সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার প্রসু্ততি ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে

রকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার যাবতীয় প্রসু্ততি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন (আইসিবি)। গতকাল আইসিবি কার্যালয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে আইসিবির মহাব্যবস্থাপক ফায়েকুজ্জামান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করে এসইসিতে কোম্পানিগুলো শেয়ার ছাড়ার জন্য আবেদন জানাতে পারবে।


এরই মধ্যে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি ও অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি শেয়ার ছাড়ার জন্য এসইসিতে প্রসপেক্টাস জমা দিয়েছে। এসইসির অনুমোদন পেলেই কোম্পানি দুটি আইপিওর মাধ্যমে বাজারে শেয়ার ছাড়বে। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন আরপিওর মাধ্যমে বাজারে শেয়ার ছেড়েছে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত আরও ২২টি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার প্রস্তুতি চলছে। কোম্পানিগুলো হলো-টেলিটক বাংলাদেশ, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস, লিক্যুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস, চিটাগাং ড্রাইডক, বাংলাদেশ সার্ভিসেস, টেলিফোন শিল্প সংস্থা, বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেড, পঞ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড, রুরাল পাওয়ার কোম্পানি, হোটেলস ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ ইনস্যুলেটর অ্যান্ড স্যানেটারিওয়ার ফ্যাক্টরি লিমিটেড, ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি, কর্ণফুলী পেপার মিলস, জিইএমকো, বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড, বাংলাদেশ কেবল শিল্প লিমিটেড।
শেয়ারাবাজারে সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কয়েক দফা সময় বেঁধে দিলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটি কোম্পানির শেয়ারও বাজারে আসেনি। ২০১০ সালে তীব্র চাহিদা থাকা সত্ত্বেও শেয়ার সরবরাহ না থাকার কারণে বাজার খুব দ্রুত অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার জন্য দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানানো হয়। বিশেষজ্ঞরাও সরকারি শেয়ার ছাড়ার জন্য সরকারের প্রতি বারবার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়া হলে বাজারে বিপর্যয় হতো না বলে বেশির ভাগ বিশ্লেষকদের ধারণা। এমনকি দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছিল, সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়া না হলে এবং বাজারে কোনো ধরনের বিপর্যয় হলে তার দায় দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের এ হুশিয়ারি কানে তোলেনি সরকার। এর মাত্র দুই মাসের মাথায় শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস নামতে শুরু করে। এখনও সে ধারা অব্যাহত রয়েছে।
তবে আমলাদের অনীহা এবং অনাগ্রহের কারণে সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কাজ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাজারে শেয়ার ছাড়া হলে কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনেক সুযোগ সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে বিধায় তারা এ বিষয়ে সব সময় নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে আসছে। তবে বর্তমানে সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। গত কয়েক মাস আগে সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়তে ব্যর্থ কর্মকর্তাদের অপসারণ করা হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন। কোম্পানিগুলোর শেয়ার ছাড়ার ক্ষেত্রে তখন নতুন গতি তৈরি হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে আইসিবিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আর এ নিয়ে কোম্পানির সঙ্গে আইসিবির ক্যাপিটাল ইস্যু ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে।
গতকালের বৈঠকের বিষয়ে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফায়েকুজ্জামান জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে পর্যালোচনা হয়েছে। এ ধরনের পর্যালোচনা আরে ঘন ঘন হবে। বৈঠকের ফলাফল অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে জানানো হবে। চলতি মাসের শেষ দিকে আরও একটি বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, কোম্পানিগুলোর শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে অনেক প্রগ্রেস করেছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে কেউ সম্পদ পুনর্মল্যায়ন করছে, কেউ ক্রেডিট রেটিং করছে, কেউ অডিট ফার্ম নিয়োগ করেছে। অবার কোনো কোনো কোম্পানি শেয়ার ছাড়ার জন্য প্রসপেক্টাস তৈরি করছে। সব মিলিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে শেয়ার ছাড়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। এরপর এসইসি সুবিধা অনুযায়ী, শেয়ার ছাড়ার অনুমোদন দিবে। তবে সব কোম্পানির শেয়ার একসঙ্গে বাজারে ছাড়া হবে না। বিভিন্ন ধাপে কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে ছাড়ার চিন্তাভাবনা চলছে। তবে কোম্পানি ভেদে সরাসরি তালিকাভুক্ত হতে পারে বলে জানান তিনি।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার বিষয়টি দেখার জন্য একজন কর্মকর্তাকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দেয়ার জন্য এসইসিকে অনুরোধ জানানো হবে বলে ফায়েকুজ্জামান জানান। তিনি বলেন, এসইসিতে জনবল সঙ্কট রয়েছে। তাদের অনেক কাজ করতে হয়। এজন্য কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে এ ধরনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমরা তাদের সে অনুরোধের প্রেক্ষিতে এসইসিকে একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়ার জন্য চিঠি দেব। আইসিবি এরই মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে প্রতিটি কোম্পানির জন্য একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছে বলে জানান তিনি। এসইসি যদি একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয় তাহলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার বিষয়গুলো সহজে নিষ্পন্ন করা সম্ভব হবে।
মৌলভিত্তির দিক শক্তিশালী হওয়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে আসতে শুরু হলে বাজারে নতুন গতি তৈরি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আইসিবির এমডি।

No comments

Powered by Blogger.