মীর কাসেম আলীর ফাঁসি
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, বাংলাদেশে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের ঘটনায় পাকিস্তান ‘গভীরভাবে মনঃক্ষুণ্ন’। নির্যাতন, একাধিক হত্যা এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মীর কাসেম ২০১৪ সালে বাংলাদেশের একটি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন। তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তান ওই বিচার-প্রক্রিয়াকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আখ্যা দিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান কেন বাংলাদেশের বিচারিক প্রক্রিয়ার শুদ্ধতা নিয়ে এতটা চিন্তিত? আর কেনই-বা পাকিস্তান সরকার আরেক দেশের নাগরিকের মৃত্যুদণ্ডে এতটা গুরুত্ব দেয়, যিনি কিনা জঘন্য অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত? উত্তরটা হলো বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উঠলে পাকিস্তান নিজের অতীতে আটকা পড়ে থাকে। পাকিস্তানি পররাষ্ট্র দপ্তর কেন এ রকম কঠোর বক্তব্য দিয়েছে, তার ব্যাখ্যা কেবল একজন মানুষের জীবন নিয়ে অবাস্তব উদ্বেগের মধ্যে মেলে না। বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষের মৃত্যুদণ্ড হচ্ছে। আর সেগুলো গতানুগতিক বলেই গণ্য হয়। পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলো এসবের ভয়াবহতা নিয়ে উচ্চবাচ্য করে না। সত্যিটা হলো, পাকিস্তানের নিজ নাগরিকেরা বিদেশি ভূখণ্ডে নিহত হচ্ছেন। অথচ সে বিষয়ে নীরবতা লক্ষণীয়। সৌদি আরবে কতজন পাকিস্তানির শিরশ্ছেদ হয়েছে, সেই দীর্ঘ তালিকার কথা ভেবে দেখুন। মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নামকাওয়াস্তে আদালতে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার প্রশ্নে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন জোরালো উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার-প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে মামলার প্রস্তুতির জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবীদের পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া এবং সাক্ষীর সংখ্যা ইচ্ছামতো সীমিত রাখার অভিযোগের বিষয়গুলো। তবে পাকিস্তান বাংলাদেশে অস্বচ্ছ বিচারের অভিযোগ করতে পারে না। কারণ, পাকিস্তানের নিজস্ব বিচারব্যবস্থার ভিত আরও বেশি নড়বড়ে। বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করা যাক। দেশটিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে একটি বেসামরিক আদালতে। কিন্তু পাকিস্তানে যেসব বেসামরিক মানুষ রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের দায়ে অভিযুক্ত, তাঁদের বিচার হচ্ছে রুদ্ধদ্বার সামরিক আদালতে। তাঁদের পছন্দমতো আইনজীবী নিয়োগেরও সুযোগ দেওয়া হয় না। সামরিক আদালতের নথিপত্র দেখার সুযোগও কারও নেই। এটা বিচারিক স্বচ্ছতার আধুনিক ধ্যানধারণার সঙ্গে সম্পূর্ণ অসংগতিপূর্ণ। মীর কাসেমের বিচার এবং মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পাকিস্তানের মাথাব্যথার কারণ একটিই। আর সেটা হলো তিনি পাকিস্তানপন্থী মিলিশিয়া বাহিনী আলবদরের সাবেক প্রধান ছিলেন। আলশামস ও রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে আলবদরও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিল। তারা ১৯৭১ সালের বিদ্রোহ দমনের জন্য অহেতুক বর্বর চেষ্টা চালায়। ওই ঘটনায় পাকিস্তানের ঐক্যে ভাঙন ধরে এবং পূর্ব পাকিস্তান নামের ভূখণ্ডটি স্বাধীন বাংলাদেশে রূপ নেয়।
মীর কাসেম একা নন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে পাঁচজন সুপরিচিত ইসলামি নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। ১৯৭১ সালে ওই মিলিশিয়া নেতাদের কার্যকলাপ যা-ই হোক না কেন, পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন অনুভব করে। কারণ, দ্বিজাতি তত্ত্বে দেশটি আদর্শিকভাবে অটল রয়েছে। আমি যেমনটা স্কুলে শিখেছি, পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য দ্বিজাতি তত্ত্ব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ তত্ত্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তির প্রতি নজর দেওয়া যাক। প্রথমত, মুসলিম ও হিন্দুরা মৌলিকভাবে ভিন্ন এবং অবশ্যই হিন্দুদের পাকিস্তান ছেড়ে চলে যেতে হবে। কারণ, এটা মুসলিমদের দেশ। দ্বিতীয়ত, বিশ্বের মুসলিমরা একক জাতি (উম্মাহ)। স্থানীয় গোষ্ঠী, ভাষা ও সংস্কৃতিগত ব্যবধানের বাধা অতিক্রমের শক্তি এর আছে। প্রথম বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক বা নতুন করে মূল্যায়নের প্রয়োজন এখন নেই। কারণ, পাকিস্তান ও ভারত পৃথক দুটি রাষ্ট্র হিসেবে নিজ নিজ পথ বেছে নিয়েছে। পাকিস্তানের হিন্দু জনসংখ্যা কমতে কমতে ১ বা ২ শতাংশে নেমে এসেছে এবং আরও কমছে। একটি ক্ষুদ্র, নিপীড়িত এবং আতঙ্কিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে জনজীবনে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। দ্বিতীয় বিষয়টি অবশ্যই ১৯৭১ সালের ঘটনাবলির আলোকে বিবেচনা করতে হবে। পাকিস্তানের সরকার এবং জিহাদি সংগঠনগুলোর (টিটিপি, আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘাত চলছে। এ ছাড়া দুই মুসলিম প্রতিবেশী আফগানিস্তান ও ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো নয়। এতে এটা স্পষ্ট যে ইসলামি সংহতি এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকর নয়। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলছে ভ্রাতৃঘাতী লড়াই। ইরানিরা মুসলিমই নয় বলে সৌদি আরবের প্রধান মুফতি সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে দৃঢ় হচ্ছে সৌদি-ইসরায়েলি মৈত্রী। এসব বিষয় যেন ইঙ্গিত দিচ্ছে, উম্মাহ একটি সংশয়পূর্ণ ধারণা।
তারপরও বলতে হয়, ১৯৭১ সালে দ্বিজাতি তত্ত্ব অকার্যকর হওয়ার পরও পাকিস্তান যে নিজেকে দ্রুত নবায়ন করতে পেরেছিল তা তার কৃতিত্ব। আর এটি করার সময় পাকিস্তান বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করে, যেসব আদর্শের ভিত্তিতে তার সৃষ্টি হয়েছিল, সেগুলোর মুখাপেক্ষী না হয়েও সে কেবল টিকে থাকা নয়; এগিয়ে যেতেও সক্ষম। আজকের পাকিস্তানও বিশ্ব মুসলিম ঐক্যের পক্ষে গলাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কার্যত বাস্তবতা এবং জাতি গঠনের অগ্রাধিকারই ক্রমে বেশি করে এর চরিত্রকে প্রভাবিত করছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর নিয়ে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মহল খুব উৎসাহিত। অথচ চীন একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র এবং সেখানে মুসলিম জীবনাচার সুস্পষ্টভাবেই এড়িয়ে চলা হয়। দ্বিজাতি তত্ত্বকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার এখনই সময়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে দ্বিজাতি তত্ত্বই পাকিস্তান সৃষ্টি করেছে। তবে এই তত্ত্ব বর্তমানে পরিহার করা হলে কোনো ক্ষতি নেই। টিকে থাকার জন্য জাতিরাষ্ট্রের কোনো তত্ত্বের প্রয়োজন পড়ে না। উদাহরণ হিসেবে আর্জেন্টিনা এবং নেদারল্যান্ডসের কথা তোলা যায়। সেখানে কোনো জাতীয় ভাবাদর্শ নেই, কিন্তু দেশ দুটি তাদের মতো করে স্থিতি ও উন্নতি অর্জন করছে। পাকিস্তানকে বুঝতে হবে, পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার ভাষাগত,
বাংলাদেশের বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার প্রশ্নে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন জোরালো উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার-প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে মামলার প্রস্তুতির জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবীদের পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া এবং সাক্ষীর সংখ্যা ইচ্ছামতো সীমিত রাখার অভিযোগের বিষয়গুলো। তবে পাকিস্তান বাংলাদেশে অস্বচ্ছ বিচারের অভিযোগ করতে পারে না। কারণ, পাকিস্তানের নিজস্ব বিচারব্যবস্থার ভিত আরও বেশি নড়বড়ে। বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করা যাক। দেশটিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে একটি বেসামরিক আদালতে। কিন্তু পাকিস্তানে যেসব বেসামরিক মানুষ রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের দায়ে অভিযুক্ত, তাঁদের বিচার হচ্ছে রুদ্ধদ্বার সামরিক আদালতে। তাঁদের পছন্দমতো আইনজীবী নিয়োগেরও সুযোগ দেওয়া হয় না। সামরিক আদালতের নথিপত্র দেখার সুযোগও কারও নেই। এটা বিচারিক স্বচ্ছতার আধুনিক ধ্যানধারণার সঙ্গে সম্পূর্ণ অসংগতিপূর্ণ। মীর কাসেমের বিচার এবং মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পাকিস্তানের মাথাব্যথার কারণ একটিই। আর সেটা হলো তিনি পাকিস্তানপন্থী মিলিশিয়া বাহিনী আলবদরের সাবেক প্রধান ছিলেন। আলশামস ও রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে আলবদরও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিল। তারা ১৯৭১ সালের বিদ্রোহ দমনের জন্য অহেতুক বর্বর চেষ্টা চালায়। ওই ঘটনায় পাকিস্তানের ঐক্যে ভাঙন ধরে এবং পূর্ব পাকিস্তান নামের ভূখণ্ডটি স্বাধীন বাংলাদেশে রূপ নেয়।
মীর কাসেম একা নন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে পাঁচজন সুপরিচিত ইসলামি নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। ১৯৭১ সালে ওই মিলিশিয়া নেতাদের কার্যকলাপ যা-ই হোক না কেন, পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন অনুভব করে। কারণ, দ্বিজাতি তত্ত্বে দেশটি আদর্শিকভাবে অটল রয়েছে। আমি যেমনটা স্কুলে শিখেছি, পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য দ্বিজাতি তত্ত্ব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ তত্ত্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তির প্রতি নজর দেওয়া যাক। প্রথমত, মুসলিম ও হিন্দুরা মৌলিকভাবে ভিন্ন এবং অবশ্যই হিন্দুদের পাকিস্তান ছেড়ে চলে যেতে হবে। কারণ, এটা মুসলিমদের দেশ। দ্বিতীয়ত, বিশ্বের মুসলিমরা একক জাতি (উম্মাহ)। স্থানীয় গোষ্ঠী, ভাষা ও সংস্কৃতিগত ব্যবধানের বাধা অতিক্রমের শক্তি এর আছে। প্রথম বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক বা নতুন করে মূল্যায়নের প্রয়োজন এখন নেই। কারণ, পাকিস্তান ও ভারত পৃথক দুটি রাষ্ট্র হিসেবে নিজ নিজ পথ বেছে নিয়েছে। পাকিস্তানের হিন্দু জনসংখ্যা কমতে কমতে ১ বা ২ শতাংশে নেমে এসেছে এবং আরও কমছে। একটি ক্ষুদ্র, নিপীড়িত এবং আতঙ্কিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে জনজীবনে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। দ্বিতীয় বিষয়টি অবশ্যই ১৯৭১ সালের ঘটনাবলির আলোকে বিবেচনা করতে হবে। পাকিস্তানের সরকার এবং জিহাদি সংগঠনগুলোর (টিটিপি, আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘাত চলছে। এ ছাড়া দুই মুসলিম প্রতিবেশী আফগানিস্তান ও ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো নয়। এতে এটা স্পষ্ট যে ইসলামি সংহতি এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকর নয়। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলছে ভ্রাতৃঘাতী লড়াই। ইরানিরা মুসলিমই নয় বলে সৌদি আরবের প্রধান মুফতি সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে দৃঢ় হচ্ছে সৌদি-ইসরায়েলি মৈত্রী। এসব বিষয় যেন ইঙ্গিত দিচ্ছে, উম্মাহ একটি সংশয়পূর্ণ ধারণা।
তারপরও বলতে হয়, ১৯৭১ সালে দ্বিজাতি তত্ত্ব অকার্যকর হওয়ার পরও পাকিস্তান যে নিজেকে দ্রুত নবায়ন করতে পেরেছিল তা তার কৃতিত্ব। আর এটি করার সময় পাকিস্তান বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করে, যেসব আদর্শের ভিত্তিতে তার সৃষ্টি হয়েছিল, সেগুলোর মুখাপেক্ষী না হয়েও সে কেবল টিকে থাকা নয়; এগিয়ে যেতেও সক্ষম। আজকের পাকিস্তানও বিশ্ব মুসলিম ঐক্যের পক্ষে গলাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কার্যত বাস্তবতা এবং জাতি গঠনের অগ্রাধিকারই ক্রমে বেশি করে এর চরিত্রকে প্রভাবিত করছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর নিয়ে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মহল খুব উৎসাহিত। অথচ চীন একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র এবং সেখানে মুসলিম জীবনাচার সুস্পষ্টভাবেই এড়িয়ে চলা হয়। দ্বিজাতি তত্ত্বকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার এখনই সময়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে দ্বিজাতি তত্ত্বই পাকিস্তান সৃষ্টি করেছে। তবে এই তত্ত্ব বর্তমানে পরিহার করা হলে কোনো ক্ষতি নেই। টিকে থাকার জন্য জাতিরাষ্ট্রের কোনো তত্ত্বের প্রয়োজন পড়ে না। উদাহরণ হিসেবে আর্জেন্টিনা এবং নেদারল্যান্ডসের কথা তোলা যায়। সেখানে কোনো জাতীয় ভাবাদর্শ নেই, কিন্তু দেশ দুটি তাদের মতো করে স্থিতি ও উন্নতি অর্জন করছে। পাকিস্তানকে বুঝতে হবে, পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার ভাষাগত,
জাতিগত এবং সাংস্কৃতিক বৈপরীত্যের জন্য ভারত দায়ী ছিল না। এক মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া দুটি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সন্তানের মতো আমাদেরও ভিন্নতা ছিল। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত একত্রে থাকার সুযোগ আমাদের আসলেই ছিল না। এর পাশাপাশি ভুল শাসনের কারণে ওই সম্পর্ক আরও দ্রুত ভেঙে পড়ে। জুলফিকার আলী ভুট্টোর মন্তব্য ইধার হাম, উধার তুম (আমরা এ প্রান্তে, তোমরা ওই প্রান্তে) অঞ্চল দুটির বিভক্তির ইঙ্গিত করেছিল। জন্মের সময়ের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আটকে থাকা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তৃপ্তি পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু এর দ্বারা শান্তি, স্থিতি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। বরং অতীতের বেদনাময় ওই অধ্যায়কে বন্ধ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার এখনই সময়। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের দায়িত্ব বাংলাদেশের তুলনায় বেশি। পাকিস্তানের উচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভুল ইতিহাস পড়ানো বন্ধ করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ানো ইতিহাসে পূর্বের বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের নৃশংসতার ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বরং সেখানে যুদ্ধাপরাধের ঘটনাকে সমর্থন করা হয়েছে এবং ১৯৭১-এর ঘটনাকে অস্বীকার করা হয়েছে। পাকিস্তানের উচিত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। এ ক্ষেত্রে সত্য এবং মীমাংসাই কাম্য।
পারভেজ হুদভয়: পদার্থবিদ্যা ও গণিত বিষয়ের অধ্যাপক।
পারভেজ হুদভয়: পদার্থবিদ্যা ও গণিত বিষয়ের অধ্যাপক।
No comments