দামিনীর জন্য... by আফরোজা আক্তার

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে গণধর্ষণের শিকার তরুণী লিখেছিলেন_ আমি বাঁচতে চাই। হাসপাতালের বেডে বারবার তার আকুতি ছিল দায়ীদের শাস্তির। তার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়েছে হাজারো জনতা। হয়তো দ্রুতই ধর্ষকদের বিচার হবে।
কিন্তু দেখে যাওয়ার ফুরসত আর হলো না আমানত ছদ্মনামের আড়ালে নির্মম বাস্তবতার শিকার সেই লড়াকু মেয়ের। লড়াই না করে কোনোভাবেই না হারার যে প্রত্যয় ছিল তার কণ্ঠে। নরপিশাচরা যেভাবে তার দেহ নিয়ে বীভৎস খেলায় মেতে উঠেছিল সেই ধকল আর সামলাতে পারেনি ২৩ বছরের তরুণী। জীবন দিয়ে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আরও একবার সোচ্চার করে গেল ভারতের শতকোটি মানুষকে। ভারতে প্রতিবছরই আমানতের মতো ধর্ষণের শিকার হয়ে প্রাণ হারায় বহু নারী। কেউ বেছে নেয় আত্মহননের পথ, কেউ বা ধর্ষকের বলির শিকার। মেডিকেল শিক্ষার্থী যে দিন মারা যায় সে দিনও পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে এক নারীকে গণধর্ষণে খুন করা হয়। একই দিন মুম্বাইয়ের জুহু বিচে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে হেনস্থা হতে হয় আরেক নারীকে। ভারতে মেয়েদের তুলনায় পুরুষের অগ্রাধিকারকে দায়ী করছে অনেকে। সমাজের সর্বস্তরে দিন দিন বেড়েই চলছে নারী নিগ্রহ, শ্লীলতাহানি, যৌতুক, শারীরিক নির্যাতন তো রয়েছেই। বিভিন্ন রাজ্যে কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। দিলি্লর পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী রাজধানীতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৬৩৫টি মামলায় ৭৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, ৪০৩ জনের শুনানি চলছে এবং ৩৪৮ জনের বিচারকাজ ঝুলে আছে, এছাড়া দু'জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গড়ে ধর্ষণের সংখ্যা বেড়েছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ।
আইন করেও কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যা বন্ধ করতে পারছে না ভারত সরকার। ইচ্ছাকৃতভাবে কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যা করা হয়েছে শুধু এটি প্রমাণিত হলে ছয় থেকে সাত মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে ভারতে, তারপরও আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যা হচ্ছে অহরহ। নিরাপত্তাহীনতা, যৌতুক প্রথা, বিয়ের খরচ_ এ সব বিবেচনা করে অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারগুলো কন্যা শিশুকে অনাকাঙ্ক্ষিত হিসেবেই দেখে। এমনকি অনেক সচ্ছল ও বিত্তবান পরিবারেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। রাজধানী নয়াদিলি্লতে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত যৌতুকের কারণে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে ১২৮ জন। ২০১০ ও ২০১১ সালে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৪২ ও ১৪৩।
আইনি দুর্বলতা আর সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জোর দাবিতে যখন উত্তাল সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, তখন মানবাধিকার কর্মী রিসিকান্ত বলেন নারী-পুরুষের সংখ্যার ভারসাম্যহীনতার কথা। গত বছরের আদমশুমারি অনুযায়ী ছয় বছর বা তার নিচে প্রতি এক হাজার ছেলে শিশুর বিপরীতে রয়েছে ৯১৪ জন মেয়ে, যা দেশটির স্বাধীনতার পর সবচেয়ে নিম্ন শিশু মেয়ে ও ছেলের অনুপাত। পাঞ্জাবের মতো প্রবেশগুলোতে এই সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে ৩০০-তে। ভারতের উত্তরাঞ্চলে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কম, তাই অনেক প্রাপ্তবয়স্ক যুবকই বিয়ে করতে পারছে না। এমনকি অন্য প্রদেশ থেকে মেয়েদের অপহরণ করে হরিয়ানা প্রদেশের যুবকরা বিয়ে করছে। ভারতের জাতীয় আদমশুমারির তথ্য মতে, ২০১১ সালে হরিয়ানায় ৮৭৭ জন নারীর বিপরীতে ছিল এক হাজার পুরুষ। আর জাতীয়ভাবে ৯৪০ জন নারীর বিপরীতে ছিল এক হাজার পুরুষ।
য়সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.