সোহাগের কাছেই হারল পূর্বাঞ্চল

পুরো একটা দিন বাকি, হাতে ৮ উইকেট। ১২৭ রানের জয়ের লক্ষ্য কঠিন তো নয়ই, না জেতাটাই বরং অস্বাভাবিক। ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল সে অস্বাভাবিককেই স্বাভাবিক করল। ম্যাচ তো জিতলই না, উল্টো মধ্যাহ্নবিরতির ১০ মিনিট আগে ৩৭ রানে হেরে মাঠ ছেড়েছে।
প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চলের অফ স্পিনার সোহাগ এই ইনিংসেও নিলেন ৫ উইকেট। শুনে মনে হতে পারে আবারও বুঝি দক্ষিণের স্পিন-বিষেও নীল পুব দল। স্কোরকার্ড সেটা বললেও ম্যাচ শেষে কৃতিত্বটা সোহাগই নিতে চাইলেন না, ‘ছোট ছোট টার্ন ছাড়া উইকেটে তেমন কিছুই ছিল না। ওরা একটু চাপের মধ্যে ব্যাটিং করছিল। রাজ ভাই ও আমার পরিকল্পনা ছিল মেডেন ওভার নেওয়া। জুটি ধরে বল করে এটা চালিয়ে যেতে হবে। তারা এতেই চাপে পড়ে গিয়ে এলোমেলো শট খেলেছে।’
২ উইকেটে ১৩৮ রান নিয়ে শেষ দিনের খেলা শুরু করা পূর্বাঞ্চল কাল শেষ ৮ উইকেট হারিয়েছে মাত্র ৭৩ রানে। আগের দিন এক ওপেনারকে ফিরিয়েছিলেন সোহাগ, কালও শুরুটা তাঁর ঘূর্ণিতেই। অফ ড্রাইভ করতে গিয়ে মমিনুল মিডঅফে ক্যাচ হয়ে যান রাজ্জাকের হাতে। পূর্বাঞ্চলের হাত থেকে ম্যাচ ছুটে যেতে থাকে এর পরই। পরের ওভারের প্রথম বলেই রবিউলের ইনসুইংয়ে এলবিডব্লু অলক। দলের ১৫৪ রানের মাথায় মমিনুল-অলককে হারিয়েই যেন এলোমেলো হয়ে যায় পূর্বাঞ্চল। সেখান থেকে স্কোরটা ১৭১-এ যেতে যেতে পড়েছে আরও ৪ উইকেট। ১৭ রানের ব্যবধানে ৬ উইকেটের পতন—এর মধ্যে সোহাগ এক ওভারেই ফয়সালকে করেছেন বোল্ড, তাপস বৈশ্যকে শর্ট মিড উইকেটে বানিয়েছেন সৌম্যের ক্যাচ। পূর্বাঞ্চল বরং কিছুটা লড়াই করল ধীমান ঘোষ-নাবিল সামাদের নবম উইকেট জুটিতে। তবে ওই জুটির ৪৩ রানও ম্যাচটাকে নিতে পারেনি লাঞ্চের পর, জয় তো দূরের কথা।
সোহাগের বলে পূর্বাঞ্চল ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত হওয়ার একটা কারণ হতে পারে তাঁর ঝুলিয়ে দেওয়া বল। খেলা শেষে সোহাগও বললেন, ‘ফ্লাইট নিয়ে সাকলায়েন ভাইয়ের সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। খুব দ্রুত এটা শিখতে পারায় উনিও খুব খুশি।’
হতে পারে সাকলায়েন মুশতাকের কিছুটা অবদান আছে সোহাগের অমন বোলিংয়ে। হতে পারে দক্ষিণাঞ্চল ব্যাটসম্যানরা আসলেই চাপ নিয়ে নিয়েছিলেন নিজেদের ওপর। তাই বলে দুই ইনিংসে ১১ উইকেট নেওয়া সোহাগের কৃতিত্ব মোটেই ছোট হতে পারে না। বরং বোলিংয়ের মতো ম্যাচ শেষে বলা কথাটাতেও সোহাগ উদাহরণ হয়ে যেতে পারেন সবার জন্য, ‘আমি জাতীয় লিগ খেলেই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি। কাজেই কখনোই ভাবি না, আমি জাতীয় দলে খেলেছি...এখানে আর কী খেলব! সত্যি বলতে কি, জাতীয় লিগ খেলতে নামলে আমার মনেই হয় না আমি জাতীয় দলেও খেলি। বল হাতে সব জায়গাতেই একই রকম পরিকল্পনা থাকে আমার।’
সং ক্ষি প্ত স্কো র
দক্ষিণাঞ্চল-পূর্বাঞ্চল, মিরপুর
প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল: ২৪৮ ও ২৪৮। ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল: ২৩২ ও ৭২.১ ওভারে ২২৭ (শাহরিয়ার ২৩, নাফিস ৬৩, রাজিন ৩৮, মমিনুল ১৪, অলক ০, ফয়সাল ৫, ধীমান ২৮, তাপস বৈশ্য ২, ইয়াসিন ০, নাবিল ১৭, জায়েদ ১*; রবিউল ২/৬৯, সোহাগ ৫/৭৩, রাজ্জাক ২/৪২, তাপস ঘোষ ০/১৮, কামরুল ০/০)।
ফল: দক্ষিণাঞ্চল ৩৭ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সোহাগ গাজী।

উত্তরাঞ্চল-মধ্যাঞ্চল, বগুড়া
বিসিবি উত্তরাঞ্চল: ৩৬১ ও ৮৪ ওভারে ৩৯৭/৬ (মাইশুকুর ৭৩, জুনায়েদ ৯, নাঈম ২৫, মুশফিক ২৪, নাসির ১৩১, ফরহাদ হোসেন ২৫, ফরহাদ রেজা ৭৭*, সোহরাওয়ার্দী ২২*; শাহাদাত ০/২০, শরীফ ১/৪১, সানি ১/৯৩, মোশাররফ ০/১৬, শুভাগত ০/২৩, মার্শাল ০/২৫, আশরাফুল ৩/৬৫, রকিবুল ০/১৮, মেহরাব ০/৫৪, শামসুর ০/২১, নুরুল ০/১২)।
ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল ১ম ইনিংস: ১৫৭.১ ওভারে ৪৩৬/৯ ডি.।
ফল: ড্র।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোহাম্মদ আশরাফুল।

No comments

Powered by Blogger.