সমাজই এ যুদ্ধের প্রধান শিকার
কখন কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটবে এবং তা কে ঘটাবে, তা জানতে রাষ্ট্রযন্ত্রের এখনো বাকি আছে।’ কথাটি এ সময়ে মোক্ষম শোনাচ্ছে। উক্তিটা নবারুণ ভট্টাচার্যের উপন্যাস হারবার্ট-এর এক পুলিশ কর্মকর্তার। আজকের দুনিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনী হয়তো কিছু কিছু সন্ত্রাসী পরিকল্পনা আগাম জানতে বা প্রতিরোধ করতে পারবে কিন্তু শতভাগ কমিয়ে ফেলা কঠিন। এর অন্যতম কারণ সন্ত্রাসের বিশ্বায়ন ও সামাজিকায়ন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ ছিল আন্তর্জাতিক। এই যুদ্ধের কোনো সীমানা ছিল না। একইভাবে সন্ত্রাসও হয়ে উঠেছে বিশ্বায়িত। বিশেষ করে আইএসের সন্ত্রাসের মডেল এখন বিশ্বায়িত। প্রতিটি যুগেরই নিজস্ব ধরনের সন্ত্রাস থাকে বলে তত্ত্ব দিয়েছেন মার্কিন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ফিলিপ ববিট। তাঁর বক্তব্য সংক্ষেপে এই: যখন যে ধরনের শাসনব্যবস্থা ও রাজনীতির প্রাধান্য থাকে, সন্ত্রাসবাদ তারই প্রতিবিম্ব আকারে হাজির হয়। রাজতন্ত্রে রাজার প্রতিপক্ষ জলদস্যু সর্দারেরা নিজেরাও ছিল রাজার মতো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। ঔপনিবেশিক যুগে ছিল স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী গোষ্ঠী। জাতিরাষ্ট্রের যুগে আমরা দেখতে পাই বিদ্রোহী বাহিনীকে; যারা চায় পাল্টা জাতিরাষ্ট্র হয়ে উঠতে। আর এখন বিশ্বায়িত রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিক্রিয়ায় গড়ে উঠেছে বিশ্বায়িত সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক।
ফিলিপ ববিট বলছেন, এখনকার রাষ্ট্রগুলো হলো বাজার-রাষ্ট্র (মার্কেট স্টেট)। এই রাষ্ট্রগুলো গড়ে উঠেছে ব্যক্তির নিজস্ব চাহিদাকে রক্ষা করার কথা বলে। এই রাষ্ট্রগুলো যে রকম, এর বিরুদ্ধে লড়াইরত সন্ত্রাসী সংগঠনের কাজের ধরনও তেমনই। এ ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং তার শত্রু পরস্পরের আয়না, যদিও তাদের উদ্দেশ্যটা বিপরীত। আইএসও বাজার রাষ্ট্রের খোলাবাজারের মতো খোলা, তারও আছে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক। তারাও বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার মতো বিকেন্দ্রীভূত এবং প্রয়োজনীয় পণ্য ও জনবল বাইরে থেকে (আউটসোর্সিং) সংগ্রহে অভ্যস্ত। ফলে নির্দিষ্ট কোনো সীমান্ত, ভূমি ও নেটওয়ার্কে আক্রমণ করলেই এরা ধ্বংস হবে না। এরা যেমন কোনো স্থানে দৃশ্যমান থেকে কাজ করতে পারে (যেমন ইরাক ও সিরিয়া), তেমনি প্রয়োজনমাফিক তরল হয়ে ছড়িয়েও পড়তে পারে। তারই প্রমাণ তারা রেখে যাচ্ছে প্যারিস, ইস্তাম্বুল, জাকার্তা, ঢাকাসহ বড় বড় নগরীতে। বর্তমানে ক্ষমতা ও অর্থনীতির কেন্দ্র হলো মেট্রোপলিটন নগরগুলো। সন্ত্রাসী হামলার নিশানাও তাই বড় বড় নগর। সীমান্ত রক্ষার চেয়ে নগরগুলোর নিরাপত্তা বাঁচানোই এখন হয়ে পড়েছে প্রধান নিরাপত্তা প্রশ্ন।
তারা আপনার ঘরের সন্তানদের তাদের সৈনিক বানাতে পারে। তাদের অস্ত্র তৈরি করে দিতে পারে অস্ত্র কোম্পানিগুলো। তারা বিক্রি করতে পারে তাদের দখল করা খনির তেল। আপনার শহরকে বানাতে পারে তাদের যুদ্ধের ময়দান। ফ্রান্সে যা দেখা গেল, সাধারণ একটি ট্রাককেও তারা করে তুলতে পারে গণবিধ্বংসী অস্ত্র। গণমাধ্যমগুলোকে তারা নিজেদের প্রচারেও ব্যবহার করতে পারে। তাদের হামলার সরাসরি সম্প্রচার যেন সন্ত্রাসবাদেরই বিজ্ঞাপন। তাই বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র, বাজার, অস্ত্র ব্যবসা এবং ভূরাজনীতির সমস্যা সমাধান না করে, সন্ত্রাসবাদমুক্ত পৃথিবী গড়ার চিন্তা না করাই ভালো। আইএস নিওলিবারেল তরিকায় সন্ত্রাসকেও প্রাইভেটাইজ করে নিতে পেরেছে। যেকোনো জায়গার যেকোনো নাগরিক হঠাৎ দূরনিয়ন্ত্রিত ডাকে জঙ্গি পরিকল্পনা নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। গুলশান ঘটনায় যতটুকু জানা যাচ্ছে, তাতে একই সমাজের মধ্যে বেড়ে ওঠা ‘চেনা চেনা লাগে তবু অচেনা’ জঙ্গির আবির্ভাব নিয়ে আর সন্দেহ থাকা উচিত নয়। এরা সামাজিক নেটওয়ার্কের চেয়ে ভার্চ্যুয়াল নেটওয়ার্কের ওপর বেশি নির্ভরশীল। এভাবে বস্তুগত শক্তি থেকে তারা ধারণাগত শক্তির পর্যায়ে চলে গেছে।
তারা এটা করতে পেরেছে দেশে দেশে সামাজিক পর্যায়ে ঘৃণার বিস্তার ঘটিয়ে। এ ব্যাপারেও তারা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের পাণ্ডুলিপিই মেনে চলছে। কীভাবে? পশ্চিমাদের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ প্রথমে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে (আফগানিস্তান ও ইরাক) চললেও ক্রমেই তা পরিচয়ের সঙ্গে পরিচয়ে, সমাজের সঙ্গে সমাজের এবং সভ্যতার সঙ্গে সভ্যতার যুদ্ধের আদল নেয়। জর্জ বুশ ঘোষণা করেছিলেন, এই যুদ্ধ ‘ওদের’ বিরুদ্ধে ‘আমাদের’। বাড়ানো হয়েছিল মুসলিম সমাজ ও ব্যক্তির ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ। মুসলিম মাত্রই সম্ভাব্য সন্ত্রাসী অথবা সন্ত্রাসের সমর্থক—এমন ধারণার পৃষ্ঠপোষকতাও করা হয়েছে। এর ফল হলো, যুদ্ধের ময়দান রাষ্ট্র-সীমান্ত থেকে সামাজিক সীমান্ত পর্যন্ত প্রসারিত করে দেওয়া। একই দেশের, একই জাতির, একই ধর্মের, একই সমাজের মানুষ বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। সমাজের মধ্যে আগে থেকে বিরাজ করা ফাটলগুলো পরিণত হচ্ছে হিংসার খাদে। সামাজিক ময়দানে চলা এই যুদ্ধ সমাজটাকেই ঘৃণায়িত ও আতঙ্কিত করে তুলছে। এভাবে সন্ত্রাসমূলক যুদ্ধ ক্রমেই সামাজিক যুদ্ধে পরিণত হচ্ছে। এবং এর শিকার প্রধানত বেসামরিক সাধারণ মানুষ। শুধু এক ধরনের সন্ত্রাসই ঘটছে না; আমেরিকায় সাদা-কালোর হানাহানি, নরওয়ের ব্রেইভিকের মতো মুসলিমবিদ্বেষী সন্ত্রাসী হামলা কিংবা অতি সম্প্রতি ব্রিটেনে অভিবাসীবিরোধী সন্ত্রাসবাদীর হাতে ব্রিটিশ এমপি হত্যার ঘটনাও পাশ্চাত্য সমাজের মধ্যে বিভক্তি ও হিংসা ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ।
ফিলিপ ববিট বলছেন, এখনকার রাষ্ট্রগুলো হলো বাজার-রাষ্ট্র (মার্কেট স্টেট)। এই রাষ্ট্রগুলো গড়ে উঠেছে ব্যক্তির নিজস্ব চাহিদাকে রক্ষা করার কথা বলে। এই রাষ্ট্রগুলো যে রকম, এর বিরুদ্ধে লড়াইরত সন্ত্রাসী সংগঠনের কাজের ধরনও তেমনই। এ ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং তার শত্রু পরস্পরের আয়না, যদিও তাদের উদ্দেশ্যটা বিপরীত। আইএসও বাজার রাষ্ট্রের খোলাবাজারের মতো খোলা, তারও আছে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক। তারাও বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার মতো বিকেন্দ্রীভূত এবং প্রয়োজনীয় পণ্য ও জনবল বাইরে থেকে (আউটসোর্সিং) সংগ্রহে অভ্যস্ত। ফলে নির্দিষ্ট কোনো সীমান্ত, ভূমি ও নেটওয়ার্কে আক্রমণ করলেই এরা ধ্বংস হবে না। এরা যেমন কোনো স্থানে দৃশ্যমান থেকে কাজ করতে পারে (যেমন ইরাক ও সিরিয়া), তেমনি প্রয়োজনমাফিক তরল হয়ে ছড়িয়েও পড়তে পারে। তারই প্রমাণ তারা রেখে যাচ্ছে প্যারিস, ইস্তাম্বুল, জাকার্তা, ঢাকাসহ বড় বড় নগরীতে। বর্তমানে ক্ষমতা ও অর্থনীতির কেন্দ্র হলো মেট্রোপলিটন নগরগুলো। সন্ত্রাসী হামলার নিশানাও তাই বড় বড় নগর। সীমান্ত রক্ষার চেয়ে নগরগুলোর নিরাপত্তা বাঁচানোই এখন হয়ে পড়েছে প্রধান নিরাপত্তা প্রশ্ন।
তারা আপনার ঘরের সন্তানদের তাদের সৈনিক বানাতে পারে। তাদের অস্ত্র তৈরি করে দিতে পারে অস্ত্র কোম্পানিগুলো। তারা বিক্রি করতে পারে তাদের দখল করা খনির তেল। আপনার শহরকে বানাতে পারে তাদের যুদ্ধের ময়দান। ফ্রান্সে যা দেখা গেল, সাধারণ একটি ট্রাককেও তারা করে তুলতে পারে গণবিধ্বংসী অস্ত্র। গণমাধ্যমগুলোকে তারা নিজেদের প্রচারেও ব্যবহার করতে পারে। তাদের হামলার সরাসরি সম্প্রচার যেন সন্ত্রাসবাদেরই বিজ্ঞাপন। তাই বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র, বাজার, অস্ত্র ব্যবসা এবং ভূরাজনীতির সমস্যা সমাধান না করে, সন্ত্রাসবাদমুক্ত পৃথিবী গড়ার চিন্তা না করাই ভালো। আইএস নিওলিবারেল তরিকায় সন্ত্রাসকেও প্রাইভেটাইজ করে নিতে পেরেছে। যেকোনো জায়গার যেকোনো নাগরিক হঠাৎ দূরনিয়ন্ত্রিত ডাকে জঙ্গি পরিকল্পনা নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। গুলশান ঘটনায় যতটুকু জানা যাচ্ছে, তাতে একই সমাজের মধ্যে বেড়ে ওঠা ‘চেনা চেনা লাগে তবু অচেনা’ জঙ্গির আবির্ভাব নিয়ে আর সন্দেহ থাকা উচিত নয়। এরা সামাজিক নেটওয়ার্কের চেয়ে ভার্চ্যুয়াল নেটওয়ার্কের ওপর বেশি নির্ভরশীল। এভাবে বস্তুগত শক্তি থেকে তারা ধারণাগত শক্তির পর্যায়ে চলে গেছে।
তারা এটা করতে পেরেছে দেশে দেশে সামাজিক পর্যায়ে ঘৃণার বিস্তার ঘটিয়ে। এ ব্যাপারেও তারা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের পাণ্ডুলিপিই মেনে চলছে। কীভাবে? পশ্চিমাদের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ প্রথমে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে (আফগানিস্তান ও ইরাক) চললেও ক্রমেই তা পরিচয়ের সঙ্গে পরিচয়ে, সমাজের সঙ্গে সমাজের এবং সভ্যতার সঙ্গে সভ্যতার যুদ্ধের আদল নেয়। জর্জ বুশ ঘোষণা করেছিলেন, এই যুদ্ধ ‘ওদের’ বিরুদ্ধে ‘আমাদের’। বাড়ানো হয়েছিল মুসলিম সমাজ ও ব্যক্তির ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ। মুসলিম মাত্রই সম্ভাব্য সন্ত্রাসী অথবা সন্ত্রাসের সমর্থক—এমন ধারণার পৃষ্ঠপোষকতাও করা হয়েছে। এর ফল হলো, যুদ্ধের ময়দান রাষ্ট্র-সীমান্ত থেকে সামাজিক সীমান্ত পর্যন্ত প্রসারিত করে দেওয়া। একই দেশের, একই জাতির, একই ধর্মের, একই সমাজের মানুষ বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। সমাজের মধ্যে আগে থেকে বিরাজ করা ফাটলগুলো পরিণত হচ্ছে হিংসার খাদে। সামাজিক ময়দানে চলা এই যুদ্ধ সমাজটাকেই ঘৃণায়িত ও আতঙ্কিত করে তুলছে। এভাবে সন্ত্রাসমূলক যুদ্ধ ক্রমেই সামাজিক যুদ্ধে পরিণত হচ্ছে। এবং এর শিকার প্রধানত বেসামরিক সাধারণ মানুষ। শুধু এক ধরনের সন্ত্রাসই ঘটছে না; আমেরিকায় সাদা-কালোর হানাহানি, নরওয়ের ব্রেইভিকের মতো মুসলিমবিদ্বেষী সন্ত্রাসী হামলা কিংবা অতি সম্প্রতি ব্রিটেনে অভিবাসীবিরোধী সন্ত্রাসবাদীর হাতে ব্রিটিশ এমপি হত্যার ঘটনাও পাশ্চাত্য সমাজের মধ্যে বিভক্তি ও হিংসা ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ।
এভাবে সমাজ সমতল যেন মাইনফিল্ড হয়ে উঠছে। এই মাইনফিল্ডে কখন কোথায় চাপ পড়লে বিস্ফোরণ ঘটবে, তা আগাম জানার উপায় থাকে না। এ জন্যই বলা যে, ‘কখন কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটবে এবং তা কে ঘটাবে, তা জানতে রাষ্ট্রযন্ত্রের এখনো বাকি আছে।’ এই বিপদ থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হলে সমাজে শান্তি ও সহনশীলতা আনতে হবে। আর গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছাড়া সেটা সম্ভব হওয়ার কথা নয়। সন্ত্রাস ও যুদ্ধের মোকাবিলা কেবল নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে করা যাবে না। যায়নি কোথাও। বলপ্রয়োগ আরও বলপ্রয়োগের রাস্তা খুলে দেয়। আজ ঘৃণাবাদীরা ধর্ম-পরিচয়কে সশস্ত্র ও তেজস্ক্রিয় করে তুলতে পারছে, তার কারণ পরিচয়ের সংঘাত আগে থেকেই ছিল। মানুষ শুধু অভাবে বদলে যায় না, মর্যাদাহীনতায়ও কেউ কেউ বিগড়ে যেতে পারে। গণতন্ত্র ছাড়া ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় ও স্বার্থগুলোর মীমাংসায় আসার আর কোনো ভালো উপায় আমাদের হাতে নেই। গণতন্ত্র ছাড়া মীমাংসার উপায় হলো বলপ্রয়োগ—গায়ের জোর। রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ আর জঙ্গিবাদী বলপ্রয়োগ একে অপরের আয়না। কম বলপ্রয়োগ বেশি অংশীদারিই হলো গণতন্ত্রের প্রথম ধাপ। প্রথম ধাপটা থাকে মাটির ওপর। আপনি যদি প্রথম ধাপ মিস করেন, তার মানে আপনার পা আর মাটিতে নেই। গণতন্ত্রহীন জাতির হাত-পা বাঁধা থাকে, সন্ত্রাসের বিপক্ষে তারা কোনো বাধাই তৈরি করতে পারে না।
ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক ও লেখক।
bagharu@gmail.com
ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক ও লেখক।
bagharu@gmail.com
No comments