বেগম জিয়ার জাতির উদ্দেশে এমন ভাষণ কেন?

জনকণ্ঠ রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে যাবার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বেগম জিয়া এক সাংবাদিক সম্মেলন করে বস্তুত জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং সে ভাষণ পুরোটাই ভারত সফরকে কেন্দ্র করে।
বাংলাদেশের কোন সরকারের কোন বিদেশ সফরের আগে সেই সফর নিয়ে জাতির উদ্দেশে কোন বিরোধীদলীয় নেত্রীর এমন ভাষণ দেবার ঘটনা এই প্রথম। তবে এটা ঠিক, এই ভাষণ দেবার বেশ আগে থেকেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে কথা বলছেন। এর আগে ছাত্রদলের সমাবেশে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পথে কাঁটা বিছিয়ে দেবার কথা বলেছেন। এবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তিনি শুধু প্রধানমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর সফর ভারত সম্পর্কে কথা বলেননি। তিনি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আকারে ইঙ্গিতে সমর্থন দিলেন। আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি করলেন, তিনি যেন টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ এবং ভারতে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রসারের বিষয়টি আদায় করে আসেন। তা না হলে তিনি কর্মসূচী দেবেন।
বিরোধীদলীয় নেত্রীর এ ভাষণের পর দেশের সচেতন মহল স্বাভাবিক বিস্মিত হয়েছে। কারণ, বেগম জিয়া সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সফলতা বা ব্যর্থতা নিয়ে তিনি যদি কথা বলতে চান তার তো নির্দিষ্ট ফোরাম আছে। তিনি কেন এভাবে টেলিভিশনের মাধ্যমে সফরের আগের দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন? তা ছাড়া এই ভাষণে তিনি কৌশলে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে কি প্রধানমন্ত্রী যাতে ভারতে বিব্রত হন সেটাই করতে চান? বেগম জিয়ার এ ভাষণের পর নিশ্চয়ই ভারতীয় মিডিয়া প্রশ্ন তুলতে পারে, প্রশ্ন তুলতে পারেন সে দেশের রাজনীতিক বা কূটনীতিকরা। তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলতে পারেন, তোমার দেশের বিরোধীদলীয় নেত্রী সরাসরি আমার দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দিচ্ছেন। তা ছাড়া তারা আরও উলেস্নখ করতে পারেন, তিনি ৰমতায় থাকার সময় তাদের দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য বাংলাদেশে অস্ত্র ও গুলি ধরা পড়ার ঘটনা ধামাচাপা দেবার চেষ্টা হয়। সে সময় তিনি কিছু না বললেও এখন প্রকাশ্যে তাদের সমর্থন দিচ্ছেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে তাঁর ৰমতায় আসার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই যেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থক ৰমতায় আসতে পারে, সেখানে কিভাবে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব হতে পারে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে অনেকেই মনে করছেন, বেগম জিয়ার এই ভাষণ দেবার মূল উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রীকে বিব্রত করার একটি চেষ্টা। কারণ, এখানে তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশ উলফা নেতা রাজখোয়ার বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যায়। রাজখোয়া বলেছেন, বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে বেইমানি করেছে। তাদের ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। বেগম জিয়া এখান থেকে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, ভারতের গোয়েন্দারা বাংলাদেশের ভেতর প্রবেশ করে তাদের ধরে নিয়ে গেছে। শুধু নিজ দেশের সার্বভৌমত্বকে এভাবে ছোট করেই তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেননি। তিনি এটাও বলেছেন, তাঁর দলের নীতি এসব আন্দোলনকে সমর্থন করা। এখানে তিনি তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমানকে এই আন্দোলনের এক আদর্শ পুরম্নষ বানিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তুলনা করে তাদের মুক্তির নেতা হিসেবে জিয়াউর রহমানকে গণসেনাপতি হিসেবে অভিহিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য এ প্রসঙ্গের কোন উত্তর দেননি। তবে তিনি বেগম জিয়ার টিপাইমুখ ও বাণিজ্য প্রসার প্রসঙ্গে ভারতে যাবার প্রাক্কালে বলেছেন, তারা যখন ৰমতায় ছিলেন তখন কী করেছিলেন? বাংলাদেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র যারা তারা বলবেন, শেখ হাসিনা এ কথা বলতে পারেন। কারণ, এর আগে তিনি ভারতের কাছ থেকে গঙ্গার পানি আদায় করেছেন। এমনকি '৯১-৯৬-এ ৰমতায় থাকার সময় সাইফুর রহমান বাংলাদেশকে যে ভারতের পণ্যের অবাধ বাজার বানিয়েছিলেন, তাঁর অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া তার রাস টেনে ধরেছিলেন। অন্যদিকে বেগম জিয়া যে উলফা বা অন্য সন্ত্রাসীদের সমর্থন করছেন, এটা আনত্মর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। বিশেষ করে একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কিভাবে এটা বলেন? কারণ, কোন্ আইনে তিনি ভিনদেশী সন্ত্রাসীকে নিজ ভূখ- ব্যবহার করতে দেবেন?

No comments

Powered by Blogger.