হুমকির মুখে ওবামার সাফল্য
ওবামার দুঃস্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তাঁর উত্তরসূরি হয়ে হোয়াইট হাউসে আসছেন এমন একজন, যিনি অঙ্গীকার করেছেন ওবামা প্রশাসনের অধিকাংশ অর্জন প্রথম দিন থেকেই বাতিল করার কাজে লেগে যাবেন। এই তালিকায় প্রথমেই আছে ওবামার প্রধান কৃতিত্ব নতুন স্বাস্থ্যবিমা, যা ‘ওবামাকেয়ার’ নামে পরিচিত। জলবায়ু চুক্তি ও আন্তপ্রশান্ত মহাসাগরীয় সহযোগিতা চুক্তি বাতিলেরও অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। এ ছাড়া তিনি অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের অঙ্গীকার করেছেন, ওবামা প্রায় সাড়ে সাত লাখ বৈধ কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীর স্বল্পকালীন স্বস্তির যে ব্যবস্থা করেছিলেন, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তাও বাতিল করার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। আপাতত সেই উদ্বেগ নিয়ে সময় ব্যয় করতে আগ্রহী নন ওবামা। গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে তিনি প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হন তাঁর এই উত্তরসূরির। মুখে বেদনার ছাপ নেই, ক্রোধ বা ঘৃণা তো নয়ই।
ওভাল অফিসে তাঁরা দুজনে নিভৃতে বসলেন, কথা বললেন। কথা ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎকার বড়জোর ১৫ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা স্থায়ী হবে। সেই সাক্ষাৎকার গড়াল দেড় ঘণ্টায়। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ওবামা বললেন, ‘নির্বাচন শেষ হয়েছে, এখন দলীয় আনুগত্য ত্যাগ করে আমাদের উচিত হবে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের প্রতি সমর্থনের হাত বাড়ানো। কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প সফল হলে আমরা সবাই সফল হব।’ ওবামার এই মন্তব্যকে অনেকেই ব্যক্তি হিসেবে ওবামার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বলে উল্লেখ করেছেন। এটি ছিল তাঁদের প্রথম বৈঠক। ট্রাম্প ও বিনয় শব্দটি কেউ এক নিশ্বাসে উচ্চারণ করে না। কিন্তু ওবামার পাশে ট্রাম্পকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি বিনীত বোধ করছেন। এ কথা বলেছেন সিএনএনের এক বিস্মিত প্রতিবেদক। সাংবাদিকদের সামনে কিছুটা হকচকিত ট্রাম্প বলেন, ‘আমার বিপুল শ্রদ্ধা রয়েছে।’ এ শ্রদ্ধা যে ওবামার প্রতি, এই অসম্পূর্ণ বাক্য থেকে তা বোঝা সম্ভব নয়, যদিও তিনি হয়তো সে কথা বুঝিয়ে থাকবেন। ট্রাম্প এমন কথাও বললেন, তাঁদের সবিস্তার আলোচনায় ওবামা তাঁকে এই প্রশাসনের সাফল্যের বিবরণ দিয়েছেন এবং আগামী চার বছর তাঁকে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে, সে সম্পর্কেও অবহিত করেছেন। ট্রাম্প এমন কথাও বললেন, ওবামার কাছ থেকে সময় সময় পরামর্শ পাওয়ার আশা তিনি করেছেন। ওবামার ঠিক কোন কোন কাজকে তিনি সাফল্য বলে মনে করেন, তা অবশ্য নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট খোলাসা করে বলেননি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভের মুখে এই দুই নেতার শ্রদ্ধামিশ্রিত বৈঠক আশার জন্ম দিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের উসকে দেওয়ার পরিবর্তে ওবামা ও হিলারি উভয়েই ট্রাম্পের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা ও সমর্থনের কথা বলেছেন, সে জন্য বিভিন্ন মহলে তাঁরা প্রশংসিত হয়েছেন। তবে ওবামা বা ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্ক খুব শান্তিপূর্ণ হবে না—এ কথা মনে করেন অধিকাংশ ভাষ্যকার। কংগ্রেসের উভয় কক্ষ এখন রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে, ফলে ট্রাম্পের পক্ষে তাঁর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে তেমন বেগ পেতে হবে না। সুপ্রিম কোর্টে এখন একটি পদ শূন্য রয়েছে, ওবামা যে মধ্যপন্থী বিচারককে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছিলেন, রিপাবলিকানরা তাঁর সেই প্রস্তাব আমলে আনেননি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর পছন্দমতো কঠোর রক্ষণশীল এমন একজন বিচারককে এই পদে মনোনয়ন দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ডেমোক্র্যাটরা জানিয়েছেন, বিনা যুদ্ধে যেকোনো রক্ষণশীল বিচারকের মনোনয়ন প্রস্তাব তাঁরা মেনে নেবেন না। নতুন সিনেটে তাঁদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে ৪৮টি পদ, এই সংখ্যা নিয়ে অধিকাংশ আইনি প্রস্তাব আটকানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব হবে না। তবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির প্রশ্নে বিতর্ক ঠেকাতে ৬০ সদস্যের সমর্থনের যে বিধান রয়েছে, যা ‘ফিলিবাস্টার’ নামে পরিচিত ডেমোক্র্যাটরা সেই আইনের প্রয়োগ করে বাধা সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন। তবে সেই চেষ্টা রাজনৈতিকভাবে লাভজনক কি না, সে প্রশ্নে ডেমোক্র্যাটরা দ্বিধাবিভক্ত। রিপাবলিকানরা গোড়া থেকেই ওবামা প্রশাসনের সব প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এসেছেন, যে কারণে তাঁরা সব মহলে সমালোচিত হয়েছেন। ডেমোক্র্যাটরা সেই পথ অনুসরণ করলে একই সমালোচনার মুখে তাঁরাও পড়তে পারেন। এই বৈরী পরিস্থিতিতে ওবামা প্রশাসনের প্রধান অর্জন ‘ওবামাকেয়ার’ বিষয়ে সুখবর এসেছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত স্থান থেকে। ট্রাম্প প্রশাসন এই স্বাস্থ্যবিমা বাতিল করে দিতে পারে—এই ভীতি থেকে লাখ লাখ মানুষ নতুন করে ওবামাকেয়ারে যোগ দিচ্ছেন। ওবামাকেয়ারের অধীনে সরকারি সাহায্য থাকায় সবচেয়ে লাভবান হয়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষেরা। এখন তাঁরা উদ্বিগ্ন, ট্রাম্প তাঁদের সেই সুযোগ কখন বাতিল করেন। বুধবার ট্রাম্পের বিজয় নিশ্চিত হওয়ার এক দিন পর সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই বিমা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন এক লাখ নতুন বিমাকারী—হোয়াইট হাউস থেকে এ কথা নিশ্চিত করা হয়েছে।
No comments