আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সরকার by সাজেদুল হক
ইস্যু মূলত তিনটি। ৫ই জানুয়ারির
নির্বাচন, মানবাধিকার আর যুদ্ধাপরাধের বিচার। তিন ইস্যুতেই সরকারের ওপর চাপ
বাড়ছে। দিল্লির মসনদে পরিবর্তন চাপা উত্তেজনা তৈরি করেছে ঢাকায়। সরকার আর
বিরোধী শিবিরে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। পশ্চিমা দুনিয়ার অবস্থান আগ থেকেই
পরিষ্কার। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগাদা দিয়ে আসছিল তারা। শুরু থেকে
একমাত্র ভারতই ছিল ‘একদলীয়’ নির্বাচনের পক্ষে। পরে অবশ্য ‘লাভের’
রাজনীতিতে চীন আর রাশিয়াকেও কাছে টানতে সক্ষম হয় সরকার। তবে একটি
গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমা
দুনিয়ার চাপ যে অব্যাহত রয়েছে তা পরিষ্কার। সর্বশেষ বিদায়ী জার্মান
রাষ্ট্রদূত আলব্রেখট কনজে বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তাই যেন উচ্চারণ করলেন।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, সূচনালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ নানা রকম চ্যালেঞ্জ
মোকাবিলা করে আসছে। কিন্তু আগামী মাস এবং বছরগুলোতে বাংলাদেশ যে
চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে, তার ধরন অতীতের চেয়ে আলাদা হবে। ৫ই জানুয়ারির
নির্বাচন নিয়ে ইউরোপের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। তবে অতীতের চেয়ে ভবিষ্যৎ
বেশি গুরুত্বপূর্র্ণ এটাই আমার উত্তরসূরিকে বলে যাব।
যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে অবশ্য শুরুর দিন থেকেই চাপের মুখে ছিল সরকার। আন্তর্জাতিক দুনিয়া এ বিচারের পক্ষে থাকলেও সবসময় বিচারের আন্তর্জাতিক মান রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছিল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ বিচারের মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আইন সংশোধন করে তার ব্যাপারে সরকারকে আপিল দায়েরের সুযোগ দেয়া হয়। পরে সরকারের আপিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়। তবে যুদ্ধাপরাধ বিচারের ইস্যুতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনোভাবে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনে জামায়াতের বিচারের বিপক্ষে মত দিয়েছেন আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক। আইন সংশোধন না করে এ বিচার করা যাবে না বলে মনে করেন তিনি। যুদ্ধাপরাধ বিচার ইস্যুতে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের ইস্যুটিও পরিষ্কার হয়ে যায় তার কথায়। তিনি বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে সরকার বদ্ধপরিকর, কিন্তু অবশ্যই আইনের সুনির্দিষ্ট বিধান প্রতিপালন করে। বিচার যাতে কোনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্য এসব ব্যাপারে আইনের অবস্থান আরও স্পষ্ট করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সবকিছু বিবেচনা করে জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর বিষয়টি আরও ভাবনা-চিন্তা করে নিতে হবে। এখন সেটার সময় নয়। আজ জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা হবে, কাল আইন পরিবর্তন করা হবে, আমি এর পক্ষে নই। আমাকে সারা পৃথিবীতে ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে কাদের মোল্লার ব্যাপারে। কোন বিষয়ে কেউ প্রশ্ন তুলুক আমি তা চাই না।’ যদিও জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন ধরনের সমঝোতার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে জামায়াতের বিচার ইস্যুতে তার এ বক্তব্য আকস্মিক নয়। গত কয়েক মাসেই স্পর্শকাতর বেশ কিছু ইস্যুতে সরকারের মনোভাবে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। গণজাগরণ মঞ্চের ওপর থেকে সরকারের সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে-বাইরে তোলপাড় চলছে। এরই মধ্যে মঞ্চ দুই ভাগ হয়ে গেছে। মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। অন্যদিকে, জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা নিয়েও কিছুদিন ধরে গুঞ্জন চলে আসছে। হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সঙ্গে বন্ধুত্বের ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারপক্ষও এ ব্যাপারে নীরবতা পালন করে আসছে। তবে যুদ্ধাপরাধ বিচার ইস্যুতে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সরকারের ওপর বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য চাপ প্রয়োগ করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। গণতন্ত্রের ইস্যুটি সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ইস্যুটি মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। জামায়াতের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। দলটির নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাটিতে রায় ঘোষণা করবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ১৬ই এপ্রিল থেকে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী এবং নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাশেম আলীর মামলা। এ তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতার রায়কে সামনে রেখে জামায়াতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। বিশেষ করে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে। যে কারণে তাকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন জামায়াত। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক দুনিয়া এখন আরও সক্রিয় বলে জামায়াতেরও একটি সূত্র দাবি করেছে। জামায়াতের এক নীতিনির্ধারক এ ব্যাপারে বলেন, আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি সরকার কার্যকর করে ফেলবে তা অনেকেই বিশ্বাস করেননি। যে কারণে এখন তারা সক্রিয় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, গুম-খুন ঘিরে মানবাধিকার ইস্যুতেও সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। নারায়ণগঞ্জে সাত খুন এবং ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হকের নির্মম হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক দুনিয়ার নজর কেড়েছে। এর আগে বিএনপি ও জামায়াতের বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে গুম ও ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগ রয়েছে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বিরুদ্ধে। হিউম্যান রইটস ওয়াচ এরই মধ্যে র্যাব বিলুপ্তির আহ্বান জানিয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা র্যাবের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। পশ্চিমা কূটনীতিকরা একাধিক মাধ্যমে গুম-খুনে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। দেশের অভ্যন্তরেও র্যাব বিলুপ্তির দাবি জোরালো হচ্ছে।
৫ই জানুয়ারি নির্বাচন প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। সব সময়ই একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলে আসছে তারা। বিপরীত অর্থে ভারতও অবশ্য একই অবস্থানে ছিল। ‘একদলীয়’ নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান ছিল স্পষ্ট। চীনের অবস্থান ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হয়েছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ব্যবসায়িক স্বার্থ বিবেচনায় চীন ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে সমর্থনই করেছে। একই অবস্থান রাশিয়ারও। সাম্প্রতিক নানা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির দাবা খেলার ঘুঁটি হিসেবে যেন বাংলাদেশও ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে ভারতের মসনদ থেকে কংগ্রেসের বিদায় আর নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নতুন করে ঢাকায়ও তৈরি হয়েছে নানা সমীকরণ। চাউর রয়েছে ভারতের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির প্রতি সমর্থন ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। টানাপড়েন কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক নতুন যুগে প্রবেশের আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বাংলাদেশ নীতিতে পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখবে বলে ঢাকার কোন কোন পর্যবেক্ষক মনে করেন। তাদের মতে, ভারত যদি বাংলাদেশের ব্যাপারে নিরপেক্ষ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে একটি নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানে ঢাকার ওপর চাপের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যাবে। যদিও অতীতে বহু চাপই শেখ হাসিনার সরকার অগ্রাহ্য করেছে। তবে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের নীতিতে কোন পরিবর্তন আসে কি না তা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই খোলাসা হয়ে যাবে। ঢাকার মসনদের জন্য সামনের দিনগুলো ইন্টারেস্টিং হবে বলেই পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে অবশ্য শুরুর দিন থেকেই চাপের মুখে ছিল সরকার। আন্তর্জাতিক দুনিয়া এ বিচারের পক্ষে থাকলেও সবসময় বিচারের আন্তর্জাতিক মান রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছিল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ বিচারের মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আইন সংশোধন করে তার ব্যাপারে সরকারকে আপিল দায়েরের সুযোগ দেয়া হয়। পরে সরকারের আপিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়। তবে যুদ্ধাপরাধ বিচারের ইস্যুতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনোভাবে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনে জামায়াতের বিচারের বিপক্ষে মত দিয়েছেন আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক। আইন সংশোধন না করে এ বিচার করা যাবে না বলে মনে করেন তিনি। যুদ্ধাপরাধ বিচার ইস্যুতে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের ইস্যুটিও পরিষ্কার হয়ে যায় তার কথায়। তিনি বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে সরকার বদ্ধপরিকর, কিন্তু অবশ্যই আইনের সুনির্দিষ্ট বিধান প্রতিপালন করে। বিচার যাতে কোনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্য এসব ব্যাপারে আইনের অবস্থান আরও স্পষ্ট করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সবকিছু বিবেচনা করে জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর বিষয়টি আরও ভাবনা-চিন্তা করে নিতে হবে। এখন সেটার সময় নয়। আজ জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা হবে, কাল আইন পরিবর্তন করা হবে, আমি এর পক্ষে নই। আমাকে সারা পৃথিবীতে ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে কাদের মোল্লার ব্যাপারে। কোন বিষয়ে কেউ প্রশ্ন তুলুক আমি তা চাই না।’ যদিও জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন ধরনের সমঝোতার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে জামায়াতের বিচার ইস্যুতে তার এ বক্তব্য আকস্মিক নয়। গত কয়েক মাসেই স্পর্শকাতর বেশ কিছু ইস্যুতে সরকারের মনোভাবে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। গণজাগরণ মঞ্চের ওপর থেকে সরকারের সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে-বাইরে তোলপাড় চলছে। এরই মধ্যে মঞ্চ দুই ভাগ হয়ে গেছে। মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। অন্যদিকে, জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা নিয়েও কিছুদিন ধরে গুঞ্জন চলে আসছে। হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সঙ্গে বন্ধুত্বের ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারপক্ষও এ ব্যাপারে নীরবতা পালন করে আসছে। তবে যুদ্ধাপরাধ বিচার ইস্যুতে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সরকারের ওপর বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য চাপ প্রয়োগ করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। গণতন্ত্রের ইস্যুটি সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ইস্যুটি মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। জামায়াতের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। দলটির নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাটিতে রায় ঘোষণা করবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ১৬ই এপ্রিল থেকে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী এবং নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাশেম আলীর মামলা। এ তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতার রায়কে সামনে রেখে জামায়াতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। বিশেষ করে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে। যে কারণে তাকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন জামায়াত। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক দুনিয়া এখন আরও সক্রিয় বলে জামায়াতেরও একটি সূত্র দাবি করেছে। জামায়াতের এক নীতিনির্ধারক এ ব্যাপারে বলেন, আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি সরকার কার্যকর করে ফেলবে তা অনেকেই বিশ্বাস করেননি। যে কারণে এখন তারা সক্রিয় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, গুম-খুন ঘিরে মানবাধিকার ইস্যুতেও সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। নারায়ণগঞ্জে সাত খুন এবং ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হকের নির্মম হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক দুনিয়ার নজর কেড়েছে। এর আগে বিএনপি ও জামায়াতের বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে গুম ও ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগ রয়েছে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বিরুদ্ধে। হিউম্যান রইটস ওয়াচ এরই মধ্যে র্যাব বিলুপ্তির আহ্বান জানিয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা র্যাবের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। পশ্চিমা কূটনীতিকরা একাধিক মাধ্যমে গুম-খুনে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। দেশের অভ্যন্তরেও র্যাব বিলুপ্তির দাবি জোরালো হচ্ছে।
৫ই জানুয়ারি নির্বাচন প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। সব সময়ই একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলে আসছে তারা। বিপরীত অর্থে ভারতও অবশ্য একই অবস্থানে ছিল। ‘একদলীয়’ নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান ছিল স্পষ্ট। চীনের অবস্থান ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হয়েছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ব্যবসায়িক স্বার্থ বিবেচনায় চীন ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে সমর্থনই করেছে। একই অবস্থান রাশিয়ারও। সাম্প্রতিক নানা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির দাবা খেলার ঘুঁটি হিসেবে যেন বাংলাদেশও ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে ভারতের মসনদ থেকে কংগ্রেসের বিদায় আর নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নতুন করে ঢাকায়ও তৈরি হয়েছে নানা সমীকরণ। চাউর রয়েছে ভারতের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির প্রতি সমর্থন ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। টানাপড়েন কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক নতুন যুগে প্রবেশের আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বাংলাদেশ নীতিতে পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখবে বলে ঢাকার কোন কোন পর্যবেক্ষক মনে করেন। তাদের মতে, ভারত যদি বাংলাদেশের ব্যাপারে নিরপেক্ষ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে একটি নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানে ঢাকার ওপর চাপের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যাবে। যদিও অতীতে বহু চাপই শেখ হাসিনার সরকার অগ্রাহ্য করেছে। তবে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের নীতিতে কোন পরিবর্তন আসে কি না তা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই খোলাসা হয়ে যাবে। ঢাকার মসনদের জন্য সামনের দিনগুলো ইন্টারেস্টিং হবে বলেই পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
No comments