বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় দেশ-বিদেশে মুসলিমদের ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছিল -প্রণব মুখার্জির আত্মজীবনী by পরিতোষ পাল
ভারতের
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি তার আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ডে আশি ও নব্বইয়ের
দশকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তুলে ধরেছেন। এর আগে প্রথম খণ্ডে তিনি
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঘটনা তুলে ধরেছিলেন। ‘দ্য টারবুলেন্ট
ইয়ার্স : ১৯৮০-৯৬’ গ্রন্থে প্রণব মুখার্জি বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও
স্বর্ণমন্দিরে ব্লু স্টার অপারেশনের মতো বিতর্কিত বিষয়ে তার পর্যবেক্ষণ
জানিয়েছেন। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাকে প্রতিরোধ না করতে পারাকে দেশের
প্রধান হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে
অভিহিত করেছেন প্রণব মুখার্জি। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, এ ঘটনায় দেশ ও
বিদেশে মুসলমানদের ভাবাবেগে প্রবল আঘাত লেগেছিল। সেদিনের ঘটনার কথা জানাতে
গিয়ে প্রণব মুখার্জি লিখেছেন, ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর আমি মুম্বইয়ে ছিলাম।
পরিকল্পনা কমিশনে আমার অফিসার অন স্পেশাল ডিউটিতে ছিলেন জয়রাম রমেশ। তিনিই
আমাকে ফোনে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কথা জানান। আমি ফোনে যা শুনছিলাম তা
বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আর তাই আমি বারবার জয়রামকে জিজ্ঞেস করি বিরাট
কাঠামোটা ধ্বংস করা হলো কীভাবে? তখন জয়রাম শান্তভাবে আমাকে ঘটনার
পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ শোনান। সেদিন বিকালেই আমার দিল্লি ফিরে আসার কথা।
কিন্তু জানতে পারলাম, মুম্বইতে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র সচিব আমাকে ফোন করে জানালেন, আমার বিমানবন্দরে
যাওয়ার পথে অনেক স্পর্শকাতর এলাকা থাকায় আমার জন্য একটি এসকর্ট ও একটি
পাইলট কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দিলাম।
আমার সামনে পুলিশের জিপ। আর পেছনে একটি অ্যাম্বাসাডরে ভর্তি সাদা পোশাকে
পুলিশ। আর আমার গাড়িতে বসে একজন নিরাপত্তা অফিসার। যাওয়ার পথে হঠাৎ দেখতে
পাই আইনজীবী রাম জেঠমালিনি তার গাড়ি থেকে আপ্রাণভাবে আমার দৃষ্টি আকর্ষণের
চেষ্টা করছেন। আমি গাড়ি থামিয়ে তার গাড়িটিকেও আমার কনভয়ের নিরাপত্তার মধ্যে
নিয়ে এলাম। আসার পথে রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাস্তায়
ইটপাথর পড়ে থাকা দেখে বোঝা গেছে কিছুক্ষণ আগেই ভালো রকম সংঘর্ষ হয়েছে। পরের
দিনের সংবাদপত্রে সেসব ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ পড়েছিলাম।
এর পরেই তিনি লিখেছেন, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতার কাজ, যা সব ভারতীয়দের মাথা লজ্জায় হেট করে দিয়েছিল। সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে একটি ধর্মীয় কাঠামোকে মাত্রাজ্ঞান বিবর্জিত হয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল। এ ঘটনায় দেশ-বিদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে প্রচণ্ড আঘাত দিয়েছিল। এ ঘটনা সহিষ্ণু ও বহুত্ববাদী দেশ হিসেবে যেখানে সব ধর্মের মানুষ শান্তি ও সম্প্রীতির মধ্যে একসঙ্গে থেকেছে, সেই ভারতের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করেছিল। পরে একটি আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন, এ ধরনের মসজিদ বিনষ্ট করার ঘটনা জেরুজালেমের শহরে যেখানে শতাব্দীকাল ধরে ধর্মীয় বিরোধ চলে আসছে, সেখানেও কখনও ঘটেনি। সে সময় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাওকে অনেকেই দায়ী করেছেন। আমি সে সময় মন্ত্রিসভায় ছিলাম না। তাই বাবরি ইস্যুতে কোনো সরকারি নীতিনির্ধারণের শরিক ছিলাম না। তবে আমার বিশ্বাস, ভারত সরকার সে সময় ‘হবসনস’ চয়েসের মুখোমুখি হয়েছিল। সরকারের সামনে অনেক পথ খোলা ছিল না। বাবরি মসজিদকে নিরাপদ রাখার ব্যাপারে রাজ্য সরকার দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হবে- এ আশঙ্কায় কোনো রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকার বরখাস্ত করতে পারে না। উত্তর প্রদেশ সরকার জাতীয় সংহতি কাউন্সিলের বৈঠকেই শুধু নয়, সুপ্রিম কোর্টে এফিডেভিট করে বাবরি মসজিদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিল। অনেকেই অবশ্য যুক্তি দেখিয়েছে, সংবিধানের ৩৫৬ ধারা জারি করে কেন্দ্রীয সরকার রাজ্য সরকারকে বরখাস্ত করতে পারতো। কিন্তু সংসদের রাজ্যসভায় যেখানে কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না, সেখানে কীভাবে তা পাস করানো হতো?
প্রণব মুখার্জি অবশ্য বাবরি মসজিদ ধ্বংস প্রতিহত করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের অক্ষমতাকে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে সমালোচনা করেছেন। তার মতে, নরসিমা রাও উত্তর প্রদেশের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এনডি তিওয়ারির মতো প্রবীণ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদকে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কঠিন আলোচনার দায়িত্ব দিতে পারতেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসবি চ্যাবন একজন ভালো আলোচনাকারী হলেও তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতির আবেগটিকে ধরতে পারেননি। রঙ্গরাজন কুমারমঙ্গলম আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছিলেন, তবে তিনি ছিলেন খুবই তরুণ এবং তার অভিজ্ঞতাও কম। সেই সময় প্রথম প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি।
পরে নরসিমা রাওয়ের সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত বৈঠকে আমি মোলায়েমভাবে না বলে বরং ক্ষোভের সঙ্গে বলেছিলাম, এর বিপদের দিকটি সম্পর্কে আপনাকে পরামর্শ দেয়ার কেউ কি ছিলেন না? বাবরি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে সেটা কি আপনি বুঝতে পারেননি? এখন আপনি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রশমনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন। সদর্থক কাজের মাধ্যমে মুসলমানদের আবেগকে আশ্বস্ত করুন। প্রণব মুখার্জি জানিয়েছেন, এ কথা বলার সময় পিভি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তবে তার চারিত্রিক স্টাইন অনুযায়ীই মুখমণ্ডলে আবেগের কোনো রেখাপাত হতে দেননি। কিন্তু আমি তার সঙ্গে কয়েক শতাব্দী একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে তাকে জানতাম। তাই তার মুখমণ্ডল পড়ার দরকার হয়নি। আমি তার মধ্যে হতাশা ও বিষণ্নতা অনুভব করতে পেরেছিলাম। এর পরে আমি অনেক সময় ভেবেছি, আমার এ বিস্ফোরণের ফলেই কি ১৯৯৩ সালের ১৭ই জানুয়ারি আমাকে মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। প্রসঙ্গত, গতকাল বইটি রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রকাশিত হয়েছে। প্রণব মুখার্জি এ নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্টে মন্তব্যও করেছেন।
এর পরেই তিনি লিখেছেন, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতার কাজ, যা সব ভারতীয়দের মাথা লজ্জায় হেট করে দিয়েছিল। সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে একটি ধর্মীয় কাঠামোকে মাত্রাজ্ঞান বিবর্জিত হয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল। এ ঘটনায় দেশ-বিদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে প্রচণ্ড আঘাত দিয়েছিল। এ ঘটনা সহিষ্ণু ও বহুত্ববাদী দেশ হিসেবে যেখানে সব ধর্মের মানুষ শান্তি ও সম্প্রীতির মধ্যে একসঙ্গে থেকেছে, সেই ভারতের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করেছিল। পরে একটি আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন, এ ধরনের মসজিদ বিনষ্ট করার ঘটনা জেরুজালেমের শহরে যেখানে শতাব্দীকাল ধরে ধর্মীয় বিরোধ চলে আসছে, সেখানেও কখনও ঘটেনি। সে সময় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাওকে অনেকেই দায়ী করেছেন। আমি সে সময় মন্ত্রিসভায় ছিলাম না। তাই বাবরি ইস্যুতে কোনো সরকারি নীতিনির্ধারণের শরিক ছিলাম না। তবে আমার বিশ্বাস, ভারত সরকার সে সময় ‘হবসনস’ চয়েসের মুখোমুখি হয়েছিল। সরকারের সামনে অনেক পথ খোলা ছিল না। বাবরি মসজিদকে নিরাপদ রাখার ব্যাপারে রাজ্য সরকার দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হবে- এ আশঙ্কায় কোনো রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকার বরখাস্ত করতে পারে না। উত্তর প্রদেশ সরকার জাতীয় সংহতি কাউন্সিলের বৈঠকেই শুধু নয়, সুপ্রিম কোর্টে এফিডেভিট করে বাবরি মসজিদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিল। অনেকেই অবশ্য যুক্তি দেখিয়েছে, সংবিধানের ৩৫৬ ধারা জারি করে কেন্দ্রীয সরকার রাজ্য সরকারকে বরখাস্ত করতে পারতো। কিন্তু সংসদের রাজ্যসভায় যেখানে কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না, সেখানে কীভাবে তা পাস করানো হতো?
প্রণব মুখার্জি অবশ্য বাবরি মসজিদ ধ্বংস প্রতিহত করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের অক্ষমতাকে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে সমালোচনা করেছেন। তার মতে, নরসিমা রাও উত্তর প্রদেশের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এনডি তিওয়ারির মতো প্রবীণ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদকে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কঠিন আলোচনার দায়িত্ব দিতে পারতেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসবি চ্যাবন একজন ভালো আলোচনাকারী হলেও তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতির আবেগটিকে ধরতে পারেননি। রঙ্গরাজন কুমারমঙ্গলম আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছিলেন, তবে তিনি ছিলেন খুবই তরুণ এবং তার অভিজ্ঞতাও কম। সেই সময় প্রথম প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি।
পরে নরসিমা রাওয়ের সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত বৈঠকে আমি মোলায়েমভাবে না বলে বরং ক্ষোভের সঙ্গে বলেছিলাম, এর বিপদের দিকটি সম্পর্কে আপনাকে পরামর্শ দেয়ার কেউ কি ছিলেন না? বাবরি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে সেটা কি আপনি বুঝতে পারেননি? এখন আপনি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রশমনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন। সদর্থক কাজের মাধ্যমে মুসলমানদের আবেগকে আশ্বস্ত করুন। প্রণব মুখার্জি জানিয়েছেন, এ কথা বলার সময় পিভি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তবে তার চারিত্রিক স্টাইন অনুযায়ীই মুখমণ্ডলে আবেগের কোনো রেখাপাত হতে দেননি। কিন্তু আমি তার সঙ্গে কয়েক শতাব্দী একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে তাকে জানতাম। তাই তার মুখমণ্ডল পড়ার দরকার হয়নি। আমি তার মধ্যে হতাশা ও বিষণ্নতা অনুভব করতে পেরেছিলাম। এর পরে আমি অনেক সময় ভেবেছি, আমার এ বিস্ফোরণের ফলেই কি ১৯৯৩ সালের ১৭ই জানুয়ারি আমাকে মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। প্রসঙ্গত, গতকাল বইটি রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রকাশিত হয়েছে। প্রণব মুখার্জি এ নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্টে মন্তব্যও করেছেন।
No comments