ইতিহাসের পাতায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক


১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বীকৃতি এবং ১৯ মার্চের চুক্তি শান্তি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, গাঢ় সবুজ আস্তরণের ওপর লাল রক্তসূর্য গোলক পতাকার ভিত্তি রচিত হয়।
সেই ধারাবাহিকতায় ১১ জানুয়ারি ২০১০ হাসিনা-মনমোহন চুক্তি কী আমরা ভারত-বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান করে শান্তি ও উন্নয়নের ধারা আরও বিস্তৃত করতে পারব? ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব অকৃত্রিম। কূটনৈতিক সম্পর্কের উর্ধে আবেগ, ভালবাসা, মাটি আর বিতাড়িত বাস্তুচু্যত মানুষের পিছুটান। যেন নস্টালজিয়া (ূমর্্রটফথধট) বহু দিনের পুরনো সুতা ধরে টান দেয়। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে নতুন করে '৪৭-এর ইংরেজ বিদায়ের পর '৭১-এর রক্তাক্ত এক মুক্তিযুদ্ধ-সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। বিশ্বে বাঙালী জাতির মতো অন্য কোন জাতিকে বাঁচার জন্য বার বার রক্ত দিতে হয়নি। সাম্প্রদায়িকতা, ধমর্ীয় সহিংসতা, হৃদয়েরক্ত ঝরিয়ে বাস্তুত্যাগ, নিজ বাসভূমি, জমিজিরাত, সহায়সম্পদ এভাবে বিসর্জন দিয়ে জন্মভূমি ত্যাগ করে উচ্ছেদ হয়নি। তাই তো পিছুটান। 'সোনার বাংলা তোমায় ভালবাসি' তখন কবির কল্পনায় ভারতের ব্রিটিশ শাসনের মধ্যেই মায়ের মধুর হাসি তিনি প্রত্য করেছিলেন।
গত বছর ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অভূতপূর্ব বিজয়ের পর যেন ও দেশে-এ দেশে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। তাঁরা যেন নতুন স্বপ্নের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে সামনে নিয়ে দু'দেশেই ব্যাপক উদ্যোগ আয়োজন কত সুষ্ঠু, সুন্দর, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে এ সফর কাঙ্তি আশার এক বাস্তবায়নে দিনে বদলের সনদ বাস্তবায়নে যেন বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় থেকে সুদৃঢ় হয়। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে দেশব্যাপী এক বিশাল প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকদিন ধরেই এ সফরসূচী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে গত নবেম্বর মাসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব নিরুপমা রাও এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ইমরুল কায়েসের দফতরে সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর সে সংবাদ সম্মেলনের চূড়ান্ত রূপ ঘোষণা করা হয়। তাতে প্রত্যাশার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ সফর এর মূল ভিত্তি রচিত হয় এক ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্কের নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়; ১৯৭২-এর ১৭ মার্চ থেকে ১৯ মার্চের মধ্যে যে মহীয়সী নারী সারাবিশ্বে বাঙালীর জেনোসাইডের কথা, নিরস্ত্র মানুষের ওপর সশস্ত্র আক্রমণের নৃশংসতার কথা তুলে ধরেন তার অর্থাৎ তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশ সফরের সময়। হৃদয় নন্দিত এক আতিথেয়তার মধ্য দিয়ে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি স্বারিত হয়। সুতরাং ভারতের সঙ্গে প্রথম রক্তস্নাত চুক্তির আলোকে উভয় দেশের চুক্তিগুলো দৃঢ়তর হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে শান্তি সহযোগিতা, বন্ধুত্বের চুক্তি সই হয় ১৯ মার্চ। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বীকৃতি এবং ১৯ মার্চের চুক্তি শান্তি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, গাঢ় সবুজ আস্তরণের ওপর লাল রক্তসূর্য গোলক পতাকার ভিত্তি রচিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ১১ জানুয়ারি ২০১০ হাসিনা-মনমোহন চুক্তি কী আমরা ভারত-বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান করে শান্তি ও উন্নয়নের ধারা আরও বিস্তৃত করতে পারব? দুই দেশের সংবাদপত্র, বুদ্ধিজীবী, কলাম লেখক এ সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশের কোন জাতীয় দৈনিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী (সাবেক) ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করে সফরে গুরুত্বপূর্ণ ঝুলে থাকা এবং উন্নয়নের নতুন দিগন্ত সূচনার জন্য ভারতের আর্থিক সহায়তা ও ঋণ সহায়তা পাবে বলে এদেশের প্রত্যাশা। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর থেকেই ভারতের সাথে বাংলাদেশের শীতল সম্পর্ক পুনঃউন্নয়নের উদ্যোগ স্তিমিত হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু-ইন্দিরা চুক্তিতে উলি্লখিত, "কদণ ডমলর্ভরধণ্র ্রদটফফ ঢণশণফময বর্ললটফ ডম-মযণরর্টধমভ ধভর্ দণ তধণফঢ মতর্ রটঢণ, করটভ্রযমর্র টভঢ ডমববলভধডর্টধমভ ঠর্ণষণণভর্ দণব মভ ঠট্রধ্র মত যরধভডধযফণ্র মত ণ্যলটফর্ধহ, বর্ললটফ ঠণভণতর্ধ টভঢর্ দণ বমর্্র তটশমলরণঢ ভর্টধমভ যরধভডধযফণ." বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত যে আন্তরিকভাবেই সম্পর্ক উন্নয়ন চায় তার একটি ছোট্ট ঘটনা আমাদের প্রতি সেই মনোভাব প্রকাশ। এবারের নবেম্বর সফরের সময় ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব নিরুপমা রাও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে সাাত করেন। নিরুপমাকে জামদানি শাড়ি উপহার দিয়েছেন খালেদা জিয়া। আবার বাঁকা সুরে অনুযোগ করেছেন, "তোমরা বাপু বেশি দাদাগিরি কর।" জবাবে নিরুপমা বলেছেন, "আপনারা তো দুই বোন। এক বোন আরেক বোনের ওপর দাদাগিরি করেন।" এসব সাাতকার সামান্য হলেও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভারত যে বাংলাদেশের ব্যাপারে একদেশদর্শী নয় তারই ইঙ্গিত বহন করে। ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাকরঞ্জন চক্রবতর্ী হাজির হয়েছিলেন। ভারতের দিল্লী-বেইজড বু্যরো প্রধান জয়ন্ত ঘোষাল আনন্দ বাজার পত্রিকায় শেখ হাসিনার দিল্লী সফর নিয়ে ভারতের মনোভাব অত্যন্ত সহনশীল, অমিতিপরায়ান ও হৃদ্যপূর্ণ তাঁর লেখার সঙ্গে একজন ভারতীয় কূটনীতিকের মন্তব্য ভারতীয় কূটনীতির মূলকথা 'ঈণভধথদভ ঊধযফমবটডহ' অর্থাৎ নমনীয় নীতি। 'ইথরণ্র্রধশণ ঊধযফমবটডহ' নয়। সে সমস্ত কথা বলে বিরোধীদলীয় নেত্রী পথে কাঁটা বিছানোর কথা বলেছেন। সব রাজনীতিককেই কাঁটার ঘা সহ্য করেই টিকে থাকতে হয়। তাঁর বেশি কেউ জানে না। জিয়াউর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ড ল মানুষের জানাজায় শরিক হয়েই তাঁর মতো একজন গৃহবধূকে দেশের ও দলের উচ্চতম সম্মানিত পদে অধিষ্ঠিত করেন। কবির উপদেশ, "কাটা হেরি ান্ত কেন কমল তুলিতে/দুঃখবিনা সুখ লাভ হয় কি মোহিতে।" ১১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক বৈঠক হলেও ১০ জানুয়ারি রাতে এক বিশেষ বিমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লী পেঁৗছাবেন। তাঁকে আন্তরিকভাবে বরণ করার জন্য অপেমাণ দিল্লী। তিনি সেখানে মৌর্য শেরাটন হোটেলে অবস্থান করবেন। কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে উভয় দেশের প থেকে। ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি ৪ অক্টোবর ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমান একমত হন তখন ইতোপূর্বে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বর্তমান অর্থমন্ত্রী-প্রণব মুখাজর্ী ছিলেন বাণিজ্য, ইস্পাত ও খনিজ সম্পদমন্ত্রী। তখন চুক্তিটি সই করেন তিনি এবং বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী । ২০০৬ সালের ২১ মার্চ বেগম জিয়া ভারত সফরের সময় সাইফুর রহমান-কমলনাথ চুক্তিটি পুনঃসই করেন। ১৯৮০ সালে ভারত-বাংলাদেশ চুক্তির ৮নং ধারায় বলা হয়, "চুক্তি স্বারকারী দেশগুলোর মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহনের জন্য এক দেশ অন্য দেশের মধ্য দিয়ে অপর প্রান্তে পণ্য পরিবহনের সুবিধা পাবে।" তিন বছর পরপর চুক্তি নবায়ন হবে। সে আলোকে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী রামকৃষ্ণ হেগড়ে চুক্তিটি নবায়ন করেন। সর্বশেষে ২০০৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের পুনরায় নবায়ন হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা বেগম খালেদা জিয়া উভয়েই ভারতের সাথে চুক্তি মেনে নিয়েছেন একাধিকবার স্বারের মাধ্যমে। তবে চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে উভয়পরে দ্বিমত আছে। কিন্তু বাংলাদেশ চারদিকে ভারতবেষ্টিত। বর্তমানে দণি এশিয়ায় ভারত বৃহৎ শক্তি। দণি এশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, জ্ঞান-বিজ্ঞানের আদান-প্রদানের জন্য সার্ক অর্থাৎ দণি এশীয় সহযোগিতা সংস্থা গঠন করা হয়। ওমর্লদ ই্রধটভ ই্র্রমডধর্টধমভ তমর ৗণথধমভটফ উম-মযণরর্টরধমভ_ ওইইৗউ গঠিত হয়। ১৯৮৫ সালের ৮ ডিসেম্বর সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাতটি দেশের মধ্যে ঐক্যের সৃষ্টি করে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বারোন্মোচন করেন। আসিয়ান, বিমসটেক বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থার মধ্যে আসিয়ান পারস্পরিক সৌহার্দের মধ্য দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, জনস্বাস্থ্য এবং কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক অভিজ্ঞতার বিনিময় তাদের দিনের পর দিন উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে। তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নয়নের জন্য আমরা ওইকেই গঠন করেছি। শেখ হাসিনার বর্তমান সফর শুধু অতীতের চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ও আরও বিস্তার লাভ করানো। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ভারতের বন্ধুত্ব, উন্নয়ন সহযোগিতা একান্ত কাম্য। গত ১৯ ডিসেম্বরের পূর্বে বাংলাদেশ বিশ্বের অতি দরিদ্র ৪৯টি দেশের অন্যতম। কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনের রাজনৈতিক অঙ্গীকারনামায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ুমর্্র গলফভণরটঠফণ ডমলর্ভরহ (ুগউ) অর্থাৎ অতিশয় বিপন্ন দেশ হিসেবে। মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল এমডিজি হিসেবে আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধির হার এতদিন ৮% এর উপরে থাকার কথা। তা এখন ুঊঐ দ্বিতীয় দেট্রণ-এ আমাদের অর্থমন্ত্রী ও এডিবি ৫% বা ৬% হবে এ নিয়ে সম্প্রতি মতানৈক্য হয়েছে (২০০৯-২০১০)। এদিকে দেখতে দেখতে মুদ্রাস্ফীতি ৬% এর উপরে পেঁৗছে গেছে। ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্র অর্থমন্ত্রী দেখতে প্রবীণ কিন্তু তারুণ্যে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানকে ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন। সুতরাং ভারতের সহায়তা সহযোগিতা, আর্থিক ঋণ, সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশ এগুবে কি করে? ভারতের সাথে বাণিজ্য ঘাটতির পাহাড়। আনুষ্ঠানিক ২০ হাজার কোটি এবং অনানুষ্ঠানিক ১০ হাজার কোটি; অন্য একমতে ভারতের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি ৩০০ কোটি ডলার সরকারীভাবে। নিয়মবহিভর্ূত বেসরকারী খাতে ৩৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় জয়ন্ত ঘোষালের প্রতিবেদন পড়ে অবশ্য পাঠক খুশি হবে। ভারতও যে খুব ভাল অবস্থার মধ্যে আছে তা নয়। তবে একথা সত্য যে, ভারতের নিরাপত্তার জন্য প্রকৃত বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশকে চায় সম্পর্কের নতুন সিঁড়ি রচনায় যা করা দরকার ভারত তাই-ই করবে। নানা েেত্র সহযোগিতার হাত বাড়ানো হবে। একান্ত অপারগ না হলে বাংলাদেশের কোন চাওয়া ফেরানো হবে না। "জঙ্গীবাদ, উগ্রবাদ আর নিজের চারপাশের প্রতিবেশী নানা বৈরিতায় বিপর্যস্ত ভারত।" গত ২৭ ডিসেম্বর, ২০০৯ ভারতের বহুল প্রচারিত দৈনিক আনন্দবাজারের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আলোকপাত করেছে। সম্প্রতি ডিসেম্বর মাসের প্রথমদিকে উলফার চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়া ১০ সহকমর্ীসহ বাংলাদেশ থেকে গ্রেফতার হয়েছেন। এটা রাজখোয়া নিজে স্বীকার করেছেন। এছাড়া পিটিআই পরিবেশিত খবরে বলা হয়, 'গতকাল রাজখোয়া (৫৬) তাঁর স্ত্রী ও দু'সন্তান ও পররাষ্ট্র দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত শশধর চৌধুরী ও মেয়ে রাজু বড়য়া তার স্ত্রী ও ছেলে মেঘালয়ের জৈয়ান্তিয়া পার্বত্য জেলার ডাউকি সীমান্ত দিয়ে ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিএসএফ প্রধান-মহাপরিচালক পৃথি্বরাই ভারতীয় সাংবাদিকদের জানান. বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা ভারতের ডাউকি এলাকা থেকে রাজখোয়াসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও বিশাল ভারত আসমুদ্র হিমাচল বিস্তৃত সমস্যা অনেক। তবু বাংলাদেশের অনেক দিনের জমে থাকা সমস্যা সমাধান করা বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে ডালি সাজিয়ে ভারত বাংলাদেশের উন্নয়নে এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের ওপরই চাওয়া-পাওয়ার দায়িত্ব দেবেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রীই ইতোমধ্যেই ভুটান সফর করেছেন। নিরুপমা রাওয়ের নবেম্বর সফরের সময়ে ভারত নেপালে করিডর দিতে সম্মত। বাংলাদেশের সড়ক-জনপথ, বিদু্যত সরবরাহ, রেলওয়ে সংস্কার, নদীর পলি বুলড্রেজার চাহিদা, তিস্তার পানি বন্টন যার অভিন্ন নদীসমূহের পানি বন্টন নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন। দেড় সপ্তাহ পূর্বে প্রকাশিত ভারতীয় সংবাদপত্রে "পরিকাঠামো উন্নয়নে বিরাট সাহায্যের ডালি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ৫০ কোটি ডলারের একটি প্যাকেজ ছাড়াও আগামী পাঁচ বছর ধরে ১০০ কোটি ডলারের সাহায্য দেবে ভারত। দুদেশের মধ্যে হাসিনার সফরের মধ্যে বিদু্যত গ্রিডের চুক্তি হবে। বিদু্যত গ্রিড সংযোগের জন্য ২৫ কোটি ডলার, ঘাটতির সময় ১০০ মেগাওয়াট বিদু্যত দিবে।...পরিকাঠামোগত রেলওয়ে সংস্কার ৩০ কোটি ডলার দিবে।" তবে শেষ প্রাপ্ত তথ্যে বাংলাদেশের জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে 'ভারতীয় সরকারী সূত্রগুলো জানিয়েছে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা, সন্ত্রাসবাদ, বন্দী বিনিময়, বাণিজ্য বৈষম্য বিলোপ, দুই দেশের মাননিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো চুক্তিতে থাকতে পারে। রেল ও নদী সংস্কারে সাহায্য দেয়া হবে এবং টাকার পরিমাণ ভবিষ্যতে বাড়তে পারে। বাণিজ্য সম্প্রসারণে সীমান্তবতর্ী এলাকায়_সাবরুম, থেগামুখ ও দেমাগিরিতে সীমান্তহাট বসানোর আলোচনা হতে পারে।' ইতোপূর্বে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে যে বাংলাদেশ তার বিভিন্ন সময়ে বন্ধুত্বের চুক্তি স্বারকারী প্রবাদপ্রতিম পশ্চিম বাংলার অধিবাসী বর্তমান অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে 'নোডাল মিনিস্টার' হিসাবে মনমোহন সিং দায়িত্ব দিয়েছেন। জানা গেছে কূটনৈতিক যে বিষয়গুলো বহুদিনের পুরনো তা আলোচকদের মাধ্যমে যৌথ কার্যকর রূপরেখা তৈরির বিষয়টি উল্লেখ করা হবে যৌথ ঘোষণায়। ট্রানজিট সম্পর্কে নেপাল-ভুটানের সাথে যুক্ত হবে ভারতের বিষয়টি। ভারতে ভূখণ্ড ব্যবহারের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর, নারায়ণগঞ্জ বন্দর, আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহারের আগ্রহের বিষয়টি যৌথ ঘোষণায় আসবে। আরও বিস্তারিত হবে যখন বাস্তবায়ন। শেখ হাসিনার এ সফর ১১ জানুয়ারি, ২০১০ সালে ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চের ইন্দিয়া-মুজিব চুক্তির দ্বিতীয় রূপ মনমোহন-শেখ হাসিনা চুক্তি হিসাবে ইতিহাসে অমর হবে কি? এ প্রসঙ্গে সর্বশেষ ইংরেজ বড়লাট লর্ড মাউন্ট ব্যাটনের এক অমর বক্তব্য উল্লেখ করতে হয় আজকের প্রেেিত, "কদণর্ ষম দমরভ র্্রর্টণ ডটভ ভর্ম ্রলরশধশণ বমরণর্ দটভ ট ্যলটর্রণর মত ট ডণর্ভলরহ." পাকিস্তানের সৃষ্টি : পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান গঠনকে নিয়ে তিনি এ উক্তি করেছিলেন। প্রায় একই সময়ে বাংলার_ঈণভথটফ এর শেষ গবর্নর ীমরঢ ঈটররমষ বলেছিলেন, 'অভযণভঢণর্ভ ঈণভথটফ ষর্ধদমর্ল ডটফডর্লর্ট টভঢ ঔমমথফহ যমর্র ষধফফ ঠণ থরণর্টণর্্র ্রফলব ধভর্ দণ ষমরফঢ." কোপেনহেগেনের অঙ্গীকারনামার পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন দেশ এমভিসি হিসাবে অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং ড. কাজী খলীকুজ্জমানের তিনটি প্রধান মুখে অবস্থিত দুর্যোগপূর্ণ গাঙ্গেয় বদ্বীপ বাংলাদেশের অর্ধশতাব্দীর পূর্বের বক্তব্যই ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারিত করছে। তবে ১৯৪৭ এর পূর্বে ব্রিটিশ সরকারের যুদ্ধকালীন ভারতীয়দের ঘৃণাকারী উইনস্টন চার্চিলের পতন হয়, এটলি প্রধানমন্ত্রী হন যুক্তরাজ্যের। তিনি সমস্ত রাজবন্দীদের মুক্তি দেন। গান্ধী নেহেরু প্যাটেল আজাদসহ ভারতের হাজার হাজার রাজবন্দী। বন্দী মুক্তির পাশাপাশি ভারতের একটি প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে একটি টিম প্রেরণ করেন। ব্রিটিশ যেমন কলোনিগুলোর স্বাধীনতার পর ও কমনওয়েলথ গঠন করে তাদের অতীত সম্পর্ক বজায় রাখেন। ভারতের ঐক্য সংহতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ক্যাবিনেট মিশন প্লান (উটঠধভর্ণ বধ্র্রধমভ যফটভ) নামে একটি প্রস্তাব প্রেরণ করেন। এ বিষয়ে ১৯৪৬ সালের ৯ মে সিমলায় একটি কনফারেন্স বসেছিল। সেখানে উপস্থিত হয়ে মি. জিন্নাহ পণ্ডিত নেহেরুর প্রতি ভদ্রোচিত হলেও অপর দু কংগ্রেস সদস্য মৌলানা আজাদ ও সীমান্ত গান্ধী খান আব্দুল গাফফার খানের সাথে হাত-মিলাতেও আপত্তি ছিল। কারণ এ দু' মুসলিম নেতা কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। তিনি ভারতে একচ্ছত্র মুসলিম নেতা হিসাবে নিজেকে মনে করতেন। প্লানের প্রস্তাব ছিল ভারত শাসনের জন্য দুর্বল কেন্দ্র-সীমিত দেশরা, বৈদেশিক বিষয় এবং যোগাযোগ কেন্দ্রের হাতে থাকবে। প্রদেশসমূহকে পূর্ণ স্বায়ত্ত দেয়া হবে। মুসলিম অধু্যষিত প্রদেশসমূহও একইভাবে স্বায়ত্তশাসন ও সরকার গঠনের মতা পাবেন। এসব প্রদেশসমূহ পাঁচ বছর বর্তমান ব্যবস্থানুযায়ী দেশ পরিচালনা করবেন। যদি অভিজ্ঞতায় মনে হয় সেই প্রদেশসমূহ পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে। কিন্তু কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে প্রচণ্ড হানাহানি রক্তাক্ত সংঘর্ষে ভারতীয় রাজনীতি টু-নেশন থিয়োরি মোতাবেক বিভক্ত হয়। আমাদের জন্মভূমির নাম বেঙ্গল থেকে পূর্ববাংলা এবং পূর্ব পাকিস্তান হয়। সেখানে যুদ্ধ করে এখন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ৬-দফায় কেন্দ্রীয় সরকারের রূপরেখা দিয়েছিলেন ক্যাবিনেট মিশনের আদলে। যুদ্ধকালীন বাঙালীর প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন তার ৪ মূলনীতি ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভিত গড়েছিলেন। আমরা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি অুণ্ন রেখে দেশ পরিচালনা করতে এবং লিবারাল ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাস করি।
লেখক : সাবেক মন্ত্রী ও রাজনীতিক

No comments

Powered by Blogger.