মোহাম্মদপুর হাউজিং এস্টেট- দুই দফা আবেদন করেও অনিশ্চয়তায় বরাদ্দপ্রাপ্তরা by অরূপ দত্ত

দুই বছরের বেশি সময়ে মোহাম্মদপুর হাউজিং এস্টেটের এফ ব্লকে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ফ্ল্যাট প্রকল্পে বাস্তব কাজ হয়েছে সামান্যই। প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা।
তাঁদের মধ্যে অনেকেই প্রথমে প্লট বরাদ্দ পেতে আবেদন করেছিলেন এক যুগের বেশি সময় আগে। মোহাম্মদপুর জাপান গার্ডেন সিটির পাশে সাত একর জায়গা নিয়ে এফ ব্লক প্রকল্প এলাকা। প্রকল্পে ১৫ তলার ১৬টি ভবন হওয়ার কথা। এ পর্যন্ত একটি ভবনও ওঠেনি। সম্প্রতি দেখা যায়, ১২ ও ১৬ নম্বর ভবনে সীমানা দেয়াল তুলে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। ২ ও ৩ নম্বর ভবনের জায়গায় শিশু-কিশোরেরা ক্রিকেট খেলছে। ৪ ও ৫ নম্বর ভবনের পাইলিংয়ের প্রস্তুতি চলছে। গত বছরের শুরুতে একবার ভবন দুটির জন্য পাইলিংয়ের কাজ ধরা হয়েছিল। কিন্তু পাশের ব্যক্তি-মালিকানাধীন ভবনগুলোয় ফাটল ধরার আশঙ্কায় মালিকেরা বাধা দিলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বাকি ভবনগুলোর এখন পর্যন্ত কোনো খবর নেই।
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ১৯৯৮ সালে এফ ব্লকে প্লটের জন্য আবেদনপত্র নিলেও সে ব্যাপারে দীর্ঘদিন কোনো অগ্রগতি হয়নি। বহুদিন পর, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্লটের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে ফ্ল্যাট বরাদ্দের জন্য আবেদনপত্র নেওয়া হয়। তখন আগের আবেদনকারীদের মধ্যে ৯০০ জন লটারিতে ফ্ল্যাটের বরাদ্দ পান। সে বছরের অক্টোবরে বরাদ্দপত্র দেওয়া হয়। তখন বলা হয়েছিল, বর্তমান সরকারের মেয়াদেই ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
ভবন নির্মাণের অগ্রগতি দেখতে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই এখানে আসেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছয়জন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) হতাশার সঙ্গে এ প্রতিবেদককে বলেন, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে বহুবার ধরনা দিয়েও কোনো সুখবর পাননি। তাঁরা আড়াই কাঠার প্লটের জন্য ১৯৯৮ সালে আবেদন করেছিলেন।
১৯৯৭ সালের নভেম্বরে তৎকালীন গৃহ-সংস্থান অধিদপ্তর (২০০১ সালে কর্তৃপক্ষ হয়) থেকে এফ ব্লকে চার ধরনের প্লটের জন্য আবেদনপত্র চাওয়া হয়েছিল। আড়াই কাঠা আয়তনের প্লটের জন্য ৩০ হাজার, দুই কাঠার জন্য ২৫ হাজার, পৌনে দুই কাঠা ও অসম আকৃতির প্লটের জন্য ১৫ হাজার টাকা জামানত নেওয়া হয়েছিল। প্রায় ২৩ হাজার আবেদনকারী এতে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে সাত হাজার ৬১০ জন জামানতের টাকা না উঠিয়ে প্লট পাওয়ার আশায় দিন গুনছিলেন। পরে তাঁদের মধ্যে ৯০০ আবেদনকারী লটারিতে ফ্ল্যাট পান।
বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন, ফ্ল্যাট বুঝে পেতে আরও কয়েক বছর লাগবে। সে ক্ষেত্রে কয়েক লাখ টাকা বাড়তি গুনতে হবে। কারণ, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়েছিল, নির্মাণসামগ্রীর দাম ওঠানামা করলে, আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ইত্যাদি বাড়ানো হলে ফ্ল্যাটের মূল দাম বা কিস্তির সঙ্গে সমন্বয় করা হবে এবং বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সমন্বয় করা দাম পরিশোধে বাধ্য থাকবেন। অন্যথায় বরাদ্দপত্র বাতিল হবে এবং আগে দেওয়া মোট টাকা থেকে ৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরে জমা থাকা টাকার জন্য কোনো সুদ দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া গত সপ্তাহে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, মাঝে কিছু সমস্যা দেখা দিলেও বর্তমানে নির্মাণকাজ চলছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্ল্যাট নির্মাণ করে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া জানান, তাঁকে কয়েক দিন আগে বদলি করা হয়েছে। নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার শহীদুল্লাহর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের জন্য কয়েকবার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.