রাফসানজানির বাদ পড়া ও ইরানের ভবিষ্যৎ
ইরানের বর্ষীয়ান সংস্কারপন্থী নেতা আকবর হাশেমি রাফসানজানিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করেছে দেশটির সাংবিধানিক নজরদারি কর্তৃপক্ষ ‘অভিভাবক পর্ষদ’ (গার্ডিয়ান কাউন্সিল)। ইরানের যেসব মানুষ বিদ্যমান রক্ষণশীল ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে দেশটিতে একটি উদার সমাজ ও শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখেন, তাঁদের কাছে সাবেক প্রেসিডেন্ট রাফসানজানির এই ছিটকে পড়া হতাশাজনক। রাফসানজানিকে অযোগ্য ঘোষণার কারণে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। প্রথম কথা হলো, এর মাধ্যমে কার্যত ৭৮ বছর বয়সী রাফসানজানির নেতৃত্বাধীন মধ্যপন্থীদের রাজনৈতিক ক্ষমতার বৃত্তে প্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ হলো। যেসব মধ্যপন্থী মনে করে, নির্বাচনে দাঁড়ালে রাফসানজানি তাদের প্রতিনিধিত্ব করতেন; এখন তারা নির্বাচনের প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে পারে এবং নির্বাচন বর্জন করতে পারে। এদের মধ্যে রয়েছে মধ্যবিত্ত, বণিক ও স্থানীয় ঐতিহ্যে বিশ্বাসী আলেম শ্রেণীসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক গোষ্ঠী। ইরানের দুর্বল ও অস্থির রাজনৈতিক ক্ষমতাবৃত্ত যে তার নিজের শেকড়কেই উপড়ে ফেলতে চাইছে, রাফসানজানির এই অযোগ্যতার ঘোষণায় তা খোলাসা হয়েছে। ক্ষমতাসীন কর্তৃপক্ষ যেসব সামাজিক গোষ্ঠীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আসছে, এখন তাদের থেকে নিজেকে রক্ষা করতে তাদের আরও কঠোর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। রাফসানজানি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এই বিদগ্ধ রাজনীতিক আট বছর ধরে ইরাকের সঙ্গে চলা যুদ্ধ পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। তবে অর্ধশতকব্যাপী বিপ্লবী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এই রাজনীতিক পরে উদারপন্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। গত বছর থেকে তিনি ইরানে উদারভিত্তিক স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছেন। রক্ষণশীল ও ডানপন্থীরা তাঁর এই মতাদর্শ সহ্য করতে পারেনি। তারা তাঁকে ক্রমশ পেছনে ঠেলে দিয়েছে। এখন এই অযোগ্যতার ঘোষণায় রাফসানজানির সংস্কারপন্থী ও মধ্যপন্থীদের জোট তাঁকে বাদ দিয়ে কার্যত অবসরে পাঠাতে পারে। রাফসানজানির বিদায়ে অনেকে আবার রাজনীতির ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে রাজনীতি থেকে পুরোপুরি সরে দাঁড়াবেন। বড়জোর বলা যায়, তাঁরা এই ভেবে আত্মতৃপ্তি পাবেন যে দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান একদিন না একদিন রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে দেবে। আবার এমনও হতে পারে, রাজনৈতিক যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে এই শ্রেণী হারিয়ে যাবে।
No comments