শিশুটির প্রচণ্ড হিসু চেপেছিলো!
ব্রিটেনের ম্যানচেস্টার বিমানবন্দর থেকে জেট টু বিমানে চেপে রোমে গিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ব্রিটিশ বালক লিয়াম করকোরান-ফোর্ট। ১১ বছরের এই শিশুর না ছিলো পাসপোর্ট, না কোনো বোর্ডিং পাস। লিয়াম বললো- “কই কেউ তো কিছুই জানতে চাইলো না আমার কাছে।”
আর এর জেরে এরই মধ্যে চাকরি হারিয়েছে ৫ ম্যানচেস্টার কর্মী। অলিম্পিক সামনে রেখে ব্রিটেনে এর চেয়ে বড় দায়িত্বে অবহেলা আর হতেই পারেনা। ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও প্রশ্নবিদ্ধ।
আর লিয়ামের কাছে, বিমানে চড়া এখন ‘বাড়ির কাজ’ করার চেয়েও সহজ। অবিশ্বাস্য রোমাঞ্চকর অভিযাত্রার কথা বলতে গিয়ে ঠিক এমনটাই বললো সে।
লিয়ামের শিহরিত মা মেরির মুখে তো কথাই সরছে না। তার ধারনা হয়েছিলো ছেলে বুঝি তার অপহৃত হয়ে গেছে।
বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি দোকান চালান মেরি। সেখান থেকেই মায়ের নজর এড়িয়ে বিমানবন্দরে চলে যায় লিয়াম।
পুলিশে খবর দিয়েছিলেন মেরি। টানা চার ঘণ্টার উৎকণ্ঠার পর পুলিশের ফোন আসলো- ‘আমরা তোমার ছেলেকে খুঁজে পেয়েছি। সে এখন রোমে।’
ম্যানচেস্টারের পাঁচটি নিরাপত্তা স্তর পার হয়ে বিমানে ওঠে লিয়াম। গায়ে বেনটেন ও ব্যাটম্যানের টি-শার্ট ও ট্রাকস্যুট, পায়ে চপ্পল। পাঁচ ফুট লম্বা, গায়ের গড়ন মোটাসোটাই বলতে হবে।
লিয়াম বললো, ‘আমাকে কেউ-ই কিছু জিজ্ঞাসা করেনি, সবাই মুচকি হেসে তাকিয়েছে মাত্র।
‘আমার খুব প্রস্রাব চেপেছিলো একটি টয়লেটের খোঁজ করছিলাম! খুঁজতে খুঁজতে বিমানেই উঠে পড়লাম। সেখানে গিয়ে টয়লেটে ঢুকে যখন বসে কাজটি করছি, তখনই হুশশশশ করে বিমান উড়ে গেলো আকাশে,’ কিছুটা লজ্জা লজ্জা মুখ করে বললো লিয়াম।
লিয়াম যে একজন অযাচিত যাত্রী সেটা বিমান ক্রুদের হাতে ধরা পড়ার আগেই রোমের পথে ১৫০০ মাইল ফ্লাইটের অর্ধেকটা পারি দিয়ে ফেলেছে জেট টু। ইতালির রাজধানীতে কিছু সময় কাটানোর পর কিশোর লিয়ামকে ফিরতি ফ্লাইটে ম্যানচেস্টার পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ছেলেকে হাতে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও এয়ারপোর্ট ও এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের ওপর এক চোট নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার মাথায়ই ধরে না, কিভাবে ছেলেটি এতদূর পর্যন্ত চলে গেলো অথচ কেউ তার কাছে কিছুই জানতে চাইলো না।”
“ভাবতে অবাক হয়ে যাই সন্ত্রাসীদের পক্ষে তাহলে বিমানে চেপে বসা কতটা সহজ হয়ে গেছে। এটা অবিশ্বাস্য,” বলেন মা মেরি।
ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্ট অবশ্য এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। অলিম্পিকের আগে ঘটনাটিকে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। কারণ এই বিমানবন্দর দিয়ে লন্ডনের পথে যাচ্ছেন কিছু কিছু অলিম্পিক খোলোয়াড়। বিশেষ করে বাস্কেটবল ও ফুটবলের দলগুলো নর্থ-ওয়েস্টে প্রশিক্ষণ মাঠে যেতে এই বিমানবন্দরই ব্যবহার করছে।
মেরি বললেন, “যতদুর শুনে আসছি বিমানবন্দরগুলোতে নাকি সর্বকালের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমি রীতিমতো হতাশ। আমি এর উত্তর চাই”।
এরই মধ্যে বিমান বন্দরের ৫ কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকৃতদের পরিচয় জানা যায়নি। তবে এদের চারজন বিমানবন্দরের নিরাপত্তার ও একজন বিমানের ভেতরের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন।
ব্রিটেনের পরিবহন মন্ত্রী জাস্টিন গ্রিনিং বলেন, “এটি একটি অস্বাভাবিক ও বড় ধরনের ব্যত্যয়, আমরা এর কারণ জানার চেষ্টা করছি।”
লিয়ামের এই বিষ্ময়কর অভিযাত্রা অবশ্য শুরু হয় উইদেনশই থেকে। বিমানবন্দর থেকে এটি কয়েকমাইল দূরে। সেখানে আসডা সুপারমার্কেটে তার মায়ের একটি দোকান রয়েছে। লিয়াম দোকানে মাকে সহায়তা করে। ওইদিন সাঁতার শিখার সময় মায়ের বকুনি খেয়ে ঘর পালায় লিয়াম। দোকান থেকে ৩০০ মিটার হেঁটে বাসস্টপে যায়। সেখানেই তার প্রস্রাব চাপে। লাফিয়ে ১৯ নং বাসে চড়ে যেটি বিমানবন্দরের দিকেই যাবে।
মায়ের কোলে বসে আদর নিতে নিতে লিয়াম বলে, বাসের মেঝেতে একটা টিকিট পেয়ে যাই যেটি ওই দিনেরই টিকিট, সুতরাং বাসের সিটে বসে পড়লাম। আমি জানতাম এটি বিমানবন্দরের দিকে যায।”
“বিমান আমার খুব ভালো লাগে এর বিশাল দুটি পাখা খুব সুন্দর। আমি আমাদের বাড়ির ওপর দিয়ে প্রায়ই উড়ে যেতে দেখি,” বলছিলো মায়ের আদরে গদগদ লিয়াম।
বললো, “আমি কিন্তু বিমানে চড়ার জন্য মোটেই বিমানে ঢুকি নি। স্রেফ একটা টয়লেটের খোঁজ করছিলাম।”
বাস থেকে নেমে ১ নং টার্মিনাল দিয়ে বিমানবন্দরের মধ্যে ঢুকে পড়ে লিয়াম। সেখানে কয়েকজন বিমানযাত্রীর সঙ্গে একটি লিফটে ওঠে, যেটি তাদের ডিপার্চার লেভেলে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে বডি স্ক্যানার ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তাকে চেক করা হয়। কিন্তু কেউ তাকে বোর্ডিং পাসের কথা জানতে চায়নি বা পাসপোর্টও দেখতে চায়নি।
ধারনা করা হচ্ছে লিয়াম সকলের চোখ এড়িয়ে গেছে কারণ সে অনেকের সঙ্গেই যাচ্ছিলো এবং বন্দর কর্মীরা হয়তো ভেবেছে সে কোনো একটি পরিবারের সদস্য হবে।
লিয়াম বললো, অনেক মানুষ ছিলেন আশেপাশে কিন্তু কারো সঙ্গেই আমার কোনো কথা হয়নি। আমি কেবল মানুষগুলো যেদিকে যাচ্ছিলো কেবল সেদিকেই যাচ্ছিলাম।
কেবল একজন আমাকে বললেন আমি যেনো হাত মুঠো করে না হাঁটি। তার কথা মেনে আমি হাত ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেলাম। আমার লক্ষ্য তখন একটাই, কোথায় একটি টয়লেট খুঁজে পাবো, বললো লিয়াম।
“আমার তো কোনো দোষ নেই, আমি তো জানতাম না কিছুই, কোথায় কী আছে, কোন পথে কী পাওয়া যায়। তবে আমার কাছে কাজটি আমার ‘বাড়ির কাজের’ চেয়ে সহজ মনে হয়েছে। মনে হয়েছে এটা আমার কম্পিউটার গেম খেলার মতোই একটি সহজ বিষয়,” বললো সে।
বিমানে উঠেই লিয়াম দেখতে পেলো টয়লেটের সাইন। দ্রুত সেদিকে ছুটে গেলো। আর টয়লেটে বসেই বুঝতে পারলো সে বিমানের মধ্যে বসে আছে এবং সেটি আকাশ পথে উড়ে যাচ্ছে।
টয়লেট সেরে বাইরে বের হয়ে একটি চেয়ার পেয়ে সেটির ওপর বসে পড়ে লি। বললো, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করা উচিত। কিছুটা ভয় পাচ্ছিলাম।”
“তখনই বিমানের লোকেরা আমার সঙ্গে কথা বললো, এরপর অনেকেই এগিয়ে এসে জানতে চাইলো। তখন তারা আমাকে চেয়ারটির ওপর বসিয়েই রাখলো, সবাইকে খাবার ও ড্রিংকস দেওয়া হলো কিন্তু আমাকে কিছু খেতেও দিলো না,” অভিমানি কণ্ঠস্বর লিয়ামের।
হতবাক কেবিন ক্রু ক্যাপ্টেনকে সতর্ক করলেন। তিনিই জানালেন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু ততক্ষণে ফিরে যাওয়ার জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে।
রোমে পৌঁছে দুই ঘণ্টা বিমানবন্দরের কর্মী ও পুলিশের হেফাজতে থাকলো লিয়াম।
বালকটি এর আগে আর কখনোই বিদেশ যায়নি। সে বললো, “রোমে আমার একটুও ভালো লাগছিলো না। পুলিশ আমাকে ঘিরে রেখেছিলো। ভেতরে ভেতরে ভীষণ ভয় লাগছিলো। সারাক্ষণই মনে হচ্ছিলো কখন আমি আমার মায়ের কাছে যাবো।
“কিছুক্ষণ পরে আমাকে আবার একটি উড়োজাহাজে তুলে দেওয়া হলো। তবে এরই মধ্যে আমি ইতালীয় ভাষায় কয়েকটি শব্দ শিখে ফেললাম। যেমন গ্র্যজি.. মানে ধন্যবাদ ও কিয়াও... ইত্যাদি। আর আমি বুঝতে পেরেছি ওদের জাতীয় পতাকা লাল-সাদা ও সবুজ রঙের, বললো লিয়াম।
ছেলে নিরাপদে ও সুস্থ আছে কথাটি যতক্ষণ না জানতে পারেন, ততক্ষণই বেশ আতঙ্কিত ছিলেন মেরি। তিনি বলেন, “ওকে ফেরত পেয়ে আমি কান্না ধরে রাখতে পারিনি। লিয়ামই আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
“ও খুবই নাজুক, মায়াময়। একটি ১১ বছরের বাচ্চার পক্ষে যা বোঝা সম্ভব তাও সে বুঝতে পারেনা। যে কেউ তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে যে কোনো কিছু করতে পারবে,” ছেলের সম্পর্কে বলছিলেন তার মা।
তিনি বলেন, যে কোনো কিছুই ঘটে যেতো পারতো। উড়াল দেওয়ার আগে জেট টু তে কেউ কি তার যাত্রীর সংখ্যা গুনে দেখেছিলো? খোঁজ নিয়েছিলো টয়লেটে কেউ বসে আছে কি না?
ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্ট ও জেট এয়ার উভয় পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে তারা বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে দেখছে।
আর লিয়ামের কাছে, বিমানে চড়া এখন ‘বাড়ির কাজ’ করার চেয়েও সহজ। অবিশ্বাস্য রোমাঞ্চকর অভিযাত্রার কথা বলতে গিয়ে ঠিক এমনটাই বললো সে।
লিয়ামের শিহরিত মা মেরির মুখে তো কথাই সরছে না। তার ধারনা হয়েছিলো ছেলে বুঝি তার অপহৃত হয়ে গেছে।
বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি দোকান চালান মেরি। সেখান থেকেই মায়ের নজর এড়িয়ে বিমানবন্দরে চলে যায় লিয়াম।
পুলিশে খবর দিয়েছিলেন মেরি। টানা চার ঘণ্টার উৎকণ্ঠার পর পুলিশের ফোন আসলো- ‘আমরা তোমার ছেলেকে খুঁজে পেয়েছি। সে এখন রোমে।’
ম্যানচেস্টারের পাঁচটি নিরাপত্তা স্তর পার হয়ে বিমানে ওঠে লিয়াম। গায়ে বেনটেন ও ব্যাটম্যানের টি-শার্ট ও ট্রাকস্যুট, পায়ে চপ্পল। পাঁচ ফুট লম্বা, গায়ের গড়ন মোটাসোটাই বলতে হবে।
লিয়াম বললো, ‘আমাকে কেউ-ই কিছু জিজ্ঞাসা করেনি, সবাই মুচকি হেসে তাকিয়েছে মাত্র।
‘আমার খুব প্রস্রাব চেপেছিলো একটি টয়লেটের খোঁজ করছিলাম! খুঁজতে খুঁজতে বিমানেই উঠে পড়লাম। সেখানে গিয়ে টয়লেটে ঢুকে যখন বসে কাজটি করছি, তখনই হুশশশশ করে বিমান উড়ে গেলো আকাশে,’ কিছুটা লজ্জা লজ্জা মুখ করে বললো লিয়াম।
লিয়াম যে একজন অযাচিত যাত্রী সেটা বিমান ক্রুদের হাতে ধরা পড়ার আগেই রোমের পথে ১৫০০ মাইল ফ্লাইটের অর্ধেকটা পারি দিয়ে ফেলেছে জেট টু। ইতালির রাজধানীতে কিছু সময় কাটানোর পর কিশোর লিয়ামকে ফিরতি ফ্লাইটে ম্যানচেস্টার পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ছেলেকে হাতে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও এয়ারপোর্ট ও এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের ওপর এক চোট নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার মাথায়ই ধরে না, কিভাবে ছেলেটি এতদূর পর্যন্ত চলে গেলো অথচ কেউ তার কাছে কিছুই জানতে চাইলো না।”
“ভাবতে অবাক হয়ে যাই সন্ত্রাসীদের পক্ষে তাহলে বিমানে চেপে বসা কতটা সহজ হয়ে গেছে। এটা অবিশ্বাস্য,” বলেন মা মেরি।
ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্ট অবশ্য এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। অলিম্পিকের আগে ঘটনাটিকে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। কারণ এই বিমানবন্দর দিয়ে লন্ডনের পথে যাচ্ছেন কিছু কিছু অলিম্পিক খোলোয়াড়। বিশেষ করে বাস্কেটবল ও ফুটবলের দলগুলো নর্থ-ওয়েস্টে প্রশিক্ষণ মাঠে যেতে এই বিমানবন্দরই ব্যবহার করছে।
মেরি বললেন, “যতদুর শুনে আসছি বিমানবন্দরগুলোতে নাকি সর্বকালের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমি রীতিমতো হতাশ। আমি এর উত্তর চাই”।
এরই মধ্যে বিমান বন্দরের ৫ কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকৃতদের পরিচয় জানা যায়নি। তবে এদের চারজন বিমানবন্দরের নিরাপত্তার ও একজন বিমানের ভেতরের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন।
ব্রিটেনের পরিবহন মন্ত্রী জাস্টিন গ্রিনিং বলেন, “এটি একটি অস্বাভাবিক ও বড় ধরনের ব্যত্যয়, আমরা এর কারণ জানার চেষ্টা করছি।”
লিয়ামের এই বিষ্ময়কর অভিযাত্রা অবশ্য শুরু হয় উইদেনশই থেকে। বিমানবন্দর থেকে এটি কয়েকমাইল দূরে। সেখানে আসডা সুপারমার্কেটে তার মায়ের একটি দোকান রয়েছে। লিয়াম দোকানে মাকে সহায়তা করে। ওইদিন সাঁতার শিখার সময় মায়ের বকুনি খেয়ে ঘর পালায় লিয়াম। দোকান থেকে ৩০০ মিটার হেঁটে বাসস্টপে যায়। সেখানেই তার প্রস্রাব চাপে। লাফিয়ে ১৯ নং বাসে চড়ে যেটি বিমানবন্দরের দিকেই যাবে।
মায়ের কোলে বসে আদর নিতে নিতে লিয়াম বলে, বাসের মেঝেতে একটা টিকিট পেয়ে যাই যেটি ওই দিনেরই টিকিট, সুতরাং বাসের সিটে বসে পড়লাম। আমি জানতাম এটি বিমানবন্দরের দিকে যায।”
“বিমান আমার খুব ভালো লাগে এর বিশাল দুটি পাখা খুব সুন্দর। আমি আমাদের বাড়ির ওপর দিয়ে প্রায়ই উড়ে যেতে দেখি,” বলছিলো মায়ের আদরে গদগদ লিয়াম।
বললো, “আমি কিন্তু বিমানে চড়ার জন্য মোটেই বিমানে ঢুকি নি। স্রেফ একটা টয়লেটের খোঁজ করছিলাম।”
বাস থেকে নেমে ১ নং টার্মিনাল দিয়ে বিমানবন্দরের মধ্যে ঢুকে পড়ে লিয়াম। সেখানে কয়েকজন বিমানযাত্রীর সঙ্গে একটি লিফটে ওঠে, যেটি তাদের ডিপার্চার লেভেলে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে বডি স্ক্যানার ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তাকে চেক করা হয়। কিন্তু কেউ তাকে বোর্ডিং পাসের কথা জানতে চায়নি বা পাসপোর্টও দেখতে চায়নি।
ধারনা করা হচ্ছে লিয়াম সকলের চোখ এড়িয়ে গেছে কারণ সে অনেকের সঙ্গেই যাচ্ছিলো এবং বন্দর কর্মীরা হয়তো ভেবেছে সে কোনো একটি পরিবারের সদস্য হবে।
লিয়াম বললো, অনেক মানুষ ছিলেন আশেপাশে কিন্তু কারো সঙ্গেই আমার কোনো কথা হয়নি। আমি কেবল মানুষগুলো যেদিকে যাচ্ছিলো কেবল সেদিকেই যাচ্ছিলাম।
কেবল একজন আমাকে বললেন আমি যেনো হাত মুঠো করে না হাঁটি। তার কথা মেনে আমি হাত ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেলাম। আমার লক্ষ্য তখন একটাই, কোথায় একটি টয়লেট খুঁজে পাবো, বললো লিয়াম।
“আমার তো কোনো দোষ নেই, আমি তো জানতাম না কিছুই, কোথায় কী আছে, কোন পথে কী পাওয়া যায়। তবে আমার কাছে কাজটি আমার ‘বাড়ির কাজের’ চেয়ে সহজ মনে হয়েছে। মনে হয়েছে এটা আমার কম্পিউটার গেম খেলার মতোই একটি সহজ বিষয়,” বললো সে।
বিমানে উঠেই লিয়াম দেখতে পেলো টয়লেটের সাইন। দ্রুত সেদিকে ছুটে গেলো। আর টয়লেটে বসেই বুঝতে পারলো সে বিমানের মধ্যে বসে আছে এবং সেটি আকাশ পথে উড়ে যাচ্ছে।
টয়লেট সেরে বাইরে বের হয়ে একটি চেয়ার পেয়ে সেটির ওপর বসে পড়ে লি। বললো, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করা উচিত। কিছুটা ভয় পাচ্ছিলাম।”
“তখনই বিমানের লোকেরা আমার সঙ্গে কথা বললো, এরপর অনেকেই এগিয়ে এসে জানতে চাইলো। তখন তারা আমাকে চেয়ারটির ওপর বসিয়েই রাখলো, সবাইকে খাবার ও ড্রিংকস দেওয়া হলো কিন্তু আমাকে কিছু খেতেও দিলো না,” অভিমানি কণ্ঠস্বর লিয়ামের।
হতবাক কেবিন ক্রু ক্যাপ্টেনকে সতর্ক করলেন। তিনিই জানালেন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু ততক্ষণে ফিরে যাওয়ার জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে।
রোমে পৌঁছে দুই ঘণ্টা বিমানবন্দরের কর্মী ও পুলিশের হেফাজতে থাকলো লিয়াম।
বালকটি এর আগে আর কখনোই বিদেশ যায়নি। সে বললো, “রোমে আমার একটুও ভালো লাগছিলো না। পুলিশ আমাকে ঘিরে রেখেছিলো। ভেতরে ভেতরে ভীষণ ভয় লাগছিলো। সারাক্ষণই মনে হচ্ছিলো কখন আমি আমার মায়ের কাছে যাবো।
“কিছুক্ষণ পরে আমাকে আবার একটি উড়োজাহাজে তুলে দেওয়া হলো। তবে এরই মধ্যে আমি ইতালীয় ভাষায় কয়েকটি শব্দ শিখে ফেললাম। যেমন গ্র্যজি.. মানে ধন্যবাদ ও কিয়াও... ইত্যাদি। আর আমি বুঝতে পেরেছি ওদের জাতীয় পতাকা লাল-সাদা ও সবুজ রঙের, বললো লিয়াম।
ছেলে নিরাপদে ও সুস্থ আছে কথাটি যতক্ষণ না জানতে পারেন, ততক্ষণই বেশ আতঙ্কিত ছিলেন মেরি। তিনি বলেন, “ওকে ফেরত পেয়ে আমি কান্না ধরে রাখতে পারিনি। লিয়ামই আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
“ও খুবই নাজুক, মায়াময়। একটি ১১ বছরের বাচ্চার পক্ষে যা বোঝা সম্ভব তাও সে বুঝতে পারেনা। যে কেউ তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে যে কোনো কিছু করতে পারবে,” ছেলের সম্পর্কে বলছিলেন তার মা।
তিনি বলেন, যে কোনো কিছুই ঘটে যেতো পারতো। উড়াল দেওয়ার আগে জেট টু তে কেউ কি তার যাত্রীর সংখ্যা গুনে দেখেছিলো? খোঁজ নিয়েছিলো টয়লেটে কেউ বসে আছে কি না?
ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্ট ও জেট এয়ার উভয় পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে তারা বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে দেখছে।
No comments