আকাশ বলাকার জেগে ওঠা

বেড়াতে যাবার আকাঙ্া মানুষের জন্মগত অথবা প্রকৃতিগত। ভ্রমণবিলাসী মানুষ দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ায়, পাখির মতো উড়ে যাবার আকাঙ্াতেই তো উড়োজাহাজের জন্ম।
রাইটস ভ্রাতৃদ্বয়ের বলাকা এখন সংশোধিত আর পরিশোধনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গেল বারের ভ্রমণে দোতলা বিমানের অভিজ্ঞতা ছিল সত্যি চমকপ্রদ। বিমানের কথা উঠলেই দেশের জরাজীর্ণ রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থার কথা চলে আসে। খ্যাতিমান সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী আকাশে একখণ্ড বাংলাদেশ ভেবে এর সুনাম ও ভাবমূর্তি বিস্তারের চেষ্টা করেছিলেন। এখন আর যাই হোক ভেঙ্গে পড়া বিমান ব্যবস্থাকে দেশের সঙ্গে তুলনা করতে আগ্রহী হবেন না কেউ। যতবার ভ্রমণের প্রসঙ্গ এসে পড়ে ততবারই দেশজ বিমানের জন্য মায়া হয়। বিদায়ী রাষ্ট্রদূত, এখন যিনি জাপানে রাষ্ট্রদূত আশরাফ উদ দৌলা, বলেছিলেন অচিরেই অস্ট্রেলিয়ায় পাখা মেলতে যাচ্ছে ঢাকার বলাকা। কিন্তু সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। ক্রমাগত ডানা ভেঙ্গে পড়ে যাওয়া আর অব্যবস্থার শিকার বিমান প্রশান্ত পারে উড়বে দূরে থাক, তার রুটিনের যাত্রাপথেও অদৃশ্য হতে হতে এখন প্রায় উধাও। ব্যক্তি মালিকানা তথা প্রাইভেট বিমান কোম্পানিগুলোর ব্যবসা এখন জমজমাট। এদের সার্ভিস, ভাড়া, পরিবহন ব্যবস্থা, সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে আরামপ্রদও বটে। এদের দাপটে অসহায় ও মুখ লুকিয়ে থাকা রাষ্ট্রীয় বিমানের কথা নতুন প্রজন্মের কাছে ক্রমেই অচেনা হয়ে উঠছে। এমন সময় আসতে পারে, ইতিহাস আর গবেষণা ব্যতীত, সরকারী কাজে ব্যবহার হওয়াই হবে বিমানের আখেরী নিয়তি। সেটা প্রার্থিত নয়, কেউ তা কামনাও করে না। তাছাড়া চোখ খুলে তাকালেই দেখা যাবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ব্যক্তি মালিকানার রমরমা ব্যবসার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই টিকে আছে রাষ্ট্রীয় বিমান। কেউ মুনাফায়, কেউবা সমানে সমান অর্থাৎ লাভ না হলেও তি নেই বা লোকসানে চলছে না। ভারতের উদাহরণই যথেষ্ট। যত রাজ্য ততই অধিক প্রাইভেট সংস্থা। এমন প্রাইভেট বিমান কোম্পানি আছে যাদের উড়োজাহাজে চড়ার জন্য রাষ্ট্রীয় রেল টিকেটের চেয়েও কম পয়সার প্রয়োজন। তাতেও ভেঙ্গে পড়েনি ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস। এর কারণ খুঁজে পাওয়া কি সত্যি কঠিন? দুনর্ীতি, অব্যবস্থাপনা আর খামখেয়ালীর কারণেই আমাদের দেশের মতো জনবহুল সমাজে রাষ্ট্রীয় বিমান খাতের এ দুরবস্থা। দিন বদলের সরকার নামে পরিচিত জননেত্রী শেখ হাসিনার এক বছরের সালতামামি আর হিসেব-নিকেশে এ জাতীয় জরুরী বিষয়গুলো আসেনি। সরকারী তরফ থেকে যেমন তেমনি দেশজ বরেণ্য লেখক, মিডিয়া, এমনকি সমালোচকদের কাছ থেকেও। যত হিসেব-নিকেশ, যত চাওয়া, পাওয়া না পাওয়া সীমাবদ্ধ ছিল বড় দু' দল নামে পরিচিত আওয়ামী লীগ আর বিএনপি বিষয়ক আলোচনায়। তা হলে দিন বদলের স্বপ্ন পূরণ হবে কিভাবে? এই সরকারের সমর্থক বা দেশপ্রেমিক শক্তি নামে পরিচিত প্রগতিশীলদের ভূমিকা যতটা রাজনৈতিক ততটা অর্থনৈতিক হতে না পারলে ভরসাস্থল কখনই ভিত্তি পাবে না। এ দেশে অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিমান কোম্পানির অবস্থাও আহামরি কিছু নয়। লোক ছাঁটাই, ফাইট বাতিল, লেজে আগুন লেগে উড্ডয়নরত বিমানের জরুরী অবতরণ আরও কত কি! তবু তার ডানা মেলা বন্ধ হয়নি। সরকারী উদ্যোগ, কখনও ব্যক্তি মালিকানার সঙ্গে সন্ধি পাতিয়ে, কখনও বহুজাতিক বিমান সংস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বা ছাড় দিয়ে কোন েেত্র পরিবর্তন সাধন করেই তা বজায় রেখেছে। কোয়ানটাস নামের বিপুল উড়োজাহাজ কোম্পানির ওঠা-নামার সঙ্গে এ দেশের মিডিয়া ও রাজনীতির যোগ নিবিড়। যতটা সমালোচনা বা সমর্থন তার চেয়ে বেশি নজরদারি। এত বড় একটি খাত এই সরকারের আমলে যথাপূর্বং তথাপরং থাকতে পারে না। প্রতিবছর লাখো বাংলাদেশী দেশে বেড়াতে যায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন জ্বলজ্বলে তারকার মতো সুস্পষ্ট অবস্থানে। তাছাড়া দেশের মানুষের ভ্রমণ আকাঙ্া, ভ্রমণের জন্য উদগ্রীব হওয়াটাও চাুস। কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের অস্তিত্বের পর, দেশের মানুষও এখন প্রবাসে বেড়াতে যাচ্ছেন। সার্কভুক্ত দেশগুলো ছাড়িয়ে সে যাত্রা এখন শ্যামদেশ, মালয়, সিঙ্গাপুর পর্যন্ত বিস্তৃত। অথচ বিমান তার ডানা গুটিয়ে ঘরের কাছের কলকাতাও পেঁৗছতে পারছে না। সরকারী দলের দায়িত্ব, বুদ্ধিজীবীদের কর্তব্য, দেশ ও অর্থনীতির, প্রগতির স্বার্থ সব মিলিয়ে এ খাতটি এখন মনোযোগ তো চায়ই, চায় কার্যকর পদপে। আগামী বছরের খতিয়ান দেয়া-নেয়ার পূর্বেই বিমান ফের ডানা মেলবে_ এটাই প্রবাসীদের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.