মূল হোতা শনাক্তই হয়নি by আব্দুল কুদ্দুস
রামুর বৌদ্ধপল্লিতে হামলার পর প্রায় আট মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত শেষ হওয়া তো দূরের কথা, মূল পরিকল্পনাকারীদের শনাক্তই করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাঁদের অনেকেই জামিনে বেরিয়ে গেছেন।পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত না করার বিষয়টি পুলিশ স্বীকার করেছে। জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ধারণা, বৌদ্ধবিহারে অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনায় ছিলেন রোহিঙ্গা নেতা (আরএসও) জঙ্গি ছালামত উল্লাহ ও ইব্রাহিম। তাঁরা ধরা পড়লে মূল পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করা যেত। তা ছাড়া যাঁর ফেসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননার ছবি সংযুক্ত (ট্যাগ) করা হয়েছিল, সেই উত্তম কুমার বড়ুয়াকেও পাওয়া যাচ্ছে না।পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ফেসবুকে কোরআন শরিফ অবমাননাকর ছবি প্রদর্শন নিয়ে রামুর ১২টি প্রাচীন বৌদ্ধবিহার ও ৩০টি বসতবাড়িতে হামলা হয়।পরদিন উখিয়া ও টেকনাফে আরও সাতটি মন্দির ও ১১টি বসতি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় ১৯টি মামলায় ৩৭৫ জনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ হাজার ১৮২ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, হামলার ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত ৫২৪ জনকে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে বেরিয়ে গেছেন ১১০ জন। আর ১৯ মামলার একটিরও তদন্ত শেষ হয়নি।তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বাবুল আকতার জানিয়েছেন, আগামী মাসের মধ্যে রামুর আটটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হতে পারে।কক্সবাজার আদালতের কোর্ট পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, জামিনে মুক্তি পাওয়া ১১০ জনের অধিকাংশকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছিল। এই তালিকায় ফেসবুক ব্যবহারকারী উত্তম বড়ুয়ার মা আদু বড়ুয়া ও তাঁর বোন মাধু বড়ুয়াও আছেন। বর্তমানে কারাগারে আছেন উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা শাহজালাল চৌধুরী, জামায়াতের আরেক নেতা শহীদুল ইসলাম (ভিপি বাহাদুর), বিএনপি-সমর্থক মিজানুর রহমান (মিজান মেম্বার), কম্পিউটার দোকানের মালিক ফারুক, উখিয়ার প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি শাহজাদাসহ ৪১৪ জন।
হামলাকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন: হামলার ঘটনা তদন্তের জন্য চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি গত ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে রামু হামলার জন্য ২০৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।এ ছাড়া চট্টগ্রামের দায়রা জজ আবদুল কুদ্দুস মিয়ার নেতৃত্বে গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রতিবেদনে ২৯৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয় ১৬ মে।দুই কমিটির চিহ্নিত হামলাকারীদের মধ্যে মাত্র ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যরা এলাকায় প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে অবশ্য ২০৫ জনের তালিকার ১ নম্বর অভিযুক্ত হিসেবে উত্তম বড়ুয়ার নাম রয়েছে। ঘটনার দিন থেকে তিনি নিখোঁজ। ২ নম্বর অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম (সেলিম) আওয়ামী লীগের সমর্থক ও রামু প্রেসক্লাবের সভাপতি। ঘটনার দিন থেকে তিনি এলাকায় প্রকাশ্যেই চলাফেরা করছেন।জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো বৌদ্ধবিহার ভাঙতে যাইনি। আমি গিয়েছিলাম লোকজনকে থামাতে। এখন হামলাকারীর তালিকায় আমার নামটি ঢুকিয়ে দিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করা হচ্ছে।’ছাত্রলীগের নেতা সাদ্দাম হোসেন, উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি আনসারুল হক ভুট্টো, তাঁর ছোট ভাই ছাত্রলীগের কর্মী রিদোয়ান, উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুছ রানা চৌধুরীসহ আরও অনেকে অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের ধরছে না।ইউনুছ বলেন, ‘আমি তো হামলাকারী নই, পুলিশ ধরবে কেন?’তদন্ত প্রতিবেদনে ছাত্রদলের নেতা আবদুল আজিজ, আতিকুল হক, বিএনপি-সমর্থক ইটভাটার মালিক মোজাফফর আহমেদ, তাঁর ছেলে শফিউল কবির, জামায়াত নেতা আজগর আলী, শিবিরের নেতা ও ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের ছোট ভাই সাইফুল ইসলামের নামও রয়েছে। তাঁরাও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার বলেন, ‘বৌদ্ধমন্দিরে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত নয়। তার পরও তদন্ত প্রতিবেদনে দলের নেতা-কর্মীদের কেন অভিযুক্ত করা হলো বুঝতে পারছি না।’
উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহমেদুল হক চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ স্থানীয় লোকজনকে দিয়ে ওই হামলা চালিয়েছে। এর সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা নেই।
তবে পুলিশ সুপার মো. আজাদ মিয়া তালিকা সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান। তিনি বলেন, কমিটির কোনো প্রতিবেদন আমরা পাইনি।’ পুলিশ সুপার বলেন, বৌদ্ধবিহারে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় মিয়ানমারের জঙ্গি সংগঠন আরএসও (রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন) জড়িত ছিল। সম্প্রতি টেকনাফের একটি মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে আরএসও নেতা ছলাউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
লুণ্ঠিত বুদ্ধমূর্তি উদ্ধার হয়নি: গতকাল দুপুরে রামুর চেরাংঘাটা রাখাইন বড় ক্যাং মন্দির মাঠে মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উ থোয়াই চিং বলেন, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে দুর্বৃত্তরা এই প্রাচীন মন্দিরে হামলা চালিয়ে কয়েক কোটি টাকা দামের একটি স্বর্ণ, দুটি কষ্টিপাথরের বুদ্ধমূর্তিসহ ৬৪টি মূল্যবান বুদ্ধমূর্তি লুট করে। ঘটনার প্রায় আট মাস অতিক্রান্ত হলেও একটি মূর্তিও উদ্ধার হয়নি।
বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক বঙ্কিম বড়ুয়া বলেন, হামলার সময় ১২টি মন্দির থেকে তিন শতাধিক বুদ্ধমূর্তি লুট হয়। ছোট আকৃতির ১২টি মূর্তি উদ্ধার হলেও মূল্যবান অন্যান্য মূর্তির খবর নেই। এতে বৌদ্ধসম্প্রদায়ের মানুষ হতাশ।
৩০০ বছরের পুরোনো ‘লালচিং’ বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষু ওয়েছেকা ছারা মহাথের বলেন, ‘হামলার আট মাসেও হিসাব মেলাতে পারছি না। গৌতম বুদ্ধের মূর্তি, মন্দির ধ্বংস করে কার লাভ হলো?
হামলাকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন: হামলার ঘটনা তদন্তের জন্য চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি গত ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে রামু হামলার জন্য ২০৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।এ ছাড়া চট্টগ্রামের দায়রা জজ আবদুল কুদ্দুস মিয়ার নেতৃত্বে গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রতিবেদনে ২৯৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয় ১৬ মে।দুই কমিটির চিহ্নিত হামলাকারীদের মধ্যে মাত্র ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যরা এলাকায় প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে অবশ্য ২০৫ জনের তালিকার ১ নম্বর অভিযুক্ত হিসেবে উত্তম বড়ুয়ার নাম রয়েছে। ঘটনার দিন থেকে তিনি নিখোঁজ। ২ নম্বর অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম (সেলিম) আওয়ামী লীগের সমর্থক ও রামু প্রেসক্লাবের সভাপতি। ঘটনার দিন থেকে তিনি এলাকায় প্রকাশ্যেই চলাফেরা করছেন।জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো বৌদ্ধবিহার ভাঙতে যাইনি। আমি গিয়েছিলাম লোকজনকে থামাতে। এখন হামলাকারীর তালিকায় আমার নামটি ঢুকিয়ে দিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করা হচ্ছে।’ছাত্রলীগের নেতা সাদ্দাম হোসেন, উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি আনসারুল হক ভুট্টো, তাঁর ছোট ভাই ছাত্রলীগের কর্মী রিদোয়ান, উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুছ রানা চৌধুরীসহ আরও অনেকে অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের ধরছে না।ইউনুছ বলেন, ‘আমি তো হামলাকারী নই, পুলিশ ধরবে কেন?’তদন্ত প্রতিবেদনে ছাত্রদলের নেতা আবদুল আজিজ, আতিকুল হক, বিএনপি-সমর্থক ইটভাটার মালিক মোজাফফর আহমেদ, তাঁর ছেলে শফিউল কবির, জামায়াত নেতা আজগর আলী, শিবিরের নেতা ও ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের ছোট ভাই সাইফুল ইসলামের নামও রয়েছে। তাঁরাও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার বলেন, ‘বৌদ্ধমন্দিরে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত নয়। তার পরও তদন্ত প্রতিবেদনে দলের নেতা-কর্মীদের কেন অভিযুক্ত করা হলো বুঝতে পারছি না।’
উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহমেদুল হক চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ স্থানীয় লোকজনকে দিয়ে ওই হামলা চালিয়েছে। এর সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা নেই।
তবে পুলিশ সুপার মো. আজাদ মিয়া তালিকা সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান। তিনি বলেন, কমিটির কোনো প্রতিবেদন আমরা পাইনি।’ পুলিশ সুপার বলেন, বৌদ্ধবিহারে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় মিয়ানমারের জঙ্গি সংগঠন আরএসও (রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন) জড়িত ছিল। সম্প্রতি টেকনাফের একটি মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে আরএসও নেতা ছলাউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
লুণ্ঠিত বুদ্ধমূর্তি উদ্ধার হয়নি: গতকাল দুপুরে রামুর চেরাংঘাটা রাখাইন বড় ক্যাং মন্দির মাঠে মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উ থোয়াই চিং বলেন, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে দুর্বৃত্তরা এই প্রাচীন মন্দিরে হামলা চালিয়ে কয়েক কোটি টাকা দামের একটি স্বর্ণ, দুটি কষ্টিপাথরের বুদ্ধমূর্তিসহ ৬৪টি মূল্যবান বুদ্ধমূর্তি লুট করে। ঘটনার প্রায় আট মাস অতিক্রান্ত হলেও একটি মূর্তিও উদ্ধার হয়নি।
বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক বঙ্কিম বড়ুয়া বলেন, হামলার সময় ১২টি মন্দির থেকে তিন শতাধিক বুদ্ধমূর্তি লুট হয়। ছোট আকৃতির ১২টি মূর্তি উদ্ধার হলেও মূল্যবান অন্যান্য মূর্তির খবর নেই। এতে বৌদ্ধসম্প্রদায়ের মানুষ হতাশ।
৩০০ বছরের পুরোনো ‘লালচিং’ বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষু ওয়েছেকা ছারা মহাথের বলেন, ‘হামলার আট মাসেও হিসাব মেলাতে পারছি না। গৌতম বুদ্ধের মূর্তি, মন্দির ধ্বংস করে কার লাভ হলো?
No comments