শেখ হাসিনার বিচার চাইলেন ফখরম্নল

স্টাফ রিপোর্টার বহুল আলোচিত ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টি করে যারা দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার বিনষ্ট করেছে তাদের বিচার দাবি করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমান মহাজোট সরকার ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত বলেই এই দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করছে না। ভবিষ্যতে দেশে যেন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, তাই আগে থেকেই বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সব ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সব কার্যক্রম এই মহাজোট সরকার বৈধতা দিয়েছে। তাই সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার হওয়া উচিত বলে মনত্মব্য করেন তিনি। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, বিএনপিকে যাতে কেউ বিক্রি করতে না পারে এ জন্য কাউন্সিলের মাধ্যমে 'বীমা পলিসি' প্রবর্তন করে তারেক রহমানকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এমনকি ওয়ান ইলেভেনের সময় আমাদের দলের অনেক নেতা তাদের সতীত্ব বিনষ্ট করেছেন বলে মনত্মব্য করেন সাকা চৌধুরী।
সোমবার বিকেলে 'ওয়ান ইলেভেন'কে কালো দিবস পালন উপলৰে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনাসভায় দলীয় নেতারা এ সব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, এম কে আনোয়ার এমপি, মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপি, রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব আমান উলস্নাহ আমান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের নেত্রী শিরিন সুলতানা ও ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও বিরোধী দলের চীফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারম্নক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্পীকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এমপি, ড. আব্দুল মঈন খান ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টু।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরম্নরী অবস্থা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। ১১ জানুয়ারিকে কালো দিবস হিসেবে পালনের জন্য সারাদেশে কর্মসূচী গ্রহণ করে বিএনপি। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল দলীয় নেতাদের কালো ব্যাজ ধারণ, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা শেরেবাংলানগরে সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচী ছাড়াও জেলা-উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে ওয়ান ইলেভেন উপলৰে স্থানীয় নেতারা কালো ব্যাজ ধারণসহ আলোচনাসভার আয়োজন করেন।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। ওইদিন সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তা বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে দিয়ে জরম্নরী অবস্থা জারি করিয়েছে। দেশে সাংবিধানিক ধারা বিনষ্ট করা হয়। তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর দেশে কি ঘটেছিল, লগি-বৈঠা দিয়ে রাসত্মায় মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। ওই ঘটনা ছিল একটি পরিকল্পিত ঘটনা। ষড়যন্ত্র ছিল বলেই ২২ জানুয়ারির নির্বাচন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বানচাল করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আগে জারি করা হয় জরম্নরী অবস্থা। অন্যদিকে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন ছিল একটি পাতানো নির্বাচন। তিনি বলেন, তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে কারাগারে নিয়ে নির্যাতন করেছে। বেগম খালেদা জিয়াকে যারা বিদেশ পাঠাতে চেয়েছিল তাদের বিচার দেশের মাটিতে একদিন হবেই।
বর্তমান মহাজোট সরকারের সমালোচনা করে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সঙ্গে জড়িত ফখরম্নদ্দীন, মইনউদ্দিনসহ তাদের কোলাবরেটরদের বিরম্নদ্ধে মহাজোট সরকার কোন কথা বলছে না। এ থেকেই প্রমাণিত হয় ১/১১ হোতাদের সঙ্গে কারা জড়িত। ওয়ান ইলেভেন ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সামরিক, বেসামরিক, সাবেক আমলা, সংবাদপত্রের একটি অংশ ও রাজনৈতিক দলের নেতারা জড়িত ছিল। চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশের বিরম্নদ্ধে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দলীয় নেতাকমর্ীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টি করে পরিকল্পিতভাবে আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস কওে দেয়া হয়েছিল। ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সব কর্মকা- মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী বৈধতা দিয়েছেন। তাই এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার হওয়া উচিত।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় আমাদেও দেশের রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও আইনজীবীসহ অনেকেরই সতীত্ব বিনষ্ট হয়েছে। আর আগামীতে যাতে কেউ বিএনপিকে বিক্রি করতে না পারে এ জন্য বীমা পলিসি প্রবর্তন করে তারেক রহমানকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এখন আর কেউ বিএনপিকে বিক্রি করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, আমাদের দলের অধিকাংশ নেতার সতীত্ব বিনষ্ট হয়েছে। ওই সময় সিনিয়র আইনজীবীদের মধ্যে একমাত্র ব্যারিস্টার রফিকুল হক ছাড়া অধিকাংশ সিনিয়র আইনজীবী সতীত্ব হারিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে ৰতিগ্রসত্ম হয়েছেন শহীদ জিয়ার পরিবারের সদস্য বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো। বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ম্যানপাওয়ার এজেন্সিতে রূপানত্মিত করতে চেয়েছিল মনত্মব্য করে সাকা চৌধুরী বলেন, মইন উ একজন দালাল হিসেবে বিদেশীদের ভাড়া খেটেছে। বর্তমান সরকারেরও কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
মির্জা আব্বাস বলেন, ১/১১-এর ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। এখনও চলছে। তাই আমাদের এ ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, যারা ওয়ান ইলেভেন ঘটাতে সহায়তা করেছেন দলের ভেতরে ও বাইরে তাদের সবাইকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাদের বিরম্নদ্ধে একটি নয় দুটি নয় শত শত মামলা করা হবে।
আমানউলস্নাহ আমান বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তি তথা বিএনপিকে ধ্বংস করতে সেদিন পরিকল্পিতভাবে ওয়ান ইলেভেন ঘটানো হয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় বেগম খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলে তারেক রহমার, আরাফাত রহমান কোকোসহ আমাদের দলের শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। শুধু তাই নয় কারাগারে তারেক রহমানকে নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছিল। তাই যারা আমাদের মৌলিক অধিকার হরণ করেছিল, যারা তারেক রহমানসহ আমাদের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছে সেই মঈনউদ্দিন, ফখরম্নদ্দীন গংয়ের বিচার বাংলার মাটিতে করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.