ঘরেই বিরোধী নেত্রী শিনজোর স্ত্রী
জাপানের একসময়কার জনপ্রিয় রেডিও ডিস্ক জকি আকি আবের এখন দেশটির প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী। ফার্স্ট লেডি আকির জীবনদর্শন হচ্ছে ‘মনের কথা প্রকাশ করতে পারে না যে নারী, হতাশা নিয়েই তাকে জীবন করতে হয় ফেরি।’ আকি ফার্স্টলেডি হওয়ার প্রথম স্বাদ পেয়েছেন ২০০৬ সালে। সেবার শিনজো আবে প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তবে আকি যেন স্বামীর সরকারি ঘরে বিরোধী দলীয় নেত্রী। কী ঘরে কী বাইরে, কোনো বিষয়ে মতের মিল না হলে খোলাখুলি কথা বলতে পছন্দ করেন আকি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী স্বামীর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেরও তিনি কড়া সমালোচনা করেন যদি তার কাছে সিদ্ধান্তটা অযৌক্তিক, অ-ন্যায়সঙ্গত, অর্থহীন লাগে। স্বামীর কড়া সমালোচনা শুধু যে ঘরে বসেই করেন তা নয়। দরকার পড়লে ফলাও করে মিডিয়ার কাছেও মুখ খুলতে কোনো সাত-পাঁচ ভাবেন না আকি। ধরুন, পুনরায় পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্র চালু করতে চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।
আকি মুখ ফুটে বলেই ফেললেন, এটা করা ঠিক হবে না। শিনজোর সরকার এক লাফেই কর বাড়াচ্ছে, প্রতিবাদী আকি মুখ বন্ধ করে বসে থাকার পাত্রী নন। ফুটফাট এই নীতির বিপক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরলেন, তাও আবার মিডিয়ার সামনে। ২০১১ সালের সুনামিতে টোহোকু উপকূলের সমুদ্র-প্রাচীর ধ্বংস হয়ে যায়। এ জন্য শিনজোর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি পরিকল্পনা করছে, ওরকমই আরেকটা বড়সড় প্রাচীর তৈরি করবে তারা। ঠোঁটকাটা আকি বলে বসলেন, ‘ব্যাড আইডিয়া।’ এইসব কারণে আকি আবেকে বলা হয়, ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’। জাপানের বিরোধী দলের নেতারাও বোধহয় শিনজো আবের নেওয়া কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এত বড় অবস্থান নিতে পারেন না যা শিনজোর বউ হয়েও করে দেখান আকি। বিরোধী দলের প্রতিবাদের ভাষা আকির বিরোধীকণ্ঠের কাছে যেন ক্ষীণসুর। জাপানের ইতিহাসে এ রকম ফার্স্টলেডি কখনও দেখা যায়নি। বউমা আকিকে দেখে একটু অবাকই হন শাশুড়ি ইয়োকো আবে। বউমার মতো তিনি কখনও জনসম্মুখে বলিষ্ঠ কণ্ঠে নিজের মত তুলে ধরতে পারেননি। অথচ তার বাবা নোবোসাকি কিশি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী (১৯৫৭-১৯৬০)। স্বামী শিনটারো আবে ছিলেন পররাস্ট্রমন্ত্রী (১৯৮২-১৯৮৬)।
No comments