সমুদ্রসীমার বিরোধ দ্বিপাৰিক মীমাংসায় এগুচ্ছে ঢাকা-দিলস্নী

সোহেল রহমান দ্বিপাকি সমঝোতার মাধ্যমে সমুদ্রসীমার বিরোধ মীমাংসার পথে এগুচ্ছে ঢাকা-দিলস্নী। বঙ্গোপসাগরের অমীমাংসিত সমুদ্রসীমা নিয়ে আলোচনা জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার নয়াদিলস্নীতে বাংলাদেশ ও ভারতের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসছেন।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দু'দেশের মধ্যে সম্পাদিত যৌথ ইশতেহারের আলোকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, সমুদ্রসীমার বিরোধ মীমাংসায় জাতিসংঘ সালিশ নিষ্পত্তি আদালত গঠন নিয়েই মূলত আলোচনা হবে। বৈঠকে বাংলাদেশের প েঅতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব কমোডর (অব) খুরশেদ আলম ও মন্ত্রণালয়ের দণি এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইমরান অংশ নেবেন। সূত্র জানায়, জাতিসংঘ সালিশ নিষ্পত্তি আদালতে তিনজন নিরপে আরবিট্রেটর নিয়োগের ল্যে সমঝোতায় উপনীত হতে দু'দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা করবেন। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশ ইতোমধ্যে একজন করে আরবিট্রেটর নিয়োগ দিয়েছে। যৌথ ইশতেহারের ২১ নম্বর ধারায় সমুদ্রসীমার বিরোধ মীমাংসায় দ্বিপাকি আলোচনার কথা বলা হয়েছে। ইশতেহারে এ ল্যে যত দ্রম্নত সম্ভব বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের ভারত সফরের কথা বলা হয়েছিল। সূত্র জানায়, জাতিসংঘ সালিশ নিষ্পত্তি আদালতের পাশাপাশি দ্বিপাকি আলোচনার মাধ্যমে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির ল্যে কাজ করছে উভয় দেশ। এর আগে আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমুদ্রসীমার বিরোধ মীমাংসায় উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি দাবি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এেেত্র বিপরীত মেরম্নর অবস্থান ছেড়ে সমঝোতার ইঙ্গিত দিয়েছেন দু'দেশের প্রতিনিধিরা। চলতি মাসের গোড়ার দিকে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ন্যায্যতা ও সমদুরত্বের ভিত্তিতে বিরোধ মীমাংসায় একমত হয় বাংলাদেশ। এর ফলে বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ ১৪টি খনিজ অনুসন্ধান বস্নকে বাংলাদেশের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে বলে দাবি করেছেন মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্তারা।
এর আগে গত অক্টোবরে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ মীমাংসায় জাতিসংঘ সালিশ আদালতের দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার কৌশল নেয় সরকার। সূত্র জানায়, চলতি মাসের শুরম্নতে জাতিসংঘ সালিশ নিষ্পত্তি আদালতের কাজ শুরম্নর কথা থাকলেও সম্প্রতি ভারতের প থেকে বাংলাদেশের কাছে ট্রাইবু্যনাল গঠনের জন্য বাড়তি সময় চাওয়া হয়েছে। ভারতের আবেদনে বাংলাদেশও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। ফলে ভারতের বিরোধ মীমাংসায় কাউন্সিল গঠনে আরও বিলম্ব হতে পারে। তবে ভারতকে কত দিন সময় দেয়া হয়েছে কৌশলগত কারণে তা প্রকাশ করতে চান না মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সূত্র জানিয়েছে, সালিশ নিষ্পত্তি আদালত নিরপে আরবিট্রের নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের প থেকে দু'জন ব্যক্তির নাম প্রসত্মাব করা হয়েছে। কোন দেশই তাদের প্রসত্মাবের বিরোধিতা করেনি। জাতিসংঘ আইন অনুযায়ী পাঁচ আরবিট্রেটর বা সালিশ নিষ্পন্নকারী নিয়ে ট্রাইবু্যনাল কাজ শুরম্ন করবে। বাংলাদেশের প থেকে প্রথমে ব্রিটিশ আইনবিদ লুই ভনকে আরবিট্রেটর মনোনীত করা হয়। বিপরীতে ভারতের প থেকে ভূতত্ত্ববিদ ও সমুদ্র আইনবিশেষজ্ঞ শীনিবাস রাওকে আরবিট্রেটর নিয়োগ দেয়া হয়। উভয়পরে সম্মতিতে জাতিসংঘ অবশিষ্ট তিন আরবিট্রেটর নিয়োগ দেবে। সালিশ নিষ্পত্তি আদালতে ভারত ও মিয়ানমারের বিরম্নদ্ধে আইনী লড়াইয়ের জন্য ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইনী প্রতিষ্ঠান ফলিহগকে নিয়োগ দিয়েছে। ফলিহগের হয়ে সালিশ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে আইনী সহায়তা দেবেন পায়াম আখাভান। কানাডার ম্যাগগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক এর আগে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইনজীবী ছিলেন।
এর আগে বঙ্গোপসাগরের ২৮টি বস্নকে বাংলাদেশ খনিজ অনুসন্ধান কাজ শুরম্ন করলে তাতে তীব্র আপত্তি জানায় দুই দেশ। গভীর সমুদ্রের যে তিনটি বস্নকে পেট্রোবাংলা বিদেশী দুই কোম্পানির সঙ্গে উৎপাদন-অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) প্রক্রিয়া চলছে তার সব কয়টিতেই ভারত ও মিয়ানমারের আপত্তি রয়েছে। দেশ দুটির দাবি, তিনটি বস্নকের অংশই তাদের এলাকায় পড়েছে। এর মধ্যে ৫ নম্বর বস্নকে ভারত এবং ১১ নম্বর বস্নকে মিয়ানমার আগে থেকেই সরাসরি আপত্তি জানিয়ে আসছিল। ১০ নম্বর বস্নকের ব্যাপারে প্রথমে আপত্তি না জানালেও সম্প্রতি ভারতের প থেকে নোট ভারবাল দিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ নম্বর বস্নকে আইরিশ কোম্পানি তালেস্না এবং ১০ ও ১১ নম্বর বস্নকে মার্কিন কোম্পানি কনকো ফিলিপস খনিজ অনুসন্ধানের দায়িত্ব লাভ করেছে। পিএসসি স্বারের ঠিক আগ মুহূর্তে প্রতিবেশী দুই দেশের আপত্তির কারণে অনেকটাই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সরকার। এর বাইরে বঙ্গোপসাগরের অমীমাংসিত সমুদ্রসীমার বাংলাদেশের ২৮টি বস্নকের অধিকাংশের ব্যাপারেই ভারত ও মিয়ানমারের আপত্তি রয়েছে। ২০০৮ সালের শেষ দিকে জাতিসংঘে উপস্থাপন করা তথ্যউপাত্তে মিয়ানমার বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের বাইরে ২৯ হাজার নটিক্যাল মাইল এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করে। অন্যদিকে চলতি বছরের মে মাসে জাতিসংঘে দাবি করা তথ্যউপাত্তে ভারত ২২ হাজার ৫শ' নটিক্যাল মাইল এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করেছে। তবে বাংলাদেশের দাবি, সমতার ভিত্তিতে সমুদ্রসীমার বিরোধ-নিষ্পত্তি করা হলে গোটা এলাকা বাংলাদেশের অধিকারে আসবে।

No comments

Powered by Blogger.