হাইকোর্টের পুনর্গঠিত ৩৯ বেঞ্চের কাজ শুরম্ন_ বিএনপির আপত্তি- সুফল পাচ্ছে আইনজীবী ও মক্কেলগণ

বিকাশ দত্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলাম হাইকোর্টের ৩৯টি বেঞ্চ পুনর্গঠন করেছেন। দীর্ঘদিন পর একসঙ্গে ৩৯টি বেঞ্চ পুনর্গঠনের ফলে আইনজীবী ও মক্কেলগণ সুফল পেতে শুরম্ন করেছেন।
বেঞ্চগুলো পুনর্গঠনের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের দায়িত্বও বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। রবিবার থেকেই পুনর্গঠিত বেঞ্চের বিচারপতিগণ কাজ শুরম্ন করেছেন। প্রধান বিচারপতির পদৰেপে যখন সাধারণ আইনজীবী থেকে মক্কেলগণের ভোগানত্মি কমেছে_ সেই সময় হাইকোর্টের বেঞ্চ পুনর্গঠন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। টিএইচ খান বলেছেন, এর ফলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। দীর্ঘদিনের ট্রাডিশন সিনিয়র বিচারকরা সিভিল ক্রিমিনালে থাকবেন। হঠাৎ করে এটা পরিবর্তন করা হয়েছে। সিনিয়র বিচারপতিদের রিট কেড়ে নেয়া হয়েছে। তা জুনিয়রদের দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, বেঞ্চ পুনর্গঠন করা সম্পূর্ণ প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার। প্রথা অনুযায়ীই তিনি বছরের প্রথমেই এটি করেছেন। যাঁরা এর বিরম্নদ্ধে বলেছেন, তাঁরা প্রধান বিচারপতির এখতিয়ারের ওপর হসত্মৰেপ করেছেন।
উলেস্নখ্য যে, বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবী যাদেরকে জুনিয়র বলেছেন, তারা আসলে জুনিয়র বিচারপতি নন। আইনসম্মতভাবে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিচারপতি হিসেবে এঁদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ৰমতায় এসে তাঁদেরকে বাদ দিয়ে দেয়। আইনী লড়াইয়ে বাদ দেয়া বিচারপতিগণ পুনরায় হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ফিরে আসেন। রায়েও বলা হয়েছে, তাঁদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছিল। ২০০১ সালের পরে যে সব বিচারপতি হাইকোর্টে নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা জোট সরকারের সময়ের বিচারপতিদের চেয়ে জুনিয়র। হিসেব করলে যাঁরা আইনী লড়াইয়ে হাইকোর্টে পুনরায় বিচারপতি হিসেবে এসেছেন, তাঁরা সিনিয়র, এঁদের অনেকেই আপীল বিভাগে যাবার যোগ্যতা রাখেন।
এদিকে প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলাম বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের ৩৯টি বেঞ্চ পুনর্গঠন ও ৰমতা বণ্টন করেছেন। সেগুলো হলো বিচারপতি মোঃ আব্দুল ওয়াহ্্হাব মিঞা ও বিচারপতি মোঃ মিজানুর রহমান ভুঁঞা, ডিভিশন বেঞ্চে গ্রহণযোগ্য ফৌজদারী মোশন, ফৌজদারী আপীল মঞ্জুরির আবেদনপত্র এবং তদসংক্রানত্ম জামিনের আবেদনপত্র, মঞ্জুরিকৃত আপীল, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীন রায় ও আদেশের বিরম্নদ্ধে আপীল ১৯৭৪ সালের বিশেষ ৰমতা আইনে প্রদত্ত যে কোন রায় ও আবেদনের বিরম্নদ্ধে আপীল, ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৯, ৪৯৮, ৫২৬ ও ৫৬১ ধারামতে মোকদ্দমাসমূহ শুনবেন।
বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি মোঃ রইসউদ্দিন অর্থঋণ ও দেউলিয়া সংক্রানত্ম রিটসহ সকল রিট মোশনের ৰমতা দেয়া হয়েছে। বিচারপতি মোঃ আরাযেস উদ্দিন ও বিচারপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিভিশন বেঞ্চে গ্রহণযোগ্য মৃতু্যদ-াদেশ কনফার্মেশনের রেফারেন্স এবং একই রায় হতে উদ্ভূত সকল ফৌজদারী আপীল ও জেল আপীল শুনানির ৰমতা দেয়া হয়েছে। বিচারপতি মোঃ ইমাম আলী ও বিচারপতি মোঃ আবু তারিককে ভ্যাট ও কর সংক্রানত্ম এবং অর্থঋণ আদালত ও দেউলিয়া আইন সংক্রানত্ম রিট বিষয়াদি ব্যতীত সকল রিট মোশন, হাইকোর্ট বিভাগ ও তার অধীনস্থ আদালত অবমাননার অভিযোগপত্র শোনার ৰমতা দেয়া হয়েছে। বিচারপতি শেখ রেজোয়ান আলী ও বিচারপতি সৈয়দ আবু কাওসার মোঃ দবিরম্নশ্বানকে ডিভিশন বেঞ্চে গ্রহণযোগ্য ফৌজদারী মোশন, ফৌজদারী আপীল মঞ্জুরির আবেদনপত্র এবং তদসংক্রানত্ম জামিনের আবেদনপত্র; ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৯, ৪৯৮, ৫২৬ ও ৫৬১ ধারা মতে মোকদ্দমাসমূহ শোনার ৰমতা দেয়া হয়েছে। বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উলস্নাহ ও বিচারপতি মোঃ আতাউর রহমান খানকে ভ্যাট কাস্টমস, কর সংক্রানত্ম এবং অর্থ আদালত আইন ও দেউলিয়া বিষয়ক আইন এবং সিকিউরিটিস এ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ সংক্রানত্ম রিটসহ সকল রিট মোশনের ৰমতা দেয়া হয়েছে। বিচারপতি নজরম্নল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজকে প্রথম আপীল, প্রথম বিবিধ আপীল এবং দেউলিয়া বিষয়ক আইনের অধীনে আপীলসমূহ শুনানির ৰমতা দেয়া হয়েছে। বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দসত্মগীর হোসেন ও বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে সহকারী জজ ব্যতীত অন্য বিচারকের ডিক্রি ও আদেশের বিরম্নদ্ধে ৪ লাখ টাকার উর্ধে দেওয়ানী মোশন, বিচারপতি খোন্দকার মুসা খালেদ ও বিচারপতি মোঃ আজিজুল হককে ফৌজদারী মঞ্জুরিকৃত আপীল ও জেল আপীলের ৰমতা, বিচারপতি মীর হাশমত আলীকে দেওয়ানী রিভিশন মোকদ্দমা, বিচারপতি মাশুক হোসেন আহম্মদ ও বিচারপতি মোঃ আবদুর রহমানকে ফৌজদারী মঞ্জুরিকৃত আপীল ও জেল আপীল, বিচারপতি একেএম ফজলুর রহমান ও বিচারপতি মোঃ ইমদাদুল হক আজাদকে ফৌজদারী মোশন, বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি ফারাহ্্ মাহবুবকে ফৌজদারী মোশন, জরম্নরী ৰমতা বিধিমালা, বিচারপতি শরীফ উদ্দিন চাকলাদার ও বিচারপতি মোঃ নুর হাসানকে দেওয়ানী রিভিশন, বিচারপতি সৈয়দ এবি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি মোঃ আব্দুস সামাদকে দেওয়ানী রিভিশন, বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকারকে মৃতু্যদ-াদেশ কনফারমেশনের রেফারেন্স, বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি মোঃ রেজাউল হাসানকে ফৌজদারী মঞ্জুরিকৃত আপীল ও জেল আপীল, বিচারপতি আফজাল হোসেন আহমেদ ও বিচারপতি মোঃ আবদুল হাইকে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৯, ৫২৬, ৫৬১ ধারামতে মোকদ্দমায়, বিচারপতি এএফএম আলী আসগরকে দেওয়ানী মোশন, বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি এম আয়েতুর রহিমকে বিবিধ আপীল ও দেউলিয়া বিষয়ক আইন।
বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে দেওয়ানী মোশন, বিচারপতি এএফএম আব্দুর রহমানকে আপীল বিভাগীয় বিষয় ও ইচ্ছাপত্র, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি শেখ আব্দুল আউয়ালকে ভ্যাট, কাস্টমস্্ ও কর সংক্রানত্ম, বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহম্মেদকে আফিম বিভাগীয় বিষয় ও ইচ্ছাপত্র ব্যতিরেকে মৃত ব্যক্তির বিষয় রৰার অধিৰেত্র, বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, বিচারপতি এবিএম ফজলে কবীর ফৌজদারী মোশন, বিচারপতি মোঃ মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীকে দেওয়ানী রিভিশন মোকদ্দমা, বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি কামরম্নল ইসলাম সিদ্দিকীকে ফৌজদারী মঞ্জুরিকৃত আপীল তদ্্সংক্রানত্ম জামিনের আবেদন, বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি এসএম এমদাদুল হককে ভ্যাট, কাস্টমস্্ এবং কর সংক্রানত্ম রিট মোশন, বিচারপতি শহীদুল ইসলামকে দেওয়ানী রিভিশন মোকদ্দমা, বিচারপতি ফজলুর রহমানকে ফৌজদারী মোশন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিমকে অর্থঋণ আদালত ও দেউলিয়া সংক্রানত্ম রিট ব্যতীত ভ্যাট কাস্টমস্্ ও কর সংক্রানত্ম রিট, বিচারপতি এমদাদুল হককে দেওয়ানী মোশন।
বিচারপতি মোঃ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি নাঈমা হায়দারকে অর্থঋণ আদালত ও দেওলিয়া সংক্রানত্ম রিট মোশন, বিচারপতি মোহাম্মদ মারফি-উল-হক ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে মৃতু্যদ-াদেশ কনফারমেশনের রেফারেন্স, বিচারপতি মোঃ শামছুল হুদা ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীকে ফৌজদারী আপীল ও জামিন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মোঃ মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে অর্থঋণ আদালত ও দেউলিয়া সংক্রানত্ম রিট, বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি বোরহানউদ্দিনকে ভ্যাট ও কাস্টমস, কর সংক্রানত্ম এবং অর্থঋণ আদালত আইন ও দেউলিয়া বিষয়ক আইন ১৯৯৭ ইং সংক্রানত্ম মোশন, বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক ও বিচারপতি সৈয়দা আফসার জাহানকে ফৌজদারী মোশনের ৰমতা দেয়া হয়েছে।
এদিকে রবিবার পুনর্গঠিত বেঞ্চে বিচারপতিগণ তাঁদের কাজ শুরম্ন করেন। বেঞ্চ পুনর্গঠনের প্রতিবাদে সিনিয়র এ্যাডভোকেট টিএইচ খানের নেতৃত্বে ৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের অভিযোগ তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে টিএইচ খান সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান বিচারপতি নতুন বেঞ্চ গঠন করেছেন। এতে করে সিনিয়রদের পাওয়ার কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, এখনও বিষয়টি পরিবর্তন করা যায়। এদিকে বেঞ্চ পুনর্গঠনের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে।
এদিকে বিচারের জন্য মামলার ব্যবস্থাপনার ডিজিটাল কার্যক্রম শুরম্ন করার পদৰেপ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। যত দ্রম্নত সম্ভব যাতে দ্রম্নত মামলা নিষ্পত্তি করা যায়, তার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। যখন প্রধান বিচারপতি ডিজিটাল কার্যক্রম শুরম্ন করার উদ্যোগ নিচ্ছেন, ঠিক তখনই তাঁর আশপাশের কিছু কর্মকর্তা বিষয়টিকে খাটো করে দেখার চেষ্টা করছেন। প্রধান বিচারপতি যখন ৩৯টি বেঞ্চ পুনর্গঠন করে তা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সুপ্রীমকোর্টের নিচতলায় টাঙিয়ে দিয়েছেন, তখন প্রধান বিচারপতির হাইকোর্ট বিভাগের সচিব কবির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা বেঞ্চ পুনর্গঠনের নিউজ পত্রিকায় সরবরাহ করব না। এটা নিয়ম নেই। আপনারা সাংবাদিকরা ইচ্ছা করলেই কিছু বলতে পারেন না।
রবিবার সুপ্রীমকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চ ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ আইনজীবীই বেঞ্চ পুনর্গঠনে খুশি হয়েছেন। শুধু কিছু সিনিয়র আইনজীবী অখুশি হয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.