ক্ষমতা ছাড়বেন না মালিকি
ইরাকের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকি বলেছেন, তিনি আদালতের নির্দেশ ছাড়া ক্ষমতা ছাড়বেন না। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হায়দার আল-ইবাদিকে মনোনীত করায় ক্ষুব্ধ মালিকি এক টেলিভিশন ভাষণে গতকাল বুধবার এ কথা বলেন। প্রেসিডেন্ট ফুয়াদ মাসুমের কাছ থেকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ পাওয়া ইবাদি এখনো বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে সমর্থন পাচ্ছেন। এদিকে উত্তর ইরাকে আটকা পড়া লোকজন এখনো গণহত্যার হুমকিতে রয়েছে বলে জাতিসংঘ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে সে দেশে আরও ১৩০ জন সামরিক উপদেষ্টা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির। ইরাকে গত মে মাসে নির্বাচন হওয়ার পর থেকেই নতুন সরকার গঠন নিয়ে টানাপোড়েন চলে আসছে। মূলত এর সুযোগ নিয়েই সুন্নিপন্থী জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) দেশটির বিরাট এলাকা থেকে সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে দেয়। এমন প্রেক্ষাপটে গত সোমবার পার্লামেন্টের শিয়াপন্থী সদস্যরা ইবাদিকে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দেন। প্রধানমন্ত্রী মালিকি বলেছেন, ইবাদিকে প্রধানমন্ত্রী পদে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট মাসুমের সিদ্ধান্ত সংবিধানের ‘লঙ্ঘন’এবং এর ‘কোনো মূল্য নেই’।
গতকাল টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করে বলছি, সরকার শাসনকাজ অব্যাহত রাখবে। কেন্দ্রীয় আদালতের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত সরকার বদল হবে না।’ মালিকির বক্তব্য এমন সময়ে এল যখন ইরাকে আইএস জঙ্গিদের রুখতে এবং উদ্বাস্তু হয়ে পড়া ইরাকিদের রক্ষায় বিশ্বকে আরও অনেক কিছু করতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে জাতিসংঘ। বিশ্ব সংস্থাটির উদ্বাস্তুবিষয়ক কমিশনের মুখপাত্র আদ্রিয়ান এডওয়ার্ডস বলেন, ইরাকের সিনজার পাহাড়ে এখনো ২০ থেকে ৩০ হাজারের মতো ইয়াজিদি ও খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য এখনো আটকা রয়েছে। তারা আইএসের আক্রমণের মুখে সেখানে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘের সংখ্যালঘুদের অধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ রিটা ইজাক বলেন, আটকে পড়া ওই মানুষগুলো এখনো গণহত্যার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। জিহাদিরা আগামী কয়েক দিন বা ঘণ্টার মধ্যেই সেখানে গণহত্যা চালাতে পারে বলে সতর্ক করে দেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইরাক সরকারের সহায়তায় সিনজার পাহাড়ে মঙ্গলবার ষষ্ঠবারের মতো বিমান থেকে পানি ও খাবারসামগ্রী ফেলা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, সিনজার পাহাড়ে আটকা পড়া মানুষগুলোকে দ্রুত উদ্ধার করে আনার উপায় খুঁজছেন তাঁরা। ওই এলাকায় আইএস জঙ্গিদের রুখতে সামরিক সহায়তাও বাড়ানো হচ্ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র উত্তর ইরাকে মানবিক সংকট পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে আরও ১৩০ জন সামরিক উপদেষ্টা পাঠিয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন মেরিন ও বিশেষ অভিযান পরিচালনাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট বলেছেন, তাঁরাও সেখানে ত্রাণ তৎপরতায় শিগগিরই যোগ দেবেন।
অধিকতর সামরিক সম্পৃক্ততার সম্ভাবনাও তিনি উড়িয়ে দেননি। ইবাদির পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন: ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইবাদিকে মালিকির স্থলাভিষিক্ত করার উদ্যোগকে এরই মধ্যে সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেকেই। তবে মালিকির জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা এসেছে ইরানের পক্ষ থেকে। দেশটি এক বার্তায় ইবাদিকে অভিনন্দন জানিয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সচিব ও প্রতিনিধি আলি শামখানি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হায়দার আল-ইবাদি মনোনীত হওয়ায় আমরা তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ শিয়াপ্রাধান্যপুষ্ট ইরান দীর্ঘদিন ধরেই মালিকিকে সমর্থন দিয়ে আসছিল। তবে মঙ্গলবারের ওই বার্তার মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটল বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে মঙ্গলবার নুতন মনোনীত প্রধানমন্ত্রী ইবাদির বাসভবনের কাছের চেকপোস্টে এক আত্মঘাতী হামলাকারী নিজেকে বোমায় উড়িয়ে দিয়েছে। আর কেউ হতাহত হয়েছে কি না, পুলিশ তা জানায়নি। কুর্দিদের অস্ত্র দেওয়ার ঘোষণা: যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ঘোষণা দিয়েছে, তারা ইরাকের কুর্দি যোদ্ধাদের অস্ত্র দেবে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ গতকাল বলেন, ফ্রান্স শিগগিরই কুর্দি যোদ্ধাদের অস্ত্র সরবরাহ করবে। এর আগে যুক্তরাজ্য জানায়, তারা কুর্দি বাহিনীর জন্য সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
No comments