দুই কিলোমিটারে গাছে গাছে বিদ্যুতের তার- নেয়ামতউল্যাহ, ভোলা

ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের রুহিতা গ্রামে দুই কিলোমিটারজুড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গাছে-গাছে বিদ্যুতের লাইন টেনে সেখান থেকে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। অথচ ভোলা শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশে কয়েক শ খাম্বা সাত বছর ধরে পোঁতা থাকলেও তাতে তার টানা হয়নি।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রুহিতা গ্রামের মোল্লাবাড়ি থেকে মোতালেব মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় গাছে-গাছে বিদ্যুতের তার ঝুলছে। এসব তার গাছের সঙ্গে বাঁধা। মোল্লাবাড়ি থেকে বকশিবাড়ি পর্যন্ত তারে প্লাস্টিকের আবরণ (ইনসুলেটেড এলটি) দেওয়া। বাকি অংশের তারে কোনো আবরণ নেই। এ কারণে এই অংশের তার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
গ্রাহকেরা জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে মোল্লাবাড়ি থেকে বকশিবাড়ি পর্যন্ত বিদ্যুতের লাইন টানা হয়েছে। বাকি অংশের তার টানা হয়েছে ২০১২ সালের জুনে। রুহিতা গ্রামের গ্রাহক সফিজুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, কাওসার আহমেদ, আমির হোসেন বকশি, রুবেল আহমেঞ্চদ, মোশারেফ বকশিসহ অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেন, তাঁদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কার্যালয়ের লোকজন মোটা অঙ্কের ঘুষ নিলেও বৈধ প্রক্রিয়ায় লাইন টানেননি। এ জন্য বারবার বলা সত্ত্বেও তাঁরা খাম্বা পুঁতছেন না, আবরণসহ নিরাপদ তারও লাগাচ্ছেন না। তাঁরা বলেন, নিরাপদভাবে লাইন না টানায় তাঁরা শঙ্কায় আছেন।
মাস ছয়েক আগে বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়া গ্রাহকদের অভিযোগ, ঘরপ্রতি ৬-১২ হাজার টাকা নিয়ে প্রায় চার লাখ টাকার বিনিময়ে পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা—ওজোপাডিকোর লাইনম্যান ইউনুস মৃধা অবৈধ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুতের লাইন টেনেছেন। একই প্রক্রিয়ায় পাঁচ বছর আগেও লাইন টানা হয়েছে।
রুহিতা গ্রামের আবদুল কাদের ও আবু কালাম জানান, তাঁরা ছয় হাজার টাকা দিয়ে সংযোগ নিয়েছেন। গ্রাহক বিবি লাইজু বেগম জানান, তিনি ১২ হাজার টাকা দিয়েছেন। আবদুল মোতালেবের স্ত্রী জাকিয়া বেগম জানান, ১৫ হাজার টাকা দিয়ে সংযোগ নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওজোপাডিকোর কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস মৃধা ভান্ডারকক্ষ থেকে তার নিয়ে ওই গ্রামে বিদ্যুতের লাইন টেনে দেন। তবে ইউনুস মৃধা নিজেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিদ্যুৎ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দাবি করে বলেন, ‘যেহেতু আমি আওয়ামী লীগ করি, সেহেতু বিপক্ষ দলের নেতা-কর্মীরা আমাকে ফাঁসাতে রুহিতা গ্রামে বিদ্যুতের লাইন টানার দায় আমার ওপর চাপাচ্ছে। আসলে এ কাজটি স্থানীয়রাই করেছে। তাদের সহযোগিতা করেছে তাঁর (ইউনুস) প্রতিপক্ষ।’ তাঁর দাবি তিনি এ কাজ করেননি।
ভোলা শহরের ওয়েস্টার্নপাড়া, চরনোয়াবাদ, আবহাওয়া অফিস রোড, কালীবাড়ি রোডসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক শ খাম্বা পোঁতা রয়েছে। ২০০৫-০৬ সালে এগুলো পোঁতা হলেও এখনো লাইন টানা হয়নি।
ওজোপাডিকোর ভোলা কার্যালয় সূত্র জানায়, এ খাম্বাগুলো ষোলশহর প্রকল্পের আওতাভুক্ত। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আর কাজ এগোয়নি।
ওজোপাডিকো ভোলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, রুহিতা গ্রামে কে বা কারা এ অবৈধ প্রক্রিয়ায় গাছে-গাছে তার টেনে বিদ্যুতের সংযোগ দিয়েছে, তার কিছুই তিনি জানেন না। তবে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।

No comments

Powered by Blogger.