অনুমোদন পেতে ২০০ বিমা কোম্পানির আবেদন
দেশের বিমা খাত এখনো চলছে ১৯৩৮ সালের পুরোনো বিমা আইনের আওতায়। নতুন আইন পাস হয়েছে নয় মাস আগে, কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। সরকার বলছে, প্রয়োগ না হওয়ার কারণ হলো, বিধিমালা এখনো তৈরি হয়নি।
বিধিমালা তৈরি হয়নি কেন? কারণ, বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়নি এখনো। কর্তৃপক্ষ এসে বিধিমালা তৈরি করবে, তারপর হবে নতুন আইনের প্রয়োগ।তাহলে তো আগে জরুরি বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা। জানা গেছে, কর্তৃপক্ষ গঠনের যাবতীয় প্রস্তুতির ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে পড়ে রয়েছে কয়েক মাস ধরে। কিন্তু অনুমোদন হচ্ছে না।
এমন বাস্তবতায় বিমা কোম্পানির নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক, এমন ২০০ আবেদনপত্রের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে প্রস্তাবিত ৮০টি জীবন বিমা কোম্পানি ও ১২০টি সাধারণ বিমা কোম্পানি।
নানামুখী তদবির: সূত্র জানায়, এসব বিমা কোম্পানির নিবন্ধন পেতে উপজেলা পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী নেতা ও ব্যবসায়ীরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে একের পর এক আবেদন করে যাচ্ছেন তাঁরা। আর এসবআবেদনপত্রে সুপারিশ করছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা।জানা গেছে, আর কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিবন্ধন দেওয়া হবে না, সরকারের এমন দৃঢ় মনোভাবের কারণে বিমা কোম্পানির দিকেই তাঁদের ঝোঁক এখন।দেশে বর্তমানে বেসরকারি খাতে ৪৩টি সাধারণ বিমা কোম্পানি আর ১৭টি জীবন বিমা কোম্পানি রয়েছে। এর বাইরে রাষ্ট্রীয় খাতে রয়েছে সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশন।১৯৯৬-২০০১ সময়ের আওয়ামী লীগ সরকার ২১টি বিমা কোম্পানির নিবন্ধন দিয়েছিল, যার মধ্যে ১৯টি ছিল সাধারণ বিমা ও দুটি জীবন বিমা কোম্পানি।
যোগ্যতা ও দক্ষতা বিবেচনায় না নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা, তাঁদের আত্মীয়স্বজন এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কোনো না-কোনোভাবে যুক্ত ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের বিমা কোম্পানি খোলার অনুমোদন দেওয়ায় সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল।তবে এবারের প্রস্তাবিত ২০০টি বিমা কোম্পানির তালিকা প্রসঙ্গে গত মাসের মাঝামাঝি সময় যোগাযোগ করা হয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে। তিনি তখন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘তালিকা তৈরি হতেই পারে। তবে বিমা কোম্পানির নিবন্ধন দেওয়া হবেই—এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি।’জানা গেছে, আবেদনকারীদের কারও কারও বর্তমানে সাধারণ ও জীবন—দুই ধরনেরই বিমা কোম্পানির মালিকানা রয়েছে। যাঁদের জীবন বিমা কোম্পানি রয়েছে তাঁরা সাধারণ বিমা, আর যাঁদের সাধারণ বিমা কোম্পানি রয়েছে তাঁরা জীবন বিমা কোম্পানির নিবন্ধন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।সূত্র জানায়, উদ্যোক্তারা নিয়ম মেনে বিমা কোম্পানির নিবন্ধনের জন্য প্রথমে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে নামের ছাড়পত্র নিয়েছেন। তারপর প্রস্তাবিত আবেদনপত্রগুলো দাখিল করেছেন বিলুপ্তির পথে যাওয়া বীমা অধিদপ্তরে। বীমা অধিদপ্তর সেগুলো পাঠিয়ে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিমা কোম্পানির নিবন্ধন পেতে আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক গাজী বেলায়েত হোসেন, আরেক পরিচালক ও শরীফ মেলামাইন কোম্পানির অন্যতম মালিক রজ্জব শরীফ, সাংসদ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, বিএনএস গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এন এইচ বুলু, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর শায়খ খন্দকার গোলাম মাওলা, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, ফিনিক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান দীন মোহাম্মদ, কেডিএস গ্রুপের পরিচালক এস এম শামীম ইকবাল, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য কামাল মোস্তফা চৌধুরী প্রমুখ।যোগাযোগ করলে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি এ কে এম রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিমা খাতে বর্তমানে দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। বর্তমানে অনেক কোম্পানিরই অবস্থা ভালো নয়। এ অবস্থায় আরও বিমা কোম্পানির নিবন্ধন সুবিবেচনাপ্রসূত হবে বলে তিনি মনে করেন না।রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে যদি নিবন্ধন দেওয়া হয়ও, তাহলে মূলধনের পর্যাপ্ততা, পুনরায় বিমা-ব্যবস্থা, বিমা ব্যবসার জ্ঞানকে পূর্বশর্ত দেওয়ার পরামর্শ দেন এ কে এম রফিকুল ইসলাম। নইলে দেশের বিমা খাত কতিপয় দুষ্টলোকের খপ্পরে পড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৬২টি বিমা কোম্পানির মধ্যে ৪৩টি সাধারণ বিমা ও ১৮টি জীবন বিমা থাকলেও লক্ষণীয় বিষয় হলো, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে ইসলামি বিমা কার্যক্রম ব্যাপক হারে বেড়েছে।বিআইএর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বিমা খাতের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার ২০ শতাংশ। বিমা কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয়ের ভিত্তিতে বিমা খাতের বিকাশের এই প্রবণতা নির্ণয় করা হয়।বিআইএর পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০৯ সালে দেশে বেসরকারি জীবন বিমা খাতের প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৫৯৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। অবশ্য এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় খাতের জীবন বিমা করপোরেশনের প্রিমিয়াম আয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কেননা, এখন পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি। আর গত বছর সাধারণ বিমা খাতে প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩৮৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অবশ্য এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় খাতের সাধারণ বিমা করপোরেশনের প্রিমিয়াম আয় বাদ দিলে বেসরকারি খাতের সাধারণ বিমার প্রিমিয়াম আয় দাঁড়ায় এক হাজার ২২৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, গত বছর দেশে বিমা খাতের প্রিমিয়াম আয় ছয় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যেখানে ২০০৮ সালে এই আয় ছিল পাঁচ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা।
২০০৮ সালে দেশে বেসরকারি জীবন বিমা খাতের প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। আর সাধারণ বিমা খাতে প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৫৮ কোটি টাকা।
পরিসংখ্যান থেকে আরও দেখা যায়, ২০০৭ সালে জীবন বিমা খাতের প্রিমিয়াম আয় ছিল দুই হাজার ৯১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যেখানে ২০০৬ সালে এর পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৪৫৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধির হার ছিল সাড়ে ১৮ শতাংশের বেশি।আবার ২০০৭ সালে সাধারণ বিমা খাতের প্রিমিয়াম আয় ছিল ৯৩৮ কোটি ৭২ লাখ, যা ২০০৬ সালে ছিল ৭৯৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।
গত বিএনপি সরকারের সময়ও নতুন বিমা কোম্পানির নিবন্ধন দেওয়ার জন্য নানা ধরনের তোড়জোড় চলেছিল। অন্তত ৫০টি কোম্পানির নামসহ আবেদনও সে সময় জমা পড়েছিল তখনকার দায়িত্বপ্রাপ্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় এবং তখনকার অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের দৃঢ় মনোভাবের কারণে শেষ পর্যন্ত কোনো নতুন বিমা কোম্পানির নিবন্ধন দেওয়া হয়নি।যোগাযোগ করলে বেসরকারি কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশে আরও বেশি বিমা কোম্পানির নিবন্ধন দেওয়ার বাস্তবতা নেই। উন্নত দেশ বাদ দিলেও প্রতিবেশী ভারতের উদাহরণই সামনে দাঁড় করানো যেতে পারে। ভারতে সাধারণ ও জীবন বিমা মিলিয়েও
বিধিমালা তৈরি হয়নি কেন? কারণ, বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়নি এখনো। কর্তৃপক্ষ এসে বিধিমালা তৈরি করবে, তারপর হবে নতুন আইনের প্রয়োগ।তাহলে তো আগে জরুরি বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা। জানা গেছে, কর্তৃপক্ষ গঠনের যাবতীয় প্রস্তুতির ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে পড়ে রয়েছে কয়েক মাস ধরে। কিন্তু অনুমোদন হচ্ছে না।
এমন বাস্তবতায় বিমা কোম্পানির নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক, এমন ২০০ আবেদনপত্রের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে প্রস্তাবিত ৮০টি জীবন বিমা কোম্পানি ও ১২০টি সাধারণ বিমা কোম্পানি।
নানামুখী তদবির: সূত্র জানায়, এসব বিমা কোম্পানির নিবন্ধন পেতে উপজেলা পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী নেতা ও ব্যবসায়ীরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে একের পর এক আবেদন করে যাচ্ছেন তাঁরা। আর এসবআবেদনপত্রে সুপারিশ করছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা।জানা গেছে, আর কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিবন্ধন দেওয়া হবে না, সরকারের এমন দৃঢ় মনোভাবের কারণে বিমা কোম্পানির দিকেই তাঁদের ঝোঁক এখন।দেশে বর্তমানে বেসরকারি খাতে ৪৩টি সাধারণ বিমা কোম্পানি আর ১৭টি জীবন বিমা কোম্পানি রয়েছে। এর বাইরে রাষ্ট্রীয় খাতে রয়েছে সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশন।১৯৯৬-২০০১ সময়ের আওয়ামী লীগ সরকার ২১টি বিমা কোম্পানির নিবন্ধন দিয়েছিল, যার মধ্যে ১৯টি ছিল সাধারণ বিমা ও দুটি জীবন বিমা কোম্পানি।
যোগ্যতা ও দক্ষতা বিবেচনায় না নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা, তাঁদের আত্মীয়স্বজন এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কোনো না-কোনোভাবে যুক্ত ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের বিমা কোম্পানি খোলার অনুমোদন দেওয়ায় সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল।তবে এবারের প্রস্তাবিত ২০০টি বিমা কোম্পানির তালিকা প্রসঙ্গে গত মাসের মাঝামাঝি সময় যোগাযোগ করা হয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে। তিনি তখন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘তালিকা তৈরি হতেই পারে। তবে বিমা কোম্পানির নিবন্ধন দেওয়া হবেই—এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি।’জানা গেছে, আবেদনকারীদের কারও কারও বর্তমানে সাধারণ ও জীবন—দুই ধরনেরই বিমা কোম্পানির মালিকানা রয়েছে। যাঁদের জীবন বিমা কোম্পানি রয়েছে তাঁরা সাধারণ বিমা, আর যাঁদের সাধারণ বিমা কোম্পানি রয়েছে তাঁরা জীবন বিমা কোম্পানির নিবন্ধন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।সূত্র জানায়, উদ্যোক্তারা নিয়ম মেনে বিমা কোম্পানির নিবন্ধনের জন্য প্রথমে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে নামের ছাড়পত্র নিয়েছেন। তারপর প্রস্তাবিত আবেদনপত্রগুলো দাখিল করেছেন বিলুপ্তির পথে যাওয়া বীমা অধিদপ্তরে। বীমা অধিদপ্তর সেগুলো পাঠিয়ে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিমা কোম্পানির নিবন্ধন পেতে আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক গাজী বেলায়েত হোসেন, আরেক পরিচালক ও শরীফ মেলামাইন কোম্পানির অন্যতম মালিক রজ্জব শরীফ, সাংসদ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, বিএনএস গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এন এইচ বুলু, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর শায়খ খন্দকার গোলাম মাওলা, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, ফিনিক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান দীন মোহাম্মদ, কেডিএস গ্রুপের পরিচালক এস এম শামীম ইকবাল, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য কামাল মোস্তফা চৌধুরী প্রমুখ।যোগাযোগ করলে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি এ কে এম রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিমা খাতে বর্তমানে দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। বর্তমানে অনেক কোম্পানিরই অবস্থা ভালো নয়। এ অবস্থায় আরও বিমা কোম্পানির নিবন্ধন সুবিবেচনাপ্রসূত হবে বলে তিনি মনে করেন না।রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে যদি নিবন্ধন দেওয়া হয়ও, তাহলে মূলধনের পর্যাপ্ততা, পুনরায় বিমা-ব্যবস্থা, বিমা ব্যবসার জ্ঞানকে পূর্বশর্ত দেওয়ার পরামর্শ দেন এ কে এম রফিকুল ইসলাম। নইলে দেশের বিমা খাত কতিপয় দুষ্টলোকের খপ্পরে পড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৬২টি বিমা কোম্পানির মধ্যে ৪৩টি সাধারণ বিমা ও ১৮টি জীবন বিমা থাকলেও লক্ষণীয় বিষয় হলো, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে ইসলামি বিমা কার্যক্রম ব্যাপক হারে বেড়েছে।বিআইএর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বিমা খাতের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার ২০ শতাংশ। বিমা কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয়ের ভিত্তিতে বিমা খাতের বিকাশের এই প্রবণতা নির্ণয় করা হয়।বিআইএর পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০৯ সালে দেশে বেসরকারি জীবন বিমা খাতের প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৫৯৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। অবশ্য এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় খাতের জীবন বিমা করপোরেশনের প্রিমিয়াম আয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কেননা, এখন পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি। আর গত বছর সাধারণ বিমা খাতে প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩৮৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অবশ্য এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় খাতের সাধারণ বিমা করপোরেশনের প্রিমিয়াম আয় বাদ দিলে বেসরকারি খাতের সাধারণ বিমার প্রিমিয়াম আয় দাঁড়ায় এক হাজার ২২৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, গত বছর দেশে বিমা খাতের প্রিমিয়াম আয় ছয় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যেখানে ২০০৮ সালে এই আয় ছিল পাঁচ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা।
২০০৮ সালে দেশে বেসরকারি জীবন বিমা খাতের প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। আর সাধারণ বিমা খাতে প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৫৮ কোটি টাকা।
পরিসংখ্যান থেকে আরও দেখা যায়, ২০০৭ সালে জীবন বিমা খাতের প্রিমিয়াম আয় ছিল দুই হাজার ৯১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যেখানে ২০০৬ সালে এর পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৪৫৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধির হার ছিল সাড়ে ১৮ শতাংশের বেশি।আবার ২০০৭ সালে সাধারণ বিমা খাতের প্রিমিয়াম আয় ছিল ৯৩৮ কোটি ৭২ লাখ, যা ২০০৬ সালে ছিল ৭৯৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।
গত বিএনপি সরকারের সময়ও নতুন বিমা কোম্পানির নিবন্ধন দেওয়ার জন্য নানা ধরনের তোড়জোড় চলেছিল। অন্তত ৫০টি কোম্পানির নামসহ আবেদনও সে সময় জমা পড়েছিল তখনকার দায়িত্বপ্রাপ্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় এবং তখনকার অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের দৃঢ় মনোভাবের কারণে শেষ পর্যন্ত কোনো নতুন বিমা কোম্পানির নিবন্ধন দেওয়া হয়নি।যোগাযোগ করলে বেসরকারি কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশে আরও বেশি বিমা কোম্পানির নিবন্ধন দেওয়ার বাস্তবতা নেই। উন্নত দেশ বাদ দিলেও প্রতিবেশী ভারতের উদাহরণই সামনে দাঁড় করানো যেতে পারে। ভারতে সাধারণ ও জীবন বিমা মিলিয়েও
৩০টির বেশি কোম্পানি নেই। অথচ বাংলাদেশে রয়েছে ৬২টি।
এক হাজার কোটি টাকার প্রিমিয়াম আয়ের জন্য ৪৩টি সাধারণ বিমা কোম্পানি বর্তমানে কাজ করার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কোনো কারণে সরকার যদি এমন সিদ্ধান্ত নেয়ও যে আরও বিমা কোম্পানির নিবন্ধন দেওয়া হবে, কোনোভাবেই তা যেন সাধারণ বিমা কোম্পানি না হয়। প্রথম আলোকে একই কথা বলেন ইসলামী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম চৌধুরী। তিনি বলেন, সাধারণ বিমা কোম্পানির আর দরকার নেই। তবে জীবন বিমা হতে পারে। দেশের বিমা খাত এখনো অবহেলার শিকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আইন অকার্যকর: এদিকে চলতি বছরের মার্চে বিমা-সংক্রান্ত দুটি আইন পাস হয়েছে। বিমা আইন ও বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন। কিন্তু আইন দুটি অকার্যকর পড়ে রয়েছে। আইন পাস হওয়ার নয় মাস পার হলেও এখনো গঠিত হয়নি বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কর্তৃপক্ষ গঠিত না হওয়ার কারণে বিমা বিধিমালা তৈরি করা যাচ্ছে না। আর বিধিমালা তৈরি না হওয়াতে কার্যকর করা যাচ্ছে না নতুন আইনও। সংগত কারণেই প্রচলিত ১৯৩৮ সালের বিমা আইন অনুযায়ীই পরিচালনা করতে হচ্ছে দেশের বিমা খাত।এ বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠনের আর বেশি দিন বাকি নেই। গঠনের পরেই কর্তৃপক্ষ বিধিমালা তৈরিতে হাত দেবে।উল্লেখ্য, বিমা খাতের দেখভালের দায়িত্ব দীর্ঘদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। ২০০৮ সালের নভেম্বরে নতুন বিমা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার সময় বিমা খাতের দেখভালের দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়।এখন নতুন আইন কার্যকর হলে বিদ্যমান বীমা অধিদপ্তরও অবলুপ্ত হবে।
এক হাজার কোটি টাকার প্রিমিয়াম আয়ের জন্য ৪৩টি সাধারণ বিমা কোম্পানি বর্তমানে কাজ করার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কোনো কারণে সরকার যদি এমন সিদ্ধান্ত নেয়ও যে আরও বিমা কোম্পানির নিবন্ধন দেওয়া হবে, কোনোভাবেই তা যেন সাধারণ বিমা কোম্পানি না হয়। প্রথম আলোকে একই কথা বলেন ইসলামী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম চৌধুরী। তিনি বলেন, সাধারণ বিমা কোম্পানির আর দরকার নেই। তবে জীবন বিমা হতে পারে। দেশের বিমা খাত এখনো অবহেলার শিকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আইন অকার্যকর: এদিকে চলতি বছরের মার্চে বিমা-সংক্রান্ত দুটি আইন পাস হয়েছে। বিমা আইন ও বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন। কিন্তু আইন দুটি অকার্যকর পড়ে রয়েছে। আইন পাস হওয়ার নয় মাস পার হলেও এখনো গঠিত হয়নি বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কর্তৃপক্ষ গঠিত না হওয়ার কারণে বিমা বিধিমালা তৈরি করা যাচ্ছে না। আর বিধিমালা তৈরি না হওয়াতে কার্যকর করা যাচ্ছে না নতুন আইনও। সংগত কারণেই প্রচলিত ১৯৩৮ সালের বিমা আইন অনুযায়ীই পরিচালনা করতে হচ্ছে দেশের বিমা খাত।এ বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠনের আর বেশি দিন বাকি নেই। গঠনের পরেই কর্তৃপক্ষ বিধিমালা তৈরিতে হাত দেবে।উল্লেখ্য, বিমা খাতের দেখভালের দায়িত্ব দীর্ঘদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। ২০০৮ সালের নভেম্বরে নতুন বিমা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার সময় বিমা খাতের দেখভালের দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়।এখন নতুন আইন কার্যকর হলে বিদ্যমান বীমা অধিদপ্তরও অবলুপ্ত হবে।
No comments