ভুলি নাই সেই কথা

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১২ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দী প্রদান করেছেন।
নিম্নে তাদের জবানবন্দী দেয়া হলো। মোজাফফর আহমেদ খান মামলার প্রথম সাক্ষী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেরানীগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমেদ খান। তিনি জবানবন্দীতে বলেন, একাত্তরে তিনি মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের ফটকের সামনে কাদের মোল্লাকে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। ট্রাইব্যুানাল-২-এ তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ জবানবন্দী দেন মোজাফফর আহমেদ। আসামির কাঠগড়ায় কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে মোজাফফর আহমেদ খান জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি সত্তরের নির্বাচনে ঢাকার মিরপুর-মোহাম্মদপুর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশরাফ আলী চৌধুরীর পক্ষে কাজ করেন। ওই আসনে জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন গোলাম আযম। তাঁর পক্ষে কাজ করেন কাদের মোল্লা। তিনি বলেন, একাত্তরের মে মাসে তিনি ১৫ জন বন্ধুকে নিয়ে ভারতের আগরতলায় যান। জুলাই মাসের শেষে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে তাঁদের আসামের লাইলাপুর সেনানিবাসে পাঠানো হয়। মোজাফফর বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা আগরতলার মেলাগড়ে ফিরেন। সেখানে মেজর হায়দার ও ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁদের অস্ত্র দেয়া হয়। ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়ায় ক্যাম্প স্থাপন করেন। তিনি বলেন, ২৫ নভেম্বর ভোররাতে তাঁরা গুলির শব্দ পান। এরপর তিনি তাঁর বাহিনী নিয়ে কলাতিয়া থেকে ঘাটার চরে চলে যান। এ পর্যায়ে সাক্ষী অগোছালোভাবে জবানবন্দী দিলে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে গুছিয়ে বলতে বলেন। এতে সাক্ষী উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আমাকে চার্জ করছেন। আমাকে বলার সুযোগ দেন, তা না হলে আমি সাক্ষ্য দেব না। আমি পেইড সাক্ষী নই। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাক্ষ্য দিতে এসেছি। আমি হাইব্রিড মুক্তিযোদ্ধা নই, জেনুইন মুক্তিযোদ্ধা।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘সাক্ষী সেন্টিমেন্টাল হয়ে যাচ্ছেন।’ মোজাফফর বলেন, ‘সেন্টিমেন্টাল না হলে যুদ্ধে যেতে পারতাম না।’ এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষ সাক্ষীকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। এরপর জবানবন্দীতে মোজাফফর বলেন, ভোর (২৫ নভেম্বর) থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঘাটার চরে হিন্দু ও মুসলমান মিলিয়ে ৫৭ জনকে হত্যা করে রাজাকাররা। রাজাকাররা সেখান থেকে বড় ভাওয়ালে হামলা চালিয়ে ২৫ জনকে হত্যা করে। বেলা ১১টার দিকে তিনি খবর পান, রাজাকার ও পাকিস্তানী সেনারা ওই স্থান ত্যাগ করেছে। তখন তিনি প্রধান সড়ক দিয়ে না গিয়ে পেছন দিক দিয়ে বাহিনী নিয়ে ভাওয়ালে খানবাড়ি যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, তাঁর বাড়ি জ্বলছে, ওসমান গণি ও গোলাম মোস্তফার লাশ পড়ে আছে। তিনি ওই দু’জনের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করে ঘাটার চরে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, চারদিকে শুধু রক্ত আর লাশ। সাক্ষী জবানবন্দীতে আরও বলেন, ঘটনাটি কারা ঘটিয়েছে তা স্থানীয় তৈয়ব আলী ও আবদুল মজিদের কাছে জানতে চান। মজিদ তাঁকে জানান, ২৩ বা ২৪ নভেম্বর ঘাটার চরে একটি সভা হয়। ওই সভায় মুসলিম লীগের জয়নাল, কে জি করিম বাবলা, মোক্তার হোসেন, ফয়জুর রহমান ছিলেন। তাঁরা ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা কাদের মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই সভার ব্যবস্থা করেন। ওই সভায় কাদের মোল্লাও উপস্থিত ছিলেন। সভায় নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ নভেম্বর ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়। মোজাফফর আহমেদ বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোহাম্মদপুর এলাকায় মামার বাসায় একবার গিয়েছি। মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে রাজাকার ও আলবদরদের একটা নির্যাতনকেন্দ্র ছিল। মামার বাসা থেকে ফেরার পথে দেখি, ওই নির্যাতনকেন্দ্রের ফটকের সামনে অস্ত্র হাতে কাদের মোল্লা সহযোগীদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।’ তিনি বলেন, ২৫ নভেম্বর ঘাটার চরে যে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট হয়, তা স্থানীয় রাজাকাররা কাদের মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর নেতৃত্বে সংঘটিত করে। জবানবন্দীর শেষ দিকে সাক্ষী বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ও কর্নেল নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে তিনি এ বিচারের দাবি করেছেন। ২০০৭ সালে তিনি ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এ ব্যাপারে একটি মামলাও করেন। তিনি একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

সৈয়দ শহিদুল হক ওরফে মামা
আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী মামা বাহিনীর প্রধান সৈয়দ শহিদুল হক ওরফে মামা জবানবন্দী ও সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, একাত্তরের ২৭ মার্চ কবি মেহেরুন নেসা, তাঁর মা ও ভাইকে টুকরা টুকরা করে হত্যা করেন কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা। এছাড়া বাঙলা কলেজের পল্লব হত্যাকা-ে জড়িত ছিলেন কাদের মোল্লা। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ে তাঁর ভূমিকা ছিল। মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী নানা কর্মকা-ে জড়িত ছিলেন কাদের মোল্লা। সৈয়দ শহিদুল হক মামা তার জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ মিরপুরে কবি মেহেরুন্নেছা, তার দুই ভাই ও মাকে টুকরা টুকরা করে হত্যা করেছে আব্দুল কাদের মোল্লা, হাশেম হাশমী, আব্বাস চেয়ারম্যান, আক্তার গু-া, হাক্কা গু-া ও নেহারসহ অনেকে। সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা আমি শুনতে পাই। আরেকটি ঘটনা হলোÑ২৯ মার্চ ঢাকার ঠাটারী বাজার (কাপ্তান বাজার) থেকে পল্লব ওরফে টুনটুনিকে মিরপুর ১২ নম্বর মুসলিম বাজার ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর প্রথম তার আঙ্গুল কাটা হয়। পরে তাকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে ৫ এপ্রিল হত্যা করা হয়। এ হত্যার সঙ্গে কাদের মোল্লা, আক্তার গু-াসহ আগে যাদের নাম বলেছি তারা ছিল। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, একাত্তর সালে আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা হয়। সে মামলায় যারা আমার পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন ২৫ মার্চ ভয়াল রাতে তাদেরকে নির্মমভাবে টুকরো টুকরো করে হত্যা করে কাদের মোল্লা, আফসার, নেহার, হাশমী, আব্বাস চেয়ারম্যানসহ বিহারী ও জামাতীরা, যারা একই মায়ের সন্তান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় এ্যাডভোকেট জহির উদ্দিনকে জাতীয় পরিষদের প্রার্থী করা হয়। এ প্রার্থীর পক্ষে নৌকা প্রতীক নিয়ে আমরা ভোট চেয়েছি। ?ঐ নির্বাচনে অপজিশন প্রার্থী হিসেবে কুখ্যাত গোলাম আযম দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছে। আঞ্জুমান মহাজেরীর পক্ষে এ্যাডভোকেট দেওয়ান বারাসাত হাতী মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। এক পর্যায়ে দেওয়ান সাহেব গোলাম আযমের পক্ষে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। এ সময় কাদের মোল্লাসহ জামায়াতী ও বিহারীরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে, “গালি গালি মে শোর হে শেখ মুজিব পাকিস্তানকা দুশমন হে গাদ্দার হে’ সেøাগান দিতে থাকে। তিনি আরও বলেন, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও ৩১ জানুয়ারি মিরপুর শত্রুমুক্ত হয়নি। ১৭ ডিসেম্বর আমি রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে যাই সেখানে বুদ্ধিজীবীর অনেক লাশ এবং এক বস্তা চোখ উদ্ধার করি। পরে তা পাশে কবর দিয়ে দেই।
মিরপুরের নূর ডেকোরেটরের ভেতরে এর মালিক নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যদেরও একই কায়দায় হত্যা করা হয়। নূর হোসেনের ৮০ বছরের বৃদ্ধা শাশুড়ি, যিনি নড়তে চড়তে পারতেন না, তিনিও এসব নরপশুর নৃশংসতা থেকে রেহাই পাননি। হাতের আঙুল কেটে, নির্মম নির্যাতন চালিয়ে এরা তারপর গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় কলেজছাত্র পল্লবকে।’ তবে কাদের মোল্লা অসুস্থ বিধায় আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার থেকে তাকে হাজির না করলেও চলবে বলে আদেশ দিয়েছিলেন। এ কারণে কাদের মোল্লার অনুপস্থিতিতে তার নৃশংসতা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের বর্ণনা দেন শহিদুল হক মামা। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘মিরপুরের জল্লাদ বা কসাই’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মিরপুর, রায়েরবাজার, কেরানীগঞ্জ, সাভারসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নৃশংসতা চালিয়েছেন। ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে তিনি বিহারী ও অবাঙালীদের সঙ্গে নিয়ে বাঙালীদের নিধনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে মিরপুর ও মোহাম্মদপুর ছিল তার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা। মিরপুর ছাড়াও শিয়ালবাড়ী ও রূপনগরে অনেক মানুষকে তার প্রত্যক্ষ মদদে মাটি চাপা দেয়া হয়। কেরানীগঞ্জের শহীদনগরেও তিনি অনেক গণহত্যা চালিয়েছেন। দ্বিতীয় সাক্ষী শহিদুল হক মামা জবানবন্দীতে বলেন, “একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকার মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে জামায়াত, ইসলামী ছাত্র সংঘ, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর পাশাপাশি অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে নেতৃত্ব দেন। ওই দুই এলাকায় যে সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনা ঘটেছে তা থেকে আব্দুল কাদের মোল্লা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ছিলেন না।”

দুই ভুক্তভোগী নারী
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদানকারী দুই ভুক্তভোগী নারীর জবানবন্দী ও জেরা শেষ হয়েছে।
এই প্রথমবারের মতো একজন সাক্ষী ক্যামেরা ট্রায়ালে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিলেন। ক্যামেরা ট্রায়াল চলাকালে সেখানে সাংবাদিক এবং সাধারণের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। প্রসিকিউটর নুরজাহান বেগম মুক্তা সাংবাদিকদের বলেন, আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য দিন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত সেই নারীদের মধ্যে একজন ট্রাইব্যুনালে তার নির্যাতনের কাহিনী বর্ণনা করেছেন। এ সাক্ষ্যগ্রহণ এদেশের নারীদের জন্য একটি মাইলফলকের সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, এই সাক্ষ্যের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুযায়ী গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে এজলাস কক্ষে যা হয়েছে তা বলা যাবে না। এ সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বর্বরোচিত বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই প্রসিকিউটর।

কবি কাজী রোজী
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে চতুর্থ সাক্ষী মহিলা কবি কাজী রোজী জবানবন্দী ও সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। তিনি জবানবন্দীতে বলেছেন, ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা কবি মেহেরুন নেসার বাড়িতে হামলা চালান। তাঁরা মেহেরুন, তাঁর মা ও দুই ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। তবে কাদের মোল্লা মেহেরুন্নেসার বাসায় ওই সময় ঢুকেছিল কিনা তা বলতে পারব না। মেহেরুন্নেসা যখন দেখল, ওরা তাদের মারতে এসেছে। তখন তিনি বুকে কোরআন শরীফ চেপে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওরা কবি মেহেরুন্নেসাসহ চারজনকে জবাই করে। এই বীভৎস সংবাদ পেয়ে কষ্ট পেয়েছিলাম। মেহেরুন্নেসার জন্য আজ অবধি তার অতৃপ্ত আত্মার জন্য কষ্ট পাই। মঙ্গলবার চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ কবি কাজী রোজী এই বীভৎস্য কাহিনী বর্ণনা করেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, সে (কবি মেহেরুন্নেছা) আমার প্রিয় বন্ধু ছিল। কিন্তু তার জন্য কিছু করতে পারিনি। তবে কাদের মোল্লা মেহেরুন্নেসার বাসায় ওই সময় ঢুকেছিল কিনা তা বলতে পারব না। পরে গুলজার ও আরও অবাঙালীরা বলেছিল, কবি মেহেরুন্নেসাকে গলা কেটে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। মেহেরুন্নেসা তখন গলাকাটা মুরগির মতো ছটফট করছিল। কাদের মোল্লার নেতৃত্বে অবাঙালী বিহারীরা এই নির্মম হত্যাকা- ঘটিয়েছিল।
কাজী রোজী জবানবন্দীতে বলেন, একাত্তরে নিহত কবি মেহেরুন নিসা তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাঁরা একই এলাকায় থাকতেন। একাত্তরে মিরপুরে অবাঙালী ও বিহারীরা বাঙালীদের ভীষণভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করত। এ থেকে রেহাই পেতে তাঁরা একটি অ্যাকশন কমিটি গঠন করেছিলেন। তিনি সেই কমিটির সভাপতি ও মেহেরুন নিসা সদস্য ছিলেন। তাঁরা ওই কমিটির মেয়ে সদস্য হওয়ার কারণে তাঁদের ওপর হামলা চালানোর খবর পান তিনি। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা মাথায় লালপট্টি বা সাদাপট্টি বেঁধে সকাল প্রায় ১১টার দিকে কবি মেহেরুন্নেছার বাসায় ঢুকে পড়েন। তাদের দেখে কবি মেহেরুন্নেছা কুরআন শরীফ বুকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ওরা কবি মেহেরুন্নেসাসহ চারজনকে জবাই করে হত্যা করে।
এ সময় সাক্ষী কবি কাজী রোজি বলেন, প্রসঙ্গত বলতে হয় কাদের মোল্লা যে নিজেই ভিতরে গিয়েছেন কিনা এটা আমি জানি না। তবে তার নেতৃত্বেই হয়েছে বলে আমি শুনেছি। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিপক্ষ তাকে জেরা শুরু করেন। জেরায় কয়েকটি প্রশ্ন করার পর আসামিপক্ষ সাক্ষীকে আরও জেরা করতে প্রস্তুতির জন্য সময়ের আবেদন করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল তাকে জেরার জন্য আগামী ২৬ জুলাই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেন। জবানবন্দীতে কবি কাজী রোজি, স্বামী কবি সিকান্দার আবু জাফর। তিনি বলেন, ১৯৭০ সালে মিরপুরের ৬ নম্বর সেনকশনের ডি ব্লকে থাকতাম। ’৭০ সালের নির্বাচনে মিরপুরে গোলাম আযম জামায়াতে ইসলামীর দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন। সে সময় ইসলামী ছাত্র সংঘ নামে একটি ছাত্র সংগঠন ছিল। তার নেতৃত্বে ছিলেন আব্দুল কাদের মোল্লা। তার নেতৃত্বে স্থানীয় অবাঙালীরা তার সঙ্গে দাঁড়িপাল্লার পক্ষে নির্বাচনী কাজ করত।
তিনি বলেন, তখন আওয়ামী লীগের পক্ষে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী ছিলেন এ্যাডভোকেট জহিরুল। তখন আমার সঙ্গে কবি মেহেরুন্নেসা থাকতেন। ওই নির্বাচনের সময় আমরা একটি অ্যাকশন কমিটি গঠন করি। আমি ছিলাম ঐ কমিটির সভাপতি। কবি মেহেরুন্নেসাসহ অনেকে ছিলেন সদস্য। ওই সময় মিরপুরে বাঙালীরা লাঞ্ছিত হয়েছিল। তখন মিরপুরে বিভিন্ন এলাকায় মিছিল-মিটিং করতাম। সাক্ষী বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে আমি ও মেহেরুন্নেসাসহ অনেকেই রেসকোর্স ময়দানে গিয়েছিলাম। এই ভাষণ ছিল স্বাধীনতার ডাক। কিন্তু মিরপুরের অবাঙালীরা আমাদের প্রতি বৈরী মনোভাব পোষণ করত। এটা বুঝতে পেরে প্রতিদিন আমরা সভা-সমাবেশ করতে থাকি। এরই মধ্যে চলে আসে ২৫ মার্চ। সেদিন সকালে আ?মরা মিটিং করছিলাম। বুঝতে পারছিলাম কিছু যেন একটা ঘটতে যাচ্ছে। মিটিং শেষ করে বাসায় ফেরার পর খবর পেলাম, আমার বাসায় তল্লাশি হবে। কবি মেহেরুন্নেসার বাসায় হাঙ্গামা হবে। কারণ এ্যাকশন কমিটিতে আমরা এ দু’জন ছিলাম নারী সদস্য। আমি যখন জানতে পারলাম, আমার বাসায় তল্লাশি হবে, তখন মেহেরুন্নেসার বাসায় খবর পাঠালাম। আমি আজই বাসা ছেড়ে চলে যাব। তোমরাও অন্যত্র চলে যাও। এ খবর পাওয়ার পর মেহেরুন্নেসা তার ছোট ভাইকে দিয়ে আমার বাসায় খবর পাঠালেন যে, তিনি, তার মা ও দুই ভাইকে নিয়ে কোথায় যাবেন? আমি বোঝালাম। বাড়ি থেকে চলে যাওয়া একান্ত প্রয়োজন। তিনি বলেন, তারপর ২৫ মার্চ কালরাতের ঘটনা সবাই জানেন। দিন চলে গেল। ২৭ মার্চ বিকেলে আমি খবর পেলাম, মেহেরুন্নেসা ও তার দুই ভাই এবং তার মাকে কাদের মোল্লা ও তার সহযোগী অবাঙালীরা হত্যা করেছে। অবাঙালীদের মধ্যে কেউ কেউ মাথায় সাদা বা লাল পট্টি বেঁধে মেহেরুন্নেসার বাসায় সকাল ১১টায় ঢুকে যায়। মেহেরুন্নেসা যখন দেখল, ওরা তাদের মারতে এসেছে। তখন তিনি বুকে কোরআন শরীফ চেপে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওরা কবি মেহেরুন্নেসাসহ চারজনকে জবাই করে। এই বীভৎস সংবাদ পেয়ে কষ্ট পেয়েছিলাম। মেহেরুন্নেসার জন্য আজ অবধি তার অতৃপ্ত আত্মার জন্য কষ্ট পাই।

খন্দকার আবুল আহসান
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে নিহত সাংবাদিক সাহিত্যিক খন্দকার আবু তালেবের ছেলে খন্দকার আবুল আহসান সাক্ষ্য দেন। তিনি জবানবন্দীতে বলেন, আমার পিতার নাম শহীদ খন্দকার আবু তালেব। পেশায় আমি একজন সরকারী কর্মকর্তা। ১৯৭১ সালে আমার পরিবার মিরপুরে থাকত। ঠিকানা মিরপুর প্লট নম্বর ১৩ রোড নং-২, ব্লক-বি, সেকশন-১০ মিরপুর হাউজিং এস্টেট।
১৯৭১ সালে আমি মিরপুর শাহ আলী একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। সে সময় আমি পিতা-মাতার সঙ্গে মিরপুরের বাসায় থাকতাম। আমার পিতা ছিলেন সাংবাদিক সাহিত্যিক আইনজীবী। আমার পিতা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন। পত্রিকাগুলো হচ্ছে দৈনিক সংবাদ, ডেইলি অবজারভার, দ্য মর্নিং, দৈনিক আজাদ, সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ, দৈনিক ইত্তেফাক। পয়গাম পত্রিকায় তিনি খ-াকালীন চাকরি করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার পিতা ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সাংবাদিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। তিনি বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন। এমনি এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭০-এর নির্বাচন। সে সময় মিরপুর এলাকায় নৌকা প্রতীক নিয়ে এ্যাডভোকেট জহিরউদ্দিন প্রার্থী হয়েছিলেন। অন্যদিকে গোলাম আযম দাঁড়িপাল্লা নিয়ে জামায়াতে ইসলামের প্রার্থী হয়েছিলেন। এই নির্বাচনে আব্দুল কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা গোলাম আযমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালায়।
নির্বাচনে আমার আব্বা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। যদিও তিনি আওয়ামী লীগ করতেন না। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল জয় হয়। সেদিনের পরাজিত পক্ষ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে আব্দুল কাদের মোল্লার নেতৃত্বে মিরপুর এলাকায় হত্যাকা- সংঘটিত করে। তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে ১লা মার্চ হতে ২৩ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্বারা বিভিন্ন হত্যাকা- ঘটে। এর প্রতিবাদে সর্বত্র ছাত্ররা কালোদিবস পালন করে। তিনি বলেন, মিরপুর দশ নম্বরে বাংলা স্কুলে পাকিস্তান পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়ালে কাদের মোল্লারা সেই স্কুলের হেডমাস্টার কাউয়ুমের ওপর ক্ষিপ্ত হোন। তাকে কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। আমার পিতার সহায়তায় সে চিকিৎসা পায়। ওই ঘটনার পর আমরা মিরপুরের বাড়ি ছেড়ে দিয়ে শান্তি নগরে ফুপুর বাসায় চলে আসি। এরপর আমার বাবা ২৯ মার্চ মিরপুরে তার গাড়ি ও কিছু টাকা-পয়সা আনার জন্য সেখানে যাবেন বলে জানান। সেদিন তিনি তার এডভোকেট ফার্মে গেলে পথিমধ্যে ইত্তেফাকের অবাঙালী চীফ একাউন্ট্যান্ট আবদুল হালিমের সঙ্গে দেখা হয়। এই আবদুল হালিম তার বাবাকে জীপে করে নিয়ে কাদের মোল্লার হাতে তুলে দেয়। এরপর কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা মিরপুর ১০ নম্বরের জল্লাদখানায় আমার পিতাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করে। কাদের মোল্লার সঙ্গে আক্তার গু-াও সেদিন ছিল। তিনি এ হত্যাকা-ের বিচার চান বলে জানান। সাক্ষীর জবান বন্দী শেষ হলে জেরা করেন কাদের মোল্লার আইনজীবী একরামুল হক।
গত ২৪ জুলাই ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দী পেশ করেন কাজী রোজী। এর আগে ২০ জুন আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন। এরপর তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহম্মেদ খান, শহীদুল হক মামা ও একজন নারী সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২৮ মে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে পৃথক ৬টি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়।

সাফি উদ্দিন মোল্লা
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কাদের মোল্লা পাকিস্তানী আর্মিদের সঙ্গে গণহত্যায় অংশ নেন। আলোকদি গ্রামের ৩৬০ থেকে ৩৮০ জন নিরীহ বাঙালী ও ধান কাটার শ্রমিকদের এক লাইনে দাঁড় করিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। এ গণহত্যায় অংশ নেয় কাদের মোল্লাসহ পাকিস্তানী আর্মি এবং বিহারীরা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-তে গুরুত্বপূর্ণ এ সাক্ষ্য দেন সাফি উদ্দিন মোল্লা। তিনি এ ঘটনা নিজ চোখে দেখেছেন। সেদিনের ঘটনায় তার চাচা নবী উল্লাহ নবীও নিহত হন। সাক্ষী বলেন, ১৯৭১ সালে আমি ১৯ বছরের যুবক ছিলাম। মিরপুরে আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তাম। ১৯৭২ সালে সেখান থেকে এসএসসি পাস করি। তিনি বলেন, মিরপুরে ’৭০ সালের নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় গোলাম আযম ও নৌকা প্রতীকে এডভোকেট জহির উদ্দিন নির্বাচন করেন। কাদের মোল্লা তখন ওই এলাকার ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা ছিলেন। তিনি গোলাম আযমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। সেই সময় হতে তিনি আবদুল কাদের মোল্লাকে চিনতেন। তিনি বলেন, ২৫ মার্চে পাক হানাদার বাহিনী তার এলাকায় হত্যাকা- চালায়। তিনি বলেন, ২৪ এপ্রিল ১৯৭১ সালে আলোকদি গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার অবতরণ করে। এই হেলিকপ্টার অবতরণ করার পরই ওই গ্রামের লোকজন এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। হেলিকপ্টার থেকেই গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। এরপর দেখি অলোকদি গ্রামটিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর আলবদর রাজাকার বাহিনীর লোকেরা ঘিরে ফেলেছে। গ্রামের বহু লোক ধান কাটার পেশায় নিয়োজিত ছিল সেদিন। গ্রামের বহু লোক সেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে। আলবদরদের হাতে আটক এসব লোকজনদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো করা হয়। তারপর তাদের এক লাইনে দাঁড় করানো হয়। ফজরে আযান শুরু হলে কাদের মোল্লাসহ বিহারীরা ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সদস্যরা গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করে। ওইদিন এ হত্যাকা- সকাল ১১টা পর্যন্ত চলে। আমিও সে সময় সেখানে উপস্থিত ছিলাম। একটি গর্তে লুকিয়ে নিজের জীবন বাচাই। সেই গর্ত থেকে দেখি কাদের মোল্লা পাকিস্তানী সেনাদের সঙ্গে কথা বলছে। তারপরই নিরীহ জনগণের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও কাদের মোল্লা রাইফেল উঁচিয়ে গুলিবর্ষণ করছে। নিহত হয় ৩৬০ থেকে ৩৮০ জন। আলোকদি গ্রামটি ছিল বঙ্গবন্ধুভক্ত লোকদের বাস। ’৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে ভোট পায় সে গ্রাম থেকে। এ কারণই এ গ্রামের লোকদের কাদের মোল্লা ও পাক সেনাদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

No comments

Powered by Blogger.