দ্বিতীয় পদ্মা সেতু-বিনিয়োগকারী নির্বাচনে আন্তর্জাতিক নোটিশ

দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে বিনিয়োগকারী নির্বাচনের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক নোটিশ আহ্বান করেছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ। পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে পদ্মা নদীর ওপর দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে সরকারি বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) মাধ্যমে। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে। উড়াল সেতু বা উড়াল সড়ক বা উড়াল রেলপথ নির্মাণে ১০ বছরে কমপক্ষে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ কাজ করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই এই দরপত্র আহ্বান করা হবে।


সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত এই নোটিশে প্রকল্পের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রাক-যোগ্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে যোগ্য প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা করা হবে। তারপর তাদের কাছ থেকে আরো বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হবে। প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হবে। এ ক্ষেত্রে যানবাহন থেকে টোল আদায়ে নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত নির্বাচিতব্য প্রতিষ্ঠানটি সেতুর ব্যবস্থাপনায় থাকবে।
প্রকল্পের বিবরণ থেকে জানা গেছে, এই সেতু নির্মিত হলে দক্ষিণাঞ্চলের মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, যশোর ও মাদারীপুর জেলার অংশবিশেষের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর ওপর এই সেতু নির্মাণের লক্ষ্য সামনে রেখে ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের মে মাস পর্যন্ত জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) বিস্তারিত সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষা প্রতিবেদনে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য চারটি স্থান চিহ্নিত করা হয়। এই চারটি স্থানের মধ্যে আছে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ, দোহার-চরভদ্রাসন, মাওয়া-জাজিরা ও চাঁদপুর-ভেদরগঞ্জ। এর মধ্যে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর জন্য পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ স্থানকে সবচেয়ে সুবিধাজনক বলে চিহ্নিত করে জাইকা। ওই সমীক্ষা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সেতুটি হবে ৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এতে রেলপথও থাকবে। ওই সময়ে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের পিডিপিপি ২০০৯ সালের ২৬ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এরপর রেলপথ অংশ ছাড়া বাকি অংশের উন্নয়ন প্রকল্প ছক (ডিপিপি) তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয় ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল। পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ স্থানে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। মহাজোট সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সহায়তা আশা করেছিল। চীন সরকারের কাছে বারবার অর্থায়নের দাবি জানিয়েছিল। ২০১০ সালের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে এ বিষয়ে ওই দেশের সরকারের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছিল। তবে তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এই অবস্থায় বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভর না করে সরকার ও বেসরকারি অংশীদারির মাধ্যমে (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ_পিপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.