আসামে স্বস্তিতে নেই বিজেপি
২০১৪ সালের ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল তাদের পক্ষে। আসামের ১৪টির মধ্যে সাতটি আসনেই তারা এককভাবে জিতেছে। এরপর কংগ্রেস ছেড়ে ১১ জন বিধায়ক যোগ দিয়েছেন তাদের শিবিরে। তবু রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে মোটেই স্বস্তিতে নেই বিজেপি। দীর্ঘ ১৫ বছরের কংগ্রেস শাসন থেকে ‘আসাম উদ্ধারে’ মরিয়া গেরুয়া শিবির তাই জোট করার জন্য ৪০টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আঞ্চলিক দলকে। গত লোকসভা নির্বাচনে মোদি-ঝড়ে কংগ্রেসের দুর্গ আসাম টলে যায়। কংগ্রেস পায় মাত্র তিনটি আসন। ভোট কাটাকুটির জাদুতে ভর করে উড়তে থাকে গেরুয়া পতাকা। সেই হাওয়াতেই কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মাসহ ১১ জন বিধায়ক দল ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে। নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে বিজেপির জাঁদরেল নেতারা আসামে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের অছিলায় প্রচারে ঝড় তোলেন। দলের সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য বা কংগ্রেস থেকে আসা হিমন্ত শর্মার বদলে সামনে নিয়ে আসেন একসময়ের ডাকসাইটে ছাত্রনেতা সর্বানন্দ সোনোয়ালকে। গোটা রাজ্য ছেয়ে গিয়েছে হোর্ডিংয়ে: এবারের সরকার, সর্বার সরকার। লক্ষ্য স্পষ্ট, মুসলিম ভোট নিয়ে কংগ্রেস আর সারা ভারত সংযুক্ত গণতান্ত্রিক মোর্চার (এআইইউডিএফ) ভোট ভাগাভাগির মাঝে উগ্র জাতীয়তাবাদী হিন্দু ভোট একত্রীকরণ। কিন্তু আসামে ‘বঙাল-খেদা’ আন্দোলনের শীর্ষ নেতাকে মানতে নারাজ অনেকেই। কংগ্রেসও এটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে। ফলে বিজেপি শিবিরের চিন্তা বাড়ছে।
৩৬ শতাংশের বেশি বাঙালি মুসলিম ভোট, ৩৫ আসনে ৩০ শতাংশের বেশি চা-শ্রমিকদের ভোট আর প্রায় ৩০ শতাংশ ভাষিক সংখ্যালঘু ভোটের জটিল ‘পার্টি গণিত’ ভাবাচ্ছে বিজেপির থিঙ্ক ট্যাংককে। দলটি তাই দোসরের সন্ধানে মরিয়া। একসময়ে বামদের ঘনিষ্ঠ অসম গণপরিষদকে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মাঝে ২৪টি আসন ছেড়ে দিয়েছে তারা। বড়ো পিপলস পার্টির হাঙ্গাব্রা গোষ্ঠীকে ছেড়ে দিয়েছে ১৬টি আসন। এমনকি, বদরুদ্দিন আজমল না করে দিলেও বিজেপি এআইইউডিএফের দিকে এখনো হাত বাড়িয়ে আছে। কংগ্রেসের মতো বিজেপিও প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছে প্রতিবছর ভয়াবহ বন্যায় হাবুডুবু খাওয়া রাজ্যটিতে। হিন্দুত্বের তাস আস্তিন থেকে কম বের করেনি তারা। কথিত বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব ইস্যুতে আইন করে উঠতে না পারায় কিছুটা বেকায়দায় থাকলেও সেই ব্যর্থতায় প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টায় ত্রুটি নেই। পাশাপাশি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অনুন্নয়ন ও ব্যর্থতার অভিযোগ তো আছেই। দীর্ঘদিন কংগ্রেসি ঘরানায় রাজনীতি করলেও হিমন্ত বিশ্ব শর্মাই সবচেয়ে বেশি কামান দাগছেন তাঁর সাবেক দলের বিরুদ্ধে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আসামের মানুষকে দুর্ভোগ ছাড়া কিছুই দেয়নি কংগ্রেস। এবার তাই জনগণ উচিত শিক্ষা দেবে।’ জবাবে তাঁর সাবেক রাজনৈতিক গুরু বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, ‘কংগ্রেস যদি ব্যর্থ হয়ে থাকে তবে তার দায়ও হিমন্তরও। আসলে চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির হাত থেকে বাঁচতে সে এখন অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ এআইইউডিএফ নেতা বদরুদ্দিন আজমল প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, বিজেপিকে আসামে রুখে দেবেন তাঁরা। কোনো অবস্থাতেই বিজেপি আসামে সরকার গড়তে পারবে না। আজমলের দাবি, তাঁদের বাদ দিয়ে কেউই সরকার গড়তে পারবে না। আর বিজেপিকে সমর্থনের প্রশ্নই নেই তাঁদের।
No comments