বিজেপিকে রুখতে রাষ্ট্রপতির দ্বারে এএপি
দিল্লিতে ‘পেছনের দরজা দিয়ে’ বিজেপির সরকার গঠনের উদ্যোগ রুখতে আম আদমি পার্টি (এএপি) রাষ্ট্রপতির শরণাপন্ন হলো। এএপি নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল গতকাল শনিবার রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে দেখা করে বলেন, অনৈতিক উপায়ে সরকার গঠনের এ আরজিতে তিনি যেন অনুমতি না দেন। কেজরিওয়াল বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও বিজেপিকে সরকার গড়তে দিলে সেটা হবে গণতন্ত্রের হত্যা। তারা টাকা দিয়ে দল ভাঙানোর খেলা শুরু করবে। বিজেপির সাবেক সভাপতি রাজনাথ সিং এএপির এ অভিযোগের জবাবে বলেছেন, সরকার গড়তে তাঁদের অনৈতিক পথ ধরতে হয় না। উপরাজ্যপাল তাঁদের ডাকলে তখন তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন কী করবেন। দিল্লিতে সরকার গঠনের এ উদ্যোগ নিয়েছেন উপরাজ্যপাল নাজিব জং। গত শুক্রবার রাষ্ট্রপতিকে পাঠানো এক প্রস্তাবে তিনি বলেন, সরকার গঠনের জন্য বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বিজেপিকে ডাকার অনুমতি দেওয়া হোক। তাঁর বক্তব্য, নতুন করে নির্বাচনের ঘোষণার আগে দেখা দরকার, গরিষ্ঠ দল সরকার গঠনে আগ্রহী কি না। গত বছরের ডিসেম্বরে ভোটের পর কোনো দলই গরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী একক গরিষ্ঠ দল হিসেবে উপরাজ্যপাল বিজেপিকে আমন্ত্রণ জানান। বিজেপি চিঠি দিয়ে জানায়, তাদের পক্ষে সরকার গড়া সম্ভব নয়, যেহেতু তাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। বিজেপি রাজি না হওয়ায় কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে এএপি সরকার গঠন করে।
কিন্তু ৪৯ দিনের মাথায় মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল পদত্যাগ করায় বিধানসভা জিইয়ে রেখে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হয়। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে (রাজধানী হওয়ায় দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ এক বছরের। অন্যত্র ছয় মাসের) সরকার গড়ার এটা শেষ চেষ্টা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, স্থায়ী সরকার গঠনের সম্ভাবনা না থাকলে অগত্যা আবার ভোট। উপরাজ্যপালের এ প্রচেষ্টার পেছনে অন্য একটা তাগিদও রয়েছে। দিল্লিতে ভোট গ্রহণের দাবিতে এএপির পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাতে হবে দিল্লি নিয়ে তাদের ভাবনা কী। সেই শুনানির আগে উপরাজ্যপালের এ উদ্যোগ, যাতে কেন্দ্রীয় সরকারকে আদালতে ভৎ৴সনা সইতে না হয়। বিজেপি কী করবে তা এখনো ঠিক নয়। সরকার গড়া নিয়ে দল বিভক্ত। দলের রাজ্য নেতাদের অধিকাংশ সরকার গড়তে আগ্রহী। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা অন্য দল ভাঙিয়ে সরকার গড়া পছন্দ করছেন না। বিজেপির তিন বিধায়ক লোকসভা ভোটে জিতলেও এখনো তাঁরা বিধানসভার সদস্যপদ ত্যাগ করেননি। ছয় মাসের মধ্যে তাঁদের কোনো একটি পদ ছাড়তে হবে। প্রশ্ন, লোকসভার সদস্য হয়ে তাঁরা কি বিধানসভার আস্থাভোটে অংশ নেবেন? কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন তা করতে রাজি নন। তাঁরা আস্থাভোটে অংশ নিলেও কংগ্রেস বা এএপির ঘর না ভাঙালে বিজেপি সরকার গড়তে পারবে না। সরকার গঠন না হলে চলতি বছরের শেষে চার রাজ্যের বিধানসভার সঙ্গেই দিল্লির ভোট হয়ে যেতে পারে।
No comments