জেনে নিন মুসলিম বিজ্ঞানীদের যতো আবিষ্কার by সাইফুর রহমান তুহিন
প্রাচীনকালে
মুসলিম বিজ্ঞানীরা অনেক কিছু আবিষ্কার করেছিলেন। বিভিন্ন সময়ে মুসলিমদের
আবিষ্কারসমূহ মানব সভ্যতাকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে। আবিষ্কারের সেসব
কাহিনিতে পাওয়া যাবে অনেক চমকপ্রদ তথ্য। বিস্তারিত জানাচ্ছেন সাইফুর রহমান তুহিন—
কফি: আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ ইথিওপিয়ার কাফা অঞ্চলের খালিদ নামের এক আরব বাসিন্দা ছাগল চরানোর সময় খেয়াল করেন যে, জামের মতো এক ধরনের ফল খাওয়ার পর প্রাণীগুলোকে অনেক সতেজ দেখাচ্ছে। খালিদ ওই ফলগুলোকে সেদ্ধ করে সর্বপ্রথম কফি তৈরি করেন। এরপরই পানীয়টি ইথিওপিয়া থেকে ইয়েমেনে রফতানি করা হয়। সেখানে সুফি-সাধকরা বিশেষ উপলক্ষে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য এটি পান করেন। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষদিকে কফি পৌঁছে যায় মক্কা ও তুরস্কে। সেখান থেকে ১৬৪৫ সালে এটি যায় ইতালির ভেনিস নগরীতে। ১৬৫০ সালে পাস্ক রোসি নামের এক তুর্কীর হাত ধরে এটি ইংল্যান্ডে প্রবেশ করে। তিনি লন্ডন নগরীর লোম্বার্ড স্ট্রিটে সর্বপ্রথম কফির দোকান দেন। এরপরই বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রসার লাভ করে পানীয়টি।
ক্যামেরা: প্রাচীন গ্রীকরা মনে করতো যে, আমাদের চোখে লেজার রশ্মির মতো আলোকরেখা রয়েছে। যা আমাদের দেখতে সাহায্য করে। দশম শতাব্দীতে মুসলিম গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী ইবনে আল-হাইতাম সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেন যে, চোখ থেকে যতোটা আলো বেরোয় তার চেয়ে বেশি আলো চোখে প্রবেশ করে। আলো উইন্ডো শাটারের মাধ্যমে একটি বিন্দুতে প্রবেশ করতে পারে—এটি বুঝতে পারার পর তিনি প্রথম পিনহোল ক্যামেরা আবিষ্কার করেন। আল-হাইতাম বুঝতে পারেন যে, বিন্দু যতো ছোট হবে ছবি ততো ভালো হবে। এ উপলব্ধি থেকে তিনি প্রথম অবসকিউরা (ডার্করুম) স্থাপন করেন। একটি পরীক্ষণের মাধ্যমে পদার্থবিদ্যার দার্শনিক রূপ তুলে ধরার জন্য তিনি বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী।
প্যারাস্যুট: আমরা জানি, অরভিল রাইট ও উইলভার রাইট উড়োজাহাজ আবিষ্কার করেন। তবে এর এক হাজার বছর আগেই স্পেনের মুসলিম কবি, জ্যোতির্বিদ, সুরস্রষ্টা ও প্রকৌশলী আব্বাস ইবনে ফিরনাস আকাশে ওড়ার একটি বাহন তৈরির প্রচেষ্টা চালান। ৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একটি পুরনো আলখাল্লায় কাঠের পাত সংযোজন করে কর্ডোবার গ্র্যান্ড মসজিদের মিনার থেকে লাফিয়ে পড়েন। তিনি আশা করেছিলেন, এভাবে তিনি পাখির মতো মসৃণ গতিতে উড়বেন কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। তবে মাটিতে পড়ার আগে আলখাল্লার গতি কমে যাওয়ায় আব্বাস মারাত্মক কোন আঘাত পাননি। তার ওই বাহনটিকেই ইতিহাসের প্রথম প্যারাস্যুট বলে গণ্য করা হয়। ৮৭৫ সালে ৭০ বছর বয়সে তিনি সিল্কের কাপড়ের সাথে ঈগল পাখির পালক যুক্ত করে পর্বতের ওপর থেকে ঝাঁপ দেন। এভাবে তিনি উল্লেখযোগ্য উচ্চতায় ওড়েন। দশ মিনিট ভেসে বেড়াতে সক্ষম হলেও নিরাপদে মাটিতে নামতে ব্যর্থ হয়ে মারা যান আব্বাস। পরে তার নামে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চাঁদের একটি গর্তের নামকরণ করা হয়।
রসায়ন শাস্ত্র: ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ইসলামের সর্বপ্রথম বিজ্ঞানী জাবির ইবনে হাইয়ান ডিস্টিলেশন অর্থাৎ সিদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তরল পদার্থের একটিকে আরেকটি থেকে পৃথক করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। জাবিরই অনেক মৌলিক প্রক্রিয়া ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের মাধ্যমে আলকেমিকে কেমিস্ট্রি বা রসায়ন শাস্ত্রে রূপ দেন। তার আবিষ্কৃত তরলীকরণ, স্ফটিকীকরণ, সিদ্ধকরণ, শুদ্ধকরণ, অক্সিজেনের সাথে যুক্তকরণ, বাষ্পীভবন ও ফিল্টারেশন প্রক্রিয়া এখনো বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে ব্যবহার করা হয়। সালফিউরিক ও নাইট্রিক অ্যাসিড আবিষ্কারের পাশাপাশি তিনি চোলাইযন্ত্র আবিষ্কার করেন, যার মাধ্যমে বিশ্বের সর্বত্র তৈরি হচ্ছে গাঢ় গোলাপ জল, বিভিন্ন সুগন্ধি দ্রব্যাদি ও অ্যালকোহল (যদিও ইসলাম ধর্মে এটি হারাম)। জাবির ইবনে হাইয়ান সঠিক প্রক্রিয়া অনুসারে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতেন। রসায়ন শাস্ত্রের জনক হিসেবে তার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
শল্যচিকিৎসার সরঞ্জাম: আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অপারেশন করার জন্য যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়, তার অনেকগুলোই দশম শতাব্দীতে মুসলিম শল্যবিদ আল-জাওয়াহিরির উদ্ভাবিত দ্রব্যাদির মতো। তার উদ্ভাবিত হালকা ছুরি, অস্থি কাটার ছুরি, ছোট সাঁড়াশি, চোখের অপারেশনে ব্যবহৃত সূক্ষ্ম কাঁচিসহ ২০০ প্রকার শল্যচিকিৎসার যন্ত্রপাতি আধুনিক যুগের যে কোন শল্যবিদের অতি পরিচিত জিনিস। তিনিই প্রাকৃতিকভাবে অদৃশ্য হয়, এমন সুতা আবিষ্কার করেন। যা অপারেশনের পর সেলাইয়ের জন্য সার্জনরা ব্যবহার করে থাকেন। ক্যাপসুল তৈরির জন্যও এর ব্যবহার রয়েছে। এছাড়া উইলিয়াম হার্ভে রক্ত পরিসঞ্চালন পদ্ধতি আবিষ্কারের ৩০০ বছর আগেই ইবনে নাফিস নামে এক মুসলিম মেডিকেল ছাত্র এ প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, আফিম ও অ্যালকোহলের মিশ্রণের মাধ্যমে যে চেতনানাশক ব্যবহার করা হয়, তা-ও আবিষ্কার করেন মুসলিম চিকিৎসকরা। তারা নীডলেরও উন্নতি সাধন করেন, যা ছোখের ছানি অপসারণে আজও ব্যবহৃত হচ্ছে।
উইন্ডমিল বা বায়ুকল: ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে পারস্যের এক খলিফার জন্য শস্য গুঁড়া করা এবং সেচকার্যে পানি উত্তোলনের উদ্দেশে উইন্ডমিল আবিষ্কৃত হয়। মরুময় আরব অঞ্চলে যখন মৌসুমী পানির প্রবাহগুলো শুকিয়ে যেতো, তখন শক্তির একমাত্র উৎস ছিল বাতাস। যা প্রায় মাসখানেক ধরে একদিক থেকে প্রবাহিত হতো। তখনকার দিনে ৬ থেকে ১২টি পাখাবিশিষ্ট উইন্ডমিল অট্টালিকা বা তালপাতার ওপর দেখা যেতো। এর ৫০০ বছর পর ইউরোপে উইন্ডমিলের প্রচলন হয়।
রকেট: বারুদ তৈরিতে ব্যবহৃত নোনতা গানপাউডার চীনারা আবিষ্কার করে আগুন জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করেছিল। কিন্তু আরবরা সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য গানপাউডার বিশুদ্ধকরণের বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছিল। ক্রুসেড যুদ্ধে মুসলিমদের আবিষ্কৃত আগ্নেয়াস্ত্র প্রতিপক্ষ শিবিরে ভীতির সঞ্চার করে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে মুসলিমরা রকেট (যাকে তারা বলতো স্বয়ংক্রিয় দাহ্য ডিম) এবং টর্পেডো (নাশপাতি সদৃশ সম্মুখে অগ্রসরমান বোমা, যার অগ্রভাগ ছিল বর্শার মতো) আবিষ্কার করে। টর্পেডো শত্রুজাহাজকে ধ্বংস করে অদৃশ্য হয়ে যেতো।
ফাউন্টেন পেন: ৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে মিশরের সুলতানের প্রয়োজনে ফাউন্টেন পেন আবিষ্কৃত হয়। তিনি এমন কলম চাইছিলেন, যা তার হাত কিংবা পরনের পোশাককে নষ্ট করবে না। এই কলমের মধ্যে কালি জমিয়ে রাখার জায়গা থাকতো। বর্তমান যুগের কলমের নিবের মধ্যে ফেড ইঙ্ক থাকে, যা তখনকার দিনের কালির আধুনিক সংস্করণ।
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক।
কফি: আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ ইথিওপিয়ার কাফা অঞ্চলের খালিদ নামের এক আরব বাসিন্দা ছাগল চরানোর সময় খেয়াল করেন যে, জামের মতো এক ধরনের ফল খাওয়ার পর প্রাণীগুলোকে অনেক সতেজ দেখাচ্ছে। খালিদ ওই ফলগুলোকে সেদ্ধ করে সর্বপ্রথম কফি তৈরি করেন। এরপরই পানীয়টি ইথিওপিয়া থেকে ইয়েমেনে রফতানি করা হয়। সেখানে সুফি-সাধকরা বিশেষ উপলক্ষে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য এটি পান করেন। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষদিকে কফি পৌঁছে যায় মক্কা ও তুরস্কে। সেখান থেকে ১৬৪৫ সালে এটি যায় ইতালির ভেনিস নগরীতে। ১৬৫০ সালে পাস্ক রোসি নামের এক তুর্কীর হাত ধরে এটি ইংল্যান্ডে প্রবেশ করে। তিনি লন্ডন নগরীর লোম্বার্ড স্ট্রিটে সর্বপ্রথম কফির দোকান দেন। এরপরই বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রসার লাভ করে পানীয়টি।
ক্যামেরা: প্রাচীন গ্রীকরা মনে করতো যে, আমাদের চোখে লেজার রশ্মির মতো আলোকরেখা রয়েছে। যা আমাদের দেখতে সাহায্য করে। দশম শতাব্দীতে মুসলিম গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী ইবনে আল-হাইতাম সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেন যে, চোখ থেকে যতোটা আলো বেরোয় তার চেয়ে বেশি আলো চোখে প্রবেশ করে। আলো উইন্ডো শাটারের মাধ্যমে একটি বিন্দুতে প্রবেশ করতে পারে—এটি বুঝতে পারার পর তিনি প্রথম পিনহোল ক্যামেরা আবিষ্কার করেন। আল-হাইতাম বুঝতে পারেন যে, বিন্দু যতো ছোট হবে ছবি ততো ভালো হবে। এ উপলব্ধি থেকে তিনি প্রথম অবসকিউরা (ডার্করুম) স্থাপন করেন। একটি পরীক্ষণের মাধ্যমে পদার্থবিদ্যার দার্শনিক রূপ তুলে ধরার জন্য তিনি বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী।
প্যারাস্যুট: আমরা জানি, অরভিল রাইট ও উইলভার রাইট উড়োজাহাজ আবিষ্কার করেন। তবে এর এক হাজার বছর আগেই স্পেনের মুসলিম কবি, জ্যোতির্বিদ, সুরস্রষ্টা ও প্রকৌশলী আব্বাস ইবনে ফিরনাস আকাশে ওড়ার একটি বাহন তৈরির প্রচেষ্টা চালান। ৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একটি পুরনো আলখাল্লায় কাঠের পাত সংযোজন করে কর্ডোবার গ্র্যান্ড মসজিদের মিনার থেকে লাফিয়ে পড়েন। তিনি আশা করেছিলেন, এভাবে তিনি পাখির মতো মসৃণ গতিতে উড়বেন কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। তবে মাটিতে পড়ার আগে আলখাল্লার গতি কমে যাওয়ায় আব্বাস মারাত্মক কোন আঘাত পাননি। তার ওই বাহনটিকেই ইতিহাসের প্রথম প্যারাস্যুট বলে গণ্য করা হয়। ৮৭৫ সালে ৭০ বছর বয়সে তিনি সিল্কের কাপড়ের সাথে ঈগল পাখির পালক যুক্ত করে পর্বতের ওপর থেকে ঝাঁপ দেন। এভাবে তিনি উল্লেখযোগ্য উচ্চতায় ওড়েন। দশ মিনিট ভেসে বেড়াতে সক্ষম হলেও নিরাপদে মাটিতে নামতে ব্যর্থ হয়ে মারা যান আব্বাস। পরে তার নামে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চাঁদের একটি গর্তের নামকরণ করা হয়।
রসায়ন শাস্ত্র: ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ইসলামের সর্বপ্রথম বিজ্ঞানী জাবির ইবনে হাইয়ান ডিস্টিলেশন অর্থাৎ সিদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তরল পদার্থের একটিকে আরেকটি থেকে পৃথক করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। জাবিরই অনেক মৌলিক প্রক্রিয়া ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের মাধ্যমে আলকেমিকে কেমিস্ট্রি বা রসায়ন শাস্ত্রে রূপ দেন। তার আবিষ্কৃত তরলীকরণ, স্ফটিকীকরণ, সিদ্ধকরণ, শুদ্ধকরণ, অক্সিজেনের সাথে যুক্তকরণ, বাষ্পীভবন ও ফিল্টারেশন প্রক্রিয়া এখনো বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে ব্যবহার করা হয়। সালফিউরিক ও নাইট্রিক অ্যাসিড আবিষ্কারের পাশাপাশি তিনি চোলাইযন্ত্র আবিষ্কার করেন, যার মাধ্যমে বিশ্বের সর্বত্র তৈরি হচ্ছে গাঢ় গোলাপ জল, বিভিন্ন সুগন্ধি দ্রব্যাদি ও অ্যালকোহল (যদিও ইসলাম ধর্মে এটি হারাম)। জাবির ইবনে হাইয়ান সঠিক প্রক্রিয়া অনুসারে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতেন। রসায়ন শাস্ত্রের জনক হিসেবে তার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
শল্যচিকিৎসার সরঞ্জাম: আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অপারেশন করার জন্য যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়, তার অনেকগুলোই দশম শতাব্দীতে মুসলিম শল্যবিদ আল-জাওয়াহিরির উদ্ভাবিত দ্রব্যাদির মতো। তার উদ্ভাবিত হালকা ছুরি, অস্থি কাটার ছুরি, ছোট সাঁড়াশি, চোখের অপারেশনে ব্যবহৃত সূক্ষ্ম কাঁচিসহ ২০০ প্রকার শল্যচিকিৎসার যন্ত্রপাতি আধুনিক যুগের যে কোন শল্যবিদের অতি পরিচিত জিনিস। তিনিই প্রাকৃতিকভাবে অদৃশ্য হয়, এমন সুতা আবিষ্কার করেন। যা অপারেশনের পর সেলাইয়ের জন্য সার্জনরা ব্যবহার করে থাকেন। ক্যাপসুল তৈরির জন্যও এর ব্যবহার রয়েছে। এছাড়া উইলিয়াম হার্ভে রক্ত পরিসঞ্চালন পদ্ধতি আবিষ্কারের ৩০০ বছর আগেই ইবনে নাফিস নামে এক মুসলিম মেডিকেল ছাত্র এ প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, আফিম ও অ্যালকোহলের মিশ্রণের মাধ্যমে যে চেতনানাশক ব্যবহার করা হয়, তা-ও আবিষ্কার করেন মুসলিম চিকিৎসকরা। তারা নীডলেরও উন্নতি সাধন করেন, যা ছোখের ছানি অপসারণে আজও ব্যবহৃত হচ্ছে।
উইন্ডমিল বা বায়ুকল: ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে পারস্যের এক খলিফার জন্য শস্য গুঁড়া করা এবং সেচকার্যে পানি উত্তোলনের উদ্দেশে উইন্ডমিল আবিষ্কৃত হয়। মরুময় আরব অঞ্চলে যখন মৌসুমী পানির প্রবাহগুলো শুকিয়ে যেতো, তখন শক্তির একমাত্র উৎস ছিল বাতাস। যা প্রায় মাসখানেক ধরে একদিক থেকে প্রবাহিত হতো। তখনকার দিনে ৬ থেকে ১২টি পাখাবিশিষ্ট উইন্ডমিল অট্টালিকা বা তালপাতার ওপর দেখা যেতো। এর ৫০০ বছর পর ইউরোপে উইন্ডমিলের প্রচলন হয়।
রকেট: বারুদ তৈরিতে ব্যবহৃত নোনতা গানপাউডার চীনারা আবিষ্কার করে আগুন জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করেছিল। কিন্তু আরবরা সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য গানপাউডার বিশুদ্ধকরণের বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছিল। ক্রুসেড যুদ্ধে মুসলিমদের আবিষ্কৃত আগ্নেয়াস্ত্র প্রতিপক্ষ শিবিরে ভীতির সঞ্চার করে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে মুসলিমরা রকেট (যাকে তারা বলতো স্বয়ংক্রিয় দাহ্য ডিম) এবং টর্পেডো (নাশপাতি সদৃশ সম্মুখে অগ্রসরমান বোমা, যার অগ্রভাগ ছিল বর্শার মতো) আবিষ্কার করে। টর্পেডো শত্রুজাহাজকে ধ্বংস করে অদৃশ্য হয়ে যেতো।
ফাউন্টেন পেন: ৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে মিশরের সুলতানের প্রয়োজনে ফাউন্টেন পেন আবিষ্কৃত হয়। তিনি এমন কলম চাইছিলেন, যা তার হাত কিংবা পরনের পোশাককে নষ্ট করবে না। এই কলমের মধ্যে কালি জমিয়ে রাখার জায়গা থাকতো। বর্তমান যুগের কলমের নিবের মধ্যে ফেড ইঙ্ক থাকে, যা তখনকার দিনের কালির আধুনিক সংস্করণ।
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক।
No comments