ইরানে সম্ভাব্য হামলার জোগাড়যন্ত্র করছে ব্রিটেন

রানে সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনা শুরু করেছে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী। প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান গত বুধবার জানিয়েছে, তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় এমন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে ব্রিটিশ বাহিনীতে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই ইরানের প্রধান পরমাণু স্থাপনাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেবে। সে ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন চাইলে সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকবে লন্ডন। তবে ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।


এ ধরনের সম্ভাব্য হামলার ক্ষেত্রে নৌবাহিনীর জাহাজগুলোকে কোথায় মোতায়েন করা যেতে পারে, তা নিয়ে ভাবছেন ব্রিটিশ সামরিক পরিকল্পনাকারীরা। তাঁদের টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ ডুবোজাহাজ মোতায়েনের পরিকল্পনাও রয়েছে। তাঁরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরে ব্রিটিশ শাসিত দিয়েগো গার্সিয়া থেকে হামলা চালানোর জন্যও অনুমতি চাইবে। অতীতে মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে এ এলাকা ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ব্রিটিশ সরকারের সচিবালয় হোয়াইট হল ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানায়, লিবিয়ায় বিদ্রোহের পর সম্প্রতি ইরান আবারও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে উদ্বেগের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও গতকাল বৃহস্পতিবার ইরানের পরমাণু প্রকল্পকে অব্যাহত হুমকি বলে মন্তব্য করেন।
তবে ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওবামা প্রশাসনের বড় ধরনের সামরিক অভিযানে জড়ানোর সম্ভাবনা কম। আগামী সপ্তাহে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) ইরান প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা। ওই প্রতিবেদন দেখেই তেহরান প্রসঙ্গে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে কর্মকর্তারা জানান। তাঁদের ধারণা, এ প্রতিবেদন পরিস্থিতিকে একেবারেই পাল্টে দেবে। সে ক্ষেত্রে ওবামাও তাঁর সিদ্ধান্ত আবার বিবেচনা করবেন বলে কর্মকর্তারা মনে করেন।
হোয়াইট হলের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, নানামুখী চাপের পরও সম্প্রতি নতুন করে শক্তি অর্জন করেছে ইরান। সম্প্রতি বিদেশের মাটিতে তেহরানের গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন তিনি। গণমাধ্যমের দেওয়া তথ্যানুসারে পাকিস্তানের করাচিতে সৌদি কূটনীতিককে হত্যা এবং ওয়াশিংটনে সৌদি রাষ্ট্রদূতকে হত্যাচেষ্টার পেছনে ইরানি গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, গত বছর স্পর্শকাতর সাইবার হামলার মুখে পড়ে ইরান। ধারণা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রকৌশলীরা এ হামলা চালান। হামলায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত অন্তত অর্ধেক সেন্ট্রিফিউজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কূটনীতিকরা মনে করেন, এ ক্ষতি ইতিমধ্যেই পুষিয়ে নিয়েছে ইরান। বরং তাদের সামর্থ্য আরো বেড়েছে বলে মনে করে আইএইএ।
এ ছাড়া ব্রিটিশ মন্ত্রীদের জানানো হয়েছে, ইরান তাদের কিছু সেন্ট্রিফিউজ প্রচণ্ড সুরক্ষিত সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে গেছে। ইরানের কম শহরের পর্বতের নিচে এ ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েও কোনো ক্ষতি করা যাবে না। হোয়াইট হলের আরেক কর্মকর্তা জানান, আগামী ১২ মাসে ইরান তাদের গোপন পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম লুকিয়ে ফেলতে পারবে। এ কারণেই ইরান প্রসঙ্গে ব্রিটেন নতুন করে পরিকল্পনা শুরু করেছে। তবে স্থল অভিযানের কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের। মূলত বিমান হামলা চালানো হবে। নৌবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার আলোচনাও রয়েছে।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, লড়াইয়ের কোনো ধরাবাঁধা পরিকল্পনা তাদের নেই। তবে মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র গার্ডিয়ানকে জানিয়েছে, তাদের প্রস্তুতি চলছে।
এর আগে গত বুধবার ইসরায়েলের প্রভাবশালী পত্রিকা হারেৎজ জানায়, ইরানে সামরিক হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি তাঁর মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের এ ব্যাপারে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন। তবে ইসরায়েলের ইরানে হামলার আগ্রহের ব্যাপারে হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করেনি। ইরান প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এখনো কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় সমাধান চায় বলে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র জে কার্নি। সূত্র : এএফপি, ওয়াশিংটন পোস্ট।

No comments

Powered by Blogger.