ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে- যুদ্ধাপরাধী বিচার by বিকাশ দত্ত

 একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আজ থেকে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে।
ট্রাইব্যুনালে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ ১৪জনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার চলছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই এ নিরাপত্তার বিষয়টি নেয়া হয়েছে। যে সমস্ত ছোটখাটো সমস্যা আছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালে তুর্কি ব্রাদারহুড প্রতিনিধিদল আসা এবং বিএনপি আইনজীবীদের মিছিল ও বিক্ষোভের পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। এখন থেকে ট্রাইব্যুনালে আসা আইনজীবী, সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকদের পাস ইস্যু করা হবে প্রধান গেট থেকে। আগে ভেতর থেকেই ইস্যু করা হতো। যাচাই বাছাই ছাড়া কাউকে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করা যাবে না। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার (জজ) একেএম নাসির উদ্দিন আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেছেন, আজ থেকেই ট্রাইব্যুনালে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। নিরাপত্তার জন্য অবকাঠমোগত যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা এখন থেকে কার্যকর করা হবে। ট্রাইব্যুনালে প্রবেশের ক্ষেত্রে কাকে পাস দেয়া হবে তা প্রধান গেট থেকেই সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। যাতে করে কেউ ভিতরে এসে অহেতুক কোন ঝামেলা সৃষ্টি করতে না পারে। তিনি বলেন, আশা করছি আর কোন ঝামেলা হবে না।
নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে ট্রাইব্যুনালের অভ্যন্তরের প্রতিটি রুমে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনালের চতুর্পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে, পাশাপাশি সিকিউরিটি ব্যারাক স্থাপন, ১০টি সেন্ট্রি বক্স, ৩টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হচ্ছে। সম্প্রতি তুরস্কের একটি প্রতিনিধিদল ট্রাইব্যুনালের অগচরে প্রবেশ করার পর নিরাপত্তা বিষয়টি আরও সামনে এসেছে। সর্বশেষ ৩ জানুয়ারিতে সাকা চৌধুরীর পক্ষে ২৫/৩০ জন আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে মিছিল করে বিভিন্ন ধরনের সেøাগান দেয়। এ বিষয়গুলোও কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। সব মিলিয়ে নিরপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে ট্রাইব্যুনালের প্রবেশের পাস এখন থেকে মূল গেট থেকে ইস্যু করা হবে। পাশাপাশি আইনজীবী, সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের প্রবেশে আরও কঠোরতা অবলম্বন কর হবে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি দেখা গেছে, অন্যদের প্রবেশের ক্ষেত্রে তেমন কিছু করা না হলেও সাংবাদিকদের বার বার যাচাই বাছাই করে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রাইব্যুনালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও যাঁরা দায়িত্বে আছেন তাঁদের মধ্যে শৈথিল্যভাব দেখা দিয়েছে। বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের ব্যক্তিগত কম্পিউটার ও ইমেইল হ্যাকিং-এর পর এ বিষয়গুলো সূক্ষ্মভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
বর্তমানে বেশ কয়েকটি মামলা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে আরও কয়েকজন আসামির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে পারে। বর্তমানে তদন্ত সংস্থায় ৬৪০টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে। এর মধ্যে বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। এখন রায় ঘোষণার জন্য সিএভিতে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন দিন তার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হতে পারে। অপর আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছিল। সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিম রায় ঘোষণার জন্য সেটি সিএভিতে রেখেছিলেন। এর মধ্যে তিনি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেন। এর পর আসামি পক্ষ মামলা পুনরায় শুনানির জন্য আবেদন করে। শুনানি শেষ সাঈদীসহ আরও চার জনের মামলার রিট্রায়ালের আবেদন খারিজ হয়েছে। শুধু সাঈদীর মামলায় উভয় পক্ষের যুক্ততর্ক শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। প্রসিকিউশন ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি দুই দিন প্রসিকিউশন পক্ষ এবং ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি তিন দিন আসামিপক্ষকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আইনী যুক্তি পেশের জন্য ১ ঘণ্টা প্রসিকিউশন সময় পাবে বলে আদেশে বলা হয়েছে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রয়েছে জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আরেক নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সুবহান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাসেম আলী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, হাজী মোবারক ও পটুয়াখালীর রুস্তম আলী।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ বিচার চলছে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার ও সাবেক মন্ত্রী বিএনপি নেতা এমএ আলীমের। এছাড়া তদন্তকারী সংস্থা ১১ অক্টোবর পলাতক দুই জামায়াত নেতা মোঃ আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন শাখায় জমা দিয়েছে। এটি অধিকতর যাচাই বাছাইয়ের জন্য প্রসিকিউশন পক্ষ আবার তদন্ত সংস্থায় পাঠিয়েছে। শীঘ্র তদন্ত সংস্থা সেটি প্রসিকিউশনপক্ষকে পাঠাবে বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.