দলবাজি by সাজেদুল হক
মানিক
বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্টি ভিখুর মতো চরিত্র তাদের। জনগনের সব সম্পদ গ্রাস
করতে চান তারা। ঘরে-বাইরে তারা কায়েম করেছেন দলতন্ত্র। দলীয় প্রধানের চেয়েও
তারা বড় নেতা মনে করেন নিজেদের। আসল পেশা হারিয়ে রাজনীতি ক্রমশ পরিণত হয়
তাদের প্রধান পেশায়। কোথায় নেই আজ দলতন্ত্র। কোথায় নেই দলবাজি। মর্যাদার
লড়াই বাংলাদেশে আজ চলমান। সবচেয়ে বেশি শোনা যায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের
মর্যাদার-অমর্যাদার কথা। তারা বলছেন, বেতন বাড়ানোর জন্য নয়, নিজেদের
মর্যাদা নিয়েই আন্দোলন করছেন তারা। এ সত্য অস্বীকার করার জো নেই, ক্ষমতার
খুঁটি যাদের যত শক্ত রাজদরবারে তাদের গুরুত্ব তত বেশি। এ আর নতুন কি?
গণতান্ত্রিক দুনিয়ার কথা অবশ্য আলাদা। বাংলাদেশে আজ কোনো কোনো গোষ্ঠী
ক্ষমতার রাজনীতিতে নিজেদের খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। এবং আসলে তারা
গুরুত্বপূর্ণও। যে কারণে তাদের কদর বেশি। বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে তাদের
সন্তুষ্টির বিষয়টিই প্রধান বিবেচ্য। সে সুযোগ তারা আদায় করেও নিয়েছেন। দুটি
শ্রেণিই এক্ষেত্রে প্রধান। শিক্ষকরা ক্ষমতার রাজনীতিতে অতটা গুরুত্বপূর্ণ
নন। কিন্তু গুরুত্বহীন করার জন্য তাদের নিজেদের দায় কম নয়। শিক্ষকরা আজ এক
একটি রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠন। সাদা-নীল-গোলাপী যত নামই দেয়া হোক না কেন
আদতে তারা কেউ আওয়ামী লীগ, কেউ বিএনপি, কেউ জামায়াত। মূল দলের নেতাদের তো
অবশ্যই, কখনও কখনও তারা ছাত্রসংগঠনের নেতাদের কাছেও করুণাপ্রার্থী। কেন
তাদের নিয়ে আজ মশকরা করা হয়। দলের কাছে নিজেদের বিক্রি করে দেয়ার জন্যই
শিক্ষকদের এ পরিণতি বরণ করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আইনজীবীরা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। জাতির যে কোনো ক্রান্তিকালে সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের মতো মানুষেরা চেষ্টা করেছেন দূতিয়ালির। কখনও তারা সফল হয়েছেন, কখনওবা ব্যর্থ। সেই হিরণ্ময় মানুষেরা আজ কোথায়। আদালতপাড়ায় শতভাগ কায়েম হয়েছে দলতন্ত্র। পার্টি অফিস থেকেই ঠিক করে দেয়া হয় কোন পক্ষের নেতা হবেন কারা। আইন পেশার মতো স্বাধীন পেশায় নিয়োজিতরাও যে কারণে আজ কোন স্বাধীন ভূমিকা রাখতে পারছেন না। তারা আজ বিভক্ত সমন্বয় পরিষদ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ নানা শিবিরে। চিকিৎসকরাও লিপ্ত রয়েছেন একই ধরনের দলবাজিতে।
অন্য সব পেশার মতো সাংবাদিকতাও আজ দলবাজিতে আক্রান্ত। আওয়ামী লীগ-বিএনপি ক্লাবে বিভক্ত সাংবাদিকরা। বিভক্তির মাঝেও আবার বিভক্তি। দখল-পালটা দখলে নিজেদের জড়িয়েছেন সাংবাদিকরা। সরাসরিই রাজনৈতিক দলের লেজুড়ভিত্তিতে মগ্ন হয়েছেন তারা। দলীয় প্রধান অখুশি হন এমন কোনো বক্তব্য তারা রাখেন না। কখনও কখনও দলবাজিতে দলীয় নেতাকর্মীদের চেয়েও আজ এগিয়ে সাংবাদিকরা।
জনপ্রশাসনে গত কয়েক বছর ধরে চালু হয়েছে ওএসডি কালচার। এর মূলেও রয়েছে দলতন্ত্র। দলবাজরা বাগিয়ে নিচ্ছেন পদোন্নতিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। প্রশাসনের সর্বত্র তাদের দাপট। বিরোধী সমর্থক হিসেবে পরিচিতদের তারা করে রাখেন কোণঠাসা। ওএসডি হয়ে সময় কাটাতে হয় তাদের। রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যায় এতে। তাতে অবশ্য দলতন্ত্রের কিছু যায় আসে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকেও এখন দলবাজিতে আক্রান্ত। বাহিনীর অনেকেই এখন বক্তব্য রাখেন রাজনৈতিক নেতাদের মতো। বিরোধীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
বাংলাদেশে আলেম-ওলামারা বহু আগ থেকেই বিভক্ত। রাজনীতির সীমারেখা তাদের বিভক্তিকে আরও প্রকট করেছে। নিজেদের রাজনৈতিক লাইন অনুযায়ী ধর্মের ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন তাদের অনেকে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও বিরোধী সমর্থক আলেমদের বিভক্তিরেখা খুব স্পষ্ট। এক ধরনের আলেম, কথিত পীর প্রশাসনের সহযোগিতা পাচ্ছেন। তাদের অনুষ্ঠানে দেয়া হচ্ছে পৃষ্ঠপোষকতা। অন্যদিকে, সরকারবিরোধী বলে পরিচিতদের ওপর নেমে আসছে খড়গ।
সারা দুনিয়ায় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নিরপেক্ষভাবে তাদের ভূমিকা পালন করে থাকেন। বিশেষ করে রাষ্ট্রের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণের পাশে দাঁড়ান তারা। তবে বাংলাদেশে নাগরিক সমাজও আজ স্পষ্ট দুভাগে বিভক্ত। মানুষ তাদের চিনেন রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে। অবশ্য অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, রাষ্ট্রের ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে নাগরিক সমাজ তাদের ভূমিকা রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হচ্ছে, আনুষ্ঠানিকভাবেই বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ দুই ভাগে বিভক্ত। শত নাগরিক, হাজার নাগরিক- নানা নামে এই বিভক্তি।
রাজনীতির এই ভয়ঙ্কর বিভক্তি গ্রাস করেছে বাংলাদেশের গ্রামগুলোকেও। গ্রামগুলোতে আগে কোনো রাজনীতি ছিল না বিষয়টা এমন নয়। তবে রাজনীতির বাইরেও মানুষের মাঝে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তবে দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় নির্বাচন তৃণমূলের মানুষের মধ্যে বিভক্তির রেখাকে আরও স্পষ্ট করেছে। গোষ্ঠীতন্ত্রের সঙ্গে দলতন্ত্রের সংযুক্তি তৈরি করেছে নতুন সংকট।
যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, ছারপোকারা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। রক্তচোষা ছারপোকাদের মতো রক্তচোষা দলবাজি গ্রাস করেছে বাংলাদেশের সব সেক্টরকে। দলবাজি এখন এক গভীর অসুখের নাম। যদিও দলবাজরা সুখেই আছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আইনজীবীরা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। জাতির যে কোনো ক্রান্তিকালে সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের মতো মানুষেরা চেষ্টা করেছেন দূতিয়ালির। কখনও তারা সফল হয়েছেন, কখনওবা ব্যর্থ। সেই হিরণ্ময় মানুষেরা আজ কোথায়। আদালতপাড়ায় শতভাগ কায়েম হয়েছে দলতন্ত্র। পার্টি অফিস থেকেই ঠিক করে দেয়া হয় কোন পক্ষের নেতা হবেন কারা। আইন পেশার মতো স্বাধীন পেশায় নিয়োজিতরাও যে কারণে আজ কোন স্বাধীন ভূমিকা রাখতে পারছেন না। তারা আজ বিভক্ত সমন্বয় পরিষদ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ নানা শিবিরে। চিকিৎসকরাও লিপ্ত রয়েছেন একই ধরনের দলবাজিতে।
অন্য সব পেশার মতো সাংবাদিকতাও আজ দলবাজিতে আক্রান্ত। আওয়ামী লীগ-বিএনপি ক্লাবে বিভক্ত সাংবাদিকরা। বিভক্তির মাঝেও আবার বিভক্তি। দখল-পালটা দখলে নিজেদের জড়িয়েছেন সাংবাদিকরা। সরাসরিই রাজনৈতিক দলের লেজুড়ভিত্তিতে মগ্ন হয়েছেন তারা। দলীয় প্রধান অখুশি হন এমন কোনো বক্তব্য তারা রাখেন না। কখনও কখনও দলবাজিতে দলীয় নেতাকর্মীদের চেয়েও আজ এগিয়ে সাংবাদিকরা।
জনপ্রশাসনে গত কয়েক বছর ধরে চালু হয়েছে ওএসডি কালচার। এর মূলেও রয়েছে দলতন্ত্র। দলবাজরা বাগিয়ে নিচ্ছেন পদোন্নতিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। প্রশাসনের সর্বত্র তাদের দাপট। বিরোধী সমর্থক হিসেবে পরিচিতদের তারা করে রাখেন কোণঠাসা। ওএসডি হয়ে সময় কাটাতে হয় তাদের। রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যায় এতে। তাতে অবশ্য দলতন্ত্রের কিছু যায় আসে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকেও এখন দলবাজিতে আক্রান্ত। বাহিনীর অনেকেই এখন বক্তব্য রাখেন রাজনৈতিক নেতাদের মতো। বিরোধীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
বাংলাদেশে আলেম-ওলামারা বহু আগ থেকেই বিভক্ত। রাজনীতির সীমারেখা তাদের বিভক্তিকে আরও প্রকট করেছে। নিজেদের রাজনৈতিক লাইন অনুযায়ী ধর্মের ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন তাদের অনেকে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও বিরোধী সমর্থক আলেমদের বিভক্তিরেখা খুব স্পষ্ট। এক ধরনের আলেম, কথিত পীর প্রশাসনের সহযোগিতা পাচ্ছেন। তাদের অনুষ্ঠানে দেয়া হচ্ছে পৃষ্ঠপোষকতা। অন্যদিকে, সরকারবিরোধী বলে পরিচিতদের ওপর নেমে আসছে খড়গ।
সারা দুনিয়ায় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নিরপেক্ষভাবে তাদের ভূমিকা পালন করে থাকেন। বিশেষ করে রাষ্ট্রের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণের পাশে দাঁড়ান তারা। তবে বাংলাদেশে নাগরিক সমাজও আজ স্পষ্ট দুভাগে বিভক্ত। মানুষ তাদের চিনেন রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে। অবশ্য অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, রাষ্ট্রের ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে নাগরিক সমাজ তাদের ভূমিকা রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হচ্ছে, আনুষ্ঠানিকভাবেই বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ দুই ভাগে বিভক্ত। শত নাগরিক, হাজার নাগরিক- নানা নামে এই বিভক্তি।
রাজনীতির এই ভয়ঙ্কর বিভক্তি গ্রাস করেছে বাংলাদেশের গ্রামগুলোকেও। গ্রামগুলোতে আগে কোনো রাজনীতি ছিল না বিষয়টা এমন নয়। তবে রাজনীতির বাইরেও মানুষের মাঝে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তবে দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় নির্বাচন তৃণমূলের মানুষের মধ্যে বিভক্তির রেখাকে আরও স্পষ্ট করেছে। গোষ্ঠীতন্ত্রের সঙ্গে দলতন্ত্রের সংযুক্তি তৈরি করেছে নতুন সংকট।
যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, ছারপোকারা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। রক্তচোষা ছারপোকাদের মতো রক্তচোষা দলবাজি গ্রাস করেছে বাংলাদেশের সব সেক্টরকে। দলবাজি এখন এক গভীর অসুখের নাম। যদিও দলবাজরা সুখেই আছেন।
No comments