ধারণার চেয়েও ভয়ঙ্কর যৌন রোবট!

আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তা অদ্ভুত নানা উপায়ে ব্যবহার হওয়াও শুরু হয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেমন পর্নোগ্রাফি প্রসার লাভ করেছে, তেমন আধুনিক রোবট প্রযুক্তি ব্যবহার করে যৌন রোবট তৈরি করা হচ্ছে।
আধুনিক রোবটবিদ্যা কোনো সহজ বিষয় নয়। এর সহায়তায় বহু অসম্ভব কাজকেও সহজ করা হচ্ছে। রোবট ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় নানা যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। শিল্প কারখানায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎপাদন পরিচালিত হচ্ছে। তবে এবার রোবটের এক অদ্ভুত প্রযুক্তি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ প্রযুক্তি হলো মানুষের মতো তৈরি রোবট, যার কাজ কেবল যৌনতা।
অনেক বিশ্লেষকের ধারণা, ভবিষ্যতে এ ধরনের রোবটের প্রসার আরো বাড়বে। কয়েক দশকের মধ্যেই এ ধরনের রোবট অত্যন্ত সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে। ফলে এটি ব্যবহার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠবে।
সম্প্রতি লন্ডনের লাভ অ্যান্ড যৌন উইথ বট নামের এক কনফারেন্সে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের একদল গবেষক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‌‘এই যৌন রোবটই একদিন মানুষকে হত্যা করবে।`
গবেষকরা প্রায় ১৮-৬৭ বছর বয়সী ২৬৩ জন পুরুষের উপর গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। গবেষণায় প্রথমে তাদেরকে সুন্দরী রোবটের দুই মিনিটের একটি ভিডিও দেখান। তারপর তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, তারা এখন বা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই যৌনরোবটগুলো কিনতে চান কিনা। সেখানে ৪০.৩% ভাগ মানুষ উত্তর দেন, তারা রোবটগুলো কিনতে চান অর্থাৎ তারা এই যৌনরোবটের প্রতি আসক্ত।

গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় অর্ধেক মানুষ পাঁচ বছরের মধ্যেই সেক্সরোবট কিনতে চান।
কনফারেন্সে জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব গুয়িসবার্গ এসানের জেসিকা ইসজুক বলেন, ‘আসলে আমি দেখতে চেয়েছিলাম রোবটের কোন কোন গুণগুলোর জন্য মানুষ তাদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। আজ আমরা মানুষের সঙ্গে যে ব্যবহার করি ঠিক সেই ব্যবহারই করি কম্পিউটারের সঙ্গে। আর এই কম্পিউটারের সঙ্গে আমাদের সহানুভূতি ও সহমর্মিতার সম্পর্কও তৈরি হয়। কিন্তু কম্পিউটার বা রোবটের সঙ্গে আমাদের আন্তঃব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকে না।’
গবেষক আরো বলেন, ‘একাকিত্বে ভোগা মানুষ এসব যৌন রোবটের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছেন। তারা এসব রোবটকে মানুষের মতই মনে করেন। তাই উদ্বেগের বিষয় হলো- হয়তো একদিন এই যৌনরোবটই মানুষকে হত্যা করার মত কাজে জড়িয়ে পড়বে।’
যৌনতায় প্রযুক্তি প্রয়োগের বিষয়ে একজন অগ্রদূত হলেন ড. ট্রুডি বারবার। তিনি সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে রোবটের সঙ্গে ভালোবাসা ও যৌনতার বিষয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের যৌনতার প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে ওঠা রোবটের পক্ষে এখন শুধু সময়েরই ব্যাপার।’
তার মতে, ‘দম্পতিরা ভবিষ্যতে নিজেদের মাঝে যৌনতার বিষয়টিকে শুধুই কোনো বিশেষ দিনের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখবে। তার বদলে রোবটের সঙ্গে যৌনতা করবে সারা বছর।’
বর্তমানে বেশ কিছু যৌনতায় পারদর্শী রোবট বাজারে এসেছে। এগুলোর মধ্যে একটির নাম রকি বা রক্সি। প্রায় সাত হাজার ডলার মূল্যের নারী রোবটটি যৌনতায় বেশ পারদর্শী। এ ধরনের আরো কিছু রোবটের উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে বর্তমানে বাজারে যে রোবটগুলো এগুলোই শুধু নয়, ভবিষ্যতে এমন সব রোবট আসবে, যেগুলো যৌনতার কাজগুলো ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রোবটের প্রযুক্তি ক্রমে সহজলভ্য হয়ে উঠছে। অতীতে রোবট প্রযুক্তি বহু ব্যয়বহুল হলেও এখন আর তা থাকছে না।
রিকি মা নামে হং-কংয়ের এক ব্যক্তি রোবট তৈরির কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই তারকা স্কারলেট জোহানসনের মতো রোবট তৈরি করেছেন ৩৫ হাজার ডলার ব্যয়ে। এ ধরনের প্রযুক্তি আরও প্রসারিত হলে মানুষ তার মনের মতো তারকাকে বিছানাতেই পেয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে যৌনতার বিষয়গুলো আর আগের মতো থাকবে না।
বর্তমানে যৌনতার জন্য বাজারে সহজলভ্য শুধু নারী রোবটই। তবে অদূর ভবিষ্যতে পুরুষ রোবটও বাজারে সহজলভ্য হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এতে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে চিন্তা করছেন বিশ্লেষকরাও।

যৌন রোবটের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় গবেষকরা উদ্বিঘ্ন। তারা মনে করছেন, একদিন এই সেক্সরোবটই মানুষকে হত্যা করতে পারে।
সুইজারল্যান্ডের অ্যাপ্লাইড সায়েন্স অ্যান্ড ও আর্ট ইউনিভার্সিটির গবেষক বেনডেল বলেন, ‘যৌন রোবট উন্নয়নে মেশিনের নীতিশাস্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত। কারণ মানুষের যৌনশক্তির সীমাবদ্ধতা আছে, বিশেষ করে পুরুষের ক্ষেত্রে। কিন্তু রোবটের কোনো শারীরিক সীমাবদ্ধতা নেই। তারা একটানা যৌনমিলন করতে পারে। তাই যখন মানুষ তাদের সঙ্গে পেরে উঠবে না তখন তারা মানুষের উপর চড়াও হতে পারে। আর সে রকম পরিস্থিতি খুব ভয়বহ হবে।’
তিনি আরও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘যৌন রোবট মানুষকে আকর্ষণ করে তাদেরকে বিপথেও চালিত করতে পারে। তাছাড়া বিশেষজ্ঞরা আরো উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, একটা সময় হয়তো মানুষ না পারবে রোবটকে ত্যাগ করতে, না পারবে রোবটের সঠিক ব্যবহার করতে। কারণ, তখন রোবটই বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তাই মানুষ কী তখন বুঝতে পারবে যে সেটি মানুষের তৈরি যন্ত্র বা রোবট; তারা কখনোই মানুষের বিকল্প হতে পারে না।’
রোবটের ক্রমবর্ধমান চাহিদার জন্য আরও উদ্বেগের বিষয় হলো এই যৌনরোবটগুলো তার যৌনসঙ্গীর বিভিন্ন তথ্যও হাতিয়ে নিতে পারে যা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে এক নারী উই ভাইবো নামের এক যৌন টয় বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলায় নারী দাবি করেছেন, তাদের তৈরি একটি যৌনটয়ে গোপন ডিভাইস যুক্ত করা ছিল। আর এ ডিভাইসের মাধ্যমে তারা তার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করেছে।

Related News

No comments

Powered by Blogger.