সহিংসতা) পেছনে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মনস্তাত্ত্বিক কারণটাই বা কী?’
এর পরিপূর্ণ উত্তর আমার জানা নেই। তবে যেটুকু উত্তর হয় বলে মনে করি, তা-ও খবরের কাগজের সীমাবদ্ধ পরিসরে দেওয়া সম্ভব নয়। আমি কিছু পয়েন্ট ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। তবে মূল একটা জায়গায় আমি জোরের সঙ্গে বলতে পারি যে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ অসাম্প্রদায়িক, উদারপন্থী ও গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন। আহার, বিবাহ, ছেলেমেয়েদের নাম রাখা ইত্যাদি ব্যাপারে পার্থক্য থাকলেও তারা সবাই একত্রে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে আসছে। এই দেশে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তন হয়েছিল সুফিবাদী ধর্ম প্রচারকদের দ্বারা। সুফি মতবাদের মধ্যে ছিল মানবতাবাদ ও উদারনৈতিক মনোভাব। অন্যদিকে ইসলাম ধর্ম প্রবর্তনের আগেই এ দেশে সহজিয়া মতবাদ নামে একটি বেদবিরোধী লোকায়ত দর্শন ও সংস্কৃতির প্রভাব ছিল। এই লোকায়ত মতবাদের শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা ছিলেন মহাপুরুষ শ্রীচৈতন্য, কবি চণ্ডীদাস এবং বাউল সাধকেরা, যাঁদের গান ছিল রবীন্দ্রনাথের ভাষায় গ্রামীণ গরিব জনগণের আদরের ধন। ঐতিহাসিক সুজিত আচার্য প্রমাণসহ দেখিয়েছেন যে, মধ্যযুগে বাংলার নিম্নবর্ণের হিন্দুরা তাঁদের লোকায়ত দর্শন ও সংস্কৃতির সঙ্গে সুফি মতবাদী ইসলাম প্রচারকদের চিন্তাধারার ও জীবনাচরণের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন বলেই তাঁরা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। উচ্চবর্ণ হিন্দু ও তথাকথিত আশরাফ বা সম্ভ্রান্ত মুসলমানদের মধ্যে যে ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল ধ্যানধারণা ছিল, তা সাধারণ গরিব হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কখনোই ছিল না। তবে ধর্মীয় পার্থক্য ও আচার-আচরণে কিছু পার্থক্য যে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছে, তা রবীন্দ্রনাথের পর্যবেক্ষণেও ধরা পড়েছিল। তিনি লিখেছেন, ‘ভারতবর্ষের এমনি কপাল যে, এখানে হিন্দু-মুসলমানের মতো দুই জাত একত্র হয়েছে;
এর পরিপূর্ণ উত্তর আমার জানা নেই। তবে যেটুকু উত্তর হয় বলে মনে করি, তা-ও খবরের কাগজের সীমাবদ্ধ পরিসরে দেওয়া সম্ভব নয়। আমি কিছু পয়েন্ট ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। তবে মূল একটা জায়গায় আমি জোরের সঙ্গে বলতে পারি যে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ অসাম্প্রদায়িক, উদারপন্থী ও গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন। আহার, বিবাহ, ছেলেমেয়েদের নাম রাখা ইত্যাদি ব্যাপারে পার্থক্য থাকলেও তারা সবাই একত্রে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে আসছে। এই দেশে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তন হয়েছিল সুফিবাদী ধর্ম প্রচারকদের দ্বারা। সুফি মতবাদের মধ্যে ছিল মানবতাবাদ ও উদারনৈতিক মনোভাব। অন্যদিকে ইসলাম ধর্ম প্রবর্তনের আগেই এ দেশে সহজিয়া মতবাদ নামে একটি বেদবিরোধী লোকায়ত দর্শন ও সংস্কৃতির প্রভাব ছিল। এই লোকায়ত মতবাদের শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা ছিলেন মহাপুরুষ শ্রীচৈতন্য, কবি চণ্ডীদাস এবং বাউল সাধকেরা, যাঁদের গান ছিল রবীন্দ্রনাথের ভাষায় গ্রামীণ গরিব জনগণের আদরের ধন। ঐতিহাসিক সুজিত আচার্য প্রমাণসহ দেখিয়েছেন যে, মধ্যযুগে বাংলার নিম্নবর্ণের হিন্দুরা তাঁদের লোকায়ত দর্শন ও সংস্কৃতির সঙ্গে সুফি মতবাদী ইসলাম প্রচারকদের চিন্তাধারার ও জীবনাচরণের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন বলেই তাঁরা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। উচ্চবর্ণ হিন্দু ও তথাকথিত আশরাফ বা সম্ভ্রান্ত মুসলমানদের মধ্যে যে ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল ধ্যানধারণা ছিল, তা সাধারণ গরিব হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কখনোই ছিল না। তবে ধর্মীয় পার্থক্য ও আচার-আচরণে কিছু পার্থক্য যে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছে, তা রবীন্দ্রনাথের পর্যবেক্ষণেও ধরা পড়েছিল। তিনি লিখেছেন, ‘ভারতবর্ষের এমনি কপাল যে, এখানে হিন্দু-মুসলমানের মতো দুই জাত একত্র হয়েছে;
ধর্মমতে হিন্দুর বাধা প্রবল নয়, আচারে প্রবল, আচারে মুসলমানের বাধা প্রবল নয়, ধর্মমতে প্রবল।’(কালান্তর) এই বিভাজনকে কাজে লাগিয়েছিল ইংরেজ শাসকেরা। তবে তারা কেবল উচ্চবিত্ত ও উচ্চবর্ণ হিন্দু ও তথাকথিত সম্ভ্রান্ত মুসলমানের মধ্যেই পারস্পরিক বিদ্বেষ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। কখনো কখনো তা গরিব শ্রেণির মধ্যে প্রসারিত হলেও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। উদাহরণস্বরূপ অষ্টাদশ শতাব্দীর ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, যা ছিল বস্তুত কৃষক বিদ্রোহ। অথবা ঊনবিংশ শতাব্দীর সিপাহি বিদ্রোহ (১৮৫৭) অথবা প্রজা বিদ্রোহ ও নীলচাষি বিদ্রোহ—সবই ছিল হিন্দু-মুসলমানের মিলিত লড়াই। এর সঙ্গে বাংলার রেনেসাঁর মহাপুরুষদের অথবা নবাব আবদুল লতিফের মতো মুসলিম জাতীয়তাবাদের প্রবক্তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। বঙ্কিমচন্দ্র যখন হিন্দু পুনর্জাগরণের প্রবক্তা হয়ে উঠেছিলেন, তখন ফরিদপুরে জন্মগ্রহণকারী ইংরেজের দেওয়া নবাব উপাধিধারী আবদুল লতিফ বাংলা ভাষাবিদ্বেষ ও হিন্দুবিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন এবং মুসলিম জাতীয়তাবাদের উৎস খুঁজছেন বাংলাদেশ বা ভারতবর্ষের বাইরে আরব, ইরান ও তুরস্কে। ওয়াহাবি ও ফরায়েজি আন্দোলন ছিল ব্রিটিশবিরোধী ও জমিদারবিরোধী জনপ্রিয় আন্দোলন এবং সে জন্য মহৎ। কিন্তু তার মধ্যে ধর্মীয় রং ছিল। যেমন ফরায়েজি নেতারা বললেন, ধুতি নাকি হিন্দুর পোশাক। ওয়াহাবি আন্দোলনের বীর নেতা শহীদ তিতুমীরও মুসলমানদের জন্য আরবি-ফারসিতে নাম রাখা ও আকিকা করার জন্য তাগিদ দিতেন। এসব প্রভাবে মুসলমানদের মধ্যে পোশাক-পরিচ্ছদ, সাংস্কৃতিক উৎসব (যথা নবান্ন) ইত্যাদি বিষয়ে হিন্দুদের থেকে পার্থক্য সৃষ্টি এবং অদ্ভুত ধরনের স্বাতন্ত্র্যবোধ তৈরির প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। কবি সোহরাব হাসান যে ধর্মীয় মনস্তাত্ত্বিক কারণ অনুসন্ধান করতে চেয়েছেন, তার ঐতিহাসিক উপাদানের কিছু কিছু এসবের মধ্যে পাওয়া যাবে। তবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মূল কারণ সন্ধান করতে হবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের মধ্যে। সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে কাজে লাগিয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। ১৯০৬ সালে একই বছর ব্রিটিশ শাসকদের সরাসরি মদদে সৃষ্টি হলো দুটি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল—মুসলিম লীগ ও হিন্দু মহাসভা। পাকিস্তান আন্দোলনও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের মদদে তৈরি হয়েছিল।
যদিও তা বিভিন্ন কারণে বাংলার মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট বাংলার মুসলিম লীগ সরকারের প্রত্যক্ষ প্ররোচনা ও সহযোগিতায় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। পরে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের দাঙ্গাবাজেরা তাতে অংশ নেয়। অথচ সেই বছরই ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘটিত হয়েছিল ঐতিহাসিক নৌবিদ্রোহ, ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলমান নাবিকদের সশস্ত্র অভ্যুত্থান। আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈনিকদের বিচার শুরু হলে রশীদ আলী দিবসকে কেন্দ্র করে কলকাতায় যে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল, তাতে হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষ ছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসাধারণ উপন্যাস চিহ্ন-এর নায়ক-নায়িকাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোক দেখতে পাই। তারপর আগস্ট মাসে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এর মাত্র কয়েক মাস পর ১৯৪৬-এর নভেম্বর মাস থেকে শুরু হলো গ্রামবাংলা-কাঁপানো তেভাগা আন্দোলন—আবার হিন্দু-মুসলমানের মিলিত লড়াই। পাকিস্তান আন্দোলন ছিল সাম্প্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল। কিন্তু মুসলমান মধ্যবিত্ত ও কৃষক এতে সমর্থন দিয়েছিলেন নিজ নিজ শ্রেণিস্বার্থের বিবেচনা থেকে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অল্প পরেই তাঁদের মোহভঙ্গ ঘটে এবং তাঁরা ক্রমান্বয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদে দীক্ষা লাভ করেন। ষাটের দশকে এই দীক্ষা পূর্ণতা লাভ করেছিল। ১৯৬৪ সালে তদানীন্তন আইয়ুব-মোনায়েম সরকারের সরাসরি উদ্যোগে ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল, যাতে বহু হিন্দু নাগরিক নিহত হন। কিন্তু তখন বাঙালি মধ্যবিত্ত মুসলমান এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সংবাদ ও ইত্তেফাক এই দুটি দৈনিকে একই সম্পাদকীয় লেখা হলো ‘পূর্ব বাংলা রুখিয়া দাঁড়াও’। শেখ মুজিবুর রহমানকে আহ্বায়ক এবং কমিউনিস্ট পার্টির আলী আকসাদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়েছিল,
যার কার্যালয় ছিল ভাসানী ন্যাপের সাইদুল হাসানের (যিনি ১৯৭১ সালে শহীদ হয়েছিলেন) তোপখানা রোডের অফিসে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে একধরনের জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল। দাঙ্গা প্রতিরোধ করতে গিয়ে যে আমীর হোসেন চৌধুরী জীবন দিয়েছিলেন, সে কথা সোহরাব হাসান তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ যত বিকশিত হবে, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা তত অপসারিত হবে। আর শ্রেণিসংগ্রাম যত তীব্র হবে, সাম্প্রদায়িকতা তত পরাভূত হবে। ষাটের দশকে শ্রমিক-কৃষকের আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠেছিল। আর জাতীয়তাবাদের যে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল, তা-ই পাকিস্তানি ভাবাদর্শকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিল। অন্যথায় একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ হতেই পারত না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কীভাবে আবার সাম্প্রদায়িকতা বিস্তার লাভ করল, সেটাই দেখার বিষয়। ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধের উত্তাপ থাকতে থাকতেই যে সংবিধান রচিত হয়েছিল, তাতে ধর্মনিরপেক্ষতা অন্যতম রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান ক্ষমতা সংহত করার জন্য আপস করলেন পাকিস্তানি ভাবাদর্শের সঙ্গে। মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী প্রভৃতি দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দিলেন; নিজের দলে ও মন্ত্রিসভায় তাঁদের স্থান দিলেন। এভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তি পুনর্জীবিত হলো। সাম্প্রদায়িকতাও ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করল।
জাতীয়তাবাদী শক্তির বিশ্বাসঘাতকতা ও বাম শক্তির ব্যর্থতাও এর জন্য দায়ী। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে দাবিদার আওয়ামী লীগেও ইতিমধ্যে ব্যাপক রূপান্তর ঘটেছে। হিন্দু সম্পত্তি দখলের প্রবল আকাঙ্ক্ষা এই দলের বহু নেতা-কর্মীকে সাম্প্রদায়িকতার জায়গায় নিয়ে গেছে। সোহরাব হাসান তাঁর লেখায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আর্থসামাজিক কারণ জানতে চেয়ে যে প্রশ্ন করেছেন, আমার মনে হয় সম্পত্তি দখলের প্রবণতার মধ্যে সেই প্রশ্নের কিছুটা উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত অভিযোগ করেছেন, কয়েক বছর ধরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা জড়িত ছিলেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবির বলেছেন, আওয়ামী লীগে জামায়াতীকরণ হয়েছে (প্রথম আলো, ৫ নভেম্বর ২০১৬)। সরকারদলীয় জনৈক মন্ত্রী ও জনৈক সাংসদ নাকি হিন্দুদের সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। রামুর ঘটনাতেও আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত সবাই জড়িত ছিল। নাসিরনগরে পুলিশ ও প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ছিল। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষ জড়িত নয়।
কিন্তু স্বার্থান্বেষী লোক ভুয়া অজুহাতে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে সম্পত্তি দখলের মতলব করে। আর এই দখল করার প্রবণতা উৎসাহ পায়, আশ্রয় পায় ক্ষমতাসীন মহল থেকে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জন্য ভাবাদর্শগত সহায়তা পায় শাসকগোষ্ঠীর আদর্শহীনতার রাজনীতির কাছ থেকে। সংবিধানে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম রেখে দেওয়া তেমনি আদর্শহীনতা ও আপস-আত্মসমর্পণের রাজনীতির বড় উদাহরণ। সরকারের মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন পর্যন্ত বলেছেন, ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে রাজনীতি। তিনি যথাযথই বলেছেন, ওই সংবিধানে ফিরে না গেলে রামু, সাঁথিয়া ও নাসিরনগরের মতো সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটতেই থাকবে। ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে বাধা কোথায়? বঙ্গবন্ধু যে সাহস দেখিয়ে ’৭২-এর সংবিধান রচনা করেছিলেন, শেখ হাসিনার পক্ষে সেখানে ফিরে যেতে বাধা কোথায়? অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করার মতো যে সাহস দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা, সেই সাহস তিনি কেন দেখাচ্ছেন না এ ক্ষেত্রে? বাধাটা আসলে কোথায়? বাধাটা কি তাঁর দলের মধ্যেই? বাধাটা কি সেই লুটপাটকারী শ্রেণির মধ্যেই, যে শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করছে তাঁর দল?
হায়দার আকবর খান রনো: রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি।
হায়দার আকবর খান রনো: রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি।
No comments