মাঠের খেলোয়াড় কারাগারে

ক্রিকেট ইতিহাসে একেবারে নতুন এবং অপ্রত্যাশিত। কোনো ক্রিকেটারকে খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে জেলের ঘানি টানতে হবে, তা ছিল খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। শেষ পর্যন্ত সে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত শাস্তিরই মুখোমুখি হলেন পাকিস্তানি তিন ক্রিকেটার সালমান বাট, মোহাম্মদ আসিফ এবং মোহাম্মদ আমের। লন্ডনের রাজকীয় আদালত সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টের বিচারক জেরেমি কুক গতকাল তিন পাকিস্তানির সঙ্গে লন্ডনভিত্তিক পাকিস্তানি স্পোর্টস এজেন্ড এবং জুয়াড়ি মাজহার মাজিদেরও শাস্তি নির্ধারণ করেন।


ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করার দায়ে সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক ২৭ বছর বয়সী সালমান বাটকে আড়াই বছরের (৩০ মাস), ২৮ বছর বয়সী পেসার মোহাম্মদ আসিফকে এক বছরের এবং ১৯ বছর বয়সী তরুণ পেসার মোহাম্মদ আমেরকে ৬ মাসের জেল দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ৩৬ বছর বয়সী জুয়াড়ি মাজহার মাজিদকে দেওয়া হয়েছে ২ বছর ৮ মাসের জেল। আদালত থেকেই চারজনকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে জেলে।
সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে ৪ অক্টোবর থেকে চলা ১৪ দিনের শুনানি, ২ দিনের রিভিউ এবং জুরিদের সিদ্ধান্তে পেঁৗছতে চার দিন_ এ ২০ দিন শেষে তিন পাকিস্তানি ক্রিকেটার ও মাজহার মাজিদের বিপক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ১২ সদস্যের জুরি বোর্ড তাদের দোষী সাব্যস্ত করে। সে আলোকেই এর দু'দিন পর বিচারক জেরেমি কুক চারজনের বিপক্ষে বিভিন্ন মেয়াদে জেলের শাস্তির ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি জানিয়ে দেন, 'উপস্থাপিত তথ্যপ্রমাণ ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের স্বীকারোক্তিতে যা উঠে এসেছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ জন্য একটি শাস্তিকেই আমরা যথেষ্ট বলে মনে করেছি। সে আলোকেই শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে।' একই সঙ্গে বিচারক যোগ করেন, জেলে থাকা অবস্থায় দোষীদের আচরণ যদি সন্তোষজনক হয় তাহলে শাস্তি অর্ধেক কমে আসতে পারে। ঘোষিত রায়ের বিপক্ষে আপিল করার সুযোগ থাকছে তিন ক্রিকেটার ও জুয়াড়ি মাজহার মাজিদের সামনে।
সালমান বাট এবং মোহাম্মদ আসিফ অপরাধ স্বীকার না করলেও গত সেপ্টেম্বরে প্রি-ট্রায়ালে অপরাধ স্বীকার করেছিলেন মোহাম্মদ আমের। এ ছাড়া অপরাধ স্বীকার করেছিলেন জুয়াড়ি মাজহার মাজিদও। বিচারক জেরেমি কুক তার রায় ঘোষণাকালে বলেন, 'তিন ক্রিকেটার বিশাল অঙ্কের অর্থের লোভে পড়ে এমন কাজ করতে গিয়েছিল। যদিও তারা বৈধ পথেই বড় অঙ্কের অর্থ আয় করত।' বিচারক আশা প্রকাশ করেন, 'এ শাস্তি আগামীতে একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সতর্কবার্তা বয়ে নিয়ে যাবে।' তবে তিনি আশঙ্কাও প্রকাশ করেন, 'ক্রিকেটারদের অর্থ সম্পর্কিত অবৈধ লেনদেন এবং অর্থের বিনিময়ে খেলার ফল পরিবর্তনের কারণে দর্শক-সমর্থকরা এ খেলা থেকে অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।' বিচারক বলেন, 'মানুষ তিন ক্রিকেটারকে নায়ক বিবেচনা করত; কিন্তু অর্থের বিনিময়ে ৩টি নো বল করার কারণে এখন তারা জাতীয় দল থেকেই মুখ ফিরিয়ে নেবে। মানুষ যখনই পেছন ফিরে তাকাতে চাইবে ভালো সময়গুলো স্মরণ করার জন্য, তখন তাদের সামনে এ কলঙ্কজনক অধ্যায় চলে আসবে। তারা দেখবে অর্থের বিনিময়ে কীভাবে খেলাকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো। এরপর প্রত্যেক খেলাকেই তারা তেমন মনে করবে। সেটা যতই স্বচ্ছ হোক।' চারজনের উদ্দেশে বিচারক বলেন, 'আপনারা সবাই পাকিস্তানি সমর্থকদের হৃদয়ে চিরজীবনের জন্য একটা সন্দেহের বীজ রোপণ করে দিলেন।'
২০০০ সালে যখন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রনিয়ের পাতানো ম্যাচ কেলেঙ্কারি ফাঁস হয় এবং এ নিয়ে শাস্তির মুখোমুখি করা হয়, তখন মানুষ সেটাকে সাধুবাদ জানিয়েছিল। খেলায় কোনো ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড মানুষ সহ্য করতে পারে না। এবারও পারেনি। গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডস টেস্ট চলাকালে সংঘটিত স্পট ফিক্সিংয়ের কারণে গত ফেব্রুয়ারিতে আইসিসি কতৃক সালমান বাটের ওপর ১০ বছরের, আসিফের ওপর ৭ বছরের এবং আমেরের ওপর ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে বাট এবং আসিফের শাস্তি কমিয়ে ৫ বছরে নামিয়ে আনা হয়। যার বিপক্ষে আপিল করেছেন তিন ক্রিকেটার।
লন্ডনের সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর চার অভিযুক্তই ধরে নিয়েছেন তাদের জেল হতে যাচ্ছে। গতকাল ছিল শাস্তির রায় ঘোষণার দিন। এ কারণে তিন ক্রিকেটার এবং জুয়াড়ি মাজহার মাজিদ গতকাল প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলেন আদালতে। রায় ঘোষণার আগেই তিন পাকিস্তানি ক্রিকেটারের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, শাস্তি যাই দেওয়া হোক, এর বিপক্ষে আপিল করবেন তারা।

No comments

Powered by Blogger.