চট্টগ্রামের ‘পাহাড়খেকো’ জসিমের এত দাপট!

পাহাড় কেটে শতাধিক প্লট করে বিক্রি করে দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা হয়েছে। একটি মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তার নেতৃত্বে শক্তিশালী সিন্ডিকেট দুই বছর ধরে প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করে তা বিক্রি করা হয়। কেবল পাহাড় কাটা নয়, নিজের ওয়ার্ডে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়েও বাণিজ্যের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে আছে এক ডজনেরও বেশি মামলা ও জিডি। এতকিছুর পরও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। গত সপ্তাহে পাহাড় ধসে ব্যাপক হতাহতের পর চট্টগ্রামের ‘পাহাড়খেকো’ এই কাউন্সিলরের নাম ফের সামনে আসে। দখল বাণিজ্যসহ চাঁদাবাজির অভিযোগও তার বিরুদ্ধে। সূত্র বলছে, অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন।
হাঁকান দামি গাড়ি। সূত্র বলছে, কাউন্সিলর জসিম নগরীর আকবর শাহ থানাধীন বিশ্ব কলোনি ও ফয়’স লেক এলাকায় পাহাড় কেটে শতাধিক প্লট করে কাঠাপ্রতি ২ লাখ টাকা করে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা বাগিয়ে নেন। এছাড়া বিশ্বকলোনি এলাকার সেভেন মার্কেটের প্রায় দেড়শ’ দোকান থেকে অবৈধভাবে মাসে প্রায় ৩ লাখ টাকা তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বেআইনিভাবে এলাকায় প্রায় দেড়শ’ অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়ে প্রতি রিকশা থেকে দৈনিক ৪০ টাকা করে আদায় করছেন কাউন্সিলর জসিম। এসব অটোরিকশা কর্নেলহাট সিডিএ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর রোড থেকে ইস্পাহানী গেট পর্যন্ত চলাচল করে। রেলওয়ের জায়গায় পাহাড়তলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ পরিচালনা নিয়েও তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। কমিটির সভাপতি থাকার সুবাদে ৬ তলা কলেজ ভবনের অর্ধেকই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। এই ভবনে কোটি টাকা মূল্যের দুটি দোকানও রয়েছে তার কব্জায়। অস্ত্র, হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে এক ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে তার নামে। পাহাড় কাটা সংক্রান্ত পরিবেশ অধিদফতরের তিনটি মামলা এর বাইরে। সূত্র বলছে, কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে অন্যান্যের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ রয়েছে। এক সময় পাহাড়তলী থানার ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকলেও বর্তমানে জসিম দলীয় কোনো পদ-পদবিতে নেই। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এ কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের ‘কলঙ্ক’। সূত্র জানায়, ১১ মে নগরীর আলঙ্কার মোড়ে ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে জসিমের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন পাহাড়তলী থানা আ’লীগ সভাপতি নুরুল আবছার মিয়া। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত ৯ মে কাউন্সিলর জসিম উচ্ছেদ অভিযানের নামে চসিককে ব্যবহার করে আমার নিজস্ব সম্পত্তিতে ভাংচুর ও লুটপাট চালান। এতে ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়।’ অপর একটি উচ্ছেদ অভিযানের নামে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও হকাররা ৬ জুন বিক্ষোভ করে। এ প্রসঙ্গে আকবরশাহ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আলতাফ হোসেন সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘৯নং ওয়ার্ড জসিমের বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আবছার মিয়ার করা মামলা ভিন্ন খাতে নিতেই ৬ জুন হকার উচ্ছেদের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায় কাউন্সিলর জসিম। অলংকার মোড়ের হকাররা উচ্ছেদের প্রতিবাদ করতে গেলে সাধারণ জনগণের রোষানলে পড়েন এ কাউন্সিলর।’ ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মো. আবদুল ওয়াজেদ খান রাজিব বলেন, তিনি (কাউন্সিলর জসিম) রাজনীতি করেছেন মানুষের সেবা করার জন্য নয়, নিজের জন্য। তা না হলে কাউন্সিলর নির্বাচনের ২ মাসের মাথায় ৪৫ লাখ টাকার গাড়ি ও ৬ মাসের মাথায় ৫ তলা বাড়ি কেমন করে করেছেন?
কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানায় একাধিক মামলার কথা স্বীকার করে ওসি আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং দ্বন্দ্বের জেরেও অনেক মামলা-পাল্টামামলা হয়েছে।’ তার বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগও রয়েছে। পাহাড় কেটে কাউন্সিলর জসিমের প্লট বিক্রির অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক যুগান্তরকে জানান, ‘পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে আকবরশাহ থানার ৩টি মামলার মধ্যে একটির অভিযোগপত্র ১৫ মার্চ দাখিল করা হয়েছে। বাকি দুটি পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে।’ তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম যুগান্তরকে বলেন, ‘কাউন্সিলর নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার প্রতিশোধ নিতেই দলের প্রতিদ্বন্দ্বী লোকজন অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা মনে করে আমি যেভাবে এলাকার উন্নয়ন করছি এ ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। কিংবা অংশ নিলেও পরাজিত হবে।’ পাহাড় কাটার মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চসিকের কাউন্সিলর হওয়ার কারণেই আমি পাহাড় কাটার মামলার আসামি হয়েছি। আমি নিজের জন্য পাহাড় কাটিনি। চসিকের উন্নয়ন কাজে পাহাড় কাটতে হয়েছে। এ ছাড়া আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা অধিকাংশ মামলা হয়রানিমূলক।

No comments

Powered by Blogger.