দেশজুড়ে সন্ত্রাস গুলি বোমাবাজির হরতাল পালন- শতাধিক যানবাহন ভাংচুর, আগুন ॥ আজও হরতাল ডেকেছে জামায়াত

 জামায়াতের সন্ত্রাসের হরতালে চট্টগ্রামে একজন নিহতসহ সারাদেশে বিচ্ছিন্ন বোমাবাজি, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া, যানবাহনে ভাংচুর আর অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ, পথচারী জামায়াত-শিবির কর্মীসহ শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
হরতাল সমর্থকরা সারাদেশে শতাধিক যানবাহন ভাংচুর করেছে। সারাদেশ থেকে আটক করা হয়েছে দেড় শতাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে। হরতালে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কোন দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি। তবে ট্রেন ও লঞ্চসহ ঢাকার ভেতরে চলা সিটিং সার্ভিসগুলোর চলাচল ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। বুধবারও সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী।
মঙ্গলবারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালে কৌশল পাল্টায় জামায়াত-শিবির। গত হরতালে সকাল ৯টার দিকে মাঠে নেমেছিল হরতাল সর্মথকরা। মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকেই মাঠে নামে একযোগে রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, পুরনো ঢাকা, যাত্রাবাড়ীর মীর হাজিরবাগ, শাহজাহানপুর, যাত্রাবাড়ী মোড়, মহাখালী, পুরনো ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, বাংলাবাজার, বাড্ডা, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর মোড়, ধানমণ্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, কাফরুলসহ রাজধানীর অন্তত ৩০ স্থানে একযোগে হামলা চালায়। এসব জায়গায় তারা ব্যাপক বোমাবাজি করে। এরপর যানবাহনে ভাংচুর চালায়।
ভোর ৬টার দিকে শেওড়াপাড়ায় মতিঝিলগামী একটি বাসে ভাংচুর চালায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। দ্বিতীয় দফায় মিরপুরের কাজীপাড়া সিদ্দিকীয়া ফাযিল মাদ্রাসার সামনে মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ীগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে ভাংচুর চালায়। বাস ২টিতে আগুন দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে। সকাল ৭টার দিকে ধানমণ্ডি সাতমসজিদ রোডে শিবির কর্মীরা মিছিল বের করে একটি যাত্রীবাহী বিআরটিসি বাস ভাংচুর করে। পুলিশ ধাওয়া করলে অন্তত ১০টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।
সকাল ৯টার দিকে এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল মোড়ে একটি বাস ভাংচুর করে তাতে আগুন দেয়। প্রায় একই সময়ে কাঁঠালবাগান এলাকায় একটি গাড়ি ভাংচুর করে। মহাখালী ওভারব্রিজের কাছে একটি যাত্রীবাহী বাস ভাংচুর শেষে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে বাসে ভাংচুর করে শিবির কর্মীরা।
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শাহজাহানপুর শিল্পী হোটেলের সামনে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলকারীরা বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের বাড়ির সামনের রাস্তায় একটি যাত্রীবাহী বাস ভাংচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। ৯টার দিকে বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় জামায়াত-শিবির মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশী বাধায় প- হয়ে যায়।
সকালে কাকরাইল ও পল্টন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পুলিশ ধাওয়া দিলে ৫-৬টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। বিকেলে ফকিরাপুলে হরতালের সমর্থনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ছাত্রশিবির। বিকেল চারটার দিকে এ বিক্ষোভ ১৫-২০ মিনিট স্থায়ী হয়। তবে পুলিশ এতে বাধা দেয়নি বা কাউকে আটক করেনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পানির ট্যাঙ্কের সামনে দুই পাশের রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে শিবির। আশপাশের অলি-গলি থেকে প্রায় ৩শ’ শিবির কর্মী ঝটিকা মিছিলে অংশ নেয়। তারা হরতালের সমর্থনে বিভিন্ন সেøাগান দেয়।
যাত্রাবাড়ী মোড়ে দুপুরে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। যাত্রাবাড়ীর মীর হাজিরবাগে ব্যাপক বোমাবাজি করে। জুরাইন এলাকায় জামায়াত-শিবির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। রামপুরায় হরতাল সমর্থকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ মিছিলকালে পুলিশের সঙ্গে ধাওযা পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কাফরুলে হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পুরনো ঢাকার নর্থ সাউথ রোডের সুরিটোলা স্কুলের সামনে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হরতাল সমর্থকরা একটি বিআরটিসি বাস ভাংচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ ধাওয়া দিলে হরতাল সমর্থকরা ৪/৫টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে হরতাল সমর্থকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের ক্লাস বা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
এছাড়া রাজধানীতে যানবাহনের চলাচল ছিল খুবই কম। শুধু সিটি সার্ভিসের কিছু বাস যাতায়াত করেছে। তবে রিকশা ও সিএনজির চলাচল ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। হরতাল চলাকালে রাজধানীর মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গাবতলীসহ অন্যান্য বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। তবে লঞ্চ ও ট্রেনের চলাচল ছিল স্বাভাবিক। রাজধানীতে বন্ধ ছিল সব ধরনের দোকানপাট। স্কুল-কলেজসহ প্রায় সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় হরতালবিরোধী মিছিল সমাবেশ করেছে সরকার সমর্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। সকাল থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ থেকে পুরানা পল্টন এলাকায় একের পর এক হরতালবিরোধী মিছিল সমাবেশ করতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে মিছিল সমাবেশের আয়োজন করা হয়। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউসহ আশপাশের এলাকায় মিছিল সমাবেশ করে। মিরপুর-১০ নম্বরে কামাল আহমেদ মজুমদার, গাবতলীতে ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
এছাড়া রাজধানীজুড়েই আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি, জাতীয় যুব পরিষদ, হকার্স লীগ, যুব মহিলা লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের নেতাকর্মীদের মিছিল সমাবেশ করতে দেখা গেছে। অন্যান্য প্রগতিশীল সংগঠনকেও হরতালবিরোধী মিছিল করতে দেখা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিসের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, হরতালের সময় রাজধানীতে যানবাহন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে জামায়াত-শিবিরের ৫২ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। হরতালের সময় ৬টি যানবাহনে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.