পর্ন দেখে যখন আপনি “নারী স্বাধীনতা” বিচার করতে বসেন… by বাসিত ফাহাদ
বাংলাদেশের
বেশিরভাগ মানুষের ধারণা, পশ্চিমা দেশগুলায় মেয়েরা বেলেল্লাপনা করে ঘুরে
বেড়ায়, আর সেজন্যে ছেলেরা এখানে সামনে যাকে পায় তার উপরেই ঝাপিয়ে পড়ে। এটার
একটা ধারণা আমাদের ধার্মিক ভাইয়েরা পেয়েছে পর্ন দেখে আর বিদেশি সিনেমা
দেখে৷ কেন তারা পর্ন দেখে সেটার আলাপে গেলাম না। পর্ন একটা খুবই নরমাল
জিনিস, একেবারে সাধু যে মানুষ সেও লাইফে দুই একবার এই জিনিস দেখেছে, কিন্তু
ব্যাপারটা তখনই সমস্যার সৃষ্টি করে যখন তারা এগুলা দিয়ে রিয়েল লাইফকে জাজ
করা শুরু করে আর তা থেকে বেরিয়ে আসে হাজার হাজার ধর্ষকামী। যাই হোক বিশাল
আলাপ। সেইটা আমার কথা না।
আমি যেদিন জার্মানীতে পা দিলাম, সেইদিন থেকে জার্মানীতে সামার শুরু হয়েছে। এই দেশ হল পৃথিবীর অন্যতম ফরওয়ার্ড একটা দেশ, বিজ্ঞান আর আর্টসের বড় বড় সব রেভ্যুলেশন এই দেশ থেকে শুরু হয়েছে। টিপিক্যাল বাঙালীর মত আমার ধারণা ছিল নামার সাথে সাথেই চারপাশ থেকে জার্মান সুন্দরীরা হাত নেড়ে ডাকবে, চিপায় নিয়ে যেতে চাবে। চারপাশে সবাই মেইক আউট করবে সারাদিন, জাপ্টাজাপ্টি করবে।
সাথে দুলাভাই ছিল, পাছে কি না জানি বেইজ্জতিতে পড়তে হবে সেটা ভেবেই আমি অস্থির। তার উপর ছিল সামারের শুরু, সারা বছর ভারি জ্যাকেটে শরীর ঢেকে রাখা জার্মান সুন্দরীরা এই সময় মিনিস্কার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়। মিনিস্কার্ট পড়া মেয়ে এই বাঙালি চোখ জীবনে দেখে নাই, কোনদিন জানি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে মাইর খাই পাবলিকের হাতে কে জানে!
অবাক করা ব্যাপার হল, এই এক বছরে জার্মানিতে থেকে দুইজন মানুষকে চুমু খেতে দেখেছি খুব বেশি হলে ৫ বার। তাও খুবই স্বাভাবিক চুমু, রেলস্টেশনে স্বামী, স্ত্রী বা ভালবাসার মানুষকে বিদায় জানাতে এসে যেই চুমু দেয়, ওই চুমু। এর থেকে অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ এবং “অশ্লীল” জিনিস আমরা প্রতিনিয়ত ঢাকার রাস্তাঘাটে রিকশার হুডের নিচে দেখি, রেস্টুরেন্টে দেখি।
মজার ব্যাপার হল, আমার কয়েকজন পরিচিত ছেলেপেলে আছে গ্রামে, গ্রামে গেলে যাদের সাথে একটু বসে বাজারে চা সিগারেট খাই, তারা আমি জার্মানীতে আসছি শুনেই খুবই বাজে ইংগিত করে বলে যে আসার সময় কয়েকটা (?!) নিয়ে আসতে, ওই দেশের মেয়েরা নাকি ডাক দিলেই এসে শুয়ে পড়ে। এই ধারণা তারা পেয়েছে পর্ন দেখে দেখে! আবার তাদের মধ্যে একজন পবিত্র কোরান শরীফ অর্ধেক মুখস্ত করা লোক, তারাবী পড়ায়! এই হল সাধারণ বাঙালীর অবস্থা।
নারী স্বাধীনতার কথা শুনলেই আমাদের দেশের মানুষের যেই চুলকানী শুরু হয়, এই দেশে সেই চুলকানী কারো নাই। রাত তিনটায় মিনিস্কার্ট টিশার্ট পড়া মেয়ে রাস্তা দিয়ে একা হেটে যায়, কেউ চোখ তুলেও তাকায় না। একা একা বাস ট্রামে যাওয়া আসা করছে রাত দুপুরে, কোন ভয় নেই যে বাস ড্রাইভার বাস থামিয়ে কিছু একটা করে দিবে।
শুরুর দিকে এত ছোট ছোট জামা পরা মেয়ে দেখলে একটু আনইজি লাগত, এক সপ্তাহ পরে সেটা সয়ে গিয়েছিল। চারপাশে এইভাবেই মেয়েরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, কতক্ষণ আনইজি লাগবে? প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে জার্মান ছেলেরা কি ধ্বজভঙ্গ? না, তারা ধ্বজভঙ্গ না, আমার ধারণা আমাদের বাঙালি ছেলেদের থেকে তারা বহুগুনে বেশি পুরুষ। তারা ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা পেয়েছে কে কি পরছে না পরছে এটা তার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার, এটা নিয়ে কোন রকম মন্তব্য করা নীতিবান মানুষের চরিত্রের মধ্যে পড়েনা। একটা সুন্দরী মেয়ে দেখলে পুরুষরা তাকাবে, একটা সুন্দর ছেলে দেখলেও মেয়েরা তাকাবে। জগতের অতি সাধারণ নিয়ম এটা। কিন্তু সেটা সুস্থভাবে তাকানো, মুগ্ধ হয়ে তাকানো৷ মুগ্ধতা থেকে হয়ত তাদের মধ্যে ভাব ভালোবাসা হবে। কিন্তু মুগ্ধতা আর Creepiness দুইটা আলাদা জিনিস৷ এটা কি আমাদের মোটা মাথায় ঢুকবে?
ব্যাপারটা এটা না যে, মিনিস্কার্ট পড়লো মেয়েরা আর নারী স্বাধীন হয়ে গেল। ব্যাপারটা এটা যে, একটা মেয়ে কি পরেছে না পরেছে এটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না, এটাই নারী স্বাধীনতা। এখানে হিজাব পরাও প্রচুর মেয়ে আছে, কেউ আংগুল তুলে বলে না ওই দেখ জঙ্গি যায়। স্কুল কলেজে কোন ড্রেসকোড নেই, হাত মোজা পা মোজা কালো বোরকা কিংবা ট্যাংক টপ আর টাইটস, তোমার যা ইচ্ছা তুমি পরে আসো মেয়ে, আসল কথা তুমি তোমার কাজ করছ কিনা। এভ্রিওয়ান ইজ মাইন্ডিং দেয়ার ওউন ফাকিং বিজনেস।
আমি এক জার্মান মেয়েকে চিনি, যে সারাদিন শহরে এসে রেস্টুরেন্টে গাধার খাটুনি খাটে, তারপর রাতের শেষ বাসটা ধরে ৪০ কিলোমিটার দূরে তার বাসায় যায়। এই যে এই মেয়েটা, তার কিন্তু কোন ভয় নাই যে সে রাতের বাসে ধর্ষণের স্বীকার হবে, কিংবা বাস থেকে নেমে বাসায় যাওয়ার পথে তাকে কেউ জংগলে টেনে নিবে। কাজটা তার আসলেও দরকার, সে করে যাচ্ছে। নিরাপত্তা নিয়ে তাকে চিন্তা করতে হয়নাই, সেটা সরকার করছে, পুলিশ করছে। এটাই হল নারী স্বাধীনতা।
অনেকে বলবে, জার্মানি আমেরিকা এসব দেশ কি ধর্ষণমুক্ত? না। বিশ্বের কোন দেশই ধর্ষণমুক্ত না। কিন্তু এই দেশে ছোট জামাকাপড় পরার কারণে ধর্ষণ হয়না, হয় সাইকো কিছু ক্রিমিনালের জন্যে। কেউ যদি রেপড হয়েছে এই রিপোর্ট করে, তৎক্ষনাৎ পুলিশ নেমে যাবে তদন্তে। পরিসংখ্যান বলে আরব দেশগুলায় ধর্ষণ কম? ওহ প্লিজ। সে দেশে কোন মেয়ে যদি আদালতে যায় যে সে রেপড হয়েছে বলতে, তাকে চারজন পুরুষ স্বাক্ষী আনা লাগে। কে স্বাক্ষী রেখে রেপড হয়? প্রমাণ না করতে পারলে তাকেই দোররা খেতে হয়, সেই দেশে হবে ধর্ষণের বিচার? আর আরবে রেপ হয় নাকি তা জানতে আমাদের দেশের পত্রিকা ঘাটলেই জানা সম্ভব, কত হাজার মেয়ে কাজ করতে গিয়ে একই পরিবারের বাপ-ছেলের হাতে ধর্ষিত হয়েছে। এখানে কিসের দোষ? জামাকাপড় তো ওইসব দেশে “ঠিক” ভাবেই পরে সবাই৷
আমাদের দেশে জিন্সের প্যান্ট পড়লেই মেয়ে হয়ে যায় বেশ্যা। রাত করে অফিস থেকে ফিরলে হয়ে যায় নষ্টা। বিবিসি, ঢাকা ট্রিবিউনের পোস্ট গুলার নিচে যখন বাংগালির কমেন্ট দেখি, তখন এত হতাশ লাগে যে মাঝে মাঝে মনে হয় ওই দেশ থেকে পারলে সব ভাস্তি ভাগ্নি গুলাকে বের করে নিয়ে আসি। আমাদের বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো ধারণা রাখে যে মেয়েদের জায়গা রান্নাঘরে, তাদেরকে খেয়াল খুশীমত ব্যবহার করা যায়। ২০১৯ সালে এসেও গড়পড়তা বাংগালীর মন-মানসিকতা বদলায় নাই, দিন দিন আরো নিচের দিকে যাচ্ছে। টপার ইঞ্জিনিয়ার, ইউএসএ সেটেল্ড ছেলে যখন ইনিয়ে বিনিয়ে বলে – ইয়ে মানে, মেয়েকে কিন্তু রান্না জানতে হবে, মা তুমি একটু শিখিয়ে দিও তো ; হতাশ লাগে৷ রান্না জানা মেয়ের থেকে যে একজন শিক্ষিত স্বাবলম্বী স্ত্রী তার জন্যে ভাল, এটা চার বছরের ইঞ্জিনিয়ারিং তাকে শেখাতে পারে নাই, বিদেশ তাকে শেখাতে পারে নাই, আর কোত্থেকে শিখবে? তার বাচ্চাকাচ্চা গুলোও তো এমনই হবে।
একটা চেইন রিয়েকশন চলছে আসলে। আমরা ফেইসবুকে অনেক বুলি কপচাই, তাতে লাভের লাভ কিছু হয়নাই। বাংলাদেশের ৭০ ভাগ মানুষের এই ধারনা এখনো। তাদের মধ্যে আছে আমাদের বয়সীরাও। এরাই যখন এদের বাচ্চাদের খেলনা কিনে দিবে, মেয়েকে দিবে হাড়িপাতিল আর ছেলেকে দিবে রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি৷ অথচ, রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি যে ছেলেমেয়ে চিনেনা, রিমোট যার হাতে থাকবে তার আদেশেই চলবে, এটা তাকে কে বুঝাবে?
যে দেশে বিয়ের জন্যে পাত্র-পাত্রীদের বিজ্ঞাপন দেয়া হয় পেপারে, সেই দেশের অন্তত নারী দিবস পালন করা মানায় না।
পঁচে গেছে দেশ, নষ্ট হয়ে গেছে।
আমি যেদিন জার্মানীতে পা দিলাম, সেইদিন থেকে জার্মানীতে সামার শুরু হয়েছে। এই দেশ হল পৃথিবীর অন্যতম ফরওয়ার্ড একটা দেশ, বিজ্ঞান আর আর্টসের বড় বড় সব রেভ্যুলেশন এই দেশ থেকে শুরু হয়েছে। টিপিক্যাল বাঙালীর মত আমার ধারণা ছিল নামার সাথে সাথেই চারপাশ থেকে জার্মান সুন্দরীরা হাত নেড়ে ডাকবে, চিপায় নিয়ে যেতে চাবে। চারপাশে সবাই মেইক আউট করবে সারাদিন, জাপ্টাজাপ্টি করবে।
সাথে দুলাভাই ছিল, পাছে কি না জানি বেইজ্জতিতে পড়তে হবে সেটা ভেবেই আমি অস্থির। তার উপর ছিল সামারের শুরু, সারা বছর ভারি জ্যাকেটে শরীর ঢেকে রাখা জার্মান সুন্দরীরা এই সময় মিনিস্কার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়। মিনিস্কার্ট পড়া মেয়ে এই বাঙালি চোখ জীবনে দেখে নাই, কোনদিন জানি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে মাইর খাই পাবলিকের হাতে কে জানে!
অবাক করা ব্যাপার হল, এই এক বছরে জার্মানিতে থেকে দুইজন মানুষকে চুমু খেতে দেখেছি খুব বেশি হলে ৫ বার। তাও খুবই স্বাভাবিক চুমু, রেলস্টেশনে স্বামী, স্ত্রী বা ভালবাসার মানুষকে বিদায় জানাতে এসে যেই চুমু দেয়, ওই চুমু। এর থেকে অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ এবং “অশ্লীল” জিনিস আমরা প্রতিনিয়ত ঢাকার রাস্তাঘাটে রিকশার হুডের নিচে দেখি, রেস্টুরেন্টে দেখি।
মজার ব্যাপার হল, আমার কয়েকজন পরিচিত ছেলেপেলে আছে গ্রামে, গ্রামে গেলে যাদের সাথে একটু বসে বাজারে চা সিগারেট খাই, তারা আমি জার্মানীতে আসছি শুনেই খুবই বাজে ইংগিত করে বলে যে আসার সময় কয়েকটা (?!) নিয়ে আসতে, ওই দেশের মেয়েরা নাকি ডাক দিলেই এসে শুয়ে পড়ে। এই ধারণা তারা পেয়েছে পর্ন দেখে দেখে! আবার তাদের মধ্যে একজন পবিত্র কোরান শরীফ অর্ধেক মুখস্ত করা লোক, তারাবী পড়ায়! এই হল সাধারণ বাঙালীর অবস্থা।
নারী স্বাধীনতার কথা শুনলেই আমাদের দেশের মানুষের যেই চুলকানী শুরু হয়, এই দেশে সেই চুলকানী কারো নাই। রাত তিনটায় মিনিস্কার্ট টিশার্ট পড়া মেয়ে রাস্তা দিয়ে একা হেটে যায়, কেউ চোখ তুলেও তাকায় না। একা একা বাস ট্রামে যাওয়া আসা করছে রাত দুপুরে, কোন ভয় নেই যে বাস ড্রাইভার বাস থামিয়ে কিছু একটা করে দিবে।
শুরুর দিকে এত ছোট ছোট জামা পরা মেয়ে দেখলে একটু আনইজি লাগত, এক সপ্তাহ পরে সেটা সয়ে গিয়েছিল। চারপাশে এইভাবেই মেয়েরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, কতক্ষণ আনইজি লাগবে? প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে জার্মান ছেলেরা কি ধ্বজভঙ্গ? না, তারা ধ্বজভঙ্গ না, আমার ধারণা আমাদের বাঙালি ছেলেদের থেকে তারা বহুগুনে বেশি পুরুষ। তারা ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা পেয়েছে কে কি পরছে না পরছে এটা তার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার, এটা নিয়ে কোন রকম মন্তব্য করা নীতিবান মানুষের চরিত্রের মধ্যে পড়েনা। একটা সুন্দরী মেয়ে দেখলে পুরুষরা তাকাবে, একটা সুন্দর ছেলে দেখলেও মেয়েরা তাকাবে। জগতের অতি সাধারণ নিয়ম এটা। কিন্তু সেটা সুস্থভাবে তাকানো, মুগ্ধ হয়ে তাকানো৷ মুগ্ধতা থেকে হয়ত তাদের মধ্যে ভাব ভালোবাসা হবে। কিন্তু মুগ্ধতা আর Creepiness দুইটা আলাদা জিনিস৷ এটা কি আমাদের মোটা মাথায় ঢুকবে?
ব্যাপারটা এটা না যে, মিনিস্কার্ট পড়লো মেয়েরা আর নারী স্বাধীন হয়ে গেল। ব্যাপারটা এটা যে, একটা মেয়ে কি পরেছে না পরেছে এটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না, এটাই নারী স্বাধীনতা। এখানে হিজাব পরাও প্রচুর মেয়ে আছে, কেউ আংগুল তুলে বলে না ওই দেখ জঙ্গি যায়। স্কুল কলেজে কোন ড্রেসকোড নেই, হাত মোজা পা মোজা কালো বোরকা কিংবা ট্যাংক টপ আর টাইটস, তোমার যা ইচ্ছা তুমি পরে আসো মেয়ে, আসল কথা তুমি তোমার কাজ করছ কিনা। এভ্রিওয়ান ইজ মাইন্ডিং দেয়ার ওউন ফাকিং বিজনেস।
আমি এক জার্মান মেয়েকে চিনি, যে সারাদিন শহরে এসে রেস্টুরেন্টে গাধার খাটুনি খাটে, তারপর রাতের শেষ বাসটা ধরে ৪০ কিলোমিটার দূরে তার বাসায় যায়। এই যে এই মেয়েটা, তার কিন্তু কোন ভয় নাই যে সে রাতের বাসে ধর্ষণের স্বীকার হবে, কিংবা বাস থেকে নেমে বাসায় যাওয়ার পথে তাকে কেউ জংগলে টেনে নিবে। কাজটা তার আসলেও দরকার, সে করে যাচ্ছে। নিরাপত্তা নিয়ে তাকে চিন্তা করতে হয়নাই, সেটা সরকার করছে, পুলিশ করছে। এটাই হল নারী স্বাধীনতা।
অনেকে বলবে, জার্মানি আমেরিকা এসব দেশ কি ধর্ষণমুক্ত? না। বিশ্বের কোন দেশই ধর্ষণমুক্ত না। কিন্তু এই দেশে ছোট জামাকাপড় পরার কারণে ধর্ষণ হয়না, হয় সাইকো কিছু ক্রিমিনালের জন্যে। কেউ যদি রেপড হয়েছে এই রিপোর্ট করে, তৎক্ষনাৎ পুলিশ নেমে যাবে তদন্তে। পরিসংখ্যান বলে আরব দেশগুলায় ধর্ষণ কম? ওহ প্লিজ। সে দেশে কোন মেয়ে যদি আদালতে যায় যে সে রেপড হয়েছে বলতে, তাকে চারজন পুরুষ স্বাক্ষী আনা লাগে। কে স্বাক্ষী রেখে রেপড হয়? প্রমাণ না করতে পারলে তাকেই দোররা খেতে হয়, সেই দেশে হবে ধর্ষণের বিচার? আর আরবে রেপ হয় নাকি তা জানতে আমাদের দেশের পত্রিকা ঘাটলেই জানা সম্ভব, কত হাজার মেয়ে কাজ করতে গিয়ে একই পরিবারের বাপ-ছেলের হাতে ধর্ষিত হয়েছে। এখানে কিসের দোষ? জামাকাপড় তো ওইসব দেশে “ঠিক” ভাবেই পরে সবাই৷
আমাদের দেশে জিন্সের প্যান্ট পড়লেই মেয়ে হয়ে যায় বেশ্যা। রাত করে অফিস থেকে ফিরলে হয়ে যায় নষ্টা। বিবিসি, ঢাকা ট্রিবিউনের পোস্ট গুলার নিচে যখন বাংগালির কমেন্ট দেখি, তখন এত হতাশ লাগে যে মাঝে মাঝে মনে হয় ওই দেশ থেকে পারলে সব ভাস্তি ভাগ্নি গুলাকে বের করে নিয়ে আসি। আমাদের বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো ধারণা রাখে যে মেয়েদের জায়গা রান্নাঘরে, তাদেরকে খেয়াল খুশীমত ব্যবহার করা যায়। ২০১৯ সালে এসেও গড়পড়তা বাংগালীর মন-মানসিকতা বদলায় নাই, দিন দিন আরো নিচের দিকে যাচ্ছে। টপার ইঞ্জিনিয়ার, ইউএসএ সেটেল্ড ছেলে যখন ইনিয়ে বিনিয়ে বলে – ইয়ে মানে, মেয়েকে কিন্তু রান্না জানতে হবে, মা তুমি একটু শিখিয়ে দিও তো ; হতাশ লাগে৷ রান্না জানা মেয়ের থেকে যে একজন শিক্ষিত স্বাবলম্বী স্ত্রী তার জন্যে ভাল, এটা চার বছরের ইঞ্জিনিয়ারিং তাকে শেখাতে পারে নাই, বিদেশ তাকে শেখাতে পারে নাই, আর কোত্থেকে শিখবে? তার বাচ্চাকাচ্চা গুলোও তো এমনই হবে।
একটা চেইন রিয়েকশন চলছে আসলে। আমরা ফেইসবুকে অনেক বুলি কপচাই, তাতে লাভের লাভ কিছু হয়নাই। বাংলাদেশের ৭০ ভাগ মানুষের এই ধারনা এখনো। তাদের মধ্যে আছে আমাদের বয়সীরাও। এরাই যখন এদের বাচ্চাদের খেলনা কিনে দিবে, মেয়েকে দিবে হাড়িপাতিল আর ছেলেকে দিবে রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি৷ অথচ, রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি যে ছেলেমেয়ে চিনেনা, রিমোট যার হাতে থাকবে তার আদেশেই চলবে, এটা তাকে কে বুঝাবে?
যে দেশে বিয়ের জন্যে পাত্র-পাত্রীদের বিজ্ঞাপন দেয়া হয় পেপারে, সেই দেশের অন্তত নারী দিবস পালন করা মানায় না।
পঁচে গেছে দেশ, নষ্ট হয়ে গেছে।
No comments