রমজান মাসে বাজারে চাই সত্যিকারের তদারকি
রমজান মাসের বাকি প্রায় তিন সপ্তাহ। মন্ত্রী, আমলা এমনকি ব্যবসায়ী-নেতারাও রমজান মাসের বাজার নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন। গত সপ্তাহে সিলেটে এক অনুুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান রমজান মাসের বাজারে অসাধুতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। এরপর ঢাকায় তিনি বলেছেন, রমজান মাসের জন্য পর্যাপ্ত পণ্য মজুদ করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই এরই মধ্যে রমজান মাসের বাজার তদারকির জন্য ৪৫ সদস্যের বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে।
সবকিছুই বেশ শ্রুতিমধুর, তবে কতখানি আস্থাযোগ্য? সরকারের ‘শক্ত প্রস্তুতি’ প্রসঙ্গটি দিয়েই শুরু করা যাক। রমজান মাসের জন্য হাজার দশেক টন করে চিনি ও তেলের মজুদ, এর চেয়ে অনেক কম পেঁয়াজ ও ছোলার মজুদ দিয়ে সরকার রমজান মাসের বাজারে প্রভাব রাখতে চায়। বিনয় দেখালে এ প্রস্তুতির প্রশংসা করতে হবে। তবে একে মোটেই শক্তিশালী প্রস্তুতি বলা যাবে না।
কারণ আলোচনা করা যেতে পারে। গত অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ও স্থানীয় উৎপাদনের অনুমিত হিসাবে বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের মাসিক গড় চাহিদা কমপক্ষে সোয়া লাখ টন। পাইকার ও পাইকারি বাজার পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, রমজান মাসে দেশে ভোজ্যতেলের ভোগ কমপক্ষে শতকরা ৪০ ভাগ বাড়ে। এর অর্থচাহিদা দাঁড়ায় পৌনে দুই লাখ টন। মুক্তবাজার অর্থনীতির শুভার্থী এবং অনেক পশ্চিমা অর্থনীতিবিদ বলেছেন, পণ্যবাজারে সরবরাহ ও মূল্যে প্রভাব রাখতে হলে কোনো সরবরাহকারীকে ওই বাজারের চাহিদার কমপক্ষে ২০ ভাগ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রমজান মাসের বাজারের চাহিদার তুলনায় টিসিবির কাছে থাকা ডাল, পেঁয়াজ ও ছোলার মজুদ প্রায়শই চাহিদার শতকরা দশমিক বা শূন্য দশমিকের কোনো অঙ্কে থাকে। এমন মজুদ টিসিবিকে আক্ষরিক অর্থেই নিধিরামে পরিণত করে।
টিসিবি শক্তিশালীকরণ সম্ভবত বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত শব্দমালার একটি। অস্থির বাজার আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে নাকাল সাধারণ ভোক্তার প্রত্যাশা আর হতাশা আলোচনায় ‘টিসিবির শক্তি বৃদ্ধি’ একটি জনপ্রিয় আলোচনা। কিন্তু এর মজুদশক্তি দেখে মনে হয়, সরকার পেনসিল ব্যাটারি দিয়ে সত্যিকারের একটি রেলগাড়ি চালাতে চায়।
এবার চালের দর প্রসঙ্গ। সংগ্রহমূল্য বাড়িয়ে চালের বাজার চড়িয়েছে সরকার। এরপর মিলারদের ডেকে কঠোর সমালোচনা এবং ওএমএস বা খোলাবাজারে চাল বিক্রির খবরে ইতিমধ্যেই মোকামে চালের দাম কমে গেছে মণপ্রতি প্রায় ৫০ টাকা। বলা হচ্ছে, রমজান মাসের আগেই ওএমএস চালু হবে চালের দাম কমানোর জন্য। রমজান মাসের বাজার চালের জন্য এমনিতেই মন্দা। চাহিদা কমে যায়, ফলে পাইকারি বাজারে দাম কমতে থাকে রমজান মাসের আগেই। হয়তো ওএমএস চালুর আগেই পাইকারি বাজার আগের জায়গায় চলে আসবে। কিন্তু খুচরা বাজারে কেজিতে যে চালের দাম দু-চার টাকা বেড়ে গেছে, তা কমার লক্ষণ নেই। এখানেই সরকারের চ্যালেঞ্জ।
এবার রমজান মাসের অন্যান্য পণ্যের হাল। ভোজ্যতেলের বাজারটি বেশ চড়ে গেছে এরই মধ্যে। সেটি বিশ্ববাজারের মূল্যবৃদ্ধির জন্য হয়নি বরং অসুস্থ প্রতিযোগিতার কবল থেকে মূল্য সংশোধিত হয়েছে। বিশ্ববাজারের বর্তমান মজুদ, মূল্য পরিস্থিতি ও উৎপাদনের নিকট পূর্বাভাস বলছে, এবার রমজান মাসে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। খেসারিসহ কিছু ডালের বাজারেও দর বেড়ে গেছে এর মধ্যেই। ছোলার মজুদ ও আমদানি পরিস্থিতিও মন্দ নয়।
তবে ভোজ্যতেল ও চিনির সরবরাহ এখনো স্থিতিশীল নয়। প্রস্তুতপণ্য ও আর সরবরাহ আদেশের (ডিও) মধ্যে মূল্যপার্থক্য মণে ১০০-১৫০ টাকা। স্বাভাবিক বাজারে এটি ২০-৩০ টাকা। ডিও কিনে পণ্য পেতে দেড় মাসও লেগে যাচ্ছে। গতবারের মতো চড়া লাভের আশায় মফস্বলের দোকানিরা কিছু বাড়তি চিনি মজুদ করছেন বলেও মনে করা হচ্ছে। যদিও বিশ্ববাজার বলছে, চিনির দাম সামনের কয়েক সপ্তায় চড়ার কথা নয়।
দেশে এবার পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়েছে প্রচুর। কৃষক দাম পেয়েছেন গত কয়েক মাস, ভোক্তাও সস্তায় খেয়েছে। তবে সপ্তাহ দুয়েক ধরে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বাজার ওঠানামা করিয়েছে। তাই রমজান মাসের আগেই সরকার ও বেসরকারি খাত মিলে একটি বিকল্প আমদানি সূত্র তৈরি রাখা নিরাপদ। পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক, মিয়ানমারসহ আরও কিছু আমদানিসূত্রে যোগাযোগ বাড়াতে হবে এখনই।
তবে মসলাই বোধহয় গোল বাধাবে। চিনি, আদা, রসুনের দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। তাই ঢাকায়ও বাজার গরম। গরম মসলায় আক্ষরিক অর্থেই আগুন লেগেছে। গতবার এক হাজার ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়ার পর এবার বড় সাদা এলাচি গত সপ্তাহে তিন হাজার টাকা ছুঁয়েছে।
এফবিসিসিআই এবারও মার্কেট মনিটরিং কমিটি করেছে, যার সমন্বয়ে আছেন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক, সরকারি ভবন ও রাস্তাঘাটের নির্মাণ ঠিকাদারি এবং চশমার দোকানদারিতে সফল ব্যবসায়ীরা। টিভি ক্যামেরা দাওয়াত দিয়ে, দামি স্যুট-টাই পরে দলবেঁধে কাঁচাবাজার ভ্রমণ ছিল গতবারের মার্কেট মনিটরিং। টিভি ক্যামেরার ক্লোজআপে দোকানির কাছে কাঁচামরিচ আর পেঁয়াজের দর জানতে চাওয়া ছিল মার্কেট মনিটরিং। এটিকে লোক দেখানো এক অনুষ্ঠানে পরিণত করেছিল সরকার ও ব্যবসায়ীরা। বাজারে প্রভাব রাখতে হলে বাজারের গভীরে যেতে হবে, বাজারের আচরণ বুঝতে হবে প্রতিটি ধাপে। উৎপাদন, আমদানি, মজুদ, সরবরাহ, চাহিদার সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত ও মার্কেট ট্রেন্ডের পেশাদারি বিশ্লেষণই হলো সত্যিকারের মার্কেট মনিটরিং।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই এরই মধ্যে রমজান মাসের বাজার তদারকির জন্য ৪৫ সদস্যের বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে।
সবকিছুই বেশ শ্রুতিমধুর, তবে কতখানি আস্থাযোগ্য? সরকারের ‘শক্ত প্রস্তুতি’ প্রসঙ্গটি দিয়েই শুরু করা যাক। রমজান মাসের জন্য হাজার দশেক টন করে চিনি ও তেলের মজুদ, এর চেয়ে অনেক কম পেঁয়াজ ও ছোলার মজুদ দিয়ে সরকার রমজান মাসের বাজারে প্রভাব রাখতে চায়। বিনয় দেখালে এ প্রস্তুতির প্রশংসা করতে হবে। তবে একে মোটেই শক্তিশালী প্রস্তুতি বলা যাবে না।
কারণ আলোচনা করা যেতে পারে। গত অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ও স্থানীয় উৎপাদনের অনুমিত হিসাবে বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের মাসিক গড় চাহিদা কমপক্ষে সোয়া লাখ টন। পাইকার ও পাইকারি বাজার পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, রমজান মাসে দেশে ভোজ্যতেলের ভোগ কমপক্ষে শতকরা ৪০ ভাগ বাড়ে। এর অর্থচাহিদা দাঁড়ায় পৌনে দুই লাখ টন। মুক্তবাজার অর্থনীতির শুভার্থী এবং অনেক পশ্চিমা অর্থনীতিবিদ বলেছেন, পণ্যবাজারে সরবরাহ ও মূল্যে প্রভাব রাখতে হলে কোনো সরবরাহকারীকে ওই বাজারের চাহিদার কমপক্ষে ২০ ভাগ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রমজান মাসের বাজারের চাহিদার তুলনায় টিসিবির কাছে থাকা ডাল, পেঁয়াজ ও ছোলার মজুদ প্রায়শই চাহিদার শতকরা দশমিক বা শূন্য দশমিকের কোনো অঙ্কে থাকে। এমন মজুদ টিসিবিকে আক্ষরিক অর্থেই নিধিরামে পরিণত করে।
টিসিবি শক্তিশালীকরণ সম্ভবত বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত শব্দমালার একটি। অস্থির বাজার আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে নাকাল সাধারণ ভোক্তার প্রত্যাশা আর হতাশা আলোচনায় ‘টিসিবির শক্তি বৃদ্ধি’ একটি জনপ্রিয় আলোচনা। কিন্তু এর মজুদশক্তি দেখে মনে হয়, সরকার পেনসিল ব্যাটারি দিয়ে সত্যিকারের একটি রেলগাড়ি চালাতে চায়।
এবার চালের দর প্রসঙ্গ। সংগ্রহমূল্য বাড়িয়ে চালের বাজার চড়িয়েছে সরকার। এরপর মিলারদের ডেকে কঠোর সমালোচনা এবং ওএমএস বা খোলাবাজারে চাল বিক্রির খবরে ইতিমধ্যেই মোকামে চালের দাম কমে গেছে মণপ্রতি প্রায় ৫০ টাকা। বলা হচ্ছে, রমজান মাসের আগেই ওএমএস চালু হবে চালের দাম কমানোর জন্য। রমজান মাসের বাজার চালের জন্য এমনিতেই মন্দা। চাহিদা কমে যায়, ফলে পাইকারি বাজারে দাম কমতে থাকে রমজান মাসের আগেই। হয়তো ওএমএস চালুর আগেই পাইকারি বাজার আগের জায়গায় চলে আসবে। কিন্তু খুচরা বাজারে কেজিতে যে চালের দাম দু-চার টাকা বেড়ে গেছে, তা কমার লক্ষণ নেই। এখানেই সরকারের চ্যালেঞ্জ।
এবার রমজান মাসের অন্যান্য পণ্যের হাল। ভোজ্যতেলের বাজারটি বেশ চড়ে গেছে এরই মধ্যে। সেটি বিশ্ববাজারের মূল্যবৃদ্ধির জন্য হয়নি বরং অসুস্থ প্রতিযোগিতার কবল থেকে মূল্য সংশোধিত হয়েছে। বিশ্ববাজারের বর্তমান মজুদ, মূল্য পরিস্থিতি ও উৎপাদনের নিকট পূর্বাভাস বলছে, এবার রমজান মাসে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। খেসারিসহ কিছু ডালের বাজারেও দর বেড়ে গেছে এর মধ্যেই। ছোলার মজুদ ও আমদানি পরিস্থিতিও মন্দ নয়।
তবে ভোজ্যতেল ও চিনির সরবরাহ এখনো স্থিতিশীল নয়। প্রস্তুতপণ্য ও আর সরবরাহ আদেশের (ডিও) মধ্যে মূল্যপার্থক্য মণে ১০০-১৫০ টাকা। স্বাভাবিক বাজারে এটি ২০-৩০ টাকা। ডিও কিনে পণ্য পেতে দেড় মাসও লেগে যাচ্ছে। গতবারের মতো চড়া লাভের আশায় মফস্বলের দোকানিরা কিছু বাড়তি চিনি মজুদ করছেন বলেও মনে করা হচ্ছে। যদিও বিশ্ববাজার বলছে, চিনির দাম সামনের কয়েক সপ্তায় চড়ার কথা নয়।
দেশে এবার পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়েছে প্রচুর। কৃষক দাম পেয়েছেন গত কয়েক মাস, ভোক্তাও সস্তায় খেয়েছে। তবে সপ্তাহ দুয়েক ধরে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বাজার ওঠানামা করিয়েছে। তাই রমজান মাসের আগেই সরকার ও বেসরকারি খাত মিলে একটি বিকল্প আমদানি সূত্র তৈরি রাখা নিরাপদ। পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক, মিয়ানমারসহ আরও কিছু আমদানিসূত্রে যোগাযোগ বাড়াতে হবে এখনই।
তবে মসলাই বোধহয় গোল বাধাবে। চিনি, আদা, রসুনের দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। তাই ঢাকায়ও বাজার গরম। গরম মসলায় আক্ষরিক অর্থেই আগুন লেগেছে। গতবার এক হাজার ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়ার পর এবার বড় সাদা এলাচি গত সপ্তাহে তিন হাজার টাকা ছুঁয়েছে।
এফবিসিসিআই এবারও মার্কেট মনিটরিং কমিটি করেছে, যার সমন্বয়ে আছেন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক, সরকারি ভবন ও রাস্তাঘাটের নির্মাণ ঠিকাদারি এবং চশমার দোকানদারিতে সফল ব্যবসায়ীরা। টিভি ক্যামেরা দাওয়াত দিয়ে, দামি স্যুট-টাই পরে দলবেঁধে কাঁচাবাজার ভ্রমণ ছিল গতবারের মার্কেট মনিটরিং। টিভি ক্যামেরার ক্লোজআপে দোকানির কাছে কাঁচামরিচ আর পেঁয়াজের দর জানতে চাওয়া ছিল মার্কেট মনিটরিং। এটিকে লোক দেখানো এক অনুষ্ঠানে পরিণত করেছিল সরকার ও ব্যবসায়ীরা। বাজারে প্রভাব রাখতে হলে বাজারের গভীরে যেতে হবে, বাজারের আচরণ বুঝতে হবে প্রতিটি ধাপে। উৎপাদন, আমদানি, মজুদ, সরবরাহ, চাহিদার সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত ও মার্কেট ট্রেন্ডের পেশাদারি বিশ্লেষণই হলো সত্যিকারের মার্কেট মনিটরিং।
No comments