বিধবা নারীদের যত অমর্যাদাকর রীতি মানতে হয় দেশে দেশে
স্বামীর মৃত্যু খুবই বেদনাদায়ক
ব্যপার, কিন্তু স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর খাওয়া নিয়ে পৃথিবীর নানা দেশে
যেসব বিচিত্র রীতি রয়েছে, অনেক সময়ই একজন বিধবার জন্য তা বাড়তি চাপ তৈরি
করে।
কোন কোন সংস্কৃতিতে বিধবাদের খাওয়ার সময় খেতে ডাকা হয় না,
পুষ্টিকর খাবার খাওয়া মানা কোথাও কোথাও, এবং কোথাওবা খাওয়া-দাওয়া
সংক্রান্ত অসম্মানজনক ও বিপজ্জনক রীতি চালু আছে।
ঘানাতে দরিদ্র
বিধবাদের অবস্থা হয় শোচনীয়। দেশের সরকার বিধবাদের পালনীয় রীতির মধ্য
থেকে বিপজ্জনক রীতিগুলো সংস্কার করলেও, এখনো অনেকে সেসব আঁকড়ে আছেন। কেউ
কেউ এখনো পুষ্টিকর খাবার খান না।
দেশটিতে এখনো রীতি আছে যেখানে বিধবাদের তাদের মৃত স্বামীর শরীরের অংশ দিয়ে বানানো স্যুপ বা খাবার খেতে হয়।
চিত্রিতা ব্যাঙ্গার জির মা অনিতা ব্যানার্জি এবং ঠাকুমা প্রভাতী মুখার্জী |
ঘানার উত্তরে বিধবাদের কল্যাণে স্থাপিত এক সংস্থার কর্মকর্তা ফাতি
আব্দুলাই জানিয়েছেন, খাবার বানানোর কাজে মৃতের চুল আর নখ ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া, মৃতদেহকে গোসল দেয়া হয় যে পানি দিয়ে, সেই পানি পান করতে দেয়া হয় মৃতের স্ত্রীকে।
অনেক বিধবাই এখন আর এসব রীতি মানেন না। তবে যারা দরিদ্র তারা সে সাহস দেখাতে পারেন না, বাধ্য হয়ে এখনো তাদের সেসব মানতে হয়।
যেহেতু
স্বামীর মৃত্যুর পর সম্পত্তি তার পরিবারে ফেরত যায়, তার ফলে অনেক বিধবা
জমির অধিকার হারান যদি না তিনি মৃত স্বামীর পরিবারের অন্য কোন সদস্যকে
বিয়ে না করেন।
ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে সাড়ে ২৮ কোটি বিধবা নারী রয়েছেন, যাদের দশজনে একজন চরম দারিদ্র সীমার নিচে বাস করেন।
জাতিসংঘের হিসাবে অনেক দেশে বিধবাদের সাথে যেসব অমানবিক আচরণ করা হয়, তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমান।
"মাছ, মাংস আর ডিম নিষিদ্ধ"
পৃথিবীর অনেক জায়গাতে এমনকি বিত্তশালী পরিবারেও বিধবাদের অমর্যাদাকর নিয়ম মানতে বাধ্য করা হয়।
সাহিত্যিক
ও বাঙ্গালী খাবার বিশেষজ্ঞ চিত্রিতা ব্যাঙ্গার জি জানিয়েছেন,
পশ্চিমবঙ্গের উচ্চবর্ণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে কয়েক দশক আগেও বিধবাদের
স্বাভাবিক জীবন ছিল না।
তাদের জন্য মাছ, মাংস, ডিম, পেঁয়াজ-রসুন খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল।
"অর্থাৎ
সব ধরণের পুষ্টিকর খাবার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হত, যেন বিধবারা কোন পাপ
করেছেন, যেন স্বামী মারা যাবার পেছনে তাদের দায় আছে।"
ঘানার অনেক জায়গায় মৃত স্বামীর শরীরের অংশ দিয়ে বানানো স্যুপ বা খাবার খেতে দেয়া হয় বিধবাদের |
জি শৈশবে তার নিজের দাদী বা ঠাকুমার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা দেখেছেন।
"হঠাৎ করে তার উজ্জ্বল শাড়ি আর গয়না সব বাতিল হয়ে গেল, পরিবারের সঙ্গে
তিনি আর খাবার খান না, এবং সব খাবার খেতেও পারেন না। কিন্তু যখন রাঁধেন
অনেক কিছুই খুবই সুস্বাদু ছিল।"
জি দেখেছেন, পেঁয়াজের বদলে তিনি হিং ব্যবহার করতেন, যা একই ধরণের ফ্লেভার আনত খাবারে।
বিধবাদের সাথে খাবার নিয়ে এ ধরণের আচরণে শারীরিকভাবে তো বটেই, মানসিকভাবেও ভেঙ্গে পড়তেন অনেকে।
চীন, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানেও বিধবা
নারীদের খাবারের মান ও বৈচিত্র প্রায় থাকেই না, এবং স্বাভাবিকভাবেই তাদের
ওজন কমে যায়।
সত্তর এবং আশির দশকে কানাডার বিধবাদের জীবন নিয়ে গবেষণা করেছেন পুষ্টিবিদ এলিজাবেথ ভেসনাভার।
স্বামীর মৃত্যুতে হতাশায় ডুবে যান বেশির ভাগ নারী |
"আমি
আমার দাদী এবং নানীকে দেখেছি প্রায় বিপরীত জীবন কাটাতে। একজন স্বামী মারা
যাবার দুই বছরের মাথায় কোন রকম প্রকট অসুখ ছাড়াই মারা গেছেন।
আরেকজন খাবারদাবারকে একেবারে ওষুধ জ্ঞান করতেন, এবং নিজের যত্ন নিতেন।"
আয়ু হ্রাস
ভেসনাভার দেখেছেন, স্বামী মারা যাবার পরের দুই বছরের মধ্যে স্ত্রীর মারা যাবার খুবই ঝুঁকি থাকে।
তিনি মনে করেন এর পেছনে বড় কারণ খাবার।
গবেষণায় তিনি দেখেছেন, বৈধব্যকালে লোকের খাবার এবং পুষ্টির নিয়মিত প্যাটার্ন বদলে যায়।
আয়ু কমে যাবার পেছনে কম খাওয়া, ওজন কমে যাওয়া, চিত্তবিনোদনের কোন ব্যবস্থা না থাকা এসব অনেকটাই দায়ী।
তবে কেবল খাবারই নয়, এসময় মানসিক অবসাদ অনেকটাই গ্রাস করে তাদের।
অনেকের জীবন থেকে আনন্দ হারিয়ে যায়, আগের মত দায়িত্ব পালন করতে চান না অনেকে।
এ ব্যপারটি পুরুষদের ক্ষেত্রেও অর্থাৎ যাদের স্ত্রী মারা যান আগে, তাদের সাথেও ঘটে।
একজন সাবেক সাংবাদিক ও ব্রডকাস্টার মাইকেল ফ্রিডল্যান্ডের স্ত্রী মারা যাবার পর তাকে জীবনে ফিরতে হয়েছিল ছেলেমেয়েদের সাহায্যে।
কেবল শারীরিক নয় মানসিক ভাবেও ভেঙ্গে পড়েন নারীরা |
তিনি কোন কিছুতেই উৎসাহ পেতেন না। পরে তাকে একটি রান্না শেখানোর স্কুলে নিয়ে যায় ছেলেমেয়েরা। এখন তিনি সামলে উঠেছেন।
কী করা দরকার?
ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দা লেখক লিসা কল্ব বিয়ের ১৯ মাস পরে পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারিয়েছিলেন।
তিনি জানিয়েছেন, জীবনসঙ্গী হারানোর পর মানুষ প্রবলভাবে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে।
এ সময় একা না থাকাই ভালো, মানুষজনের সাহচর্য এ সময় দারুণ উপকারে আসে।
পরিবারের অন্য সদস্য বা বন্ধু কারো সাথে খেতে যাওয়া অথবা তাদের সঙ্গে বাড়িতেই যদি রান্না করা যায়, সেটাও কাজে দেবে।
তাকে বোঝাতে হবে তিনি একা নন, এবং তার গুরুত্ব আছে।
যদি
নান জানেন সদ্য স্বামী বা স্ত্রী হারা কাউকে কিভাবে সান্ত্বনা দেবেন, দয়া
করে সহানুভূতি নিয়ে পাশে দাঁড়ান, তাদের সঙ্গ দিন, বা তাদের দেখতে যান।
হয়তো এর মাধ্যমে তাকে জীবনে ফিরিয়ে আনার বিরাট এক উদ্যোগ আপনি নিলেন।
বিয়ের দিন এবং ৫০ তম বিবাহবার্ষিকীতে মাইকেল ফ্রিডল্যান্ড ও তা স্ত্রী সারা |
No comments