বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায়

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় গত ১৯ নবেম্বর ঘোষিত হয়। এরপর পাঁচ বিচারপতি গত ১৭ ডিসেম্বর সে ঐতিহাসিক রায়ে স্বার করেন।
রায়টির পূর্ণ বিবরণ এখানে
ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো_
(পূর্ব প্রকাশের পর)
দেখা যাচ্ছে যে উপরোক্ত একটি শর্ত যোগ করার ফলে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকদের একজন কিম্বা ভারতের হাইকোর্টের তৃতীয় বিচারক চাইলে তাঁকে নতুন করে শুনানি অনুষ্ঠান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আপীলটি বিচারকদের বৃহত্তর একটি বেঞ্চে পাঠানোর মতা দেয়া হয়েছে। আমার মতে ভারতের সুপ্রীমকোর্টের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য সম্পর্কে সংশয় দূর করার ল্যে আইনসভা ঐ শর্ত বা দফাটি যোগ করে এই সংক্রান্ত বিতর্কের নি্#৬৩৭৪৩;ত্তি করেছেন। বর্তমান অবস্থায় কোন বিষয় বা বিষয়াবলী নিয়ে মতাপার্থক্য দেখা দিলে ডিভিশন বেঞ্চ যদি প্রয়োজন মনে করে তাহলে আপীলটি নতুন করে শুনানির জন্য বৃহত্তর একটি বেঞ্চের কাছে পাঠাতে পারে। অনুরূপভাবে তৃতীয় বিচারক ডিভিশন বেঞ্চের নি্#৬৩৭৪৩;ত্তিকৃত আপীল মামলায় সংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয়ে বেঞ্চের অভিমতের সঙ্গে একমত না হলে তাঁকে আপীলটি বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানোর অনুরূপ ঐচ্ছিক মতা দেয়া হয়েছে।
তানভিরেন পংকজ কুমার দিভেতিয়া বনাম গুজরাট রাজ্য (সুপ্রা) মামলায় মন্তব্য করা হয়েছে :
"৩৯২ (আমাদের ৪২৯ ধারা) ধারা সাদামাটাভাবে পাঠ করলেই পরিষ্কার বুঝা যায় যে, তৃতীয় বিচারক কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর যুক্তিতর্ক শুনবেন তা তিনিই নির্ধারণ করবেন এবং এ কথার মধ্য দিয়ে এটা অপরিহার্যরূপে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে যে তৃতীয় বিচারক যেভাবে উপযুক্ত মনে করবেন সেভাবে মতপার্থক্য দূর করে আপীলটির নি্#৬৩৭৪৩;ত্তি করার ব্যাপারে স্বাধীন।"
উত্তর প্রদেশ রাজ্য বনাম দান সিং, (১৯৯৭) ও এসসিসি ৭৪৭ মামলায় অবশ্য সুপ্রীমকোর্ট বেঞ্চের দু'জন সদস্য আগের সিদ্ধান্তগুলো বিবেচনা না করেই নিম্নোক্ত মন্তব্য করেছিলেন :
"তৃতীয় বিচারক যখন সামগ্রিকভাবে আপিলের শুনানি করেন তখন তাঁর অভিমত দেয়ার ঐচ্ছিক মতাই শুধু থাকে না উপরন্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৯২ ধারার শর্ত অনুযায়ী তিনি বিচারকদের বৃহত্তর একটি বেঞ্চে আপীলটির শুনানি ও নি্#৬৩৭৪৩;ত্তি চাইতে পারেন। এটা একটা ঐচ্ছিক মতা যা দুই বিচারক যথা বিচারকপতি বিএন কাটজু ও বিচারপতি রাজেশ্বর সিংয়ের যে কোন একজনের প্রয়োগ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা তা প্রয়োগ না করতে মনস্থ করেন। এ থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, তৃতীয় বিচারকের অভিমত অনুসারে যে রায় ও আদেশ দেয়া হয় তার দ্বারাই আপীলের চূড়ান্ত নি্#৬৩৭৪৩;ত্তি ঘটে। এই অবস্থায় হাইকোর্ট তার ১৯.৫.১৯৮৮ তারিখের চূড়ান্ত আদেশ বলে আপীলটি নি্#৬৩৭৪৩;ত্তি করার পরই কেবল বিশেষ লিভ পিটিশন দাখিল করা যেতে পারত। উক্ত আদেশটি যদিও ৩২ জন আসামীর মধ্যে মাত্র ১০ জনের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে অভিপ্রেত তারপরও আদেশটি পূর্বেকার ১৫.৪.১৯৮৭ তারিখের আদেশের সঙ্গে পাঠ করতে হবে এবং আইনে এর ফলটা হবে এই যে ১৯.৫.১৯৮৮ তারিখের আদেশটি চূড়ান্ত আদেশরূপে গণ্য হবে। ঐ আদেশে রাষ্ট্রকে আপীল করার আংশিক সুযোগ দেয়া হয় এবং ৩২ জন আসামীর মধ্যে দু'জনকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪ ধারার সঙ্গে পঠিত ৩২৫ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং বাদ বাকি আর সকল আসামীকে খালাস দেয়া হয়।"
সজ্জন সিং (১৯৯৯) এসসিসি (ফৌজদারি) ৪৪ মামলায়ও সুপ্রীমকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ বাবুর মামলা, এআইআর ১৯৬৫, এসসি ১৪৬৭ এবং হেথুভা মামলা, এআইআর ১৯৭০, এসসি ১২৬৬তে গৃহীত দৃষ্টিভঙ্গিকে অগ্রাহ্য করেছিলেন। তারা তৃতীয় বিচারকের দেয়া অভিমত অনুমোদন করেননি এবং নিম্নোক্ত মন্তব্য করেছিলেন :
"আইনের বিবরণ এখন যথেষ্ট স্পষ্ট। তৃতীয় বিচারকের অভিমতটাই প্রকৃত গুরুত্ব বহন করে। এই বক্তব্য অনুসরণে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে একটি আপীল সংবিধানের ২৩৬ অনুচ্ছেদ বা ১৩৪ অনুচ্ছেদ বা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৯ ধারার অধীনে বিশেষ লিভ পিটিশনের আকারে এই আদালতের বিচারাধীন রয়েছে। কাজেই তৃতীয় বিচারককে গোটা মামলাটি স্বাধীনভাবে পরীা করে দেখার প্রয়োজন হয় এবং এ কথা বলা চলে না যে তিনি ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারকের দুই অভিমতের সেই অংশটির দ্বারা আবদ্ধ যেখানে কোন মতপার্থক্য নেই। বস্তুতপ েতৃতীয় বিচারক ডিভিশন বেঞ্চের এ ধরনের কোন অভিমতের দ্বারা আবদ্ধ নয়। তিনি বিষয়টি শুনছেন না যেন তিনি তিন বিচারকের বেঞ্চে বসে আছেন যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের অভিমত প্রাধান্য পাবে। কাজেই আমাদের অভিমত হচ্ছে এই যে, তার সামনে উপস্থিত তিন আপীলকারী গদরাজ সিং, মেহেরবান সিং ও বাবু সিংয়ের ব্যাপারে বিচারপতি প্রসাদের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক ছিল না এবং তার হাত দুটিও বাধা ছিল না। এদের ব্যাপারে ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারকের উভয়েই অভিমত দিয়েছিলেন যে তারা দোষী এবং তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা ও দন্ডাদেশ দেয়ার বিষয়টি বহাল রাখতে হবে।
"অবশ্য উপরোক্ত মন্তব্য সত্ত্বেও সজ্জন সিংয়ের মামলায় আদালত তৃতীয় বিচারকের অভিমতের েেত্র এই যুক্তিতে হস্তপে করেননি যে, তিনি আপীলকারী সকলের েেত্র এই বিষয়টি আমরা সবিস্তারে শুনেছি বিধায় যখন আপীলকারীদের সামান্য কয়জন মাত্র বিচারপতি প্রসাদের গৃহীত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিগ্রস্ত হয়েছে বলে বলা যেতে পারে তখন বর্তমানের এই পর্যায়ে বিষয়টি পুনপের্্ররণ করা বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি না। সুপ্রীমকোর্ট তারপর দোষগুণের ভিত্তিতে আপীলটি শুনে তা খারিজ করে দিয়েছিলেন।
রাষ্ট্র বনাম আব্দুল খায়ের ও অন্যান্য (সুপ্রা) মামলায় তিনজন আসামীর মধ্যে একজন হত্যা করেছিল এবং অপর দু'জন মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং এরা দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়। কিন্তু আপীলের ওপর বিভক্ত রায় দিতে গিয়ে একজন বিজ্ঞ বিচারক অপর দুই আসামীকে খালাস দিয়েছিলেন। দণ্ডবিধির ৪২৯ ধারায় আপীল মামলায় তৃতীয় বিচারক যে লোকটি হত্যা করেছিল সেই মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকে বাদ দিয়ে অপর দু'জনের মামলারই কেবল শুনানি করেছিলেন। (ক্রমশ)

No comments

Powered by Blogger.