নিজেদের দাবিই শোনাল দু’পক্ষ
পাকিস্তান ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যার যার দাবিই বড় করে তুলে ধরল দু’পক্ষ। ইসলামাবাদের দাবি, আগে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে হবে। অন্যদিকে নয়াদিল্লি পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের আহ্বান জানায়। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে কিছুটা অনানুষ্ঠানিকভাবেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আইজাজ আহমেদ চৌধুরী ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয় শঙ্করের মধ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। হার্ট অব এশিয়া সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লিতে যান পাক পররাষ্ট্র সচিব। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, সকালে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আইজাজ আহমেদ চৌধুরীকে স্বাগত জানান পাক হাইকমিশনার আবদুল বসিত।
‘সিনিয়র অফিসিয়ালস মিটিং অব দ্য হার্ট অব এশিয়া-ইস্তাম্বুল প্রসেস’ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে যান আইজাজ। সম্মেলনের ফাঁকে এস জয় শঙ্করের সঙ্গে স্বল্প সময়ের এক বৈঠক হয়। এতে পাঠানকোট হামলার তদন্তের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তাদের পররাষ্ট্র সচিব বৈঠকে কাশ্মীর প্রসঙ্গটি তুলেছেন। আইজাজ বলেছেন, ‘দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ক্ষেত্রে কাশ্মীরই প্রধান ইস্যু এবং জাতিসংঘের প্রস্তাব ও কাশ্মীরী জনগণের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।’ ভারতের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে জানানো হয়, দুই পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে খুবই সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে। খোলাখুলি। কথা বলতে বলতে দু’জনকে অল্প-স্বল্প হাসতেও দেখা গেছে। দু’জনেই তাদের অভিমত প্রকাশ করেছেন স্পষ্টভাবে। এতে আরও বলা হয়, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, ভারতের তরফে পাঁচটি বিষয় স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এক. পঠানকোট ঘটনার তদন্তে কোনো ঢিলেমি বরদাশত করা হবে না। আর সেই তদন্ত যে সত্যি সত্যিই হচ্ছে, আর তা ঠিক পথে এগোচ্ছে, ভারতকে সে ব্যাপারে সুনিশ্চিত করতে হবে। দুই. পাকিস্তানে মুম্বাই হামলার শুনানি দ্রুত সেরে ফেলতে হবে। ওই মামলাকে অহেতুক ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। তিন. সন্ত্রাসবাদ যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সহজতর করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সে কথা ইসলামাবাদের অস্বীকার করা চলবে না।
চার. পাকিস্তানের মাটিতে ঘাঁটি গেড়ে থাকা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলো যাতে ভারতে অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে, সেটা সুনিশ্চিত করতে ইসলামাবাদকে উদ্যোগ নিতে হবে। এবং পাঁচ. পাকিস্তানে অপহৃত সাবেক ভারতীয় নৌসেনা কর্তা কুলভূষণ যাদবের সঙ্গে যাতে ভারতীয় দূতাবাস যোগাযোগ রেখে চলতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া দু’দেশের মধ্যে থমকে যাওয়া সার্বিক দ্বিপক্ষীয় আলোচনা প্রক্রিয়া (সিবিডি) এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পন্থাপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। গত জানুয়ারিতে পাঠানকোটে হামলার পর প্রস্তাবিত বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর এই প্রথম সরকারিভাবে মুখোমুখি হলেন দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিব। ভারত জানায়, পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গিরা এ হামলা চালিয়েছে। বৈঠকের জন্য গত ১৫ জানুয়ারি ইসলামাবাদে যাওয়ার কথা ছিল জয় শঙ্করের। কিন্তু পারস্পরিক সহমতের ভিত্তিতে দু’দেশই আলোচনা আপাতত স্থগিত রাখার ঘোষণা করেছিল। ভারত বরাবরই বলে এসেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ বজায় রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আলোচনা শুরু হওয়ার আগে সন্ত্রাসবাদী ও পাঠানকোট হামলার বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে পাকিস্তানকে। এর আগে গত মার্চে নেপালের পোখারাতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে পাক-ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে ঘরোয়া কথাবার্তা হয়েছিল।
No comments