মূত্রনালীর ইনফেকশন by ডা: জ্যোৎস্না মাহবুব খান
মূত্রনালীর ইনফেকশন |
ইউটিআই
বা মূত্রনালীর ইনফেকশন এক ধরনের সাধারণ সমস্যা, যেখানে শিশু থেকে বৃদ্ধ যে
কেউই আক্রান্ত হতে পারে। তবে মধ্য বয়সী মহিলারাই বেশি আক্রান্ত হন।
গ্রীষ্মকালেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। তবে সব ঋতুতেই হয়ে থাকে। প্রতিটি
জীব খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে, তার প্রয়োজনীয় অংশ শোষণ করে এবং অপ্রয়োজনীয়
অংশ বা বর্জ্য দ্রব্য পায়খানা ও প্রস্রাবের মাধ্যমে দেহ থেকে বের করে দেয়
এটাই স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু কোনো কারণে প্রস্রাব করা যদি
যন্ত্রণাদায়ক হয় তবে বুঝতে হবে এটা কোনো রোগের উপসর্গ। এসব উপসর্গের
বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে- মূত্রনালীতে ইনফেকশন, প্রস্রাবের থলিতে ইনফেকশন,
পাইলাইটিস, প্রোস্টটাইটিস, ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বা সিস্ট ফেটে যাওয়া,
সিফিলিস ও গনোরিয়ায় আক্রান্ত হলেও হতে পারে।
মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণগুলো রোগীর বয়স এবং মূত্রনালীর উপরিভাগ অথবা নিম্নভাগ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত মূত্রনালীর উপরিভাগ সংক্রমণে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে- উপর পেটে বা পিঠের দিকে বা কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা, প্রস্রাব করতে জ্বালা যন্ত্রণা বোধ করা, ব্যথার সাথে কাঁপুনি দিয়ে অনেক জ্বর, খাবারে অরুচি, বমিভাব বা বমি হয়ে যাওয়া, পিপাসা বোধ করা, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া এবং ঘোলাটে দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি।
মূত্রনালী ও মূত্রথলি থেকে ইনফেকশন সাধারণত উপরের দিকে অগ্রসর হয়ে মূত্রনালীর উপরের অংশকে আক্রান্ত করে। সদ্য বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে মূত্রনালীর উপরের অংশের প্রদাহকে বলা হয় হানিমুন পাইলাইটিস এবং নিচের দিকের প্রদাহকে বলা হয় হানিমুন সিস্টাইটিস।
মূত্রনালীর নিচের অংশ সংক্রমণে কতগুলো উপসর্গ দেখা দেয়- তলপেটে ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ এবং প্রস্রাব হওয়ার সময় তীব্র ব্যথা হওয়া, ফোঁটায় ফোঁটায় গরম প্রস্রাব হওয়া। প্রস্রাব করতে জ্বালা-যন্ত্রণা অনুভব করা, প্রস্রাবের সাথে কখনো কখনো রক্ত পুঁজ নির্গমন হওয়া ইত্যাদি। শিশুদের ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা দেয় তা হলো জ্বর, ঘন ঘন প্রস্রাব করা, প্রস্রাব করার সময় কান্নাকাটি করা, বিছানায় প্রস্রাব করা, বমি ও ডায়রিয়া হওয়া, খাবারে অরুচি ও দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া ইত্যাদি।
এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা করতে হবে কোনো সংক্রমণ আছে কিনা দেখার জন্য। প্রস্রাব কালচার করে সঠিক এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। তার সাথে ব্যথানাশক ওষুধ দিতে হবে। প্রয়োজনে এক্স-রে করে রোগের সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা দিতে হবে।
মূত্রনালীর ইনফেকশন দীর্ঘস্থায়ী বা বারবার হতে পারে বিভিন্ন কারণে যেমন একবার ইনফেকশন হলে উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক না খাওয়া বা এন্টিবায়োটিকের কোর্স অসমাপ্ত করা, প্রস্রাবের বেগ থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় প্রস্রাব আটকে রাখা, কোষ্ঠ কাঠিন্য, মলত্যাগের পর মলদ্বার ঠিকমত পরিষ্কার না করা, স্বামী বা মেল পার্টনারের চিকিৎসা না করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব ইত্যাদি। দীর্ঘস্থায়ী মূত্রনালীর ইনফেকশন থাকলে তা উপরের দিকে উঠে কিডনিকে আক্রান্ত করতে পারে। সুতরাং এ ইনফেকশনকে কখনো অবহেলা করা উচিত নয় যথাযথ সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থায় মূত্রনালীর ইনফেকশন হলে সঠিক এন্টিবায়োটিক খাওয়াতে হবে এবং মাঝে মধ্যেই প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা করে দেখতে হবে ইনফেকশন মুক্ত আছে কিনা। কারণ এ সময় ইনফেকশন থাকলে মা এবং গর্ভস্থ সন্তান ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।
মূত্রনালীর ইনফেকশন প্রতিরোধে প্রচুর পানি পান করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে বিশেষ করে মাসিকের সময়। প্রস্রাবের চাপ থাকলে সময়মতো প্রস্রাব করে মূত্রথলি খালি রাখা উচিত। কখনো অনেক সময় আটকে রাখা উচিত নয়। প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত এবং নিয়মিত ওষুধ খাওয়া উচিত।
লেখক : জেনারেল প্রাকটিশনার (মহিলা ও শিশু)
মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।
মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণগুলো রোগীর বয়স এবং মূত্রনালীর উপরিভাগ অথবা নিম্নভাগ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত মূত্রনালীর উপরিভাগ সংক্রমণে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে- উপর পেটে বা পিঠের দিকে বা কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা, প্রস্রাব করতে জ্বালা যন্ত্রণা বোধ করা, ব্যথার সাথে কাঁপুনি দিয়ে অনেক জ্বর, খাবারে অরুচি, বমিভাব বা বমি হয়ে যাওয়া, পিপাসা বোধ করা, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া এবং ঘোলাটে দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি।
মূত্রনালী ও মূত্রথলি থেকে ইনফেকশন সাধারণত উপরের দিকে অগ্রসর হয়ে মূত্রনালীর উপরের অংশকে আক্রান্ত করে। সদ্য বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে মূত্রনালীর উপরের অংশের প্রদাহকে বলা হয় হানিমুন পাইলাইটিস এবং নিচের দিকের প্রদাহকে বলা হয় হানিমুন সিস্টাইটিস।
মূত্রনালীর নিচের অংশ সংক্রমণে কতগুলো উপসর্গ দেখা দেয়- তলপেটে ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ এবং প্রস্রাব হওয়ার সময় তীব্র ব্যথা হওয়া, ফোঁটায় ফোঁটায় গরম প্রস্রাব হওয়া। প্রস্রাব করতে জ্বালা-যন্ত্রণা অনুভব করা, প্রস্রাবের সাথে কখনো কখনো রক্ত পুঁজ নির্গমন হওয়া ইত্যাদি। শিশুদের ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা দেয় তা হলো জ্বর, ঘন ঘন প্রস্রাব করা, প্রস্রাব করার সময় কান্নাকাটি করা, বিছানায় প্রস্রাব করা, বমি ও ডায়রিয়া হওয়া, খাবারে অরুচি ও দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া ইত্যাদি।
এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা করতে হবে কোনো সংক্রমণ আছে কিনা দেখার জন্য। প্রস্রাব কালচার করে সঠিক এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। তার সাথে ব্যথানাশক ওষুধ দিতে হবে। প্রয়োজনে এক্স-রে করে রোগের সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা দিতে হবে।
মূত্রনালীর ইনফেকশন দীর্ঘস্থায়ী বা বারবার হতে পারে বিভিন্ন কারণে যেমন একবার ইনফেকশন হলে উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক না খাওয়া বা এন্টিবায়োটিকের কোর্স অসমাপ্ত করা, প্রস্রাবের বেগ থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় প্রস্রাব আটকে রাখা, কোষ্ঠ কাঠিন্য, মলত্যাগের পর মলদ্বার ঠিকমত পরিষ্কার না করা, স্বামী বা মেল পার্টনারের চিকিৎসা না করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব ইত্যাদি। দীর্ঘস্থায়ী মূত্রনালীর ইনফেকশন থাকলে তা উপরের দিকে উঠে কিডনিকে আক্রান্ত করতে পারে। সুতরাং এ ইনফেকশনকে কখনো অবহেলা করা উচিত নয় যথাযথ সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থায় মূত্রনালীর ইনফেকশন হলে সঠিক এন্টিবায়োটিক খাওয়াতে হবে এবং মাঝে মধ্যেই প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা করে দেখতে হবে ইনফেকশন মুক্ত আছে কিনা। কারণ এ সময় ইনফেকশন থাকলে মা এবং গর্ভস্থ সন্তান ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।
মূত্রনালীর ইনফেকশন প্রতিরোধে প্রচুর পানি পান করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে বিশেষ করে মাসিকের সময়। প্রস্রাবের চাপ থাকলে সময়মতো প্রস্রাব করে মূত্রথলি খালি রাখা উচিত। কখনো অনেক সময় আটকে রাখা উচিত নয়। প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত এবং নিয়মিত ওষুধ খাওয়া উচিত।
লেখক : জেনারেল প্রাকটিশনার (মহিলা ও শিশু)
মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।
No comments