‘রাজনৈতিক স্বৈরাচারের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি’ -নূরে আলম সিদ্দিকী
সাম্প্রতিক
সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য রাজনীতিকে দায়ী করে প্রাক্তন
ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী বলেছেন, প্রশাসন ঘুণে
খাওয়ার মতো শেষ হয়ে গেছে। কোন ক্ষেত্রেই প্রশাসনে শৃঙ্খলা নেই। এর একমাত্র
কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক স্বৈরাচার, রাজনীতিতে অধিষ্ঠিত থাকা। বৃহস্পতিবার রাতে
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই-এর তৃতীয় মাত্রা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি
এসব কথা বলেন। দু’বিদেশী নাগরিক হত্যা, শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলাসহ
বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধের এ সংগঠক। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায়
ছিলেন জিল্লুর রহমান। নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ৪০০ বছরে যেটি ঘটে নাই সেটি
ঘটে গেছে। শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা বিস্ফোরণ
ঘটেছে। দু’জন বিদেশী মারা গেছেন। বিশেষ করে চারটি রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র,
কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সাংঘাতিকভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত বাংলাদেশে
স্বাভাবিক চলাচল নিয়ে। এরপর জাপানের যে নাগরিকটি ইতিমধ্যে মুসলমান হয়ে
গেছেন তার ওপর আঘাত। এটি সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের প্রশাসনের দুর্বলতা।
প্রশাসনের মধ্যে যে ঘুণে ধরা চিত্র সেটি অনেকাংশে দায়ী। তিনি বলেন, আপনি
অবাক হয়ে যাবেন ওরা খেলতে আসছে নাÑ এটা বড় কথা নয়। কোন বায়ার বাংলাদেশে
আসতে চাচ্ছে না। তারা বলছে আমরা বাংলাদেশে যাবো না। আমাদের জীবনের
নিরাপত্তা নেই। হয় তোমরা শিকাগোতে আসো না হয় ব্যাংককে আসো। তাদের বলা হয়েছে
তোমরা এয়ারপোর্টের ভিআইপি লাউঞ্জে আসো নিরাপত্তা দেয়া হবে তারপরও তারা
আসছে না। গার্মেন্টস সেক্টরে কোন অসুবিধা নেই, সব ক্রেতা আসছেন- বিজিএমইএ
নেতাদের এমন দাবির প্রসঙ্গে নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, উনি যেটা বলেছেন সেটা
ব্যক্তিগত মত। পোশাক শিল্পে তারা ততটা বৃহৎ না। কিন্তু আমরা যারা পোশাক
শিল্পকে বৃহৎ করে গড়ে তুলেছি। আমরা যারা ১৭-১৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের
ব্যবস্থা করেছি। আমাদের সমস্ত কিছু বিনিয়োগ করে এই পর্যায়ে এসেছি। আমি
চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি বাংলাদেশে যারা শিল্পের খাতিরে শিল্প করেন, যারা
বিনিয়োগের খাতিরে বিনিয়োগ করেন তারা আজ কেউ স্বস্তিতে নাইÑ শান্তিতে নাই।
আগামী বছর কি হবে সেই বিষয়ে তারা নিশ্চিত না। মহররমের ঘটনায় আমি বিস্মিত
হয়েছি এই কারণে যে, এত প্রহরায় সরকারের প্রশাসনের এত তৎপরতার মধ্যেও এটা
করলো কারা। অনেক সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। আজকে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি
প্রশাসন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এর কুফল ভোগ করছেন
নিন্মবিত্ত-মধ্যবিত্তরা। বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাদের অস্ত্র
দেখিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়া হবে বলা হচ্ছেÑ এ অভিযোগ অহরহ মানুষের কাছ থেকে শুনি।
হয় কিছু দাও নাহলে অস্ত্র দিয়ে তোমাদের ফাঁসিয়ে দেয়া হবে। প্রশাসন ঘুণে
খাওয়ার মতো শেষ হয়ে গেছে। কোন ক্ষেত্রেই প্রশাসনে শৃঙ্খলা নেই। এর একমাত্র
কারণ হচ্ছেÑ রাজনৈতিক স্বৈরাচার, রাজনীতিতে অধিষ্ঠিত থাকা। নূরে আলম
সিদ্দিকী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার
আগে গার্ডিয়ান পত্রিকায় যে বক্তব্য দিলেন তা বেদনাদায়ক। তিনি বললেন
বাংলাদেশের মানুষ মৌলিক অধিকার চায় না, স্বাধীনতা চায় না। উন্নয়ন চায়।
উন্নয়নই উনার লক্ষ্য। এ কথা তারাই বলেন, যারা এক ব্যক্তির শাসন ও যারা আপন
গদিতে অধিষ্ঠিত থাকার লক্ষ্যে দেশ চালায়। মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন যেটা
বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারতেনÑ সেটা তারা পারেন না। যেখানে মানুষ মৌলিক অধিকার
ভোগ করে না। যে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকে না। যেখানে মানুষের মনে
স্বস্তি থাকে না। যেখানে মানুষ আতঙ্কের রাজ্যে বাস করে সেই দেশে শেষ
পর্যন্ত কোন উন্নয়ন হয় না। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে দেশে কোন আন্দোলন গড়ে ওঠে
না দাবি করে তিনি বলেন, মানুষ আজ কথা বলছে না কারণ হচ্ছে এখানে কোন যোগ্য
ব্যক্তি নেই। কাউকে মানুষ আস্থায় রাখতে পারছে না। মানুষের মাঝে গা সওয়া ভাব
এসে গেছে। ভ্যাট বসানোর কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভে
ফেটে পড়েছিল। সরকারের যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতার সমালোচনা করে সাবেক এই
ছাত্রলীগ নেতা বলেন, আজকে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র।
আজকে একটা দল আছে যারা অনবরত যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলেই শুধু আত্মতৃপ্তি লাভ
করেন না। মনে করেন তারা দেশ উদ্ধার করে ফেলবেন। বিরোধিতা করে তারা মনে করেন
আজকে তারা স্বর্গে চলে যাবেন। আজকে আমেরিকার একটি জাহাজ চীনের সমুদ্র
সীমানায় চলে গেছে। ভিয়েতনাম তাদের পক্ষে চলে গেল। আর আপনারা বসে বসে শুধু
বিরোধিতা করেন, হিসাব নেন তাদের ৯০ ভাগের সন্তান আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ার
অধিবাসী। ড. ইউনূস নোবেল প্রাইজ থেকে শুরু করে বিশ্বের ১৫৭টি নামকরা
পুরস্কার পেয়েছেন। সেই ব্যক্তির সঙ্গে জেদ করে, সেই ব্যক্তির সঙ্গে অভিমান
করে আমেরিকার সঙ্গে বৈরিতা। আমেরিকা কেন একটা লোকের জন্য জেদ করবে, প্রশ্ন
করতে পারেন। হিলারি ক্লিনটন যখন বাংলাদেশে আসেন তখন তাকে উপেক্ষা করা
হয়েছে। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ সংক্ষিপ্ত করে তিনি ছুটে গেছেন বেলারুশের
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। এটা কি সরাসরি অপমান করা নয়? কাকে খুশি
করার জন্য। আমেরিকা বাংলাদেশের প্রতি সন্তুষ্ট নয়। তারা বীতশ্রদ্ধ। আমাদের
বৈদেশিক আয়ের উৎস হচ্ছে দু’টি। একটি হচ্ছেÑ মধ্যপ্রাচ্য, আর অপরটি হচ্ছে
আমেরিকা। শুধু জিএসপি নয়, আমেরিকা যদি চোখের ইশারা দেয় তাহলে জাপান, কোরিয়া
অর্থায়নে এগিয়ে আসবে? দুদকের কার্যক্রমের সমালোচনা করে নূরে আলম সিদ্দিকী
বলেন, দুর্নীতির এমন করাল গ্রাস আজকে। শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছেÑ
প্রশাসন ধসে পড়া আর দুর্নীতি। দুর্নীতির জন্য যারা খ্যাত তারা আজ
মহাদর্পে, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীও হন তারা। দুর্নীতিবাজদের দ্রুত বিচার
ট্রাইব্যুনাল করে কঠোর শাস্তি দেন। তাহলে আপনার তলানিতে ঠেকে যাওয়া
জনপ্রিয়তা ওপরে উঠবে। ওয়ান-ইলেভেনের পরে আওয়ামী লীগের সবার মামলা তুলে
নিয়েছে দুদক। ভদ্রতার খাতিরে বিএনপি’র একটা মামলাও তো দুদক তুলে নিতে
পারতো। বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুণে ধরেছে। যে কোন সময় ধপাস্ করে পড়ে যেতে
পারে।
No comments