শেয়ার মার্কেটে রেকর্ড লেনদেন, ছাড়িয়ে গেছে ১৪শ' কোটি টাকা

রাজু আহমেদ দেশের পুঁজিবাজারে আর্থিক লেনদেনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। দুই শেয়ারবাজার মিলে প্রথমবারের মতো ১ হাজার ৪০৫ কোটির টাকারও বেশি মূল্যের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
এর মধ্যে এককভাবে ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জেও (ডিএসই) রবিবার আর্থিক লেনদেন আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তবে আগের সপ্তাহে টানা বৃদ্ধির পর উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক কোম্পানির দর কমতে শুরম্ন করেছে। এরপরও শেয়ারের লেনদেন বৃদ্ধিকে বিনিয়োগকারীদের সচেতনতার প্রকাশ বলে মনে করছেন বাজার বিশেস্নষকরা।
ডিএসই সভাপতি রকিবুর রহমান এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, লেনদেনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টির মাধ্যমে শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা প্রতিফলিত হয়েছে। তাদের এই আস্থা দেশের পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
নতুন বছরের শুরম্ন থেকেই শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ডিএসই'তে হাজার কোটি টাকার বেশি শেয়ার লেনদেনের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। ডিসেম্বরের নিম্নমুখী প্রবণতা কাটিয়ে ২০১০ সালের প্রথম সপ্তাহে একদিকে যেমন লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে, অন্যদিকে অধিকাংশ কোম্পানির দর বৃদ্ধিও বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করে তুলে। এরই ধারাবাহিকতায় ডিএসই'তে আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ এ যাবতকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। রবিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে ১ হাজার ৩শ' ২৪ কোটি ৯৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২০ অক্টোবর ১ হাজার ২শ' ৪৫ কোটি ১৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জে (সিএসই) রবিবার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। দুই শেয়ারবাজার মিলে এদিন মোট ১ হাজার ৪০৫ কোটি ৫৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ২০ অক্টোবর দুই শেয়ারবাজার মিলে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল।
আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি লেনদেন হওয়া শেয়ারের সংখ্যাও উলেস্নখযোগ্য হারে বেড়েছে। ডিএসই'তে সারাদিনে লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪৮টি শেয়ার_ বৃহস্পতিবারের তুলনায় ২৬ লাখ ৫৮ হাজার ৯৮৬টি বেশি। গত বছরের ১৯ অক্টোবর ডিএসই'তে রেকর্ড সাড়ে ৭ কোটিরও বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
আর্থিক লেনদেনর সঙ্গে ডিএসই'তে বাজার মূলধন ও সূচকের রেকর্ড ভঙ্গের ধারা অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবারে সৃষ্ট রেকর্ড অতিক্রম করে রবিবার ডিএসই'র বাজার মূল্যধন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫২ কোটি ৫৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িযেছে। অন্যদিকে ডিএসই সাধারণ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮.৬৪ পয়েন্ট বেড়ে ৪৭৩০.৭৪-এ দাঁড়িয়েছে। ডিএসই সার্বিক সূচক ৩৯১৭.৬৯ পয়েন্টে উঠেছে, যা আগের দিনের তুলনায় ১৩.০৩ পয়েন্ট বেশি।
লেনদেনে রেকর্ড সৃষ্টি হলেও উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। আগের সপ্তাহে ব্যাপক বৃদ্ধির পর স্বাভাবিক মূল্য সংশোধন হয়েছে ভাল কোম্পানির শেয়ারের। এ কারণেই ১১৩টি কোম্পানির দর কমে গেছে। অবশ্য এর বিপরীতে বেড়েছে ১২৭টি কোম্পানির শেয়ারের দর। লেনদেন হওয়া বাকি ৪টি কোম্পানির শেয়ারের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাজারে শেয়ারের দর কমতে শুরম্ন করার পরও লেনদেন বৃদ্ধির প্রবণতাকে পুঁজিবাজারের পরিপক্বতার বহিপর্্রকাশ বলে মনে করছেন সংশিস্নষ্টরা। তাঁদের মতে, যখন কোন শেয়ারের দর বেড়ে যায় তখন অধিকাংশ বিনিয়োগকারী হুজুগের বশে ওই শেয়ারের প্রতি ঝুঁকে পড়লে বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। এক সময় দেশের শেয়ারবাজারে এ ধরনের প্রবণতা বেশি ছিল। কিন্তু এখন বিনিয়োগকারীরা অনেক বেশি সচেতন। এ কারণেই যখন কোন কোম্পানির শেয়ারের দর কমতে শুরম্ন করে তখনই অধিকাংশ বিনিয়োগকারী ওই শেয়ার কিনতে শুরম্ন করেন। এ কারণেই বাজার নিম্নমুখী হওয়া সত্ত্বেও লেনদেনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএসই সভাপতি রকিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বাজার নিম্নমুখী অবস্থানে থাকলেও লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি অত্যনত্ম ভাল লৰণ। এতে বোঝা যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা বুঝে শুনেই শেয়ার ব্যবসা করছেন।
বাজার বিশেস্নষকদের মতে, আর্থিক ভিত্তিহীন কোম্পানিগুলোকে তালিকাচু্যত করার পাশাপাশি গ্রামীণফোনের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি শেয়ারবাজারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পাশাপাশি প্রায় নিয়মিতভাবে নতুন নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি এবং মিউচু্যয়াল ফান্ডের সংখ্যা বাড়তে থাকায় শেয়ারবাজার শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এ কারণেই বাজার মূলধন, টাকার অংক ও শেয়ার সংখ্যার দিক থেকে দৈনিক লেনদেনের গড় বিবেচনায় নিলে বাজারের চাঙ্গাভাব স্পষ্ট হয়ে উঠে।
জাতীয় অর্থনীতির বেশ কয়েকটি 'ফ্যাক্টর'-এর প্রভাবে পুঁজিবাজারের বর্তমান চাঙ্গাভাব বজায় থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। চলতি অর্থবছরে সরকার অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা প্রশ্নহীনভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে। অন্য কয়েকটি খাতেও একই সুযোগ দেয়া হলেও তাতে কঠিন শর্ত আরোপ করা হয়েছে। ফলে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ গ্রহণকারীদের অনেকেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এর পাশাপাশি ব্যাংকে আমানতের সুদের হার কমে যাওয়ায় পুঁজিবাজারই বিনিয়োগের সবচেয়ে লাভজনক ৰেত্রে পরিণত হয়েছে। ফলে আগামী দিনে নতুন নতুন বড় বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পরিমাণও বাড়ছে। নতুন নতুন মার্চেন্ট ব্যাংক যেমন কার্যক্রম শুরম্ন করছে, তেমনি বাজারে আসছে একের পর এক মিউচু্যয়াল ফান্ড। সরকার ১৫টি নতুন মার্চেন্ট ব্যাংককে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দিচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে সক্রিয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে আলাদা কোম্পানি করার লৰ্যে কাজ চলছে। একই সঙ্গে দেশের প্রায় প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংকই মিউচু্যয়াল ফান্ড স্পন্সর করছে। এসব উদ্যোগের প্রতিটিই পুঁজিবাজার শক্তিশালী করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
শুধু স্থানীয়ভাবেই নয়, বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যেও দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যেই শেয়ারবাজারে প্রবাসী বিনিয়োগ বাড়াতে ডিএসই'র পৰ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের বাজারের প্রতি প্রবাসীদের আগ্রহ বেড়েছে। আইপিওগুলোতে প্রবাসী কোটায় ব্যাপক সাড়াই এর প্রমাণ।

No comments

Powered by Blogger.