একই সঙ্গে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি!

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই সঙ্গে দুটি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে। আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের পাশাপাশি তাঁদের একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, অপরজন মাদ্রাসায় চাকরি করেন।
প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে সমঝোতা করে তাঁরা মাসের পর মাস দুটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিতেই বহাল রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আলমডাঙ্গা শহরের পশু হাসপাতালপাড়ার সাব্বির হোসেন উপজেলার বাঁশবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে দুই বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। পাশাপাশি ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর তিনি আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজে সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে তিনি দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই উপস্থিত, হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর ও পালাক্রমে পাঠদান করছেন।
কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাব্বির নিয়মিত কলেজে উপস্থিত হন এবং তাঁর পাঠদান শেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। কোনো কোনো দিন বিদ্যালয়ে দু-একটা ক্লাস নিয়ে কলেজে চলে আসেন।
কলেজটিতে গত বছরের ১৩ এপ্রিল ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন আলমডাঙ্গার রোয়াকুলি গ্রামের আনোয়ার উজ্জামান। তিনি আবার আলমডাঙ্গা নাসিরুল উলুম সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, এই দুই শিক্ষক মাসের পর মাস একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে এলেও প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের যোগসাজশ থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে আনোয়ার উজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক (সুপারিনটেনডেন্ট) রবিউল হক আনসারী বলেন, ‘আনোয়ার মাদ্রাসায় ইংরেজি পড়ান। শুনেছি কোথায় নাকি পার্টটাইম ছাত্রদের পড়ান। তবে কলেজে চাকরির বিষয়টি আমার জানা নেই।’
সাব্বির জানান, তিনি আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজে প্রভাষকের সৃষ্ট পদে যোগদান করলেও এখনও তা এমপিওভুক্ত হয়নি। তাই কলেজে যান না, পাঠদানও করান না। এমপিওভুক্ত হলেই বিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দেবেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি করলেও একটি সমঞ্চানজনক চাকরি খুঁজছি। এ জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছি। এটা নিশ্চয়ই কোনো অন্যায় নয়।’
বাঁশবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রায়হান আলী বলেন, ‘সাব্বির অনেক টাকা খরচ করে কলেজের চাকরি নিয়েছেন। শুনেছি শিগগিরই কলেজে সম্মান কোর্স চালু হবে। এটা হলেই তাঁর চাকরি এমপিওভুক্ত হবে। শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তাই বাধা দিইনি।’
আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম জানান, সাব্বির হোসেন কলেজের সমাজকর্ম ও আনোয়ার হোসেন ইংরেজি পড়ান। তাঁরা দুজনই নিয়মিত কলেজে আসেন ও ক্লাস নেন। তাঁদের চাকরি এখনো এমপিওভুক্ত না হওয়ায় মানবিক কারণে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল আলম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাব্বির হোসেনের কলেজে চাকরি প্রসঙ্গে জানান, কয়েক দিন আগে মৌখিকভাবে তিনি বিষয়টি শুনেছেন। কেউ লিখিতভাবে জানালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.